যা থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ০৮:২৭:০৮
যা থাকছে জুলাই ঘোষণাপত্রে
ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ৫ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে, দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করলেন ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। ঐতিহাসিক ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মারক দলিল হিসেবে এই ঘোষণাপত্রকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার ও গণতন্ত্রের পুনর্নির্মাণে ভবিষ্যৎ কর্মপথ নির্ধারণ করছে।

এই ঘোষণাপত্রে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে বাংলাদেশ গণআন্দোলন ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে, আবার কীভাবে সময়ের প্রবাহে তা একচ্ছত্র শাসনের কাছে বিপন্ন হয়। দলিলটিতে ২৮টি ধারায় তুলে ধরা হয়েছে অতীতের রাজনৈতিক ব্যর্থতা, বর্তমান সংকট এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের অঙ্গীকার।

‍অতীতের প্রেক্ষাপট: স্বাধিকার থেকে বিকৃতি

ঘোষণাপত্রের শুরুতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নকালে কাঠামোগত দুর্বলতা ও গণইচ্ছার যথাযথ প্রতিফলন না ঘটার কারণে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় একদলীয় বাকশাল শাসনব্যবস্থা, বাক-স্বাধীনতা হরণ, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খর্ব এবং জনগণের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব, ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান, এবং পরবর্তীতে নানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণ বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট থেকেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে ‘ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা দেশের রাজনৈতিক-সাংবিধানিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে বলে দলিলটি উল্লেখ করে।

ষড়যন্ত্র, দমননীতি ও গণআন্দোলনের অভ্যুদয়

ঘোষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ১/১১-পরবর্তী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, একদলীয় দখলদারিত্ব, রাষ্ট্রীয় দমননীতি, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিদেশি প্রভুত্ব মেনে নেওয়ার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রের’ পথে ঠেলে দেয়।

ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, একের পর এক প্রহসনের নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তরুণ সমাজের ক্ষোভ, ছাত্র ও চাকরি প্রার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং বৈষম্যমূলক কোটানীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্রমে এক জাতীয় গণজাগরণে রূপ নেয়।

জুলাই অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদের পতন

দলিল অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক অসহযোগ এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের ঢাকা অভিমুখে জনতার দীর্ঘ পদযাত্রার চূড়ান্ত মুহূর্তে শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন এবং দেশত্যাগ করেন। এরপর ‘অবৈধ দ্বাদশ সংসদ’ বাতিল করে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে।

এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জনগণের ‘গণ-সার্বভৌমত্বের’ ভিত্তিতে প্রণীত এই ঘোষণাপত্রটি গণঅভ্যুত্থানের সার্বিক ব্যাখ্যা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার এবং নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে মূল অঙ্গীকার ও প্রস্তাব

  • ঘোষণাপত্রে কয়েকটি মূল দিক তুলে ধরা হয়:
  • ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে
  • আন্দোলনে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হবে
  • অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ গঠন ও সংবিধান সংস্কার নিশ্চিত করা হবে
  • আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচারিক স্বাধীনতা ও দলীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে
  • বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধনির্ভর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ন্যায়ের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে
  • ৫ আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই ঘোষণাপত্র পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংশোধিত সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত থাকবে

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ