ভুয়া ভিডিওতে জড়িয়ে দেওয়া হলো সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাকে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৯ ১১:৩২:১৭
 ভুয়া ভিডিওতে জড়িয়ে দেওয়া হলো সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাকে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভুয়া বক্তব্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর অধীন ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাফ্যাক্ট’। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ এটি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জনবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করার একটি নিন্দনীয় উদাহরণ।

বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুলশানে সংঘটিত সাম্প্রতিক চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তার নাম ব্যবহার করে একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটিতে দাবি করা হয় যে, গুলশানে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নাকি বলছেন, “চাঁদাবাজ হোক বা যাই হোক, ওরা তো আমাদেরই সন্তান। হ্যাঁ, গুলশানে যে ধরা পড়েছে সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি, বলেছে আর করবে না।”

বাংলাফ্যাক্ট বলছে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি, যা ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভিডিওটির গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হয়েছে, এটি কোনো সংবাদ সম্মেলন বা টিভি সাক্ষাৎকারের রেকর্ড নয়, বরং গুগলের একটি এআই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে, যেটি লেখাকে রূপান্তর করে কণ্ঠসহ ভিডিও আকারে উপস্থাপন করতে সক্ষম।

ভিডিওটির বাম নিচের কোণে ‘VIO’ লেখা দেখা গেছে, যা গুগলের ‘Video to Text to Speech’ প্রযুক্তি বা ভিও টুলের একটি চিহ্ন। এছাড়া ভিডিওতে ব্যবহার করা ইংরেজি সাবটাইটেলে একাধিক ব্যাকরণগত ভুল, অস্বাভাবিক শব্দচয়ন এবং অনুচিত বাক্য গঠন পাওয়া গেছে, যা ভিডিওটির কৃত্রিমতা ও অসত্যতা আরও স্পষ্ট করে তোলে।

গত ২৬ জুলাই রাজধানীর গুলশানে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসভবনে প্রবেশ করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে পুলিশ অভিযানে পাঁচজনকে আটক করে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, অভিযুক্তদের উভয় সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পটভূমিতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াতে কৃত্রিম ভিডিও নির্মাণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির প্রতি ভুল বার্তা ছড়ানো হয়।

ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া গবেষণায় অভিজ্ঞ বাংলাফ্যাক্ট এই ভিডিওটি যাচাই করে নিশ্চিত করে যে এটি একটি ডিজিটাল কারসাজি। এই সংস্থা নিয়মিতভাবে গুজব, ভুয়া খবর, অপতথ্য ও ডিজিটাল বিভ্রান্তি শনাক্তে কাজ করে যাচ্ছে। তারা কেবল বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করেনি, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিশদ বিশ্লেষণ, ব্যাকরণ ত্রুটি এবং সোর্স যাচাই করে ভিডিওটির ভিত্তিহীনতা প্রকাশ্যে এনেছে।

বাংলাফ্যাক্টের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, এই ভিডিওর বক্তব্যের পক্ষে কোনো সরকারি নথি, সংবাদ প্রতিবেদন বা সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়নি। ফলে এটি ১০০ ভাগ ভিত্তিহীন এবং গুজব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি।

-রাফসান


এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৫:০৩:৫৩
এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প

লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে একটি নতুন তথ্যচিত্র— “বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”। এতে মূলত শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯–২০২৩) সংঘটিত দুর্নীতি, বিপুল অর্থ পাচার এবং সেই অর্থ পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জকে ঘিরে বিশদ অনুসন্ধান তুলে ধরা হয়েছে। তথ্যচিত্রে রাজনীতিক, আন্দোলনকারী, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও আলোচিত হয়েছে।

দুর্নীতির ব্যাপ্তি ও অভিযোগ

এফটির ভাষ্যে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে—যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থ পাচারের ঘটনা। তথ্যচিত্রে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশে দুর্নীতির পরিমাণ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় নজিরবিহীন”।

বড় প্রকল্পে দুর্নীতি, ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, ভুয়া ঋণ এবং হুন্ডি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাজ্যকে এই পাচারকৃত অর্থের প্রধান গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ভূমিকা ও সম্পদ পুনরুদ্ধার

তথ্যচিত্রে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রিয়েল এস্টেট খাত ও আর্থিক বাজার বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল। জাতীয় অপরাধ দমন সংস্থা (NCA) ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে অন্তত ৩৫০টি সম্পদ চিহ্নিত ও ফ্রিজ করেছে, যার অধিকাংশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে, যিনি একাই যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক বলে এফটির তদন্তে দাবি করা হয়।

ছাত্র আন্দোলন ও হাসিনার পতন

তথ্যচিত্রে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়। পুলিশের গুলি, নিখোঁজ, দমননীতি এবং হাজারো হতাহতের ঘটনায় সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। আগস্টের ৫ তারিখে যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আন্দোলনে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন।

পারিবারিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক বিতর্ক

তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের নামও উঠে এসেছে। বিশেষত যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত শেখ রেহানার কন্যা ও লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে দুর্নীতির অর্থে অর্জিত সম্পদ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে, যদিও তিনি তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।

ব্যাংক খাত দখল ও অর্থ পাচার কৌশল

এফটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশ গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর সহায়তায় একাধিক ব্যাংক দখল করে নেয়। ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে বন্দুকের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, পরে নিজেদের লোক দিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। এরপর ভুয়া ঋণ অনুমোদন দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়।

হুন্ডি বা অবৈধ মানি ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক ছিল এ অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও বিপুল অর্থ বিদেশে চলে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা ও সম্পদ পুনরুদ্ধার

শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি প্রাক্তন আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান মন্সুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্সের প্রধান করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ইতোমধ্যেই দেউলিয়া ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে অভিযান শুরু হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুল অর্থ ফেরত আনা একটি “ঐতিহাসিকভাবে জটিল প্রক্রিয়া”। প্রমাণ সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আইনি প্রক্রিয়াই নির্ধারণ করবে কতটা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এই তথ্যচিত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শেখ হাসিনা শাসনামলের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের চিত্রকে নতুনভাবে সামনে এনেছে। এতে যেমন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ও বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ভূমিকার দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণ একটি দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এনেছে, তা এখন পরীক্ষার মুখে—এই হারানো বিলিয়ন ফেরত আনার মাধ্যমে কি সত্যিই দেশ একটি টেকসই ও জবাবদিহিমূলক পথে অগ্রসর হতে পারবে?


১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৪:৪৬:৫৩
১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তার ভাষায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো জাতি প্রস্তুত এবং সরকার আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাগুরায় ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদের পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্ষা শেষ হলেই গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় নির্বাচনী আবহ তৈরি হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর যারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তারাও এবার নতুন প্রজন্মের সঙ্গে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করবেন।

তিনি আরও জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে। সমঝোতার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, আর এই সংস্কার এখন দৃশ্যমান রূপ পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সংস্কারের কাজ অব্যাহত রয়েছে এবং তা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

শফিকুল আলম সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়েও মন্তব্য করেন। তার মতে, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি

সামগ্রিকভাবে প্রেস সচিবের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং তা জাতির জন্য একটি গণতান্ত্রিক উৎসব হিসেবে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই নির্বাচনকে একটি নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।


দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ, উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১১:০০:০১
দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ, উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং এর বিপরীতে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। কারণ এই ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ বর্তমানে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। নতুনভাবে গঠিত ব্যাংক শতভাগ সরকারি মালিকানায় পরিচালিত হবে এবং এর জন্য নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।

একীভূত হওয়ার তালিকায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল। তবে বাকি চারটি ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যায়। নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর এসব ব্যাংকে শুরু হয় ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট, যার বড় অংশ পাচার হয়ে যায় বিদেশে। ফলস্বরূপ ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নীতি সহায়তা দিয়ে আসছিল এবং ব্যাংকগুলোর জন্য গ্যারান্টি দিয়েছিল। তবুও ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি ওয়ার্কিং কমিটির আসন্ন বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে এবং পরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে আসবে ২০ হাজার কোটি টাকা, আমানত বিমা তহবিল থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসবে ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। নতুন ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সরবরাহ ও নীতি সহায়তা প্রদান করবে।

একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায় নতুন ব্যাংকের নামে হস্তান্তর করা হবে। বর্তমানে এই ব্যাংকগুলোর রয়েছে ৭৬০টি শাখা ও ৬৯৮টি উপশাখা। অনেক এলাকায় একাধিক শাখা থাকায় সেগুলোকে পুনর্বিন্যাস করা হবে। সুবিধাজনক শাখা রাখা হবে এবং বাকি শাখাগুলো অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা হবে যাতে ব্যাংকটির কার্যক্রম লাভজনক হয়। একইভাবে, কাছাকাছি অবস্থিত শাখাগুলো সমন্বয় করে কার্যকর অবস্থানে আনা হবে।

বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের পাঁচজন সিইও আছেন। তবে নতুন ব্যাংকে থাকবেন একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি নতুনভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান কোনো এমডি ওই পদে যেতে পারবেন না। তবে নিচের স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হবে না, প্রয়োজনে তাদের পদ বা কর্মস্থলে পরিবর্তন আনা হতে পারে।

উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে, কারণ ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ ঋণাত্মক এবং শেয়ারের বিপরীতে কোনো সম্পদ অবশিষ্ট নেই। বরং তারা লোকসানে রয়েছে। তাই উদ্যোক্তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। তবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করছে।

অন্যদিকে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সাময়িক মোরাটোরিয়াম আরোপ হতে পারে, যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমানতকারীরা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে অর্থ তুলতে পারবেন। তবে এটি সাময়িক ব্যবস্থা। কারণ সরকারি মালিকানায় নতুন ব্যাংক গঠনের পর গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে এবং নতুন আমানতের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত করা হবে যাতে দ্রুত তারল্য সংকট কেটে যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ক্ষেত্রেও সমাধান রাখা হয়েছে। যেসব প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকের বিপুল অঙ্কের অর্থ ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না, তাদের নতুন ব্যাংকের শেয়ার প্রদান করা হবে। যেহেতু ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় থাকবে, তাই তারা এ শেয়ার নিতে আগ্রহী হবেন বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

-রাফসান


ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন সামনে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জোর দিলেন ড. ইউনূস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ০০:২৫:২৭
ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন সামনে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জোর দিলেন ড. ইউনূস
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি- সংগৃহীত।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন সরকারের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন আয়োজন বা বিচারকাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; সমান গুরুত্ব দিতে হবে সংস্কার কার্যক্রম ও জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে। তাঁর মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান ম্যান্ডেটের অন্যতম হচ্ছে সংস্কার, যা ভবিষ্যতের জন্য পথনির্দেশক হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া প্রস্তাবনা এবং কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে জানানো হয়, কমিশন খুব শিগগির তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে জমা দেবে।

ড. ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন। এটি শুধু সাধারণ ভোট নয়, বরং আগামীর বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে তা নির্ধারণের অন্যতম মোড় ঘোরানো ঘটনা। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌলিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প কোনো পথ নেই।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। এসব প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। কমিশন আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে, যাতে বিষয়টি সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আইনবিদ আসিফ নজরুল, পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও বৈঠকে যোগ দেন।

ড. ইউনূসের বক্তব্য ও কমিশনের আলোচনার প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এখন জাতীয় অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে। নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার—এই তিন ম্যান্ডেট সমান্তরালভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এবং আগামীর বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে।


জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার জরুরি: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ২৩:৫৪:৩০
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার জরুরি: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই জুলাই সনদের সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। তাঁর মতে, এই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোই ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি শক্তিশালী করার প্রধান নির্দেশনা হতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে গঠিত হয়েছে। তবে দলটি আহ্বান জানিয়েছে, সংবিধান নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ না নিতে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ইতোমধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল লিখিত মতামত জমা দিয়েছে। এর মধ্যে নির্বাহী আদেশ, অধ্যাদেশ জারি এবং অফিস আদেশসহ ছয় ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য ১৯টি মৌলিক বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এর আগে সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির এই নেতা। সেখানে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর মতে, নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের ইতিবাচক কিছু অর্জন থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে সেই অর্জনের মূল্য থাকবে না অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধনের অনুমোদন দিতে পারে। ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় গেলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং গণতান্ত্রিক বৈধতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।


জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে আর জিডি করতে হবে না: ইসি

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:১৬:২৪
জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে আর জিডি করতে হবে না: ইসি
ছবিঃ সত্য নিউজ

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হারানোর ক্ষেত্রে আর জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করতে হবে না বলে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির এনআইডি উইংয়ের সহকারী পরিচালক (ভ্যালিড অ্যান্ড ভেরিফাই) মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি মঙ্গলবার জারি করা হয়। এতে বলা হয়, প্রথম এনআইডি হারালে দ্বিতীয় এনআইডি পেতে জিডি জমা দেওয়ার শর্ত আর থাকছে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে নাগরিকদের জন্য এনআইডি সেবা হবে আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত।

এনআইডি সংশোধন ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৯ লাখ ৭ হাজার ৬৬২টি সংশোধন আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ইসি। একই সময়ে মোট ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৬টি আবেদন জমা পড়েছিল।

ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এই উদ্যোগ নাগরিকদের এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত ভোগান্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে এবং সেবার গতি ও মান বাড়িয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নতুন নীতি নাগরিকদের দ্রুত এনআইডি পুনঃপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডি বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ায় এনআইডি হারানোর পর নাগরিকদের সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে। তাছাড়া, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

-নাজমুল হোসেন


কর ফাঁকি তদন্তে শেখ হাসিনার ব্যাংক লকার সিলগালা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:০৭:৪৫
কর ফাঁকি তদন্তে শেখ হাসিনার ব্যাংক লকার সিলগালা
ছবিঃ বি এস এস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) আজ রাজধানীর মতিঝিল একটি শাখায় বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে থাকা একটি ব্যাংক লকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

সকালে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সিআইসি এ অভিযান চালায় বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে লকারটি উন্মুক্ত করা হবে।

এনবিআরের এই পদক্ষেপ এসেছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে শুরু হওয়া বিস্তৃত তদন্তের অংশ হিসেবে। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই কর কর্তৃপক্ষ তার আর্থিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।

ইতোমধ্যে এনবিআর শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাবগুলোও ফ্রিজ করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর ফাঁকির পাশাপাশি সম্পদের উৎস সম্পর্কেও তদন্ত চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, কারণ এটি উচ্চপর্যায়ের আর্থিক জবাবদিহির নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতিটি ধাপ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কর ফাঁকি ও অঘোষিত সম্পদ উদ্ধারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আহরণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই এর মূল লক্ষ্য।

-সুত্রঃবি এস এস


কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১২:২৪:১৬
কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ
ছবিঃ সংগৃহীত

কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত পানি ছাড়তে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বাঁধের ১৬টি স্পিলওয়ে গেট একযোগে খুলে দিয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ পানি এখন কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে এবং এর প্রভাবে রাঙামাটি শহর ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, বুধবার ভোররাত ৩টায় প্রতিটি গেট সাড়ে তিন ফুট উঁচু করে খোলা হয়। বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬৩ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বুধবার সকাল ৮টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১০৮ দশমিক ৯০ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল)। অথচ হ্রদের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল। পানির স্তর যাতে বিপদসীমা অতিক্রম না করে, সেজন্যই গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবাহ আরও বাড়লে পানির নিষ্কাশনের মাত্রাও সমন্বয় করা হবে।

এদিকে, বাড়তি পানির প্রবাহে রাঙামাটি শহরের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকা এবং আশপাশের উপজেলাগুলো আংশিকভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হ্রদের পানি বাড়তে থাকায় অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ও জমিজমা ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামলে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়ে যায়। এ সময় বাঁধের নিরাপত্তা রক্ষায় ও নিচের দিকে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্পিলওয়ে গেট খোলা ছাড়া বিকল্প থাকে না। তবে অতিরিক্ত পানি প্রবাহে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।

-সুত্রঃ বি এস এস


মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১০ ১১:৪৪:৩৭
মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল মহেশখালী ও মাতারবাড়ি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং শিল্প ও পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়েও দ্রুত আলোচনায় আসছে। সরকার ইতিমধ্যেই দ্বীপাঞ্চলটির উন্নয়নে একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে মহেশখালীকে দেশের পরবর্তী শিল্পকেন্দ্র ও ইকো-ট্যুরিজম হাবে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই পরিকল্পনায় শুধু শিল্পায়ন নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইকো-ট্যুরিজম পার্ক, সংরক্ষণ এলাকা ও সবুজ করিডর গড়ে তোলা হবে, যাতে একদিকে পর্যটন বাড়ে, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সম্প্রতি মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (মিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ পরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, মাতারবাড়ির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করছেন। কেউ গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছেন, কেউ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করছেন, আবার অনেকে বিকেলে শুধু সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা সানাউল্লাহ মুস্তাফা জানান, সরকারিভাবে পর্যটন জোন তৈরি হলে মাতারবাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে, মহেশখালীর বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু পর্যটনই নয়, বরং স্থানীয়দের জন্য বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার মতে, কক্সবাজারের মতো প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটক মহেশখালী-মাতারবাড়ি ভ্রমণে আসবেন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার পর্যটক মহেশখালী ভ্রমণে আসেন, যা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বহুগুণে বাড়বে।

সরকারের ধারণা, এ উদ্যোগ সফল হলে কক্সবাজারের পর্যটন খাত অন্তত ১.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। নতুন হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ও গাইডিং সেবা চালু হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে বহুগুণ।

ঢাকায় মিডার সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ইকো-ট্যুরিজমের পাশাপাশি বনায়ন কার্যক্রমকেও গুরুত্ব দিতে হবে। “আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে—ভবিষ্যতে কেমন বন চাই,” তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকল্পটি তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে: ২০২৫ থেকে ২০৩০, ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মিডার ১২০ দিনের কর্মপরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে, আর পুরো মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রস্তুত হওয়ার কথা।

স্থানীয় রিকশাচালক আব্দুর রহিম বলেন, প্রতিদিন মহেশখালী ঘাট থেকে তিনি প্রায় হাজারখানেক পর্যটক বহন করেন। তার আশা, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আয় ও কাজের সুযোগ আরও বাড়বে।

সব মিলিয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ি কেবল শিল্প ও অবকাঠামো নয়, বরং পর্যটন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলনস্থল হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনা সফল হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অর্থনীতি নতুন গতি পাবে।

-এম জামান

পাঠকের মতামত: