এআই নিচ্ছে মেটার নিরাপত্তা ভার, সাথে থাকছে মানুষও

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১১:৩০:২৫
এআই নিচ্ছে মেটার নিরাপত্তা ভার, সাথে থাকছে মানুষও

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যবহারকারীদের জন্য গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়গুলো বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন পর্যন্ত এসব বিষয়ে নতুন ফিচার চালুর আগে মানুষ নিজ হাতে যাচাই করত-যেমন শিশুদের জন্য কোনো ক্ষতি আছে কি না, বা কোনো ফিচার ভুল তথ্য ছড়াতে পারে কি না। কিন্তু এখন সেই ভূমিকার ৯০ শতাংশই পালনের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।

এই তথ্য এসেছে মেটার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে, যা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম এনপিআর (NPR)।

মেটা জানিয়েছে, যেসব ফিচার তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোর মূল্যায়ন এখন স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে। তবে এনপিআর-এর হাতে আসা নথি বলছে, ভবিষ্যতে শিশুদের ঝুঁকি, সহিংস কনটেন্ট, ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য—এই সব স্পর্শকাতর ক্ষেত্রেও এআই ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অনেক সাবেক ও বর্তমান মেটা কর্মীর মতে, এআই সবসময় জটিল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বুঝতে অক্ষম। এক সাবেক নির্বাহী বলেন, “এইভাবে এতো দ্রুত ফিচার চালু করলে ভবিষ্যতের অনেক সমস্যা আগে থেকে ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।” বিশেষ করে শিশু, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারকারীদের জন্য এর প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

মেটার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এআই ব্যবহারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে এবং বড় ও জটিল সিদ্ধান্তগুলো এখনো মানুষের হাতে রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এআই কেবল তাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে, পুরো নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে না।

মেটা আগেই জানিয়েছে, যেসব পোস্ট সরাসরি নিয়ম ভঙ্গ করে না, কিন্তু সামাজিকভাবে ক্ষতিকর—সেগুলো চিহ্নিত করতে এআই ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাইয়ের জন্য বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।

তথ্যপ্রযুক্তি ও গণতান্ত্রিক ডিজিটাল নীতিতে কাজ করা বিশ্লেষক কেটি হারবাথ মনে করেন, “এআই ব্যবহারে সময় ও শ্রম বাঁচলেও, মানুষের সরাসরি তত্ত্বাবধান অপরিহার্য।” সামাজিক প্রভাব, সাংস্কৃতিক পার্থক্য, কিংবা মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো নিরূপণ করতে এখনো মানুষের সিদ্ধান্তই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।

মেটার একজন কর্মী জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে এই স্বয়ংক্রিয় মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এখন এমন অনেক ফিচারও স্বয়ংক্রিয় যাচাইয়ের আওতায় আসছে, যা আগে শুধুমাত্র মানুষ যাচাই করত।

গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ—এসব বিষয় প্রযুক্তি কোম্পানির কাছে শুধু নীতিমালা নয়, ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জনের প্রধান উপাদান। মেটার মতো সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট যখন এই দায়িত্ব এআই-এর হাতে তুলে দেয়, তখন প্রশ্ন আসে—মানবিক মূল্যবোধ কি প্রযুক্তির হাতে নিরাপদ?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ