ঝড়ে উল্টে গেল নৌকা, ভিয়েতনামে দুঃস্বপ্নের দিন

ভিয়েতনামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হা লং উপসাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, আর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন। শনিবার একটি পর্যটকবাহী নৌকা আচমকা ঝড়ে পড়ে উল্টে গেলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। রবিবারও নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে জোরালো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকর্মীরা।
‘ওয়ান্ডার সি’ নামের নৌযানটিতে ৪৮ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। নৌকাটি যখন হা লং উপসাগরে ভ্রমণে ছিল, তখন হঠাৎ করেই প্রবল বৃষ্টিসহ ঝড় শুরু হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম VNExpress জানায়, যাত্রীদের অধিকাংশই হ্যানয় শহর থেকে আসা পরিবার—যাদের মধ্যে ছিল ২০ জনের বেশি শিশু।
শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এবং ৩৪টি মরদেহ উদ্ধার করে তীরে আনা হয়। পরে নৌকার কেবিন থেকে আরও তিনজন ক্রু সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এখনও যেসব নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের সন্ধানে রবিবার সকালেও অভিযান অব্যাহত ছিল।
একজন জীবিত উদ্ধার হওয়া ১০ বছর বয়সী শিশু সংবাদমাধ্যম VietnamNet-কে বলেন, “আমি গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে এক ফাঁকা জায়গা দিয়ে সাঁতরে নিচে গিয়ে আবার ওপরে উঠে এসেছিলাম। চিৎকার করে সাহায্য চাইছিলাম। পরে এক নৌকায় থাকা সৈনিকরা আমাকে তুলে নেন।”
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা চালাতে প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, "এই ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
স্থানীয় বাসিন্দা ট্রান ট্রং হুং বলেন, “দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। বিশাল সাইজের শিলাবৃষ্টি, প্রচণ্ড বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় চারদিক অস্থির হয়ে ওঠে।”
ঝড়ের আগের তিন দিন উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। শনিবার শুধু হা লং-এ নয়, হ্যানয়, থাই গুয়েন এবং বাক নিং প্রদেশেও প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়। রাজধানীতে অনেক গাছ পড়ে যায় তীব্র বাতাসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মাই ভান খিয়েম বলেন, উত্তর ভিয়েতনামের এই বজ্রঝড় দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘উইফা’র কারণে নয়। তবে রবিবার ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এটি ভিয়েতনামে আছড়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
উল্লেখ্য, হা লং উপসাগর প্রতিবছর কোটি কোটি পর্যটক আকৃষ্ট করে এর সবুজ নীল পানি ও চুনাপাথরের দ্বীপগুলোর জন্য। তবে গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে ৩০টি নৌযান ডুবে যায় এই এলাকায়। চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের কাছে একটি ফেরি ডুবে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটে।
-নাজমুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ: ৪২ দেশের নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা চালু
উন্নত জীবন ও ভালো থাকার আশায় অনেকেই নিজ দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান বিদেশে। এবার সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দিল মার্কিন প্রশাসন। ভিসা ছাড়াই এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন ৪২টি দেশের নাগরিকরা। ২০২৫ সালের ইউএস ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের (ভিডব্লিউপি) আওতায় এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটি সংক্ষিপ্ত সফর, পর্যটন বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দেশটিতে প্রবেশের জন্য ভিসার বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তবে এর আওতায় কাজ করা বা পড়াশোনা করা অনুমোদিত নয়।
সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ ও শর্তাবলী
ইউএস ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের সুযোগ পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ইউরোপ: অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, রোমানিয়া, সুইডেন ও মোনাকোসহ আরও কয়েকটি দেশ।
এশিয়া-প্যাসিফিক: অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও জাপান।
মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা: তাইওয়ান, ইসরায়েল, কাতার ও চিলি।
প্রবেশ প্রক্রিয়া ও সীমাবদ্ধতা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভ্রমণকারীদের অবশ্যই ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক, যার মধ্যে অ্যাম্বেডেড চিপ থাকতে হবে। যাত্রীরা অনলাইনে ইএসটিএ (ESTA)-এর মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। অনুমোদন মিললে এটি দুই বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
সময়সীমা: প্রবেশ বা অবস্থান সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য সীমিত।
অযোগ্যতা: অপরাধমূলক ইতিহাস থাকা ব্যক্তি বা ২০১১ সালের পর ইরান, উত্তর কোরিয়ার মতো নিষিদ্ধ দেশে যাওয়া ব্যক্তিরা এই প্রোগ্রামের জন্য অযোগ্য হবেন।
প্রয়োজনীয়তা: যারা কাজ, পড়াশোনা বা অভিবাসনের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাদের জন্য এই প্রোগ্রাম প্রযোজ্য নয় এবং তাদের আলাদা ধরনের ভিসা আবেদন করতে হবে।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত এবং স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণ সম্ভব। নিরাপত্তা এবং আইনগত নিয়মাবলি মেনে চলা এই প্রোগ্রামের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১০ বছরের সন্তানকে নিয়ে মা সমুদ্র সাঁতরে পৌঁছালেন স্পেনে
উন্নত জীবন ও দারিদ্র্যকে জয় করার স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছেন বহু মানুষ। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্প্রতি বৈশ্বিক অভিবাসন অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। মরক্কোর এক মা এবং তার ১০ বছর বয়সী সন্তান সাঁতরে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্পেনের সেউটায় পৌঁছেছেন। গত ১২ অক্টোবর মরক্কোর ফনিদেক শহর থেকে তারা এই বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করেন।
সামাজিক অস্থিরতার প্রতীক
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করতে করতে শিশুটি একটি ভাসমান বোর্ড আঁকড়ে ধরে আছে এবং তার পাশে সাঁতার কাটছেন মা। ক্লান্তি ও ভয় তাদের চেহারায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্পেনের সিভিল গার্ড দ্রুত মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পরে তাদের শরণার্থী গ্রহণকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পেছনে মরক্কোর গভীর সামাজিক সংকট রয়েছে। মরক্কোয় বর্তমানে বেকারত্বের হার ১৩.৩ শতাংশ, আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ৩৬ শতাংশই বেকার।
‘সামাজিক প্রতিবাদ’ ও ঝুঁকি
সেউটা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় স্থলপথে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকেই সাঁতারকে একমাত্র বিকল্প হিসেবে নিচ্ছেন। অথচ এই পথ অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রবল স্রোত, ঠান্ডা পানি ও পাথুরে উপকূলের কারণে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। শুধু চলতি বছরেই অন্তত ৩০ মরক্কোর নাগরিক একই পথে প্রাণ হারিয়েছেন।
গবেষক আলী জুবাইদি বলেন:
“সেউটায় সাঁতার কেটে পৌঁছানো শুধু সাহসিকতার বিষয় নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক প্রতিবাদও। নারীরা প্রমাণ করছেন যে, তারা শুধু পরিবর্তন চান না, পরিবর্তনের দায়ও নিজেদের কাঁধে নিতে প্রস্তুত।”
‘জেন জি ২১২’ নামের যুব সংগঠনের ডাকে দেশে বিক্ষোভ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণী ও নারীদের এইভাবে বিপজ্জনক পথ বেছে নেওয়া মরক্কোর সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এই ঘটনাটি পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক হতাশা, অভিবাসন সংকট এবং মানবিক বঞ্চনার এক প্রতীকী প্রতিচ্ছবি।
সূত্র : মরোক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ
ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
ইউরোপের হৃদয়ে অবস্থিত ফ্রান্স কেবল একটি রাষ্ট্র নয়, এটি একটি দর্শন, একটি ধারণা, একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। এটি এমন এক জাতি যার ইতিহাসে জ্বলজ্বল করছে মানবমুক্তি, গণতন্ত্র, দর্শন ও শিল্পের দীপ্তি। প্রাচীন গল জাতির রোমানীকরণ থেকে শুরু করে ফরাসি বিপ্লব, নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য, দুই বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল ইতিহাস এবং ইউরোপীয় ঐক্যের নির্মাণ—ফ্রান্সের প্রতিটি অধ্যায় মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় এক অবিচ্ছেদ্য মাইলফলক। এই দেশটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর, যেখানে প্রতিটি শহর, প্রতিটি রাস্তাঘাট, প্রতিটি স্থাপত্য মানুষের চিন্তা ও আত্মমর্যাদার ইতিহাস বহন করে।
ভৌগোলিক পরচয় ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্র, যার আয়তন প্রায় ৫৫১,৬৯৫ বর্গকিলোমিটার। উত্তরে ইংলিশ চ্যানেল ও বেলজিয়াম, পূর্বে জার্মানি, লুক্সেমবার্গ ও সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণে ইতালি, স্পেন ও ভূমধ্যসাগর, আর পশ্চিমে বিস্তৃত আটলান্টিক মহাসাগর—এই অবস্থান ফ্রান্সকে ইউরোপের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির সংযোগস্থলে পরিণত করেছে।
ছবি- ইউরোপেরমানচিত্রে ফ্রান্স
দেশটির ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময় ও মনোমুগ্ধকর। দক্ষিণ-পূর্বে আলপস পর্বতমালা, যেখানে ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মঁ ব্লঁ (মন্ট ব্লাঙ্ক) ৪,৮০৯ মিটার উচ্চতায় রাজসিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে পিরেনিজ পর্বতমালা স্পেন সীমান্তকে রক্ষা করছে, আর কেন্দ্রে রয়েছে উর্বর সমভূমি ও নদী অববাহিকা যা কৃষি ও জনজীবনের প্রাণ। সেন, লোয়ার, গারোন ও রোন নদী ফ্রান্সের কৃষি, বাণিজ্য ও পরিবেশ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড।
ছবি-ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মঁ ব্লঁ (মন্ট ব্লাঙ্ক)
ফ্রান্স শুধু ইউরোপীয় মূলভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ নয়; এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন “ওভারসিজ টেরিটরি”—যেমন মার্টিনিক, গুয়াডেলুপ, রিইউনিয়ন, নিউ ক্যালেডোনিয়া ও ফরাসি পলিনেশিয়া—যা দেশটিকে একটি বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উপস্থিতি প্রদান করেছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতীক ও মৌলিক তথ্য
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পতাকা তিন রঙের—নীল, সাদা ও লাল। এই ত্রিবর্ণ পতাকা স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শের প্রতীক, যা ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পর রাষ্ট্রীয় চিহ্নে পরিণত হয়।
ছবি-ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পতাকা
রাষ্ট্রীয় প্রতীক ‘La Marianne’, স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্রের নারীমূর্ত রূপ, যা ফরাসি জাতিসত্তার প্রতীক হিসেবে সর্বত্র ব্যবহৃত হয়।
ছবি-রাষ্ট্রীয় প্রতীক ‘La Marianne’
রাজধানী প্যারিস, যা শুধু প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং শিল্প, সাহিত্য ও প্রেমের বিশ্বনগরী।ফ্রান্সের সরকারি ভাষা ফরাসি (Français), এবং রাষ্ট্রীয় মুদ্রা ইউরো (€)।দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ মিলিয়ন (২০২৫), এবং মানব উন্নয়ন সূচকে (HDI ২০২৩) স্কোর ০.৯০৩, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে।বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো একটি আধা-রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন এবং প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় নেতৃত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
ইতিহাস: রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে
ফ্রান্সের ইতিহাস ইউরোপের রাজনৈতিক বিবর্তনের সঙ্গে একীভূত। প্রাচীন গল জাতির ভূমি প্রথম খ্রিস্টপূর্ব শতকে রোমানদের অধীনে আসে। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চম শতকে ফ্রাঙ্ক জাতি এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে, যেখান থেকে “France” নামটির উৎপত্তি।
মধ্যযুগে চার্লেম্যাগনের ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্য ইউরোপের ঐক্যের ধারণা তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে ক্যাপেট ও বোরবোঁ রাজবংশ ফ্রান্সকে রাজতান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করে। কিন্তু ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব সবকিছু পাল্টে দেয়। রাজা ষোড়শ লুই ও রাণী মেরি আঁতোয়ানেতের পতনের মাধ্যমে রাজতন্ত্র ধ্বংস হয় এবং মানবমুক্তি, সমতা ও গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
ন্যাপোলিয়ন বোনাপার্ট বিপ্লবের আদর্শকে সামরিক শক্তিতে রূপ দেন। তার নেতৃত্বে ফ্রান্স ইউরোপের বৃহৎ অংশে আধিপত্য বিস্তার করে, তবে ওয়াটারলু যুদ্ধের পর তার পতন ঘটে। তবুও নেপোলিয়নের সংবিধান, প্রশাসনিক সংস্কার ও Napoleonic Code আজও আধুনিক আইনের ভিত্তি হিসেবে টিকে আছে।
১৯শ শতক জুড়ে ফ্রান্স বারবার রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের মধ্যে দোলাচলে থেকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি ফ্রান্স দখল করে নেয়, কিন্তু চার্লস দ্য গল-এর নেতৃত্বে প্রতিরোধ আন্দোলন দেশটিকে পুনরুদ্ধার করে। ১৯৫৮ সালে দ্য গল আধুনিক পঞ্চম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও বিদ্যমান এবং রাষ্ট্রপতির হাতে শক্তিশালী নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করে।
রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থা
বর্তমান ফরাসি শাসনব্যবস্থা একটি আধা-রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী প্রধান। রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন পাঁচ বছরের মেয়াদে। সংসদ দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত—ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (Assemblée Nationale) এবং সেনেট (Sénat)।
ফ্রান্স প্রশাসনিকভাবে ১৮টি অঞ্চল ও ১০১টি বিভাগে বিভক্ত। বিচারব্যবস্থা স্বাধীন, এবং সাংবিধানিক পরিষদ সংবিধানের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিত।
রাজনৈতিকভাবে দেশটি দীর্ঘদিন ধরে মধ্য-বাম ও মধ্য-ডানপন্থী চিন্তাধারার দ্বন্দ্বে আবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ-এর “La RépubliqueEn Marche” দল একটি প্রগতিশীল ও উদারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে, যা তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পুনর্নির্মাণ করছে।
অর্থনীতি ও সম্পদ
ফ্রান্স বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি। এর অর্থনীতি বৈচিত্র্যময়—শিল্প, কৃষি, প্রযুক্তি, জ্বালানি ও পর্যটন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।প্যারিস ইউরোপের অন্যতম আর্থিক কেন্দ্র, যেখানে শত শত বহুজাতিক কোম্পানির সদর দপ্তর অবস্থিত। এয়ারবাস, রেনল্ট, পিউজো, টোটালএনার্জিস, ডাসো, ল’ওরিয়াল, লুই ভিটোঁ, শ্যানেল, ডিওর ও মিশেলিন ফ্রান্সের শিল্পশক্তির প্রতীক।
দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কৃষি উৎপাদক, বিশেষত শস্য, ফল, সবজি, আঙ্গুর এবং দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রগণ্য। ফ্রান্স বিশ্বের শীর্ষ ওয়াইন উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ, এবং “বোর্দো” ও “শ্যাম্পেন” অঞ্চল বৈশ্বিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
ফ্রান্সের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হলো বক্সাইট, লোহা, ইউরেনিয়াম, কয়লা, লবণ, কাঠ ও মৎস্যসম্পদ। এটি পারমাণবিক শক্তিনির্ভর দেশ, যেখানে বিদ্যুতের ৭০ শতাংশেরও বেশি আসে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে।
মানব উন্নয়ন, শিক্ষা ও জীবনমান
ফ্রান্স মানব উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের শীর্ষে। ২০২৩ সালে এর এইচডিআই ০.৯০৩, যা একে “খুব উচ্চ মানব উন্নয়ন” দেশগুলোর মধ্যে স্থান দিয়েছে। গড় আয়ু ৮৩ বছর, এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সর্বজনীন।শিক্ষা বাধ্যতামূলক ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত, এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে। ফ্রান্সের শিক্ষা ব্যবস্থা “République”–এর আদর্শ অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ, যৌক্তিক এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিবেদিত।
বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে Sorbonne University, École Normale Supérieure, Sciences Po, École Polytechnique, HEC Paris, যেগুলো বিশ্বব্যাপী বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তুলছে।
ছবি-Sorbonne University, Paris.
সংস্কৃতি, শিল্প ও ধর্ম
ফ্রান্স এমন একটি দেশ যেখানে সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের অংশ। এখানে সাহিত্য, দর্শন, চিত্রকলা, সংগীত, ফ্যাশন ও খাদ্য—সবকিছুই নন্দনতত্ত্ব ও চিন্তার প্রতীক।
ফরাসি সাহিত্য ও দর্শন মানব সভ্যতার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। ভলতেয়ার, রুশো, দিদরো, সার্ত্র, সিমোন দ্য বোভোয়ার, ফুকো, দেরিদা—এই বুদ্ধিজীবীরা মানুষের স্বাধীনতা, নৈতিকতা ও সমাজচিন্তার ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ফ্রান্সের শিল্পের রাজধানী প্যারিস, যেখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জাদুঘর লুভর। ফ্যাশনে প্যারিস ফ্যাশন উইক, খাদ্যে ফরাসি কুইজিন, সংগীতে এডিথ পিয়াফ ও ডেবুসি—সবই দেশের সাংস্কৃতিক প্রতীক।
ধর্মের ক্ষেত্রে ফ্রান্স কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (Laïcité)। নাগরিকদের প্রায় ৬৩ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক, ৯ শতাংশ মুসলমান, ১ শতাংশ ইহুদি ও বৌদ্ধ, এবং বাকি জনগোষ্ঠী নির্ধর্মীয়। ধর্মীয় স্বাধীনতা ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মৌলিক নীতির অংশ।
সামরিক শক্তি ও বৈশ্বিক ভূমিকা
ফ্রান্স ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক রাষ্ট্র এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটধারী দেশ। এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার (Force de Frappe) রয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার মেরুদণ্ড।
ফরাসি সেনাবাহিনী আধুনিক প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট গোয়েন্দা ব্যবস্থা, বিমানবাহী রণতরী Charles de Gaulle, এবং বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা অভিযানে সক্রিয় উপস্থিতির জন্য বিখ্যাত। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ফ্রান্স আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পর্যটন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য
ফ্রান্স বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকৃত দেশ। প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি পর্যটক এখানে আসেন। আইফেল টাওয়ার, লুভর মিউজিয়াম, নটরডেম ক্যাথেড্রাল, আর্ক দ্য ত্রিয়ঁফ, শঁজেলিজে, মনমার্ত্র, এবং ভার্সাই প্রাসাদ—এই প্রতিটি স্থাপনা শুধু স্থাপত্য নয়, ইতিহাসের জীবন্ত দলিল।
ছবি- বিশ্ব বিখ্যাতলুভর মিউজিয়াম
ছবি-নটরডেম ক্যাথেড্রাল
দক্ষিণ ফ্রান্সের ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা, আলপসের স্কি রিসোর্ট, বোর্দো ও বুরগুন্ডির আঙ্গুরক্ষেত, নর্মান্ডির উপকূল এবং প্রোভঁস অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফ্রান্সকে পৃথিবীর অন্যতম রোমান্টিক ও বৈচিত্র্যময় পর্যটন স্বর্গে পরিণত করেছে।
ছব-ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা
পররাষ্ট্রনীতি ও আন্তর্জাতিক সদস্যপদ
ফ্রান্স আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, জি-৭, ওআইসিডি, ডব্লিউটিও, ফ্রান্সোফনি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সদস্য।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রনীতি “স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি”-র ভিত্তিতে পরিচালিত। এটি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্রান্স ও জার্মানি একত্রে নীতিনির্ধারণের প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমান ফ্রান্স একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—অভিবাসন সমস্যা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলামফোবিয়া বিতর্ক, অর্থনৈতিক বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউরোপীয় রাজনীতির নতুন ভারসাম্য। সামাজিক অসন্তোষ ও “Yellow Vest Movement” অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
তবুও ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এটি একটি উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, যেখানে গবেষণা, প্রযুক্তি, সবুজ শক্তি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে অগ্রগতি ঘটাচ্ছে। “France 2030” কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিশ্ব নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
ফ্রান্স হলো স্বাধীনতার প্রতীক, মানবমুক্তির দিশারী এবং সভ্যতার আলোকবর্তিকা। এটি এমন এক দেশ, যেখানে রাজনীতির সঙ্গে দর্শন, বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্প, এবং স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধ সমানভাবে বিকশিত হয়েছে। আজও ফ্রান্স পৃথিবীকে মনে করিয়ে দেয় যে, একটি জাতির সত্যিকারের শক্তি তার অস্ত্রে নয়, বরং তার চিন্তা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে নিহিত।
ইয়েমেনে জাতিসংঘ ভবনে হুথি অভিযান: সব কর্মী নিরাপদে
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় শনিবার জাতিসংঘের একটি ভবনে হুথি বিদ্রোহীদের অভিযানের খবর নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সেখানে অবস্থানরত সব আন্তর্জাতিক কর্মী নিরাপদে রয়েছেন এবং তাঁদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা গেছে।
জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক আবাসিক সমন্বয়কের মুখপাত্র জ্যঁ আলম এএফপিকে জানান, “আমরা নিশ্চিত করছি যে আনসার আল্লাহ বাহিনীর সদস্যরা অনুমতি ছাড়াই সানার জাতিসংঘ কমপাউন্ডে প্রবেশ করেছে, যেখানে বর্তমানে ১৫ জন আন্তর্জাতিক কর্মী অবস্থান করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সব কর্মী নিরাপদে আছেন, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ঘটনাটি এখনো চলমান এবং জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
এই ঘটনাটি গত আগস্টের শেষের দিকে সংঘটিত এক অনুরূপ হামলার পর ঘটল, যখন হুথি বিদ্রোহীরা জাতিসংঘের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১১ জনেরও বেশি কর্মীকে আটক করেছিল। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি দাবি করেছিল, আটককৃতরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন।
শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা আমাদের ৫৩ জন সহকর্মীর নির্বিচার আটক অবসানের আহ্বান অব্যাহত রাখব।”
এই বক্তব্যটি আসে হুথি নেতা আবদেল মালেক আল-হুথির সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন ভাষণের পর। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাঁর বাহিনী “বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ও ইউনিসেফের মতো মানবিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক বিপজ্জনক গুপ্তচরচক্রকে” ভেঙে দিয়েছে।
দুজারিক এসব অভিযোগকে “বিপজ্জনক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে নিন্দা জানান।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, শনিবারের অভিযানের আগেই হুথি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে গত কয়েক মাসে ডজনখানেক জাতিসংঘ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ জন জাতিসংঘ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ২৩ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মীও আটক রয়েছেন।
এরই মধ্যে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক মানবিক সমন্বয়ককে হুথি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানা থেকে স্থানান্তর করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের অন্তর্বর্তী রাজধানী এডেনে পাঠানো হয়।
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে কোটি কোটি মানুষ খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
-নাজমুল হাসান
‘আমরা রাজা নই, আমরা জনগণ’: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যজুড়ে শনিবার লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর ও বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। “নো কিংস” বা ‘রাজা নয়, গণতন্ত্র’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ সমাবেশ দেশজুড়ে গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বানে পরিণত হয়, যা রিপাবলিকানরা ব্যঙ্গ করে “হেইট আমেরিকা র্যালি” বলে অভিহিত করেছে।
আয়োজকেরা আশা করেছিলেন, নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে লাখো মানুষ যোগ দেবেন। ছোট শহরগুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের দ্বিতীয় বাসভবনের কাছেও মানুষ জড়ো হয়।
ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ভবনের সামনে হাজারো মানুষ স্লোগান দেন, “এটাই গণতন্ত্রের রূপ!” এবং “হে হে, হো হো, ট্রাম্পকে এখনই যেতে হবে!” অনেকের হাতে ছিল আমেরিকার পতাকা, যার একটি উল্টোভাবে ওড়ানো হয়—বিপদের সংকেত হিসেবে।
বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা রঙিন ও ব্যঙ্গাত্মক প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল “গণতন্ত্র রক্ষা করো,” “আইস বাতিল করো,” এবং “আমরা রাজা নই—আমরা জনগণ।” ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী নীতি, সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা, ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি কটাক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
নিউইয়র্কের ব্রডওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কলিন হফম্যান বলেন, “আমি কখনও ভাবিনি আমার জীবদ্দশায় দেখব, আমেরিকা তার গণতন্ত্র হারাচ্ছে। এটা এক গভীর সংকট—এই সরকারের নিষ্ঠুরতা ও কর্তৃত্ববাদ আমাকে ঘরে বসে থাকতে দিচ্ছে না।”
লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্পের ডায়াপার পরা বিশাল এক বেলুন উড়ান, যা পুরো শহরের মনোযোগ কাড়ে।
‘আমি রাজা নই’
শনিবারের বিক্ষোভে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল তুলনামূলক নীরব। তবে তার প্রচার দল সামাজিক মাধ্যমে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা তৈরি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ট্রাম্পকে রাজকীয় পোশাক ও মুকুট পরিহিত অবস্থায় দেখানো হয়। পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ওরা আমাকে রাজা বলছে, কিন্তু আমি রাজা নই।”
তবে রিপাবলিকান নেতৃত্ব বিক্ষোভকারীদের কড়া সমালোচনা করে। স্পিকার মাইক জনসন মন্তব্য করেন, “এই সমাবেশ আসলে মার্কসবাদী, সমাজতান্ত্রিক, অ্যানার্কিস্ট আর হামাসপন্থীদের জোট—যারা আমেরিকার ঐক্যের বিরুদ্ধে।”
ওয়াশিংটনে অংশ নেওয়া ৬৩ বছর বয়সী পাওলো এই মন্তব্যকে তীব্র কৌতুকে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “চারপাশে তাকান—যদি এটা ঘৃণা হয়, তবে ওদের আবার স্কুলে ফিরে যাওয়া উচিত!”
অনেকেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৩৪ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টনি বলেন, “ডানপন্থীরা যা-ই বলুক, আমাদের তাতে কিছু যায় আসে না। তারা আমাদের ঘৃণা করে, কিন্তু আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
গণতন্ত্র বনাম কর্তৃত্ববাদ
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে কানাডা, স্পেনের মালাগা ও সুইডেনের মালমোতেও। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (ACLU) পরিচালক ডিয়ার্ড্রে শিফেলিং বলেন, “আমরা এই বার্তাই দিতে চাই—আমরা একটি সমঅধিকারভিত্তিক দেশ, যেখানে আইন সবার জন্য সমান। আমরা নীরব থাকব না।”
ইনডিভিজিবল প্রজেক্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা লিয়া গ্রিনবার্গ ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, “এটা এক ক্লাসিক কর্তৃত্ববাদী কৌশল—হুমকি, অপবাদ, মিথ্যাচার, আর ভয় দেখিয়ে জনগণকে চুপ করিয়ে রাখা।”
ওয়াশিংটনের এক বিক্ষোভকারী পাওলো বলেন, “আমি ব্রাজিলে সামরিক একনায়কত্বের সময় বড় হয়েছি। এখন আমেরিকায় সেই সময়েরই প্রতিচ্ছবি দেখছি—ব্যক্তিপূজা, দমননীতি আর স্বাধীনতার ওপর আঘাত।”
বিক্ষোভে যোগ দিয়ে প্রগতিশীল সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সতর্ক করে বলেন, “আমাদের সামনে এমন এক প্রেসিডেন্ট আছেন যিনি নিজের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চান, ধনকুবের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন।” তার বক্তব্যে ‘অলিগার্ক’ শব্দটি উচ্চারিত হতেই জনতা তীব্র শ্লোগানে প্রতিক্রিয়া জানায়।
১৬ বছর বয়সী আইজাক হার্ডার বলেন, “তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করছে, সেনাবাহিনী পাঠাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করছে। এটা এক ফ্যাসিবাদী পথের সূচনা—আমরা তা থামাতে চাই।”
“নো কিংস” আন্দোলন আজ যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদ নয়, বরং গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
-হাসানুজ্জামান
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি: দোহায় পাকিস্তান-আফগান সমঝোতা
দোহায় আলোচনার পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘাত থামাতে ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ চুক্তিতে পৌঁছেছে—রবিবার ভোরে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিমান হামলায় অন্তত ১০ আফগান নাগরিক নিহত হওয়ার পর এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা প্রশমনের আশার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এর আগে, কাবুল ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। ওই অস্থায়ী বিরতি এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষ সাময়িকভাবে থামিয়েছিল, যেখানে উভয় দেশের সেনা ও বেসামরিক নাগরিকসহ ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়।
ইসলামাবাদের নিরাপত্তা সূত্র জানায়, পাকিস্তানের বিমান হামলার লক্ষ্য ছিল আফগান সীমান্ত অঞ্চলে সক্রিয় এক সশস্ত্র গোষ্ঠী—যা পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তানি আধাসামরিক বাহিনীর ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই অভিযান চালানো হয়।
শনিবার কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় দুই পক্ষ উত্তেজনা নিরসনের পদক্ষেপ নিয়ে একমত হয়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “উভয় দেশ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের জন্য যৌথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজি হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন যাচাইয়ের লক্ষ্যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দোহা বৈঠকে অংশ নিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পরবর্তী বৈঠক আগামী ২৫ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, “আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ হবে। উভয় প্রতিবেশী দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।”
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দোহা বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল “আফগান ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা এবং পাক-আফগান সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।”
এই আলোচনায় পাকিস্তান প্রতিনিধি দলে ছিলেন গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আসিম মালিক, আর আফগানিস্তানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন প্রতিরক্ষা প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ইস্যুই মূল সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। পাকিস্তান দাবি করে, আফগানিস্তান তার ভূখণ্ডে পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী—বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)—কে আশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সীমান্ত উত্তেজনা শুরু হয় ১১ অক্টোবর, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির মুতাকির ভারতের ঐতিহাসিক সফরের কয়েকদিন পর কাবুলে পরপর বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর তালেবান দক্ষিণ সীমান্তে পাকিস্তানবিরোধী অভিযান শুরু করে, যার জবাবে ইসলামাবাদ কঠোর প্রতিক্রিয়ার ঘোষণা দেয়।
দোহা আলোচনার আগে এক জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, পাকিস্তান শুক্রবার রাতে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে তিনটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেয় কাবুল।
পাকতিকা প্রদেশের এক হাসপাতাল কর্মকর্তা জানান, ওই হামলায় ১০ বেসামরিক নাগরিক—যার মধ্যে দুই শিশু ও তিনজন ক্রিকেট খেলোয়াড়—নিহত হন, আহত হন আরও ১২ জন।
তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তাদের বাহিনীকে “আলোচনাকারী দলের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে” যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় স্পিন বোলদাকের এক মন্ত্রী সাদুল্লাহ তোরজান বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের দিকে ফিরছে। তবে যুদ্ধের ভয় এখনো রয়ে গেছে, মানুষ আতঙ্কে আছে।”
দোহা চুক্তি সীমান্তে সংঘর্ষের তাৎক্ষণিক অবসান ঘটালেও, দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস ও নিরাপত্তা হুমকি যে এখনো গভীরভাবে প্রোথিত—তা পরিষ্কার। তবু এই যুদ্ধবিরতি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে শান্তির আশায় এক ক্ষীণ আলো জ্বালিয়েছে।
-আলমগীর হোসেন
ভারতের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক হুমকি দিলেন পাক সেনাপ্রধান
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের কার্যকর জবাব ভারতের ‘ভৌগোলিক যুদ্ধক্ষেত্রের ভুল ধারণা’ ভেঙে ফেলতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের উল্লেখ এবং ইসলামাবাদের সামরিক ক্ষমতা নিয়ে করা তার মন্তব্যে কূটনৈতিক মহলে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
অসীম মুনিরের হুঁশিয়ারি
কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (পিএমএ) ভাষণে অসীম মুনির পারমাণবিক পরিবেশে যুদ্ধের কোনো স্থান নেই দাবি করলেও, পরের বাক্যেই সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন:
“যদি নতুন করে শত্রুতার ঢেউ শুরু হয়, তাহলে পাকিস্তান উদ্যোগীদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমাদের যুদ্ধের সক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের অস্ত্র ব্যবস্থার নাগাল এবং প্রাণঘাতীতা ভারতের ভৌগোলিক বিশালতার ভুল ধারণাকে ভেঙে ফেলবে।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, পরবর্তী উত্তেজনা বৃদ্ধির দায়ভার সরাসরি ভারতের ওপর বর্তাবে, যা শেষ পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চল এবং তার বাইরেও বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
পাল্টাপাল্টি হুমকির প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, সীমান্তে কোনো রকম দুঃসাহস দেখালে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের ইতিহাস ও ভূগোল বদলে যেতে পারে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, পাকিস্তানের যে কোনো ধরনের পদক্ষেপের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী আর সংযম দেখাবে না।
এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একের পর এক হুমকি আসতে থাকে। অক্টোবরের শুরুতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছিলেন, এবার ভারতকে তাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই কবর দেওয়া হবে। পাল্টাপাল্টি এমন হুমকিতে আঞ্চলিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
যুদ্ধবিরতির ভয়াবহ লঙ্ঘন: গাজায় এক ফিলিস্তিনি পরিবারের ১১ সদস্য নিহত
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের ১১ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। আট দিন আগে কার্যকর হওয়া ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির এটি সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
হামলার বিবরণ ও হতাহত
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় আবু শাবান পরিবারকে বহনকারী একটি বেসামরিক গাড়িতে হামলা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক থেকে শেল ছুড়ে এই হামলা চালায়।
নিহত: বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, নিহতদের মধ্যে সাত শিশু এবং তিনজন নারী ছিলেন। পরিবারটি যখন তাদের বাড়ি পরিদর্শনের জন্য পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বাসালের মন্তব্য: বাসাল বলেন, “তাদের সতর্ক করা যেতে পারত অথবা ভিন্নভাবে মোকাবিলা করা যেত। যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে যে দখলদাররা এখনো রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার ওপর জোর দেয়।”
হামাসের দাবি: হামাস এই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে এবং নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পরিবারটিকে কোনো যুক্তি ছাড়াই লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গোষ্ঠীটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নোবেল বিজয়ীর প্রশংসা
অন্যদিকে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, মাচাদো গাজা যুদ্ধে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব ও ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি যোদ্ধা দল হামাসকে ‘নিপীড়ক বাহিনী’ উল্লেখ করেন এবং ইরানের শাসনকর্তাদের সমালোচনা করেন। গাজায় জিম্মি মুক্তির ঘটনায় তিনি অভিনন্দনও জানান।
‘এখনই অস্ত্র ত্যাগ নয়’: গাজা পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে অনড় হামাস
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এখনই অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল। দোহায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তাদের মূল লক্ষ্য হলো গাজা পুনর্গঠন করা এবং তারা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায়।
নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন
নাজ্জাল জানান, হামাস বন্দি বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সম্মতি দিয়েছে, কিন্তু অস্ত্র হস্তান্তর সংক্রান্ত ধারা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং এটি আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে।
নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নাজ্জাল পাল্টা প্রশ্ন করেন:
“এই যে আপনি নিরস্ত্রীকরণের কথা বলছেন, তার মানে কী? অস্ত্রগুলো কাকে, কেন হস্তান্তর করা হবে? ইসরায়েল কি তার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো জমা দেবে? কেন ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংসের কথা বলা হয়, অথচ ইসরায়েলকে তা বলা হয় না।”
পুনর্গঠন ও প্রশাসনিক অবস্থান
হামাস নেতা নাজ্জাল বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের জন্য তারা পাঁচ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তবে এরপর কী হবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ‘আশা ও দিগন্ত’ দেখানোর ওপর। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সময়ে গাজায় প্রযুক্তিনির্ভর বেসামরিক প্রশাসন থাকলেও, নিরাপত্তার জন্য হামাস মাঠে উপস্থিত থাকবে।
মৃত্যুদণ্ড প্রসঙ্গে: সম্প্রতি গাজায় প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে নাজ্জাল বলেন, এগুলো যুদ্ধকালীন ‘ব্যতিক্রমী ঘটনা’ এবং নিহতরা হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ছিলেন।
ফিলিস্তিনের পুনর্গঠন পরিকল্পনা
এদিকে, ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি পুনর্গঠন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার আনুমানিক ব্যয় ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রকল্পে ১৮টি খাতের ৫৬টি উপ-প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মুস্তাফা জানান, এই পুনর্গঠন কার্যক্রম তিন ধাপে চলবে।
অন্যদিকে, হামাসের দেরিতে মরদেহ হস্তান্তরের কারণে স্থগিত হওয়া রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং আগামী রোববার নাগাদ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
সূত্র: রয়টার্স
পাঠকের মতামত:
- তিস্তা মহাপরিকল্পনা’র দাবিতে চবি শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল, ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি
- ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ: ৪২ দেশের নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা চালু
- ২০ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- তৈরি পোশাক শিল্পে বড় আঘাত: কার্গো ভিলেজের ক্ষতি নিয়ে যা বলল বিজিএমইএ
- শীতে আমন্ড বাদাম: ভিজিয়ে খাবেন নাকি শুকনো? জেনে নিন সঠিক পদ্ধতি
- মাথাব্যথাকে বিদায়: ৫টি সহজ ঘরোয়া টোটকা
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
- চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি? জেনে নিন উপকারিতা
- ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে হানাহানি থাকবে না: মুফতি ফয়জুল করীম
- ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ছিনতাই: ২ লক্ষ ডলার নিয়ে আকাশেই উধাও সেই রহস্যমানব!
- ড্রোন দিয়ে ঘণ্টায় ১,৮০০ চারা রোপণ: প্রযুক্তিতে বন পুনরুদ্ধারের নজির
- ১০ বছরের সন্তানকে নিয়ে মা সমুদ্র সাঁতরে পৌঁছালেন স্পেনে
- খালেদা-তারেকের নিরাপত্তা: বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি
- নাহিদ ইসলামের তীব্র সমালোচনা: পিআর নিয়ে জামায়াতকে একহাত নিলেন এনসিপি নেতা
- মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান
- আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টার বার্তা
- ১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই
- জুলাই সনদের ৫ দফা দাবিতে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
- সুখবর: ৯ মাস বন্ধ থাকার পর খুলছে সেন্ট মার্টিন
- পা ফাটা দূর করুন: ঘরোয়া উপায়ে মসৃণ গোড়ালি পাওয়ার সহজ কৌশল
- শোয়েব আখতারের রেকর্ড ভাঙা! স্টার্কের ১৭৬.৫ কিমি গতির বল নিয়ে তোলপাড়
- ১৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ১৯ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ১৯ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- পরিকল্পিত আগুন: কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বড় অভিযোগ
- ইসি জঙ্গলীয় কায়দায় চলছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
- ‘বক্তব্য কাট করে বিকৃত করা হয়েছে’: জুলাই যোদ্ধা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের ব্যাখ্যা
- এনসিপি’র হুঁশিয়ারি: নির্বাচন কমিশন ‘স্বৈরাচারী কায়দায়’ চলছে
- ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
- বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ: বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতীয় ১৪ জেলে আটক
- মেথি পানির ম্যাজিক: নিয়মিত ১৫ দিন পান করলে শরীরে আসে যে ৬ পরিবর্তন
- সাবধান! কম ঘুম ছোট করে দিতে পারে মস্তিষ্ককে, নতুন গবেষণার ভয়াবহ তথ্য
- এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াল সরকার
- ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা: বঙ্গোপসাগরে নতুন লঘুচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর
- ইয়েমেনে জাতিসংঘ ভবনে হুথি অভিযান: সব কর্মী নিরাপদে
- গণভোটের দিনক্ষণ: নির্বাচনের দিন হবে না আগে? সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর
- রক্ষণ থেকে আক্রমণে জাদু: আরাউহোর গোলে লা লিগার শীর্ষে বার্সা
- মেসির জাদুতে ইন্টার মায়ামির দুর্দান্ত জয়: হ্যাটট্রিকে এমএলএস গোল্ডেন বুট প্রায় নিশ্চিত
- ‘আমরা রাজা নই, আমরা জনগণ’: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
- রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি: দোহায় পাকিস্তান-আফগান সমঝোতা
- শাহজালালে আগুনে ছাই ব্যবসায়িক আশা: বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা
- ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- কার্গো ভিলেজে আগুন: ক্ষতির আশঙ্কা বিলিয়ন ডলার
- ভারতের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক হুমকি দিলেন পাক সেনাপ্রধান
- সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডগুলো জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি: তারেক রহমান
- পায়ে সামান্য ব্যথা বা ঘা: নীরব ঘাতক ‘রক্তনালির ব্লকের’ সংকেত নয়তো?
- রাতে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে: কার্গো ভিলেজের আগুন পরিদর্শনে উপদেষ্টা
- রিশাদ ম্যাজিক স্পিনে উড়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- ঢাকার বিমানবন্দর অচল: ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে কার্গো ভিলেজ, ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি
- ৪০-৪৫ দিনের রেণুবিন্দু: বিজ্ঞান বনাম কোরআন, গর্ভের শিশুর নিয়তি কখন লেখা হয়?
- ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
- হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?
- বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভর করে চাঙ্গা রাজধানীর শেয়ারবাজার
- পূর্বাচল প্লট অনিয়ম মামলা: শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে পাঁচজনের সাক্ষ্য
- ১৩ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- জায়ান-শমিতকে নিয়েই একাদশ, বেঞ্চে বসলেন দলের অন্যতম তারকা
- মাইগ্রেন কি শুধু মাথাব্যথা? জেনে নিন এর ৫টি ভিন্ন ধরন
- শি জিনপিং: সমাজে প্রকৃত সমতা চাইলে নারীর নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে
- আজ বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই, টিভিতে নয় ২৫ টাকায় দেখুন অনলাইনে
- ১৪ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- পরমাণু ইস্যুতে কঠোর ইরান: আইএইএ-এর সঙ্গে চুক্তি স্থগিত, কারণ কী?
- শিক্ষক আন্দোলনের মোড়বদল: ‘লংমার্চ টু যমুনা’ স্থগিত, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
- শীতকাল আসছে: সুস্থ থাকতে এখনই বর্জন করুন এই ৫টি অভ্যাস
- জাল টাকার প্রচলন রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
- ‘সামাজিক ব্যবসা তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব দিলেন প্রধান উপদেষ্টা