শেয়ারবাজার

৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নে পৌঁছেছে ৬ কোম্পানির শেয়ার: আশাবাদ ও শঙ্কার দ্বৈত চিত্র

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১৭:৪৭:৩৫
৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নে পৌঁছেছে ৬ কোম্পানির শেয়ার: আশাবাদ ও শঙ্কার দ্বৈত চিত্র

২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার—ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (DSE) লেনদেনকৃত শেয়ারগুলোর মধ্যে তিনটি কোম্পানি ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে, যেখানে অন্যদিকে তিনটি কোম্পানি একই সময়ের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। বাজারে এই দ্বিমুখী প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যেমন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে, তেমনি কিছুটা শঙ্কাও তৈরি করেছে।

সর্বোচ্চ দামে যেসব শেয়ার পৌঁছেছে:

  • সিএপিএমবিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড: দ্বিগুণ ঊর্ধ্বগতি

মিউচুয়াল ফান্ডটি ৫২ সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ১০ টাকা ১০ পয়সা স্পর্শ করে, যা প্রায় দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। যদিও দিন শেষে ক্লোজিং হয়েছে ১০ টাকায়। ২০২৪ সালে কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়া সত্ত্বেও এমন মূল্যবৃদ্ধি বাজারে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে আগ্রহী করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে ফান্ডটির আয় ও পারফরম্যান্স সম্পর্কে ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে।

  • দেশ গার্মেন্টস: পোষাক খাতে চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন

পোশাক খাতের এই কোম্পানিটি ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে বৃহস্পতিবার ১০৮ টাকা ৪০ পয়সায় পৌঁছে। গত বছর ৩ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড প্রদান করা কোম্পানিটির এমন মূল্যবৃদ্ধি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাজার ভবিষ্যতের আরও ভালো পারফরম্যান্স বা বর্ধিত ডিভিডেন্ডের প্রত্যাশা করছে। যদিও এখনো কোনো সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

  • জিকিউ বলপেন: ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্থিতিশীল রিটার্ন

৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন ১১২ টাকা থেকে এদিন ১৭৯ টাকা স্পর্শ করে দিন শেষে ক্লোজ করে ১৭১ টাকা ৫০ পয়সায়। ধারাবাহিক ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ও স্থিতিশীল ব্যবসার কারণে কোম্পানিটির ওপর বাজারে আস্থার প্রবাহ বজায় রয়েছে।

সর্বনিম্ন দামে যেসব শেয়ার নেমেছে:

  • ফাস ফাইন্যান্স: ভয়াবহ পতন ও নেতিবাচক রিজার্ভ

২০১৮ সালের পর থেকে কোনো ডিভিডেন্ড না দেওয়া এই নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ৪.৯০ টাকা থেকে কমে বৃহস্পতিবার ২.৭০ টাকায় পৌঁছেছে। কোম্পানিটির রিজার্ভ ও এনএভি (নেট অ্যাসেট ভ্যালু) বর্তমানে নেতিবাচক, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

  • ন্যাশনাল ব্যাংক: খ্যাতির পতন

একসময় ব্যাংক খাতের পরিচিত নাম, ন্যাশনাল ব্যাংক বর্তমানে ৮.৮০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৩.৪০ টাকায়। সর্বশেষ ২০২০ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসান এবং নেতিবাচক রিজার্ভের মুখে পড়েছে। সম্পদমূল্য (NAV) এখনো পজিটিভ থাকলেও কোম্পানিটির লাভজনকতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

  • এনআরবিসি ব্যাংক: নতুন প্রজন্মের শঙ্কা

২০২৩ সালে ১১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলেও ২০২৪ সালে প্রভিশন ঘাটতির কারণে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয় এনআরবিসি ব্যাংক। এর ফলে শেয়ার ১২.৭০ টাকা থেকে কমে বর্তমানে ৫.৯০ টাকায় নেমে এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চির ধরিয়েছে।

বিশ্লেষণ: বাজারের উত্থানপতনের যৌক্তিকতা

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছানো কোম্পানিগুলোতে মূলত বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ আয়ের প্রত্যাশা এবং পজিটিভ প্রজেকশন কাজ করছে। বিশেষ করে যারা স্থিতিশীল পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে, তাদের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

অন্যদিকে, যারা দীর্ঘ সময় ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা আর্থিক কাঠামো দুর্বল—তাদের শেয়ারে পতন অব্যাহত রয়েছে। তবে অনেক সময় এই ধরনের 'তলানিতে থাকা শেয়ার'-ও দীর্ঘমেয়াদে বড় রিটার্ন দিতে পারে, যদি কোম্পানিটি কার্যকর পুনর্গঠনের পথে অগ্রসর হয়।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক প্রবণতা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, কোম্পানির মৌলিক শক্তি, ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা এবং ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা—এই তিন উপাদানই মূল্যবৃদ্ধি বা পতনের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান সময়ে বাছাইকৃত বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিই বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ