‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’—নূরুল হুদার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

২০২৫ জুন ২৭ ২০:২৯:৪৬
‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’—নূরুল হুদার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় তাকে আরও চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনাইদের আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

আদালতে শুনানি শুরু হয় বিকাল ৩টা ৪৪ মিনিটে। এর কিছু আগে, বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে নিরাপত্তা বলয়ে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করা হয়। তার বুকে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট। এজলাসে তোলার পর পুলিশ তার হেলমেট ও হাতকড়া খুলে দেয়।

শুনানির পুরো সময়জুড়ে নূরুল হুদাকে একেবারে নীরব দেখা যায়। মাথা নিচু করে বসে ছিলেন তিনি। শুরুতে আইনজীবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেও পরে আর মুখ খোলেননি।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বিরোধী দলের প্রার্থী ও ভোটারদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। অথচ সে সময়কার সিইসি হিসেবে নূরুল হুদা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালের ভোটে রাত ৩টার মধ্যে ৩০০ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়। রাতে ভোটের আয়োজন, প্রিসাইডিং অফিসারদের নানা নির্দেশনা দেওয়া এবং প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ সবই তার নেতৃত্বে হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনের মূল হোতা ছিলেন তিনিই।”

এ সময় ফারুকী দাবি করেন, “এই নির্বাচনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসব ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, “গত ২৩ জুন এবং আজকের রিমান্ড আবেদনে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। তদন্ত কর্মকর্তা একই বক্তব্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উপস্থাপন করছেন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গত ৪ দিনের রিমান্ডে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে, তা কোথাও উল্লেখ নেই।”

আইনজীবী আরও বলেন, “এই মামলায় যে ধারাগুলো যুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই প্রশ্নবিদ্ধ। জামিনযোগ্য ধারা বাদ দিয়ে পরে আবার নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে মনে হয় মতপ্রকাশ করলেই মামলা হয়। এখন আদালতে কথা বলাও ভয়ংকর।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্ত করার দায়িত্ব এসআই-এর নয়। এসআই শুধু তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, বিশ্লেষণ করার এখতিয়ার তার নেই।”

এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা তার কাজ করে যাচ্ছেন। আদালত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে এটা স্পষ্ট যে নূরুল হুদা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন।”

শুনানি শেষে বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এজলাস ত্যাগ করেন।

এর আগে ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাসায় স্থানীয় জনতা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন আদালতে তোলা হলে প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেন। তিনি দেশের দ্বাদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা অনিয়ম ও সহিংসতার অভিযোগে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ:উত্থানে ১২ কোম্পানি, হঠাৎ ধসে ৯টি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৫ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিক (জুলাই... বিস্তারিত