চীন তৈরি করল ৬জি প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১০:১৬:৫১
চীন তৈরি করল ৬জি প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র

যুদ্ধক্ষেত্রে আধিপত্য আর প্রযুক্তির সূক্ষ্ম দখল এখন কেবল আক্রমণের ক্ষমতা নয়, বরং শত্রুর ‘চোখে ধোঁয়া’ লাগানোর কৌশলেও নির্ধারিত হচ্ছে বিজয়ের দিগন্ত। এই বাস্তবতায় চীনের হুয়াজং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (HUST) গবেষকরা এমন একটি ৬জি-নির্ভর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম (6G-Powered Electronic Warfare System) উদ্ভাবন করেছেন, যা শুধু রাডার জ্যামিং নয়, বরং বাস্তবতা ও বিভ্রান্তির সীমানা মুছে দিয়ে যুদ্ধের নিয়মই নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।

এই সিস্টেমের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এটি শত্রুপক্ষের রাডারে ৩,৬০০টির বেশি ভুয়া টার্গেট সৃষ্টি করতে পারে, এক মুহূর্তে। এই পদ্ধতি কেবল রাডার ব্লক বা জ্যাম করে না, বরং শত্রুকে এমন একটি 'অস্তিত্বহীন যুদ্ধক্ষেত্রে' ফেলে দেয়, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তই হতে পারে মারাত্মক ভুলের ফল। এই প্রযুক্তি একটি জ্যামিং টুল নয় এটি একপ্রকার ডিজিটাল অপটিক্যাল ইলিউশন সিস্টেম, যা বাস্তবতার বিকল্প এক ‘ফেক রিয়ালিটি’ সৃষ্টি করে।

প্রথাগত যেকোনো স্টিলথ বিমান বা মিসাইল রাডার এভোয়েডেন্সে নির্ভর করে থাকে। চীনের নতুন প্রযুক্তি X-band ফ্রিকোয়েন্সি (১২ গিগাহার্টজ) ব্যবহার করে এমন তীব্র রেডিও তরঙ্গ ছড়াতে পারে, যা শুধু শত্রু রাডারকে বিভ্রান্ত করে না, বরং স্টিলথ বিমানকেও ‘বিবস্ত্র’ করে ফেলে। এফ-৩৫-এর মতো প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যাটফর্ম, যার অস্তিত্বই নির্ভর করে রাডার-অদৃশ্য ক্ষমতার ওপর, তাদের কাছে এই নতুন প্রযুক্তি এক ধরনের অস্তিত্ব সংকট।

রাডার বিভ্রান্তির পাশাপাশি, এ সিস্টেম অপটিক্যাল ফাইবারভিত্তিক মাল্টিপ্লেক্স কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে, যেখানে একযোগে ৩০০টিরও বেশি প্ল্যাটফর্ম বা ইউনিট যুক্ত থাকতে পারে। এর মানে, শত্রুর বিভ্রান্তির মধ্যেও নিজের বাহিনী থাকবে এক অত্যন্ত সংগঠিত, তাৎক্ষণিক, স্বয়ংক্রিয় তথ্য-প্রবাহে আবদ্ধ। এই বৈশিষ্ট্য প্রযুক্তিটিকে একধাপে র‌্যাডার-ব্লকার থেকে উন্নীত করে এক সম্পূর্ণ যুদ্ধ-কমান্ড সেন্টারে।

চীনের এই অর্জন শুধু একটি প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন নয়, বরং এটি সামরিক কৌশলের ধারাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটি কৌশলগত অর্জন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ আর 'কে কার ক্ষেপণাস্ত্র বেশি দূরে ছুড়তে পারে' এই প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখন প্রশ্ন দাঁড়াবে কে বেশি সত্যকে আড়াল করতে পারে, কে বেশি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে শত্রুকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। এই প্রযুক্তি সেই অর্থে চীনের ‘ইলেকট্রনিক ডিসরাপশন ডকট্রিন’-এর প্রথম বাস্তব রূপ।

পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি এখনো যখন বহু দেশের কাছে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, চীন ৬জি প্রযুক্তিকে প্রতিরক্ষা বাস্তবতায় রূপান্তর করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের প্রযুক্তিগত রণনীতি কী পরিমাণ সংগঠিত ও উদ্দেশ্যপ্রসূ। এই সিস্টেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সিগন্যাল প্রসেসিং, এবং সাইবার ডিফেন্স একসূত্রে গাঁথা। যা একদিকে প্রযুক্তির জটিলতা বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে যুদ্ধের ময়দানকে করে তুলেছে ‘ইন্টেলিজেন্স ওয়ার’ বা বুদ্ধিবৃত্তিক সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল।

এই প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং রাশিয়া, ইসরাইল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের সামরিক কৌশলকারীদের জন্য এক পুনর্বিবেচনার বার্তা। এমন একটি ইলেকট্রনিক বিভ্রান্তির যুগে প্রবেশ করা মানে যুদ্ধ হবে আর দৃশ্যমান নয়, বরং ধোঁয়াশাচ্ছন্ন, দ্রুতগতির, সংকেতভিত্তিক ও বিভ্রান্তিকর যেখানে প্রতিপক্ষকে ধ্বংসের চেয়ে বিভ্রান্ত করা হয়ে উঠবে বড় কৌশল।

চীনের এই ৬জি-চালিত ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষা সিস্টেম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রযুক্তি শুধু সভ্যতা গড়ার মাধ্যম নয়, বরং ক্ষমতার এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য। যুদ্ধক্ষেত্র এখন আর শুধু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ নয়, বরং এক প্রতিযোগিতা কে বেশি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কে বিভ্রান্তিকে অস্ত্র বানাতে পারে, আর কে প্রযুক্তিকে কৌশলের চেয়ে দ্রুত রূপান্তর করতে পারে বাস্তবতায়। এই দিক থেকে চীন হয়তো ইতোমধ্যেই পরবর্তী যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ এগিয়ে রেখেছে।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত