'শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই'

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ১১:৩৩:১৩
'শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই'

মাদারীপুরে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানারে আবারও দৃশ্যমান হলো রাজনৈতিক গতিশীলতার ইঙ্গিত। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহরের সরদার কলোনি সড়ক থেকে শুরু হয়ে ডাক্তার তোতা সড়কে গিয়ে শেষ হয় মাত্র পাঁচ মিনিট স্থায়ী এক ঝটিকা মিছিল। এতে অংশগ্রহণকারী তরুণদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক এবং কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ছিল, যা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার প্রয়োজনে তাদের সতর্কতা নির্দেশ করে।

এই মিছিলটি ছিল মূলত আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠিত একটি প্রতীকী উপস্থিতি, যা নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে যে অন্তর্নিহিত সক্রিয়তা এখনো বিদ্যমান, তার প্রমাণ। মিছিলে অংশ নিয়েছেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কিশোর ও তরুণ। এই মিছিলের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিছু তরুণ একটি ব্যানার হাতে নির্জন রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে এবং উচ্চকণ্ঠে স্লোগান দিচ্ছে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘অবৈধ সরকার মানি না, মানবো না’, ইত্যাদি।

ব্যানারে দেখা গেছে, এটি ছিল একটি প্রতীকী প্রতিবাদ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও সমসাময়িক ‘অবৈধ আইন ও নিষেধাজ্ঞার’ প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিল। ব্যানারে ব্যবহার করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছবি, যা রাজনৈতিক প্রতীকবাদের বহিঃপ্রকাশ।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সরদার কলোনি এলাকা অত্যন্ত সংবেদনশীল, কারণ এখানে ডিসি, এসপি এবং জেলা জজের বাসভবন রয়েছে। এই এলাকায় এভাবে মিছিল করা সাহসিকতার ইঙ্গিত দেয়। তারা এত দ্রুত মিছিল শেষ করে যে কেউ বুঝে ওঠার আগেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।”

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রথমে কোনো অবগতির তথ্য পাওয়া যায়নি। মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, “নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নামে কোনো মিছিল হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে যদি কেউ লুকিয়ে, শহরের নির্জন অলিগলিতে বেআইনি কার্যক্রমে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেটি স্পষ্টতই আইন বিরোধী এবং এই বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।”

উল্লেখ্য, সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পটভূমিতে রয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উদ্ভূত নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ফলে ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও, মাঠপর্যায়ে সংগঠনের সমর্থকদের বিচ্ছিন্ন ও ঝটিকা উপস্থিতি স্পষ্ট করছে যে সংগঠনের চেতনা এখনো অনেকের হৃদয়ে জীবন্ত।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ