পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে ১১ টুকরো, চট্টগ্রামে স্বামী র‌্যাবের হাতে আটক

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৯:৪৭:০৪
পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে ১১ টুকরো, চট্টগ্রামে স্বামী র‌্যাবের হাতে আটক

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় স্ত্রী ফাতেমা আক্তারকে (৩২) নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহ ১১ টুকরো করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মো. সুমনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের ফুলবাড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এম. আর. এম মোজাফ্ফর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ফাতেমা বেগমের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণে। তার স্বামী সুমনের পেশা গাড়িচালক। তাদের আট বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সিফাত। পরিবারের বাইরে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় নেমে আসে শোক ও হতবাক প্রতিক্রিয়া।

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার গভীর রাতে বায়েজিদ থানার রৌফাবাদ পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্ল্যাটে ঘটেছিল ভয়াবহ ঘটনাটি। সুমন স্ত্রীকে হত্যা করে মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। ওই ফ্ল্যাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড মশিউর রহমান দুর্গন্ধ ও অস্বাভাবিক শব্দ শুনে বাসায় গেলে সুমন তাকে ঢুকতে বাধা দেন। সন্দেহ হওয়ায় মশিউর জোর করে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে রক্তাক্ত পরিবেশ দেখতে পান। খবর দিতে স্থানীয়দের ডাকতে গেলে সুমন গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায়।

এরপর শুরু হয় তার পলাতক জীবনের অধ্যায়। সুমন প্রথমে সিলেট এবং পরে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব তাকে অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি গ্রাম থেকে আটক করে। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক কর্নেল হাফিজুর রহমান জানান, সুমন প্রথমে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছিল। তবে তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ সত্য—পরকীয়ার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

হত্যার আগে সুমন তার একমাত্র সন্তানকে এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরে পরিকল্পিতভাবে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন। তদন্তে জানা গেছে, মরদেহ টুকরো করে মাথা ও দুটি হাত ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন তিনি। শরীরের বাকি অংশ বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, এমনকি কিছু অংশ ফ্ল্যাটের কমোডে ফেলেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে নিহত ফাতেমার খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করা হয়।

এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. আনোয়ার হোসেন রুবেল বায়েজিদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়েছিল। সুমনের দাবি, প্রবাস থেকে ফেরার পর স্ত্রী ফাতেমার সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। ঘটনার রাতে বাসায় কয়েকজন যুবক আসায় সন্দেহ দানা বাঁধে, যা রূপ নেয় তীব্র ঝগড়ায়। এর একপর্যায়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সুমন।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একজন স্বামী কীভাবে এমন নিষ্ঠুর কাণ্ড ঘটাতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত থাকবে এবং দ্রুত চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ