আল জাজিরা প্রতিবেদন

'আমরা আমেরিকাকে চড় মেরেছি': আয়াতুল্লাহ খামেনি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ০৭:৪৭:২৭
'আমরা আমেরিকাকে চড় মেরেছি': আয়াতুল্লাহ খামেনি

নির্মোহ যুক্তি, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রতিশোধের হুমকিতে ভরপুর এক উত্তপ্ত পাল্টাপাল্টি অবস্থান উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই-কে ঘিরে। সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনব্যাপী যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেই উভয় পক্ষের উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য আরও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শুক্রবার (স্থানীয় সময়) নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে দেয়া এক বিস্ফোরক বিবৃতিতে ট্রাম্প সরাসরি আয়াতুল্লাহ খামেনেইকে আক্রমণ করে বলেন, “আমি তাকে (খামেনেইকে) এক অতি করুণ এবং লজ্জাজনক মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছিলাম।” তিনি দাবি করেন, যুদ্ধের শেষ ধাপে তিনি ইসরায়েলকে ‘চূড়ান্ত আঘাত’ থেকে পিছিয়ে আনতে বলেছিলেন। ট্রাম্প আরও বলেন, “তার দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত, তার তিনটি ‘অশুভ’ পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে, এবং আমি জানতাম সে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তবু তাকে হত্যা করতে দিইনি।”

এর আগে যুদ্ধবিরতির ঠিক পরদিন আয়াতুল্লাহ খামেনেই এক বক্তব্যে দাবি করেন, ইরান এই যুদ্ধে ‘জয়ী’ হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সামরিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকাকে চড় মেরেছি” এই মন্তব্যে ইঙ্গিত ছিল কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দিকে, যা হয়েছিল ফোর্ডো, ইসফাহান ও নাটানজ পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর।

তবে ট্রাম্পের দাবি, খামেনেই যেভাবে যুদ্ধের ‘জয়’ দাবি করেছেন, তা “স্পষ্ট মিথ্যাচার ও বোকামিপূর্ণ”। তিনি বলেন, “এই ধরনের বিবৃতি শুধুই বিদ্বেষ, ঘৃণা এবং ঘৃণার প্রকাশ এবং এই বক্তব্য আমাকে বাধ্য করেছে ইরানের ওপর থেকে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের যে আলোচনা চলছিল, তা বাতিল করতে।”

এদিকে, ট্রাম্পের দাবির বিপরীতে একটি ‘ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে’ বলা হয়েছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়নি বরং কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য কেবল ইরানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে নয়, বরং ঘরোয়া রাজনীতিতে তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করতেও এক ধরনের কৌশল হতে পারে। আর খামেনেইয়ের মন্তব্য ইঙ্গিত করে, ইরান এখনও আত্মবিশ্বাস হারায়নি এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বজায় রাখতেই এমন ‘প্রতিরোধের বয়ান’ তুলে ধরছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল ইরান পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে অগ্রগতি করলে আবারও সামরিক পদক্ষেপ নিতে তারা ‘অবশ্যই প্রস্তুত’। ট্রাম্প শুক্রবার আবারও এই হুঁশিয়ারি দেন, বলেন “যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে আগায়, আমরা অবশ্যই আবারও বোমাবর্ষণ করব।”

এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ