‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন আজও অসম্ভব, দলগুলোর মধ্যে ফাটল গভীর

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ০৭:৩৬:২১
‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন আজও অসম্ভব, দলগুলোর মধ্যে ফাটল গভীর
ছবি : যায়যায়দিন

২০২৩ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের অন্যতম আলোচিত বিষয় ‘জুলাই সনদ’ দ্রুত প্রণয়ন ও স্বাক্ষরের আশায় সাড়া পূর্ণ হয়নি। চলতি জুলাই মাসের শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার হলেও ঐকমত্য কমিশনের দেয়া খসড়া সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এবং গুরুত্বপূর্ণ আটটি সংস্কার ইস্যুতে অসংমতি থাকায় স্বাক্ষর অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে ছয় মাসের জন্য গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মেয়াদ শেষ হলেও তা বাড়িয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিগত কয়েক মাস ধরে দলের পার্থক্য এবং মূল সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর মতৈক্যহীনতার কারণে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর খসড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (আজ) একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া দলগুলোকে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগেই দলগুলোর কাছে খসড়া নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা হবে এবং সর্বোচ্চ দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।

গত বছর অক্টোবর মাসে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার নিয়ে ছয়টি স্বাধীন কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই কমিশনগুলো ফেব্রুয়ারি মাসে সুপারিশ পেশ করলে, তা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। ঐকমত্য কমিশন ছয় মাসের মধ্যে এসব সুপারিশ দুই ভাগে ভাগ করে একটি অংশ আইন ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে। ইতোমধ্যে সেই অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে, ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কারে মতপার্থক্য থাকায় দ্বিতীয় ধাপে দলগুলোর সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়। এখনো বেশ কিছু ইস্যুতে দলগুলোর মতানৈক্য বিরাজ করছে।

অর্থাৎ, ১২টি বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি মেয়াদ সীমা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বিষয়ক বিধান, হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ইসির গঠন পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার।

তবে এখনও আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। এগুলো হলো—সংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ চারটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচন, সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি ও নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।

গতকাল বুধবার দলের সঙ্গে বৈঠকে এগুলোর মধ্যে মাত্র নারী আসন নিয়ে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও বাকি বিষয়গুলোতে এখনও সমাধান হয়নি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বেশ কিছু সংস্কার ইতোমধ্যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে, বাকিগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হচ্ছে এবং নির্বাচিত সরকার আসলে এগুলো বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি ছাড়া কার্যকর হবে না। সংসদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে এর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনটি আইনি পদ্ধতিতে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, গণভোট এবং রেফারেন্ডাম এর আইনি ভিত্তি গড়ে তোলা যেতে পারে। তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি না দিলে এতদিনের আলোচনাই শুধু সময়ক্ষেপণ।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে এবং এর আইনি ভিত্তি দিতে হবে। ব্যত্যয় হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আদায় করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ আইনিভাবে গ্রহণ না হলে সেটি কেবল একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসাবেই থাকবে, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে কার্যকর হবে না।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ