প্রিমিয়ার গ্রুপের প্রতিবাদ: ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ভিত্তিহীন

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ২২:৩৪:৩৪
প্রিমিয়ার গ্রুপের প্রতিবাদ: ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ভিত্তিহীন

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, গ্রুপটির চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদের ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বানচাল করেছে। প্রিমিয়ার গ্রুপ সংবাদটিকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া ও ভিত্তিহীন” আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, এ ধরনের তথ্য প্রকাশ একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে অযথা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করেছে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সঙ্গে নিয়ম-নীতি অনুসৃত ও স্বচ্ছ ঋণ সুবিধা বজায় রেখেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে প্রায় ২৮৭ কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে সুদের বিষয়ে আলোচনা চলমান থাকা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এসব পে-অর্ডার যথাসময়ে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তা সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে জমা করা হয়েছে। কোম্পানির দাবি, সংবাদে যে “৩০০টি চেক” প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর। এগুলো কোনো চেক ছিল না, বরং ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত বৈধ পে-অর্ডার, যা ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে অসত্য।

প্রিমিয়ার গ্রুপের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের গ্রুপ সর্বদা সততা, স্বচ্ছতা এবং আইনসম্মত নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমরা প্রকাশিত মিথ্যা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি এবং মিডিয়াকে আহ্বান জানাচ্ছি ভবিষ্যতে এমন সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই করতে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।”

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, ভিত্তিহীন প্রতিবেদন কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের সুনামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রিমিয়ার গ্রুপ এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রিমিয়ার গ্রুপ নৈতিক ব্যবসা পরিচালনা, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং দেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান মেনে চলার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।


জেনে নিন আজ কোথায় কী কর্মসূচি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১০:২৭:৫৩
জেনে নিন আজ কোথায় কী কর্মসূচি
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) নানা রাজনৈতিক দল, সরকারি দফতর ও সংগঠনের কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় কাটবে। প্রতিদিনের মতো আজও বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে রাজধানীর কিছু এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। তাই সকালে বের হওয়ার আগে কোথায় কোন কর্মসূচি রয়েছে, তা জেনে নেওয়া জরুরি।

আজকের দিনের শুরুতে বিএনপির রয়েছে একাধিক কর্মসূচি। বেলা ১১টায় গুলশান চেয়ারপার্সন অফিসে অনুষ্ঠিত হবে জাসাস প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। একই সময়ে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে গণসংযোগ কর্মসূচি ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, এতে অংশ নেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেল সাড়ে ৩টায় ওয়ারী থানার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন।

বিকেল ৪টায় কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গণ প্রকৌশলী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে, এতে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একই সময়ে কলাবাগান এলাকায় ধানের শীষে ভোট চাওয়ার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। হাতিরপুল মোতালেব প্লাজার সামনে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম।

অন্যদিকে বিকেল ৫টায় আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি কারিকুলাম বাস্তবায়নে কোর ট্রেইনার প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠান, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্ট সোসাইটির মানববন্ধন। এখানে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেডসহ ন্যায্য ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। সকাল ৯টায় আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ ও বিটিআরসির প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দেশের বিভিন্ন মার্কেটের মোবাইল ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

বিকেল ৩টায় বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় শ্রমিক শক্তির আলোচনা সভা ‘জুলাই সনদে শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক অবমূল্যায়ন’। এতে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার, শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাছিরুদ্দিন পাটওয়ারী।

এছাড়া বিকেল ৪টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে আন্দোলনরত দলগুলোর বৈঠক। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে আন্দোলনরত দলগুলোর নেতারা সংবাদ সম্মেলন করবেন।

-রফিক


সোমবার ঢাকায় কোন কোন মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে জানুন

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১০:০২:১৭
সোমবার ঢাকায় কোন কোন মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে জানুন
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনের মতো আজও লাখো মানুষ কেনাকাটা, অফিস বা জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে যাচ্ছেন। তবে কেউ যদি যানজট পেরিয়ে গিয়ে দেখেন দোকানপাট বন্ধ, তাহলে পুরো সময়ই বিফলে যাবে। তাই কেনাকাটায় বের হওয়ার আগে জেনে নিন আজ সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার কোন কোন এলাকায় মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

যেসব এলাকায় আজ পুরোদিন মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে:

আগারগাঁও, তালতলা, শেরেবাংলানগর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, মিরপুর-১২, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪, ইব্রাহীমপুর, কচুক্ষেত, কাফরুল, মহাখালী, নিউ ডিওএইচএস, ওল্ড ডিওএইচএস, কাকলী, তেজগাঁও ওল্ড এয়ারপোর্ট এরিয়া, তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান-১ ও ২, বনানী, মহাখালী কমার্শিয়াল এরিয়া, নাখালপাড়া, মহাখালী ইন্টারসিটি বাস টার্মিনাল এরিয়া, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগের একাংশ, বাসাবো, ধলপুর, সায়েদাবাদ, মাদারটেক, মুগদা, কমলাপুরের একাংশ, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, শনির আখড়া, দনিয়া, রায়েরবাগ ও সানারপাড় এলাকায় আজ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

অর্ধদিবস (হাফ ডে) বন্ধ থাকবে যেসব মার্কেট:

পল্লবী সুপার মার্কেট, মিরপুর বেনারসি পল্লী, ইব্রাহীমপুর বাজার, ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্স, বনানী সুপার মার্কেট, ডিসিসি মার্কেট, গুলশান-১ ও গুলশান-২, গুলশান পিংক সিটি, মোল্লা টাওয়ার, আল-আমিন সুপার মার্কেট, রামপুরা সুপার মার্কেট, মালিবাগ সুপার মার্কেট, তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট, গোরান বাজার, আবেদিন টাওয়ার, ঢাকা শপিং সেন্টার, আয়েশা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্স এবং মিতালী অ্যান্ড ফ্রেন্ড সুপার মার্কেট।


বার্ষিক পরীক্ষার মুখে স্থবির শিক্ষা: শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্লাস বন্ধ, শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১০:০৩:৩৪
বার্ষিক পরীক্ষার মুখে স্থবির শিক্ষা: শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্লাস বন্ধ, শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা
ছবিঃ সংগৃহীত

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি আদায় এবং শিক্ষকদের ওপর 'পুলিশি হামলার' প্রতিবাদে গতকাল রোববার থেকে দেশজুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি বিদ্যালয়ের প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থীর ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বার্ষিক পরীক্ষার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে গভীর শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা।

কর্মসূচি এগিয়ে আসার কারণ ও পদত্যাগের দাবি

আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, ১৫ নভেম্বরের পর তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে অবস্থান কর্মসূচির প্রথম দিন গত শনিবার শাহবাগে 'কলম সমর্পণ' কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত হামলার ঘটনায় তারা কর্মসূচি এগিয়ে আনেন। ওই হামলায় রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করা হয়, যাতে শত শত শিক্ষক আহত হন।

শহীদ মিনারের কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা এই 'পুলিশি হামলার' প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো— দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালাবেন বলে জানিয়েছেন।

কাফনের কাপড় হাতে শপথ

তিন দফা দাবি আদায়ে কাফনের কাপড় হাতে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শপথ নিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা শপথ নেন, '১০ম গ্রেড এবং শতভাগ পদোন্নতি ছাড়া ফিরে যাবেন না।'

শিক্ষক নেতা আনিসুর রহমান আনিস বলেন, একই যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দশম গ্রেড পেলেও তারা পাচ্ছেন ত্রয়োদশ গ্রেড। বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট হয়েও তাদের দিনমজুরের অর্ধেক বেতনে চাকরি করতে হয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও ব্যয়ভার

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দুই ধাপ বাড়িয়ে একাদশ গ্রেড করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের বর্ধিত গ্রেডে বেতন দিতে বছরে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৮৩১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

তবে ১১তম গ্রেড থেকে আবার দশম গ্রেডের দাবি কেন তোলা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা আবুল কাশেম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নতুন পে-স্কেল করার জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে। পে-কমিশনের কার্যক্রম সামনে রেখে বাধ্য হয়ে তারা ১০ম গ্রেডের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, গতবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের আশ্বাসে ক্লাসে ফিরলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তারা সহকারী শিক্ষকদের একাদশ গ্রেড দিতে সুপারিশ করেছেন। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই বাস্তবায়ন হবে, এর বাইরে তাদের হাতে আর কিছু নেই।

অন্য অংশের কর্মসূচি ও নিন্দা

এদিকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শিক্ষকদের অন্য একটি অংশও একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এই মোর্চাভুক্ত সংগঠনগুলোর শিক্ষকরা অবশ্য এখন পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করছেন না।

অন্যদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ পিটিআই কর্মকর্তা সমিতি এবং বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশন এই আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। তারা শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।


রংপুরে চার হত্যার দায় স্বীকার পুলিশের, জবানবন্দিতে এল শীর্ষ কর্তাদের নাম

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ২০:৪১:২৭
রংপুরে চার হত্যার দায় স্বীকার পুলিশের, জবানবন্দিতে এল শীর্ষ কর্তাদের নাম
ফাইল ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ওই কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম সম্প্রতি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, পুলিশের ডিসি অপরাধ আবু মারুফ হোসেনসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।

কনস্টেবলের জবানবন্দি ও অস্ত্রের জব্দ

কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালাতে বাধ্য হন। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি রাইফেল থেকে ৫০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে তার গুলিতেই ওই চারজন নিহত হয়েছেন কি না, তা তিনি উল্লেখ করেননি। এ সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অফিসের সামনে কোন কোন কর্মকর্তা কী নির্দেশনা দিয়েছেন, তা তিনি জবানবন্দিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

সিআইডি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চায়না রাইফেলটি তাদের হেফাজতে নিয়েছে, যার ফরেনসিক রিপোর্টও তদন্ত সংস্থা হাতে পেয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের রিজার্ভ অফিসে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী বদলি নিয়ে তিনি খাগড়াছড়ি এপিবিএনে স্পেশালিস্ট ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। সেখান থেকেই গত ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে রংপুর সিআইডি গ্রেপ্তার করে। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর রিমান্ড মঞ্জুরের দিনেই তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

আমিরুল ইসলামকে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন না। তিনি বর্তমানে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়ে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা

ঘটনার সময় পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাদা এপিসিতে দায়িত্বে ছিলেন। ওই এপিসিতে আমিরুল ইসলাম ছাড়াও মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অপরাধ আবু মারুফ হোসেনসহ মোট ছয়জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

ওই দিন ঘটনাস্থলে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, ডিবি, এপিবিএনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের এপিসি ছাড়াও জেলা পুলিশের এপিসিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন পুলিশ সুপার শাজাহান আলী এবং জেলা পুলিশের সদস্যরাও। যৌথভাবে তারা আন্দোলন মোকাবেলা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তদন্ত সংস্থা বিভিন্ন ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করেছে।

এদিকে ওই ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। একই সঙ্গে অভিযুক্ত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নিহত ও মামলার বিবরণ

গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার পর রংপুর উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৮ ও ১৯ জুলাই তীব্র সংঘর্ষ চলে দিনভর। ১৯ জুলাই বিকালের সংঘর্ষে রংপুর সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন, ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম, স্বর্ণ কারিগর মোসলেম উদ্দিন মিলন ও শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির খুন হন।

সাজ্জাদ হোসেন হত্যা মামলা: স্ত্রী জিতু বেগম পুলিশের ছয় কর্মকর্তাসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলা: মা আম্বিয়া খাতুন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার রায়, সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান আরিফ, এসআই মামুন, এসআই গণেশ, এসআই মজনু, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলমসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

মোসলেম উদ্দিন মিলন হত্যা মামলা: বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলা: বাবা আব্দুর রহমান শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক রংপুর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ দলের ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

এসব মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি।

রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার ভারপ্রাপ্ত সুমিত চৌধুরী জানিয়েছেন, আইজিপি ও সিআইডি চিফের নির্দেশনা রয়েছে নিরপেক্ষ থেকে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ডিভাইসের ফরেনসিক রিপোর্ট, ব্যালেসটিক রিপোর্ট, ডিজিটাল প্রমাণ এবং সাক্ষীদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি তাদের কাছে রয়েছে। তিনি জানান, প্রত্যেকটি মামলায় প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক আসামি রয়েছে এবং প্রত্যেকের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। সিআইডি দ্রুতই অভিযোগপত্র দাখিল করবে।

সূত্র: যুগান্তর


পদ্মার চরাঞ্চলে অপারেশন ফার্স্ট লাইট: উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ২০:৩৫:৩৭
পদ্মার চরাঞ্চলে অপারেশন ফার্স্ট লাইট: উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র
পদ্মার চরে অপারেশন ফার্স্ট লাইট। ছবি : কালবেলা

রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ার পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে দাপিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে মোট ১১টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৬৭ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুজ্জামান কাকনের নেতৃত্বাধীন কাকন বাহিনী-এর সদস্য।

রোববার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দিনব্যাপী পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেন। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, মোটরসাইকেল, নৌযান এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের প্রেক্ষাপট ও গ্রেপ্তার

সম্প্রতি পদ্মা চরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের নিচ খানপাড়া এলাকায় ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল। গত ২৭ অক্টোবরের ওই সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কাকন বাহিনীর প্রধান হাসিনুজ্জামান কাকনসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়। এর পরই সন্ত্রাসীদের দমন ও চরাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ প্রশাসন।

রোববার ভোরে রাজশাহীর বাঘা, পাবনার আমিনপুর ও ঈশ্বরদী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে একযোগে অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে পুলিশ, র‍্যাব ও এপিবিএনের প্রায় ১ হাজার ২০০ সদস্য অংশ নেন। দুর্গম চরাঞ্চলে নৌপথে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলো ঘিরে ফেলা হয়। দিনভর অভিযান চালিয়ে মোট ৬৭ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও সন্ত্রাসী বাহিনী

রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান রোববার বিকেলে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের বিস্তারিত তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর জেলার চরাঞ্চল থেকে ৫৮ জন এবং খুলনা রেঞ্জের কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকা থেকে আরও ৯ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কাকন বাহিনীসহ ১১টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলায় সাজা রয়েছে।

ডিআইজি আরও জানান, অভিযানে রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, ২৪টি হাসুয়া, ছয়টি ডোসার, দুটি ছোরা, চারটি চাকু, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়ালসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের তথ্যমতে, পদ্মার চরে দীর্ঘদিন ধরে মণ্ডল বাহিনী, টুকু বাহিনী, সাঈদ বাহিনী, লালচাঁদ বাহিনী, রাখি বাহিনী, শরীফ কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী, চল্লিশ বাহিনী, বাহান্ন বাহিনী, সুখচাঁদ ও নাহারুল বাহিনীসহ একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রপাচার, চর দখল, জেলে ও কৃষকদের হয়রানি এবং সর্বহারা সংগঠনকে আশ্রয় দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

ডিআইজি শাহজাহান জানান, অপারেশন ফার্স্ট লাইটই শেষ নয়, বরং এটি কেবল শুরু। চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চলবে। এই অভিযানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সন্ত্রাস ও ভয়ের রাজত্ব করা পদ্মার চরে নতুন করে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


ঢাকায় একরাতে চার্চে চার বিস্ফোরণ: আতঙ্কে খ্রিস্টান সম্প্রদায়!

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১৭:৩১:০২
ঢাকায় একরাতে চার্চে চার বিস্ফোরণ: আতঙ্কে খ্রিস্টান সম্প্রদায়!
সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকায় খ্রিস্টান ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল বা দেশীয় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অন্তত চারটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি ঘটেছে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ঐতিহাসিক সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চের সামনে, যা ঘটেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে চার্চের জুবিলি উদযাপনের পূর্ব মুহূর্তে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে কাকরাইলের সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চের মূল ফটকের সামনে একটি দেশীয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। একইসঙ্গে চার্চের ভেতরে আরেকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হলেও সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ সেটি নিষ্ক্রিয় করে উদ্ধার করে।

এর কয়েক ঘণ্টা পর, শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে, মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের খ্রিস্টান পুরোহিত ও শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের সামনে আরও দুটি দেশীয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমার অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

চার্চের মুখপাত্র ফাদার বুলবুল অগাস্টিন রিবেইরো জানান, “সেন্ট মেরির জুবিলি ছিল ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় উৎসব। এই উৎসব শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে বোমা হামলা ছিল স্পষ্টতই ভয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।”

অন্যদিকে, খ্রিস্টান যোগাযোগ সংগঠন অ্যানোনিমাস PRCM-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা আপু প্ল্যাসিড বলেন, “একই রাতে দুটি স্থানে হামলা, তারও মধ্যে একটি পুরোহিতদের বাসভবনে—এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয়। দেশের সব খ্রিস্টান এখন ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।”

এই ঘটনার আগে গত ৮ অক্টোবর তেজগাঁওয়ের হোলি রোজারি চার্চেও একবার ককটেল হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজন সন্দেহভাজনকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, আগের হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে, সেন্ট জোসেফ কলেজের ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি মো. রফিক আহমেদ। তবে, কাকরাইলের সেন্ট মেরি চার্চে বিস্ফোরণের ঘটনায় রামনা থানায় এখনো কোনো মামলা বা জিডি হয়নি, বলে জানিয়েছে থানা সূত্র।

সব উদ্বেগ ও হামলার মধ্যেও শনিবার চার্চ প্রাঙ্গণে যথারীতি জুবিলি উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তরা এতে অংশ নেন। তবে চার্চের ভেতরে ও বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, “এটি শুধু কোনো একটি চার্চের ওপর হামলা নয়, এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত।” তারা দ্রুত হামলার বিচার ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।

-শরিফুল


নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা 

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১৫:৫০:১৩
নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা 
সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সমকাল

নতুন পে কমিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আগামী সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পে কমিশনের কাজ শুরু করেছে বা 'ইনিশিয়েট' করেছে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামী সরকারই গ্রহণ করবে।

রোববার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

আইএমএফের সন্তুষ্টি ও রাজস্বের চ্যালেঞ্জ

অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী ১৫ তারিখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, "আইএমএফের সঙ্গে আমার জুমে কথা হয়েছে। ওরা বলেছে, তোমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক দিকটা নিয়ে আমরা অত্যন্ত হ্যাপি। ঠিক আছে—যা যা করার তোমরা চেষ্টা করছ, করেছ।"

তিনি স্বীকার করেন যে আইএমএফের কিছু সুপারিশ আছে, যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, "ট্যাক্স-জিডিপির রেশিও লো, সেটার অনেক কারণ আছে। আমাদের লোকজন ট্যাক্স দিতে চায় না।" তিনি জানান, এনবিআর বন্ধ থাকার কারণেও বিরাট সমস্যা হয়েছে, "তবুও আমরা চেষ্টা করছি।"

আইএমএফের আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো, সামাজিক সুরক্ষার জন্য আরও বেশি ব্যয় করা উচিত, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্যের পেছনে। খাদ্য খাতে সরকার মোটামুটি ভালো করছে বলে জানান তিনি।

সংস্কার ও ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনের তিন মাস বাকি আছে, তার মধ্যে সংস্কার শেষ করা সম্ভব হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কারের কোনো শেষ নেই, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, "আমরা এটাকে একটা ভালো প্যাকেজিং করবো, প্যাকেজিং করে আমরা পরবর্তী সরকারকে দেব।" যেসব বড় সংস্কার রয়েছে, তা আগামী সরকার করবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "ইভেন আমি একটা কমিটি করেছি ট্যাক্সের ব্যাপারে। আপনারা জানেন, কিছু ইকোনমিস্টদের নিয়ে, তারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। তারা কিছু রিকমেন্ডেশন দেবে।"

তিনি জানান, ব্যাংকিং সেক্টর দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, "ব্যাংকিং সেক্টরটা মোটামুটি যেটা শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলো আস্তে আস্তে করবো। এই জিনিসগুলো আমরা আগামী সরকারের জন্য দিয়ে দেব।"

আইএমএফের ৬ষ্ঠ কিস্তি

আইএমএফের ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পাওয়া যাবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমরা রাজি হয়েছি আগেই, যে এখন কোনো প্রয়োজন নেই। ওরা রিভিউটা কমপ্লিট করেছে।" তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, "একটা রাজনৈতিক সরকার এসে কতটুকু ধারণ করে; ওটা তো একটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস।" তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির দিকে নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে আইএমএফ আবার রিভিউতে আসবে, তারপর তারা ডিসাইড করবে।


দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকরা: শুরু হলো দেশব্যাপী কর্মবিরতি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১৪:৩২:২৩
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকরা: শুরু হলো দেশব্যাপী কর্মবিরতি
ছবিঃ সংগৃহীত

তিন দফা দাবি আদায় এবং সম্প্রতি পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। রবিবার সকাল থেকে এই কর্মবিরতির পাশাপাশি শিক্ষকরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শহীদ মিনারে অবস্থানের দ্বিতীয় দিন এবং কর্মবিরতির প্রথম দিন শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।

উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবির কারণ

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পদত্যাগের এই দাবি জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা, শাহবাগে নিরীহ শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শত শত শিক্ষককে আহত করার দায় হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।

সহকারী শিক্ষকদের প্রধান তিন দফা দাবি হলো

১. ১০ম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।

২. চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান।

৩. শিক্ষকদের জন্য শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।

পুলিশি হামলা ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়ার পর বিকালে শাহবাগে এলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এই হামলায় শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন এবং একাধিক শিক্ষক আহত হন। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে আটকও করা হয়।

পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এবং আটককৃতদের মুক্তি ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবিতে শিক্ষকরা রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করেন। বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষক খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর পর সকাল থেকে আবারও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।


১ কোটি টাকার বদলে ১৮ লাখ টাকার লিফট! দুর্নীতির মহোৎসব

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ০৯:৫২:০৫
১ কোটি টাকার বদলে ১৮ লাখ টাকার লিফট! দুর্নীতির মহোৎসব
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগে লিফট কেনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ছয়টি প্রকল্পে নিম্নমানের লিফট সরবরাহ করে এই চক্র কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রকল্পের টেন্ডারে উল্লেখ ছিল ‘এ’ গ্রেড আন্তর্জাতিক মানের লিফট সরবরাহের কথা, কিন্তু বাস্তবে দেওয়া হয়েছে ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রেডের চায়না প্রোডাক্ট। দরপত্রে প্রতিটি লিফটের মূল্য ধরা হয়েছিল এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, অথচ যেগুলো সরবরাহ করা হয়েছে তাদের বাজারমূল্য মাত্র ১৮ লাখ টাকার মতো। ফলে একাধিক প্রকল্প থেকে প্রায় সাত কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এই অর্থ লোপাটে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক এসএম সাইফুল ইসলাম, উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি আলি আজগর, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী ইঞ্জিনিয়ার আরশাদ পারভেজ এবং ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। তারা একত্রে বন্দরে এমন একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যারা নিয়মবহির্ভূতভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে “ওয়ার্কস” হিসেবে সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের পক্ষে সুবিধা নিশ্চিত করেছে। সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, লিফট কেনা পণ্য শ্রেণির (গুডস) প্রকল্পের আওতায় পড়ে এবং এতে আন্তর্জাতিক মান যাচাই বাধ্যতামূলক। কিন্তু “ওয়ার্কস” হিসেবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ফলে আন্তর্জাতিক মান যাচাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, যা দুর্নীতির একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

২০২২ সালে বন্দরের চার নম্বর গেটের ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসিং বিল্ডিং’-এর জন্য চারটি ‘এ’ গ্রেড লিফট সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করা হয়। শর্ত ছিল জাপানের ফুজিটেক, হিটাচি, মিৎসুবিশি, ফিনল্যান্ডের কোনে, যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্সের ওটিস বা জার্মানির থাইসেনক্রুপের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের লিফট সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ‘ফুজাও, ফুজি এলিভেটেড কো. লি., চায়না’ নামের নিম্নমানের লিফট, যার প্রতিটির দাম সর্বোচ্চ ১৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির কাজ পেয়েছিল ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিষ্ঠান ‘এ অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল’। তিনি চারটি নিম্নমানের লিফট সরবরাহ করেন এবং এর মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেন।

একই ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে বন্দর হাসপাতাল সংলগ্ন ফার্স্ট ক্লাস অফিসার্স কোয়ার্টার, অফিসার্স ডরমিটরি, স্টোর ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও কার শেড প্রকল্পেও। এসব জায়গায় ‘এ’ গ্রেডের পরিবর্তে ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’ গ্রেড লিফট বসানো হয়েছে। এভাবে ছয়টি প্রকল্পে সাত কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এ অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল’, ‘ম্যাক্সওয়েল সিমেন্স পাওয়ার প্লাস’, ‘এবিএম ওয়াটার কোম্পানি’ ও ‘গ্রিন ডট’। এগুলোর মালিক যথাক্রমে মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং আতাউল করিম সেলিম। বন্দরের কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটায়। ঠিকাদাররা জানান, এখন বন্দরে টেন্ডার মানে এক ধরনের ‘প্যাকেজ সিস্টেম’, যেখানে আগেই ঠিক করে রাখা হয় কে কাজ পাবে, বাকিরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ‘এ’ গ্রেড লিফটে উচ্চমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ইউরোপীয় গিয়ারলেস মোটর, কার্বন স্টিল রোপ, অয়েল ফ্রি প্রযুক্তি এবং সার্টিফায়েড কন্ট্রোল ইউনিট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বন্দরে স্থাপিত লিফটগুলোতে এসব উপাদান অনুপস্থিত। একজন প্রকৌশলী বলেন, “এই লিফটগুলো শুধুই নিম্নমানের নয়, এগুলো কর্মীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।” অনেক ভবনে এসব লিফট বারবার আটকে যাচ্ছে, সার্ভিসিং করতে হচ্ছে ঘন ঘন, অথচ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নীরব।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সিন্ডিকেটে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তা বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও তথ্য রয়েছে। বিষয়টি এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে এসেছে।

এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত একটি প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর এমন অনিয়ম চলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এক কোটি ১৫ লাখ টাকার লিফটের জায়গায় ১৮ লাখ টাকার লিফট বসানো মানে রাষ্ট্রীয় অর্থ সরাসরি লুট। এটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির স্পষ্ট উদাহরণ।” তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিনজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী মনে করেন, বন্দরে স্থাপিত লিফটগুলোর মান ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য একটি স্বাধীন টেকনিক্যাল অডিট টিম গঠন করা জরুরি। তারা বলেন, “এ’ গ্রেডের টেন্ডারে যদি ‘সি’ গ্রেড লিফট বসানো হয়, তাহলে এটি কেবল আর্থিক নয়, জননিরাপত্তার বিরুদ্ধেও অপরাধ।”

ঠিকাদার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “কোন ধরনের লিফট সরবরাহ করা হয়েছে, তা প্রকৌশলীরাই ভালো জানেন।” পরে আর কোনো মন্তব্য না করে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। বন্দরের বিদ্যুৎ বিভাগের পরিচালক এসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, “সরেজমিনে দেখে তারপর প্রতিবেদন লিখুন।” উপপ্রধান প্রকৌশলী মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনাল অফিসার মো. নাসির উদ্দিন বলেছেন, “এটি ভয়াবহ দুর্নীতির একটি অংশ। আমরা তদন্ত করব এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত

মশলা কিনতে এসে দেশ দখল: যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাইভেট আর্মি!

মশলা কিনতে এসে দেশ দখল: যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাইভেট আর্মি!

কল্পনা করুন এমন একটি প্রাইভেট কোম্পানির কথা, যা এতটাই শক্তিশালী যে সে তার গ্রাহকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, দেশ... বিস্তারিত

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় মহা সাফল্য: নতুন ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষায় শতভাগ কার্যকারিতা

ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন। নতুন এক ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রাথমিক মানবদেহে পরীক্ষায় শতভাগ সাড়া পাওয়ার দাবি... বিস্তারিত