দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম বিদেশে জার্মান সেনা মোতায়েন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৫ ১৬:০৪:৫৬
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম বিদেশে জার্মান সেনা মোতায়েন

প্রায় ৮০ বছর পর প্রথমবারের মতো স্থায়ীভাবে বিদেশের মাটিতে সেনা মোতায়েন করল জার্মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিরক্ষামূলক নীতিতে কঠোর থাকা দেশটি এবার রাশিয়ার হুমকি ও ইউরোপীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের ভূমিকাকে আমূল বদলে ফেলেছে। চলতি সপ্তাহেই জার্মানির একটি সশস্ত্র ব্রিগেড লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে পৌঁছেছে, যা ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করছে।

ভিলনিয়াসে আয়োজিত এক সামরিক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্রিগেড মোতায়েনের ঘোষণা দেন দেশটির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ। তিনি বলেন, “আমাদের বাল্টিক মিত্রদের নিরাপত্তা মানেই আমাদের নিরাপত্তা।” রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের বিপরীতে জার্মানির এই অবস্থান স্পষ্টতই প্রতিরক্ষার বাইরে সক্রিয় ভূরাজনৈতিক পদক্ষেপ।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর পুরো ইউরোপই নতুন নিরাপত্তা কাঠামোর খোঁজে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জার্মানির এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক এবং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কৌশলগত ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চ্যান্সেলর মার্জ বলেন, “রাশিয়া শুধু ইউক্রেন নয়, বরং পুরো ইউরোপকেই নতুনভাবে গঠনের চেষ্টা করছে।”

মোতায়েনের কাঠামো ও কৌশলগত গুরুত্ব

নতুন মোতায়েনকৃত ব্রিগেডটি লিথুয়ানিয়ার রুডনিনকাই শহরে অবস্থান করবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করবে। এতে থাকবে প্রায় ৪,৮০০ সেনা, কয়েকশ বেসামরিক কর্মী, প্রায় ২,০০০ সামরিক যান এবং আধুনিক সাঁজোয়া ইউনিট।

এদিকে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেডা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রাশিয়া ও বেলারুশ আমাদের সীমান্তে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। এটা নিছক কৌশল নয়, বরং এটি একটি বার্তা।” এই পরিস্থিতিতে সুওয়াকি গ্যাপকে নিরাপদ রাখা ন্যাটোর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে, যা রাশিয়া ও বেলারুশের মধ্যে অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ করিডোর।

জার্মান সামরিক নীতির মোড় ঘোরা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান সংবিধানে সেনাবাহিনীকে কেবল প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহারের বিধান ছিল। ২০১১ সালে বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ বাতিল করে জার্মানি। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়ুস জানান, যদি পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া না যায়, তবে ২০২৬ সাল থেকে আবারও বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ইউরোপের উদ্বেগ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ এসেছে এমন এক সময় যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় নিরাপত্তায় আগ্রহ কমার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিরক্ষা নিজেরাই নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে জার্মানির মতো দেশগুলো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ