কলেজে খালি সাড়ে ১৩ লাখ আসন, কোথায় গেল শিক্ষার্থী?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১০:২৫:০৪
কলেজে খালি সাড়ে ১৩ লাখ আসন, কোথায় গেল শিক্ষার্থী?

চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দেশের কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে আসন থাকছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। তবে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বিপুলসংখ্যক আসন খালি থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও স্বনামধন্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিবারের মতো এবারও তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যাবে, সার্বিকভাবে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলো শিক্ষার্থী সঙ্কটে পড়তে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ দেশের ১১টি বোর্ডের পরীক্ষায় এবারে পাশ করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী, যা গতবারের তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম। অথচ কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৬ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। এর মানে হলো, সমস্ত পাস করা শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হলেও অন্তত সাড়ে ১৩ লাখ আসন খালি থেকে যাবে। বিশেষ করে মফস্বল ও অনুন্নত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এই সংকট আরো প্রকট হবে।

এই পরিস্থিতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। গত পাঁচ বছরে শিক্ষার্থীরা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্বাভাবিক ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে তাদের পাঠ্যবিষয়ের ওপর দখল দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এবারের পরীক্ষায় তুলনামূলক কঠিন প্রশ্নপত্র, বিশেষ করে গণিত বিষয়ের কঠিনতা, এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নে কড়াকড়ির কারণে বহু শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এসব মিলিয়ে গড় পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৬৮ শতাংশ, যেখানে গত বছর এই হার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সাধারণভাবে প্রতি বছর কিছু আসন খালি থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি আরও ভিন্ন। কারণ শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই কমেছে ৩৮ হাজারের বেশি। ফলে মধ্যম বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানের কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, ভর্তির নিয়ম-কানুন আগের মতোই রাখার পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিষয়টি চূড়ান্ত করতে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন ও ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। শিক্ষার্থীরা ৫ থেকে ১০টি পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে, এবং মেধা, কোটা ও পছন্দের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও রয়েছে প্রচুর আসন। যেমন কুমিল্লায় ২ লাখ ৬০ হাজার, রাজশাহীতে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার, দিনাজপুরে ৩ লাখ ২৮ হাজার এবং মাদ্রাসা বোর্ডে রয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার আসন। এই বিপুল সংখ্যক আসনের তুলনায় পাস করা শিক্ষার্থী কম হওয়ায় বহু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী সংকটে ভুগবে।

ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাকসুদ উদ্দিন মনে করেন, এমন সংকটে পড়া কলেজগুলোর জন্য এখনই পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যেগুলো মফস্বল ও গ্রামের এলাকায় অবস্থিত। শিক্ষার্থী না পেলে অনেক বেসরকারি কলেজ অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে, এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হতে পারে।

এই পরিস্থিতি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক ধরনের সতর্ক সংকেত। যেখানে শিক্ষার মান উন্নয়ন, ফলাফল বিশ্লেষণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আরও দূরদর্শী ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিবেদন/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ