যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে উঠছে শক্তিশালী উপগ্রহ 'নিসার'

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১০:৫১:১৭
যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে উঠছে শক্তিশালী উপগ্রহ 'নিসার'
ছবিঃ সংগৃহীত

বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ — পৃথিবীর ভূমি ও বরফের পৃষ্ঠে সূক্ষ্ম পরিবর্তন নজরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথভাবে নির্মিত এক অত্যাধুনিক রাডার স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। ‘নিসার’ (NISAR - NASA-ISRO Synthetic Aperture Radar) নামের এই উপগ্রহটি প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) ইসরোর জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (GSLV) রকেটে চড়ে মহাকাশে যাত্রা করবে এই ট্রাক-আকারের মহাকাশযানটি। এটি এমন এক সময়ে উৎক্ষেপণ হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মহাকাশ সহযোগিতা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দুই দেশের বৈজ্ঞানিক বন্ধুত্বের একটি ‘ঐতিহাসিক’ নিদর্শন।

নাসার পৃথিবী বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ক্যারেন সেন্ট জারমেইন বলেন, "আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠে প্রতিনিয়ত নানা রকম পরিবর্তন ঘটে—কখনও ধীরে, কখনও হঠাৎ। কখনও সেগুলো স্পষ্ট, কখনও এতটাই সূক্ষ্ম যে সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না।"

নিসার এমন সূক্ষ্ম পরিবর্তনও শনাক্ত করতে পারবে, যা মাত্র এক সেন্টিমিটার (০.৪ ইঞ্চি) পরিমাণ ভার্টিক্যাল ওঠানামা বোঝাতে পারে। ফলে ভূমিকম্প, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও, পুরনো বাঁধ, সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামোর দুর্বলতা আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

উপগ্রহটির ১২ মিটার লম্বা রাডার ডিস্ক মহাকাশে গিয়ে বিস্তৃত হবে, যা প্রতি ১২ দিনে দুইবার করে পৃথিবীর প্রায় সব ভূমি ও বরফ ঢাকা অঞ্চল স্ক্যান করবে। এটি ৭৪৭ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে উপগ্রহ চিত্র পাঠাবে।

নিসার দুই ধরনের মাইক্রোওয়েভ রাডার ব্যান্ড ব্যবহার করবে—এল-ব্যান্ড ও এস-ব্যান্ড। এল-ব্যান্ড বড় গাছপালার ওপর নজরদারিতে উপযোগী, আর এস-ব্যান্ড কম উচ্চতার গুল্মজাত উদ্ভিদের ওপর নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে সক্ষম।

এই মহাকাশ প্রকল্পের খরচের বড় অংশ বহন করেছে নাসা—প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার, আর ইসরো ব্যয় করেছে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার। উপগ্রহটির অংশবিশেষ তৈরি হয়েছে দুই মহাদেশে—নাসা ও ইসরোর দুটি পৃথক গবেষণা কেন্দ্রে। পরে সেগুলো একত্র করে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা হয় বেঙ্গালুরুর স্যাটেলাইট ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড টেস্টিং স্থাপনায়।

ভারতের মহাকাশ অভিযানে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। ২০১৪ সালে তারা মঙ্গলের কক্ষপথে একটি অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করে এবং ২০২৩ সালে চাঁদে একটি রোবটিক যান পাঠায়। সম্প্রতি ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সফল যাত্রা করেন—যা ২০২৭ সালে নির্ধারিত ভারতের নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযানের (‘গগনযান’) পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিসার প্রকল্প শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং বৈশ্বিক দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণের দিক থেকেও যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

-ফাতিমা , নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ