সিরাজগঞ্জ থানায় পুলিশ হত্যাকাণ্ড

নিহতের এক বছর, বিচার শুরু হয়নি এখনও

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১১:৩৯:১০
নিহতের এক বছর, বিচার শুরু হয়নি এখনও
ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হামলায় নিহত হন পুলিশের ১৫ সদস্য। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এ ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি। নিহত কনস্টেবল হাফিজুর ইসলামের স্ত্রী রোকসানা আক্তারের কণ্ঠে ফুটে ওঠে শহীদ পরিবারগুলোর বেদনা “আমার স্বামী থানায় ডিউটিতে গিয়েছিলেন, ফিরলেন লাশ হয়ে। এখন শুনছি খুন হওয়া কোনো পুলিশের লাশেরই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসেনি। বিস্ফোরক পরীক্ষার রিপোর্টও মেলেনি। তাহলে বিচার কবে হবে?”

ঘটনার দিন দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ থানার সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ওসি আব্দুর রাজ্জাক নিজেই মাইক হাতে আহ্বান জানান। ছাত্ররা সরে যাওয়ার পর, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় হাজার সশস্ত্র মানুষ থানায় হামলা চালায়। তারা থানায় ঢুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে সাত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। ভেঙে ফেলা হয় থানার অস্ত্রাগার। লুট করা অস্ত্র ও গুলিতে চলে এলোপাতাড়ি গুলি। নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকেও লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

এই ঘটনার ২১ দিন পর এসআই আব্দুল মালেক বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬৭২ জনকে নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয় হাজার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ উদ্দিন জানান, এখনো ময়নাতদন্ত ও সিআইডির বিস্ফোরক পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না আসায় চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এই ঘটনায় সিরাজগঞ্জ সদর, এনায়েতপুর ও উল্লাপাড়া থানায় আরও ৮টি মামলা হয়। সবগুলো মামলার তদন্তই এখনো ঝুলে আছে। নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে বিচারের প্রতীক্ষায় আছেন। হাফিজুর ইসলামের স্ত্রী বলেন, “সরকার কিছু অনুদান দিয়েছে, কিন্তু বিচার কবে হবে কেউ বলতে পারে না। আমার ছোট ছেলে এখনো বাবার পথ চেয়ে বসে থাকে।”

নিহত ওসি আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে পুলিশ সপ্তাহ পালন হয়, শহীদদের ফুল দিয়ে স্মরণ করা হয় কিন্তু যেসব দুষ্কৃতকারী আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করল, তারা কি কোনোদিন ধরা পড়বে না?”

ঘটনার জেরে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আরও ২০টির বেশি মামলা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরী, তানভীর ইমাম, চয়ন ইসলাম, আব্দুল আজিজ এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিরাজগঞ্জ বারের সাবেক পিপিসহ অন্তত ১৬৩ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।

-রফিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ