জুলাই গণঅভ্যুত্থনের আহতদের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে ১২ কোটি টাকা: ফারুক-ই আজম

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৭:৫৪:২৮
জুলাই গণঅভ্যুত্থনের আহতদের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে ১২ কোটি টাকা: ফারুক-ই আজম

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থনে আহতদের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ১২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম। আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকার বিস্তৃত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার (৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফারুক-ই আজম। আলোচনা সভার শিরোনাম ছিল—‘কেমন আছে জুলাই ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থানে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবার এবং আহত শ্রমিকেরা’। ভার্চুয়ালি সভার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

ফারুক-ই আজম বলেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতি মাসে আহত ব্যক্তিদের ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, তাদের এককালীন অনুদানও দেওয়া হয়েছে। আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এ জন্য তাদের ‘হেলথ কার্ড’ সরবরাহ করা হয়েছে, যা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে কার্যকর হবে।

চিকিৎসার প্রয়োজনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জন আহত শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া ও তুরস্কে। বর্তমানে ৩৪ জন এখনও থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং প্রত্যেকের সঙ্গে তাদের একজন নিকট আত্মীয়ও আছেন।

তিনি বলেন, কার কোথায় চিকিৎসা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করে একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড, যেখানে দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। এই বোর্ডই আহতদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তাও মূল্যায়ন করছে। সরকার এমন এক পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে প্রত্যেক আহত ব্যক্তি নিজ পছন্দ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারেন। যাদের প্রাথমিক দক্ষতা নেই, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

তবে কোটা সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই গণআন্দোলন নিজেই কোটা বিরোধী হওয়ায় তাদের জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তবুও সরকার নিশ্চিত করতে চায়, যাতে কেউ বেকার না থাকে এবং সবাই সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে।

আহত ও শহীদদের সেবা দেওয়ার জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এই অধিদপ্তর একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে এবং সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুরোপুরি এই কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন।

গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে ফারুক-ই আজম বলেন, সরকার এই ঘটনাকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা কেবল ছাত্র বা শ্রমিকদের নয়, বরং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফল। এটি ছিল জাতীয় চেতনার প্রতিফলন, এবং সরকার চায় এই আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি স্বচ্ছ রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করুক।

তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। এখন সব রাজনৈতিক শক্তি একসঙ্গে বসে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তার মতে, রাষ্ট্রের সব সম্পদ দিয়েও এই ত্যাগের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। তবে শহীদ ও আহতদের পরিবার যাতে তাদের আত্মত্যাগের গৌরব বহন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশের মূল সমস্যা অব্যবস্থাপনা। মনোভাব বদলালে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, স্কপের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারসহ আরও অনেকে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ