একসঙ্গে ১৮ বিচারককে অবসরে পাঠানোর নেপথ্যে যা থাকছে

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ১৪:১৭:৩৩
একসঙ্গে ১৮ বিচারককে অবসরে পাঠানোর নেপথ্যে যা থাকছে

বিচার প্রশাসনে নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ বিকাশ কুমার সাহাসহ ১৮ জন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাদের অবসরের বিষয়টি জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, অবসরে পাঠানো সবার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং জনস্বার্থে, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকারি চাকরি বিধিমালা-২০১৮-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই অবসর আদেশের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের বিরুদ্ধে বারবার ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। অভিযোগ রয়েছে, তারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধী মত দমন-পীড়নে সহযোগিতা করেছেন। তাদের ভূমিকা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও জনআস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রজ্ঞাপনে যেসব কর্মকর্তার নাম রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ওএসডি বিকাশ কুমার সাহা, রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান, কিশোরগঞ্জের বিচারক মাহবুবার রহমান সরকার, কুষ্টিয়ার বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব, খুলনা, ভোলা, সিলেট, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিচারকগণ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে থেকেই ওএসডি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন।

সরকারি সূত্র আরও জানায়, এই বিচারকদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় দিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো বিচারক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্কের সুবিধা নিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদাকে বারবার ক্ষুণ্ন করেছেন। এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার বিভাগকে শুদ্ধ করতে হলে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার একটি বার্তা দিয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হলে বিচারকদের পেশাগত জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে।

তবে সমালোচকরা এটিকে রাজনৈতিক প্রতিশোধের অংশ হিসেবে দেখার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, শুধুমাত্র বিরোধী দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়, বরং যেসব বিচারক সত্যিই দোষী, তাদের নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনাই হওয়া উচিত। অন্যথায় এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা, জনআস্থা পুনরুদ্ধার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগকে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভর করবে ভবিষ্যতে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং পেশাগত মূল্যবোধ কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়, তার ওপর।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ