যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদে তালা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ১০:৫৩:০৯
যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদে তালা

সত্য নিউজ: লন্ডনের অভিজাত এলাকাগুলোতে অবস্থিত প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকা) মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের প্রভাবশালী সাবেক শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও স্বচ্ছতার উদ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের আদালতের নির্দেশে এই সম্পদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আহমেদ শায়ান রহমান ও তাঁর চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। তাঁরা উভয়েই বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শেখ হাসিনার সাবেক শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা।দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি এই পরিবারের যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের একটি বড় অংশ কিনা হয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান ও জার্সি-এর মতো অফশোর জোনের কোম্পানির মাধ্যমে।

জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ার-এ অবস্থিত একটি উচ্চমূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট এবং গ্রেশাম গার্ডেনসের একটি বাড়ি, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা পূর্বে অবস্থান করেছেন বলে জানিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।এই বাড়িটির মূল্য আনুমানিক ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড।

দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত রহমান পরিবার বর্তমানে আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখে রয়েছে। জানা যায়, ২০২4 সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, সালমান এফ রহমান দেশত্যাগের সময় আটক হন এবং বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির মামলা চলছে।

এদিকে, ব্রিটেনে রাজনৈতিক পদ হারিয়েছেন শেখ রেহানার কন্যা ও সাবেক ব্রিটিশ সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক, যাঁর বিরুদ্ধেও অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জানায়, এই জব্দকরণ একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ এবং তারা আরও সম্পত্তি চিহ্নিত ও জব্দের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-র নীতিনির্ধারক ডানকান হেমস বলেন, “এগুলো হল দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের সাহায্যে গড়া সম্পদ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত তাৎক্ষণিকভাবে সব সন্দেহভাজন সম্পত্তি জব্দ করা।”

আহমেদ শায়ান রহমানের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, তাঁর মক্কেল সমস্ত অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেন এবং ব্রিটিশ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হাজারো মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার প্রবণতা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”

যুক্তরাজ্যে উচ্চমূল্যের সম্পদ জব্দের এ ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতি, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। একইসঙ্গে এটি ভবিষ্যতে অবৈধ অর্থপাচার ও অফশোর সম্পদ সংরক্ষণে কঠোর নজরদারির ইঙ্গিতও বহন করছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ