ড. ইউনূসের নির্বাচনের ঘোষণায় বিএনপির প্রতিক্রিয়া

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ০৮:০৮:২০
ড. ইউনূসের নির্বাচনের ঘোষণায় বিএনপির প্রতিক্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, রমজানের পূর্বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান একটি নির্ভরতা ও স্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে অনিশ্চয়তা, দ্বিধা ও রাজনৈতিক সংশয় বিরাজ করছিল, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা অনেকাংশেই কেটে গেছে বলে মত দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা।

বিএনপি এই নির্বাচনী ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বক্তব্যে নির্বাচন সংক্রান্ত দোদুল্যমানতা দূর হয়েছে। বিএনপির মতে, এই ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম হবে। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে খুব শিগগিরই।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্বাচন বিষয়ে যে স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক। তিনি মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ইঙ্গিত এবং প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি বার্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন এখন আশ্বস্ত হতে পারবে এবং সময়সূচি চূড়ান্ত করতে পারবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনাস্থা ও বিভ্রান্তি অনেকটাই কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তার মতে, সরকারের সঙ্গে বিরোধী পক্ষের যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ছিল, তা কিছুটা হলেও কমবে এই ঘোষণার পর।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটি নির্ধারিত ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য। তারা মনে করেন, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ফলে জনমনে আশার সঞ্চার হবে এবং রাজনৈতিক কাঠামোতে নতুন গতি আসবে। তবে এই নির্বাচনের প্রকৃত গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সকল পক্ষের জন্য সমান সুযোগ এবং একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান যেন অবিলম্বে এমন একটি নির্বাচনি কাঠামো তৈরি করা হয় যেখানে জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু নির্বাচনী সময় ঘোষণা করার বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, শুধু সময় ঘোষণা করলেই চলবে না, বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতে ও ন্যায়বিচারমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাই এখন চ্যালেঞ্জ।

ইসলামি গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল বলেন, দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী ও ভোট দিতে প্রস্তুত। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণা রাজনৈতিক দিক থেকে একটি সাহসী পদক্ষেপ। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে আসবে এবং নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা দূর হবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এই ঘোষণাকে এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখলেও বলেন, এখনও ডিসেম্বরের মধ্যেও নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। তার মতে, প্রধান উপদেষ্টার এই বার্তা সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলে তা আরও কার্যকর হতো।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, তাদের দল অনেক আগেই ধারণা করেছিল যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। তাই এই ঘোষণায় তাদের পক্ষে নতুন কিছু নয়। তবে প্রক্রিয়ার ধরন নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। এনডিএম-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বুধবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ‘আনন্দ মিছিল’-এর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটির দফতর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের নির্ধারিত সময় ঘোষণা করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা হবে।

-রাফসান

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ