জুলাই স্মরণে 'ডিজিটাল উপহার' দিবে সরকার

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৭:২৫:৪৭
জুলাই স্মরণে 'ডিজিটাল উপহার' দিবে সরকার

গত বছরের কোটা সংস্কার ও জুলাই গণআন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে দেশের মোবাইল গ্রাহকদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১৮ জুলাই উপলক্ষে প্রতিটি মোবাইল গ্রাহককে ১ জিবি করে ইন্টারনেট ডেটা বিনামূল্যে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। ৯ জুলাই (বুধবার) মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিটিআরসি জানায়, এই ডেটার মেয়াদ থাকবে পাঁচ দিন এবং গ্রাহকদের আগেই এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে।

বিটিআরসির দপ্তরে ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। উদ্যোগটির পেছনে তিনটি মূল প্রতীকী উদ্দেশ্য রয়েছে ডিজিটাল স্বাধীনতার বার্তা দেওয়া, জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানানো এবং জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণে রাখা।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে দেয় সরকার, যা ছাত্র-জনতা এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। একবছর পর সরকার ‘ডেটা উপহার’-এর মাধ্যমে সেই ঘটনার একটি প্রতীকী পুনর্মূল্যায়ন করতে চাইছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে। বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা তৈমুর রহমান বলেন, “আমরা জুলাইয়ের চেতনা সমুন্নত রাখতে আগ্রহী। বিটিআরসির চিঠিটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তবে অন্য এক অপারেটরের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “আমরা প্রতিটি ডেটার ওপর ট্যাক্স দিই। সরকার যদি স্পষ্টভাবে জানায় না যে এই ‘বিনামূল্যের ডেটা’ করমুক্ত হবে কি না, তাহলে বিভ্রান্তি থেকে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগে অপারেটরদের ট্রান্সমিশন ও অন্যান্য ব্যয় আছে, যা বিটিআরসিকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কেবল নির্দেশনা নয়, সহযোগিতাও লাগবে।”

এ উদ্যোগকে প্রযুক্তিগত চেয়ে রাজনৈতিকভাবে অধিক প্রতীকী হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, ইন্টারনেট এখন আর কেবল বিনোদন বা প্রযুক্তির বিষয় নয়, এটি নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। সেই প্রেক্ষাপটে এই ফ্রি ডেটা সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

তবে বাস্তবায়নে কর নীতিমালা, টেলিকম অবকাঠামোগত সক্ষমতা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের পারস্পরিক সমন্বয় প্রয়োজন। অন্যথায় এই মহৎ উদ্যোগ প্রতীকী হয়ে থেকে যেতে পারে।

যদি এই ডেটা বিতরণ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং জনগণ সত্যিকারের উপকার পায়, তবে এটি শুধু স্মারক নয় একটি যুগান্তকারী ডিজিটাল নীতি হয়ে উঠতে পারে। একটি বছর আগে যেখানে জনগণের ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল, সেখানে এবার জনগণের হাতে তথ্যপ্রবাহ তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সরকার ডিজিটাল স্বাধীনতার নতুন বার্তা দিতে পারবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ