আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিমালা থামাল আদালত!

২০২৫ জুন ২৯ ১৮:৩৩:৩২
আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিমালা থামাল আদালত!

সাত বছর আগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক সিদ্ধান্তের মোড় ঘুরিয়ে দিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে দেওয়া আদেশ—যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করা হয়েছিল—সেই আদেশ স্থগিত করেছেন বর্তমান আপিল বিভাগ।

আজ রবিবার (২৯ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বিচারপতিরা সর্বসম্মতিক্রমে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে আবেদনকারীদের ২০১৮ সালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন।

আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শিশির মনির জানান, এই আদেশের ফলে এখন ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারির বিতর্কিত রায়ের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ আপিলের পথ খুলেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সরকারের প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুর, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান) বিধিমালা, ২০১৭’ গেজেটটি গ্রহণ করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আদেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ। এরপর থেকেই অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ এই বিধিমালার আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছিল।

তবে আদালত আজ জানিয়েছেন, আপিলের পূর্ণাঙ্গ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২০১৭ সালের সেই বিধিমালাটি আপাতত কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি, এই বিধিমালার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে চলমান রিটের শুনানিও চলবে।

এই বিধিমালার শুরুটাও ছিল রাজনৈতিক ও বিচারিক জটিলতায় ভরা। আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের (১৯৯৯) আলোকে সরকারকে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার জন্য ১২ দফা নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে বিচার বিভাগ পৃথকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।

২০১৬ সালে আইন মন্ত্রণালয় বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত একটি বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব করে, যা ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধিমালার আদলে তৈরি হওয়ায় তীব্র আপত্তির মুখে পড়ে। সুপ্রিম কোর্ট নিজেই তা সংশোধন করে পুনরায় জমা দেয়।

এরই মধ্যে ২০১৭ সালে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। সেই সময়েই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশ ছাড়েন এবং পদত্যাগ করেন। এরপরই সরকার ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করে, যা ২০১৮ সালে আদালত অনুমোদন দেয়।

এই অনুমোদনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের আট আইনজীবী গত বছরের আগস্টে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। আজকের আদেশ সেই আবেদন নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি নতুন বিচারিক অধ্যায়ের সূচনা করল।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত