সাগরের শাসক: নৌ শক্তিতে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১৩:১৫:৪৮
সাগরের শাসক: নৌ শক্তিতে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা

সত্য নিউজ: সামুদ্রিক সীমানা রক্ষা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব এবং বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে সমুদ্রভিত্তিক সামরিক সক্ষমতা। আধুনিক যুগে যুদ্ধ কেবল স্থল বা আকাশে সীমাবদ্ধ নয়; সমুদ্রজুড়েও চলছে শক্তির মহাযুদ্ধ। যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনভিত্তিক নৌবাহিনী এখন প্রতিটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি ওয়ারশিপ ২০২৫-এর তালিকায় উঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি নৌবাহিনী, যেখানে প্রযুক্তি, পরিসর, ও নৌযানসংখ্যার বিচারে নানামাত্রিকতা লক্ষ্য করা যায়।

এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের নৌবাহিনী (US Navy) আধুনিক প্রযুক্তি, পারমাণবিক রণতরি এবং বৈশ্বিক মোতায়েন ক্ষমতার দিক দিয়ে এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মোট ২৩২টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ১১টি বিমানবাহী রণতরি (১০টি নিমিটজ শ্রেণি ও ১টি ফোর্ড শ্রেণি), ৬৪টি সাবমেরিন, ৭৬টি ডেস্ট্রয়ার, ৩৪টি উভচর জাহাজ, ২৬টি কভার্ট ও ৮টি মাইন ওয়ারফেয়ার জাহাজ। যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের ভিত্তি মূলত তাদের পারমাণবিক শক্তিচালিত ফোর্ড শ্রেণির সুপারক্যারিয়ার, যা ভবিষ্যতের নৌযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

চীন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও মোট নৌযানসংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী। তাদের ৪০৫টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ৩টি বিমানবাহী রণতরি, ৭৩টি সাবমেরিন (যার মধ্যে ১৮টি পারমাণবিক), ৪৭টি ডেস্ট্রয়ার, ৪৯টি ফ্রিগেট, ৫০টি কভার্ট, ৪৩টি মাইন ওয়ারফেয়ার জাহাজ এবং ১২৭টি উপকূলীয় টহলজাহাজ। যদিও প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কিছুটা পিছিয়ে, তবুও চীনের নৌবাহিনী দ্রুত সম্প্রসারণশীল একটি সামুদ্রিক পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ার নৌবাহিনী তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট হলেও সাবমেরিন ও কভার্ট-নির্ভর কৌশলে বেশ শক্তিশালী। তাদের ২৮৩টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ১টি বিমানবাহী রণতরি, ৫৮টি সাবমেরিন, ১০টি ডেস্ট্রয়ার, ১২টি ফ্রিগেট, ৮৩টি কভার্ট এবং ৪৮টি মাইন ওয়ারফেয়ার জাহাজ। রাশিয়া মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষা এবং গভীর সমুদ্রে সাবমেরিন অপারেশনের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়।

ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপদেশ হিসেবে, সমুদ্রভিত্তিক প্রতিরক্ষায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে ২৪৫টি সক্রিয় নৌযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪টি সাবমেরিন, ৭টি ফ্রিগেট, ২৫টি কভার্ট এবং ১৬৮টি উপকূলীয় টহলজাহাজ। ইন্দোনেশিয়া প্রযুক্তিগত দিক থেকে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকলেও তাদের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক সীমার পরিধির কারণে কৌশলগত নিরাপত্তায় গুরুত্ব অনেক বেশি।

পঞ্চম স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আধুনিকীকরণে মনোযোগী। তাদের ১৪৭টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ২১টি সাবমেরিন, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১৭টি ফ্রিগেট। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী আঞ্চলিক প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জাপানের মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স ‘আত্মরক্ষামূলক’ কাঠামোতে গড়ে উঠলেও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং সংহত কমান্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা আধুনিক নৌশক্তি হিসেবে পরিচিত। তাদের ১০৫টি নৌযানের মধ্যে রয়েছে ২৪টি সাবমেরিন, ৪২টি ডেস্ট্রয়ার এবং ২টি হেলিকপ্টারবাহী রণতরি। সংগঠন ও দক্ষতায় জাপানের নৌবাহিনী অনন্য।

ভারতের নৌবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে এবং বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। তাদের ১০০টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ২টি বিমানবাহী রণতরি (আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও আইএনএস বিক্রান্ত), ১৯টি সাবমেরিন (যার মধ্যে ২টি পারমাণবিক), ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট এবং ১৮টি কভার্ট। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির আওতায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ভারতকে আরও স্বনির্ভর করেছে।

ফ্রান্সের নৌবাহিনী ইউরোপীয় সামুদ্রিক পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত। তাদের ৭০টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে একটি পারমাণবিক বিমানবাহী রণতরি ‘শার্ল দ্য গল’, ৮টি সাবমেরিন, ২১টি ডেস্ট্রয়ার এবং ২০টি ওপিভি। আকাশ, জল ও পানির নিচে—তিন ক্ষেত্রেই তারা একযোগে যুদ্ধ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভি ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বসেরা নৌবাহিনীগুলোর একটি। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে তাদের সক্রিয় বহরে এখন রয়েছে ৫০টি নৌযান, যার মধ্যে রয়েছে ২টি বিমানবাহী রণতরি (এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ ও এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস), ৯টি সাবমেরিন, ৬টি ডেস্ট্রয়ার এবং ৮টি ফ্রিগেট। আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের সমন্বয়ে ব্রিটিশ নৌবাহিনী নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করছে।

সবশেষে রয়েছে তুরস্ক, যারা ২০২৩ সালে হেলিকপ্টারবাহী রণতরি অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নৌবাহিনীকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রায় ৮০টি সক্রিয় নৌযানের মধ্যে রয়েছে ১৩টি সাবমেরিন, ১৭টি ফ্রিগেট, ৯টি কভার্ট, ৩৪টি ওপিভি এবং ১১টি মাইন ওয়ারফেয়ার জাহাজ। পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও ব্ল্যাক সি অঞ্চলে কৌশলগত উপস্থিতি বৃদ্ধিতে তুরস্ক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, আধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সামুদ্রিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এখন বৈশ্বিক শক্তির অন্যতম মাপকাঠি। প্রতিটি রাষ্ট্র তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশলগত চাহিদা অনুযায়ী নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজাচ্ছে, যা আগামী দিনের যুদ্ধ ও কূটনৈতিক কৌশলকে প্রভাবিত করবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ