ঝড়ে উল্টে গেল নৌকা, ভিয়েতনামে দুঃস্বপ্নের দিন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২০ ১০:০৭:৫১
ঝড়ে উল্টে গেল নৌকা, ভিয়েতনামে দুঃস্বপ্নের দিন
ছবিঃ সংগৃহীত

ভিয়েতনামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হা লং উপসাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, আর এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৫ জন। শনিবার একটি পর্যটকবাহী নৌকা আচমকা ঝড়ে পড়ে উল্টে গেলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। রবিবারও নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে জোরালো উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকর্মীরা।

‘ওয়ান্ডার সি’ নামের নৌযানটিতে ৪৮ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। নৌকাটি যখন হা লং উপসাগরে ভ্রমণে ছিল, তখন হঠাৎ করেই প্রবল বৃষ্টিসহ ঝড় শুরু হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম VNExpress জানায়, যাত্রীদের অধিকাংশই হ্যানয় শহর থেকে আসা পরিবার—যাদের মধ্যে ছিল ২০ জনের বেশি শিশু।

শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয় এবং ৩৪টি মরদেহ উদ্ধার করে তীরে আনা হয়। পরে নৌকার কেবিন থেকে আরও তিনজন ক্রু সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এখনও যেসব নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের সন্ধানে রবিবার সকালেও অভিযান অব্যাহত ছিল।

একজন জীবিত উদ্ধার হওয়া ১০ বছর বয়সী শিশু সংবাদমাধ্যম VietnamNet-কে বলেন, “আমি গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে এক ফাঁকা জায়গা দিয়ে সাঁতরে নিচে গিয়ে আবার ওপরে উঠে এসেছিলাম। চিৎকার করে সাহায্য চাইছিলাম। পরে এক নৌকায় থাকা সৈনিকরা আমাকে তুলে নেন।”

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা চালাতে প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, "এই ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

স্থানীয় বাসিন্দা ট্রান ট্রং হুং বলেন, “দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। বিশাল সাইজের শিলাবৃষ্টি, প্রচণ্ড বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় চারদিক অস্থির হয়ে ওঠে।”

ঝড়ের আগের তিন দিন উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। শনিবার শুধু হা লং-এ নয়, হ্যানয়, থাই গুয়েন এবং বাক নিং প্রদেশেও প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় হয়। রাজধানীতে অনেক গাছ পড়ে যায় তীব্র বাতাসে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মাই ভান খিয়েম বলেন, উত্তর ভিয়েতনামের এই বজ্রঝড় দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘উইফা’র কারণে নয়। তবে রবিবার ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল এবং আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এটি ভিয়েতনামে আছড়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।

উল্লেখ্য, হা লং উপসাগর প্রতিবছর কোটি কোটি পর্যটক আকৃষ্ট করে এর সবুজ নীল পানি ও চুনাপাথরের দ্বীপগুলোর জন্য। তবে গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে ৩০টি নৌযান ডুবে যায় এই এলাকায়। চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের কাছে একটি ফেরি ডুবে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটে।

-নাজমুল হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ