ইরানে ঢুকতে পারবেন না আইএইএ প্রধান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ১০:১৫:২৬
ইরানে ঢুকতে পারবেন না আইএইএ প্রধান

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সর্বশেষ, সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিকে ইরানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তেহরান। একইসঙ্গে আইএইএ-কে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নজরদারি ক্যামেরা স্থাপনের অনুমতিও দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইরনার বরাতে জানা গেছে, আরাগচি বলেছেন, “আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে কোনো প্রকার ক্যামেরা বসাতে দেব না। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

এই সিদ্ধান্ত ইরান-আইএইএ সম্পর্কের ইতিহাসে এক বড় মোড় এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক কূটনীতিতে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ইরানের এই ঘোষণার ফলে তার পরমাণু কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে বিশ্বে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

এই কূটনৈতিক উত্তেজনার মূলে রয়েছে সাম্প্রতিক ইসরাইলি ও মার্কিন সামরিক অভিযান। ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত এবং ৫,৩৩২ জন আহত হন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ইসরাইলের ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালায়, যাতে ২৯ জন নিহত এবং ৩,৪০০-এরও বেশি মানুষ আহত হন। দুই পক্ষের এই সংঘর্ষই সাময়িকভাবে বিরত হয় ২৪ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।

এই সশস্ত্র উত্তেজনার পরই ইরানের পার্লামেন্ট এক আইন পাস করে, যেখানে আইএইএ-র সঙ্গে পূর্বের সহযোগিতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আওতায় পারমাণবিক কার্যক্রমে সংস্থাটির প্রবেশাধিকার, তদারকি ও ক্যামেরা বসানোর মত কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে আসছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির পর থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। তবে আইএইএ এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে তেহরানকে নজরদারির আওতায় রাখার।

সংস্থার মহাপরিচালক গ্রোসি এর আগেও একাধিকবার সতর্ক করে বলেছেন, “ইরান আমাদের পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে, যা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের পরমাণু নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।” এর পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং পরমাণু কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ মূল্যায়নে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএইএ-র বিরুদ্ধে এমন কঠোর পদক্ষেপ কেবল কৌশলগত নয়, রাজনৈতিকও। এটি বিশ্ববাসীকে একটি বার্তা দিচ্ছে যে, ইরান তার পারমাণবিক সার্বভৌমত্বে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আক্রমণের পর এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই একধরনের প্রতিরোধমূলক কূটনীতি হিসেবে দেখছেন।

একজন তেহরানভিত্তিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক জানান, “ইরান এখন পশ্চিমা চাপ নয়, নিজস্ব অবস্থান থেকে সংলাপের পথে যেতে চায়। তারা আইএইএ-কে একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে না দেখে, পশ্চিমাদের রাজনৈতিক হাতিয়ারেরূপে ভাবছে।”

ইরান ও আইএইএ-র সম্পর্কের এমন সংকটজনক মোড় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করে ইরানকে পরমাণু অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল, তা এখন বিপদের মুখে।

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে যুদ্ধবিরতির মাঝে ইরান কি নতুন করে চুক্তির দরজা বন্ধ করছে? নাকি এটি শুধুই কৌশলগত চাপ প্রয়োগ, যাতে নিজস্ব শর্তে আলোচনায় ফেরা যায়?

বিশ্বের পরমাণু স্থিতিশীলতার জন্যই এখন জরুরি হলো, তেহরান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্মান ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন করে একটি কার্যকর সংলাপের সূচনা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ