বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার বার্তা: বিরোধ নয়, আলোচনার পথে চলুন!

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১১ ১২:৪২:২৯
খালেদা জিয়ার বার্তা: বিরোধ নয়, আলোচনার পথে চলুন!

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন, যেন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিরোধে না জড়ায় দল। ৭ জুন ঈদুল আজহার দিন গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই কৌশলগত পরামর্শ দেন।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও তা যেন বিরোধে রূপ না নেয়। বরং আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তার মতে, সরকার বা অন্তর্বর্তী প্রশাসন বিএনপির প্রতিপক্ষ নয়, বরং উভয় পক্ষের মধ্যেই একটি সমন্বিত সমঝোতা প্রয়োজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, “সমঝোতার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কারণ, আমাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধের প্রশ্নই ওঠে না। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নন।”

ইউনূস-বিএনপি সম্পর্কের টানাপড়েন

সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছিল নির্বাচনের সময়সূচি ও কয়েকটি কৌশলগত বিষয়ে। বিশেষত, বিএনপির এক সিনিয়র নেতার পক্ষ থেকে ইউনূসের পদত্যাগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করায় তিনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখান। এ পরিস্থিতির অবসানে খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিভেদ নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার সময় এখন।

আসন্ন বৈঠকের গুরুত্ব

১৩ জুন লন্ডনে ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে দলের ভেতরে রয়েছে ব্যাপক প্রত্যাশা। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ ও সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়ে গভীর আলোচনা হবে। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে আলোচিত চট্টগ্রাম বন্দর বা মিয়ানমার সীমান্তে করিডোর প্রসঙ্গও বৈঠকে স্থান পেতে পারে।

এপ্রিলে নির্বাচন কেন বিএনপির আপত্তির কারণ?

সরকার আগামী এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। কিন্তু বিএনপি চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হোক। কেন এপ্রিল উপযুক্ত সময় নয় তা ব্যাখ্যা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এপ্রিল মাসে ঈদের ঠিক পরপরই ভোট হলে পুরো রমজানজুড়ে রাজনীতিকদের জন্য প্রচারণা কঠিন হবে। ইফতার, তারাবিহ, এবং রোজার মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে নির্বাচন খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এ সময় আবহাওয়াও অনুকূলে থাকবে না। প্রচণ্ড গরম ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে মাঠে জনসভা করা কঠিন হবে, যা বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

দলীয় অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কৌশল

মির্জা ফখরুল এ বৈঠককে ‘এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এই মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে হয়তো অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এটি শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি। আশা করছি তিনি আলোচনাকে গঠনমূলক পথে নিয়ে যাবেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশিরভাগ নির্বাচন ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হয়েছে। এর বাইরে নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ঝামেলাপূর্ণ ছিল। তাই আমরা বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে বলছি।”

বিএনপির কৌশল এখন স্পষ্ট সংঘাত নয়, সমঝোতার পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ পরামর্শে দলটি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে। আর আসন্ন ইউনূস-তারেক বৈঠক সেই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হয়ে উঠতে পারে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ