৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে যত টাকায়

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ১০:৪৬:৪৩
৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে যত টাকায়

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইলিশের দাম পৌঁছেছে নজিরবিহীন উচ্চতায়। বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,৯০০ টাকায়, আর ৮০০ গ্রাম ইলিশের কেজি ২,৩০০ থেকে ২,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা একদিকে যেমন মাছ কম পাওয়ার হতাশায় রয়েছেন, তেমনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরেও পর্যাপ্ত আয় না হওয়ায় লোকসানে পুড়ছেন।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ট্রলার এফবি আল-আসফাক সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছিল ১৫ মাঝিমাল্লা নিয়ে। ট্রলারের মাঝি সালাহউদ্দিন জানান, তিনদিন সমুদ্রে কাটিয়ে মাত্র ২০০টি ইলিশ পেয়ে ১৬৩ কেজি মাছ নিয়ে ফিরে আসেন। ইলিশগুলোর আকার অনুযায়ী প্রতি মণে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেন ১ লাখ ৩ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ৮৬ হাজার টাকা, আর ৬৫০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকায়।

তবে এত উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেও লাভ হয়নি সালাহউদ্দিনের। তিনি বলেন, “সাড়ে সাত লাখ টাকার বাজার নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মাছ বিক্রি করলাম ৩ লাখ টাকার। ৪ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।” তার ভাষ্য মতে, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র থাকে উত্তাল, তখন মাছ ধরা হয় প্রবল ঝুঁকির মধ্যে। এই সময়ের ইলিশ স্বাদে অতুলনীয় হলেও, সমুদ্রের অবস্থার কারণে সংকট তৈরি হওয়ায় দাম বেড়েছে।

এমন বাস্তবতা একইভাবে জানিয়েছেন নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি তৈয়বুর রহমানও। তিনি জানান, গত তিন মাস সাগরে নামতে না পারার ফলে বাজারে ইলিশের সরবরাহ কমেছে। মে ও জুনে ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল, এরপর পুরো জুলাইজুড়ে আবহাওয়ার অবনতি থাকায় মাছ ধরতে পারেননি জেলেরা। এই দীর্ঘ ব্যবধানের ফলে বাজারে মাছ উঠছে কম, দাম বেড়েছে অনেক গুণ।

এ সংকট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহিপুর ঘাটের জেলে জিয়াবুল। তিনি বলেন, “সরকার ইলিশের দাম নির্ধারণ করতে চায়, কিন্তু জেলেদের জীবনের ঝুঁকি, তেল, বরফসহ অন্যান্য খরচের কথা কেউ ভাবে না। মাছের দাম বেশি, তবুও আমরা লোকসানে। সরকার যদি দাম বেঁধে দেয়, তাহলে উপকরণগুলোর দামও নির্ধারণ করতে হবে।”

এদিকে কুয়াকাটার খান ফিসের পরিচালক জাহাঙ্গীর খান জানান, ইলিশের দাম কেন বাড়ছে তা আমদানি-রপ্তানিকারকদেরও পরিষ্কার নয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে যেভাবে দাম নির্ধারিত হয়, সেই হিসেবেই তারা জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনেন। তার ভাষায়, “মাছের পরিমাণ বাড়লে দামটা কমে আসবে, আমরা নিজেরাও অপেক্ষায় আছি।”

সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দাম বৃদ্ধির একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, দীর্ঘ সময় ধরে সাগরে মাছ ধরতে না পারার কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেড়েছে। তবে বাজারে যাতে কোনো অসাধু সিন্ডিকেট পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে না করতে পারে, সেজন্য সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম শুধুই লাভের বার্তা বয়ে আনছে না। বরং এর আড়ালে রয়েছে গভীর এক সংকট। জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে গেলেও পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় পড়ছেন বিপুল লোকসানে। বাজারে যে দাম দেখা যাচ্ছে, তা আসলে প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অনেক বেশি নয়। ফলে, ইলিশের এই মূল্যবৃদ্ধি একদিকে যেমন সরবরাহ সংকেত দিচ্ছে, অন্যদিকে প্রশ্ন তুলছে এই দাম কাদের জন্য মুনাফা আনছে আর কাদের কষ্টকে আড়াল করছে?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ