ভুয়া ভিডিওতে জড়িয়ে দেওয়া হলো সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাকে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৯ ১১:৩২:১৭
 ভুয়া ভিডিওতে জড়িয়ে দেওয়া হলো সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাকে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভুয়া বক্তব্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর অধীন ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাফ্যাক্ট’। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ এটি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জনবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করার একটি নিন্দনীয় উদাহরণ।

বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গুলশানে সংঘটিত সাম্প্রতিক চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যিনি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তার নাম ব্যবহার করে একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটিতে দাবি করা হয় যে, গুলশানে গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নাকি বলছেন, “চাঁদাবাজ হোক বা যাই হোক, ওরা তো আমাদেরই সন্তান। হ্যাঁ, গুলশানে যে ধরা পড়েছে সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি, বলেছে আর করবে না।”

বাংলাফ্যাক্ট বলছে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি, যা ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভিডিওটির গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে তারা নিশ্চিত হয়েছে, এটি কোনো সংবাদ সম্মেলন বা টিভি সাক্ষাৎকারের রেকর্ড নয়, বরং গুগলের একটি এআই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে, যেটি লেখাকে রূপান্তর করে কণ্ঠসহ ভিডিও আকারে উপস্থাপন করতে সক্ষম।

ভিডিওটির বাম নিচের কোণে ‘VIO’ লেখা দেখা গেছে, যা গুগলের ‘Video to Text to Speech’ প্রযুক্তি বা ভিও টুলের একটি চিহ্ন। এছাড়া ভিডিওতে ব্যবহার করা ইংরেজি সাবটাইটেলে একাধিক ব্যাকরণগত ভুল, অস্বাভাবিক শব্দচয়ন এবং অনুচিত বাক্য গঠন পাওয়া গেছে, যা ভিডিওটির কৃত্রিমতা ও অসত্যতা আরও স্পষ্ট করে তোলে।

গত ২৬ জুলাই রাজধানীর গুলশানে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসভবনে প্রবেশ করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে পুলিশ অভিযানে পাঁচজনকে আটক করে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, অভিযুক্তদের উভয় সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পটভূমিতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াতে কৃত্রিম ভিডিও নির্মাণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির প্রতি ভুল বার্তা ছড়ানো হয়।

ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া গবেষণায় অভিজ্ঞ বাংলাফ্যাক্ট এই ভিডিওটি যাচাই করে নিশ্চিত করে যে এটি একটি ডিজিটাল কারসাজি। এই সংস্থা নিয়মিতভাবে গুজব, ভুয়া খবর, অপতথ্য ও ডিজিটাল বিভ্রান্তি শনাক্তে কাজ করে যাচ্ছে। তারা কেবল বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করেনি, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিশদ বিশ্লেষণ, ব্যাকরণ ত্রুটি এবং সোর্স যাচাই করে ভিডিওটির ভিত্তিহীনতা প্রকাশ্যে এনেছে।

বাংলাফ্যাক্টের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, এই ভিডিওর বক্তব্যের পক্ষে কোনো সরকারি নথি, সংবাদ প্রতিবেদন বা সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়নি। ফলে এটি ১০০ ভাগ ভিত্তিহীন এবং গুজব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তৈরি।

-রাফসান

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ