‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’—নূরুল হুদার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় তাকে আরও চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনাইদের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
আদালতে শুনানি শুরু হয় বিকাল ৩টা ৪৪ মিনিটে। এর কিছু আগে, বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে নিরাপত্তা বলয়ে নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করা হয়। তার বুকে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট। এজলাসে তোলার পর পুলিশ তার হেলমেট ও হাতকড়া খুলে দেয়।
শুনানির পুরো সময়জুড়ে নূরুল হুদাকে একেবারে নীরব দেখা যায়। মাথা নিচু করে বসে ছিলেন তিনি। শুরুতে আইনজীবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেও পরে আর মুখ খোলেননি।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বিরোধী দলের প্রার্থী ও ভোটারদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। অথচ সে সময়কার সিইসি হিসেবে নূরুল হুদা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালের ভোটে রাত ৩টার মধ্যে ৩০০ আসনের ফল ঘোষণা করা হয়। রাতে ভোটের আয়োজন, প্রিসাইডিং অফিসারদের নানা নির্দেশনা দেওয়া এবং প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ সবই তার নেতৃত্বে হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনের মূল হোতা ছিলেন তিনিই।”
এ সময় ফারুকী দাবি করেন, “এই নির্বাচনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসব ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, “গত ২৩ জুন এবং আজকের রিমান্ড আবেদনে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। তদন্ত কর্মকর্তা একই বক্তব্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উপস্থাপন করছেন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গত ৪ দিনের রিমান্ডে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে, তা কোথাও উল্লেখ নেই।”
আইনজীবী আরও বলেন, “এই মামলায় যে ধারাগুলো যুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই প্রশ্নবিদ্ধ। জামিনযোগ্য ধারা বাদ দিয়ে পরে আবার নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে মনে হয় মতপ্রকাশ করলেই মামলা হয়। এখন আদালতে কথা বলাও ভয়ংকর।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্ত করার দায়িত্ব এসআই-এর নয়। এসআই শুধু তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, বিশ্লেষণ করার এখতিয়ার তার নেই।”
এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা তার কাজ করে যাচ্ছেন। আদালত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে এটা স্পষ্ট যে নূরুল হুদা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন।”
শুনানি শেষে বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এজলাস ত্যাগ করেন।
এর আগে ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাসায় স্থানীয় জনতা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরদিন আদালতে তোলা হলে প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেন। তিনি দেশের দ্বাদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা অনিয়ম ও সহিংসতার অভিযোগে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের’ আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে এই অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অন্য কোনো দলের নাম এলে তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
তদন্তের পরিধি ও অন্য দল
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করছি। এটি পুরোদমে শুরু হলে বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা আমরা তখন জানাতে পারব।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও এগোবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় যে—আরও কোনো দল এর সঙ্গে জড়িত আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অভিযোগ ও মামলার অগ্রগতি
এর আগে, গত বছরের ২ অক্টোবর এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে দায়ী।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ শেষ সাক্ষীর ৩য় দিনের জেরা অনুষ্ঠিত হবে। গতকালও মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে দিনভর জেরা করা হয়। জেরায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রাজসাক্ষী করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, কোনো চাপে নয়, সত্য উদঘাটনের স্বার্থেই তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন।
এ সপ্তাহেই অনেক ঘটনা ঘটবে: গুম মামলা নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের ইঙ্গিত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। সোমবার (৬ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই ইঙ্গিত দেন।
গুম মামলার তদন্ত প্রতিবেদন
তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আলোচিত গুমের কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দাখিল করা হবে। বিচারে দেরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য যে সময় প্রয়োজন ছিল, তা শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন:
“এখন একের পর এক মামলার ফরমাল চার্জ দাখিল করা হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং অনেক মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাই জনগণের প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যেই এই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
ওবায়দুল কাদের ও শেখ হাসিনার মামলা
ওবায়দুল কাদেরের মামলা প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সব মামলা একসঙ্গে হবে না। ধাপে ধাপে সব মামলা এগোচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “কেউ দায় এড়িয়ে যাবেন—এমন আশা করা বৃথা। ন্যায়বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”
শেখ হাসিনা এ মামলার প্রধান আসামি কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বাকিটা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন।”
জুলাই আন্দোলন দমনে পুলিশ সারাদেশে ৩ লাখের বেশি গুলি ছুড়েছিল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে তৎকালীন পুলিশ সারাদেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ১১ রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল। এর মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকা শহরেই ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড গুলি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।
তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে শুনানি মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত প্যানেলে এই জবানবন্দি দেওয়া হয়।
ব্যবহৃত মারণাস্ত্র ও নির্দেশনার অভিযোগ
তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, তার তদন্তকালে তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ওপর ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি সংক্রান্ত ২২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন পান। এতে দেখা যায়, এলএনজি, চাইনিজ রাইফেল, শর্টগান, রিভলবার ও পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।
আলমগীর জানান, তিনি ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও পেয়েছেন। এছাড়া র্যাব সদর দপ্তর থেকে হেলিকপ্টার ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন পান গত ১৪ জানুয়ারি।
তদন্ত কর্মকর্তা জবানবন্দিতে অভিযোগ করেন, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে আন্দোলন দমনে শান্তিপূর্ণ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক মাত্রায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
সাকিবের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর আগে সাকিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তথ্য পেতে দুদক বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছিল।
মামলার তদন্তে যুক্ত হচ্ছে নতুন অভিযোগ
চলতি বছরের জুনে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করার অপরাধে সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ জনের নামে মামলা করে দুদক। সেই মামলায় শেয়ারবাজার থেকে ২৫৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
এবার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে সেই মামলার তদন্তের সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।
কারাগারে মহিলা লীগ নেত্রী লিমাসহ ১০
রাজধানীর পৃথক তিন থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আমতলী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুসরাত জাহান লিমাসহ ১০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়
আসামিরা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আনিসুর রহমান, পাথরঘাটা উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. রিপন, আওয়ামী লীগ নেতা মো. নেছার আলী, ছাত্রলীগ নেতা কাজী আইনুল ইসলাম আশিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এস এম আল সনেট, মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আরশেদ আলী বিশ্বাস, রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অবিমন্যু বিশ্বাস অভি, আমিনুল হক ফয়সাল ও মো. বেলাল হোসেন তুহিন।
কোন মামলায় গ্রেপ্তার
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বনানী থানার এক মামলায় চারজন, ধানমণ্ডি থানার এক মামলায় দুজন এবং শাহজাহানপুর থানার এক মামলায় চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগ
মামলার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজধানীর ধানমণ্ডি, শাহজাহানপুর ও বনানী থানাধীন এলাকায় মিছিল করেন। তারা একত্রিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দেয় ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে অপরাধ করে। এসব ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক মো. আকিব নূর, গত ১৯ মে শাহজাহানপুর থানায় এবং গত ২ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, নাহিদ ইসলামের জেরা অব্যাহত ট্রাইব্যুনালে
জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ার পর বর্তমানে আসামিপক্ষের জেরার মুখোমুখি আছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জেরা কার্যক্রম রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে দুপুর আড়াইটায় পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োজিত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় তা পরবর্তী তারিখে মুলতবি করা হয়।
সেদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও মামুনুর রশীদসহ অন্যান্যরা। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নাহিদ ইসলাম জবানবন্দি দেন, যার অবশিষ্ট অংশ বৃহস্পতিবার শেষ করা হয়।
একই মামলায় বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। এখন পর্যন্ত মোট ৪৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির করা হয় মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষীতে পরিণত হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি এর আগে ২ সেপ্টেম্বর ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন এবং ৪ সেপ্টেম্বর তা শেষ করেন। তার সাক্ষ্যে উঠে আসে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দেশজুড়ে ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষীরাও একই সময়ে আন্দোলনের মধ্যে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ বর্ণনা আদালতে উপস্থাপন করেছেন। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা স্পষ্টভাবে দাবি করেছেন, এসব অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। এরপর ৩ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি প্রায় আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দকৃত প্রমাণাদি ও দলিল চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদ পরিবারের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত। রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত সাক্ষীর সংখ্যা ৮১ জন।
এর আগে, চলতি বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর মামলার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবং বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।
শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রাজধানীর ভাটারায় মো. জাহাঙ্গীর হত্যা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আসামিরা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন—এমন আশঙ্কায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ভাটারা থানার উপপরিদর্শক নাজমুল আমিন আদালতে আবেদন করেন। আদালত গত ২ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার এজলাসে আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আওয়ামী লীগের বেশ কিছু শীর্ষ নেতা ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন, কে এম নুরুল হুদা ও হাবিবুল আওয়াল। এছাড়া আওয়ামী মহিলা লীগের সদস্য নুজহাত সারওয়াত তমা, মিরপুর যুবলীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, শেরেবাংলা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহমেদসহ আরও অনেকে আছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ২১ জুলাই ভাটারা থানার অন্তর্গত এলাকায় নিহত জাহাঙ্গীর আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করেন। আওয়ামী লীগের আর্থিক জোগানদাতাদের সহযোগিতায় তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এই হামলায় গুরুতর আহত হন জাহাঙ্গীর এবং পরে তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনার পর ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে এবং আদালতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত মামলার আইনি প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
-রফিক
আদালত চত্বরে ব্যারিস্টার সুমনের বারবার উচ্চারণ: ‘ভালো থাকুক বাংলাদেশ’
জুলাই আন্দোলনের শেষ দিনে যাত্রাবাড়ীতে শ্রমিক মো. রিয়াজ নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার শুনানি বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনসহ সাতজন আসামিকে কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় এবং পরে এজলাসে তোলা হয়। আসামিদের সবার হাতে হাতকড়া, মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। শুনানি শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাদের পুনরায় হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সময় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “দেশের যে পরিস্থিতি, ভালো থাকুক বাংলাদেশ।” তিনি বারবার একই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করেন। এসময় মামলার অন্য আসামিরা নীরবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
শুনানির সময় ভিন্ন একটি ঘটনা ঘটে। সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর আইনজীবী মহসিন রেজা আদালতের কাছে আবেদন করেন, যাতে তার মক্কেলকে বিশেষ খাবার (স্যান্ডউইচ ও ড্রাই ফুড) সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি যুক্তি দেন যে, আমির হোসেন আমু প্রবীণ এবং নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, এজন্য তাকে নির্দিষ্ট বিরতিতে খাবার খেতে হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী এ আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং শেষ পর্যন্ত আদালত বিশেষ খাবার দেওয়ার আবেদন নাকচ করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, মামলার অভিযোগে বলা হয় যে ৫ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের শেষ দিনে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রমিক মো. রিয়াজ। এই ঘটনার পর যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকে আসামি করা হয়।
-রফিক
বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা: আইনি প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কৌশল

শেখ তাইজুল ইসলাম
আইনজীবী, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত শত্রুতা, সম্পত্তি বিরোধ, পারিবারিক কলহ কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রায়ই নিরপরাধ মানুষ মিথ্যা মামলার শিকার হন। মিথ্যা মামলা শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে না, বরং মানসিক চাপ, আর্থিক ক্ষতি এবং দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তির কারণ হয়। তবে আইন মিথ্যা মামলার শিকারদের জন্য প্রতিরক্ষা ও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রেখেছে। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা, ধৈর্য এবং সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
১. সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন:যদি আশঙ্কা থাকে যে আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হতে পারে, তাহলে থানায় জিডি করুন। এটি ভবিষ্যতে প্রমাণ করবে যে আপনি আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছিলেন।
২. প্রমাণ সংরক্ষণ করুন:যে কোনো ঘটনা বা সম্পর্কিত বিষয়ে চ্যাট, ফোন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, লেনদেনের কাগজপত্র সংরক্ষণ করুন। এগুলো ভবিষ্যতে আপনার নির্দোষিতা প্রমাণ করতে সহায়ক হবে।
৩. বিশ্বাসযোগ্য আইনজীবীর পরামর্শ নিন:প্রাথমিক পর্যায়েই একজন দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। এতে আপনার প্রতিরক্ষা কৌশল আগে থেকেই পরিকল্পিত হবে।
মিথ্যা মামলা হলে তাৎক্ষণিক করণীয়
১. জামিনের ব্যবস্থা করুন: মামলার ধরণ অনুযায়ী দ্রুত জামিনের আবেদন করুন। এতে অপ্রয়োজনীয় হয়রানি ও কারাবাস এড়ানো সম্ভব।
২. আইনি কৌশল নির্ধারণ করুন: অভিযোগকারীর অভিযোগ খণ্ডন করার মতো সব তথ্য, কাগজপত্র ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করুন। আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিটি অভিযোগের যৌক্তিক জবাব দিন।
৩. মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখুন:মিথ্যা মামলা মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়ার জন্য করা হয়। তাই ভয় না পেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
বিশেষ উদাহরণ: যৌতুকের মিথ্যা মামলা
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায়, যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর অধীনে মিথ্যা মামলা দায়ের হয়। এ ক্ষেত্রে—আসামি যদি সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে তিনি খালাস পাবেন। খালাস পাওয়ার পর অভিযুক্ত চাইলে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর ৬ ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে পারেন। এ ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
পাল্টা আইনি ব্যবস্থা
১. মানহানি মামলা: অভিযোগকারীর মিথ্যা অভিযোগে আপনার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলে মানহানির মামলা করা যায়।২. ক্ষতিপূরণ দাবি: দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় আপনার আর্থিক ক্ষতি হলে সিভিল কোর্টে ক্ষতিপূরণ দাবি করা সম্ভব।৩. দণ্ডবিধির আওতায় ব্যবস্থা: বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২১১ ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি জেনে শুনে মিথ্যা অপরাধমূলক অভিযোগ করে, তবে তারও শাস্তি হতে পারে।
প্র্যাকটিক্যাল গাইডলাইন চেকলিস্ট (Step-by-Step করণীয়)
১. মামলা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে (প্রতিরোধমূলক ধাপ):
- থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন।
- ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কাগজপত্র, অডিও-ভিডিও, চ্যাট লগ সংরক্ষণ করুন।
- একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
২. মামলা হলে (প্রথম পদক্ষেপ):
- ভীত না হয়ে আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
- দ্রুত জামিনের জন্য আবেদন করুন।
- পুলিশের কাছে সহযোগিতা করুন, তবে ভীতি বা চাপে স্বীকারোক্তি দেবেন না।
৩. মামলার বিচার চলাকালীন:
- সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করুন।
- প্রত্যেক শুনানিতে আইনজীবীর মাধ্যমে শক্ত প্রতিরক্ষা দিন।
- আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন, কিন্তু আপনার অধিকার নিয়ে সচেতন থাকুন।
৪. খালাস পাওয়ার পর:
- অভিযোগকারী/বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে পারেন (যেমন: যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮-এর ৬ ধারা বা দণ্ডবিধির ২১১ ধারা)।
- মানহানি মামলা বা ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারেন।
৫. দীর্ঘমেয়াদে:
- ভবিষ্যতে এ ধরনের হয়রানি থেকে বাঁচতে সবসময় আইনগত দলিল, লেনদেনের রেকর্ড ও যোগাযোগের প্রমাণ সংরক্ষণ করুন।
- ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধে লিখিত সমঝোতা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মিথ্যা মামলা বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আইন সচেতনতা, প্রস্তুতি, দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ ও সঠিক সময়ে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে একজন নির্দোষ ব্যক্তি শুধু নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না, বরং অভিযোগকারীকে শাস্তিও দিতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, মিথ্যা মামলা মোকাবিলায় আতঙ্ক নয়, বরং জ্ঞান, প্রস্তুতি ও দৃঢ়তা—এই তিনটিই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
পাঠকের মতামত:
- স্বনির্ভরতা অর্জনেই জোর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
- সতর্কতা জারি: ঢাকাসহ ২০ জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়ার শঙ্কা
- উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে বিতর্ক, রিজওয়ানা হাসান চাইলেন নাম
- ৫টি বিশেষ ধরনের মধু, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
- শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
- রসায়নে নোবেল: জল সংগ্রহ ও গ্যাস নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার
- সঙ্গী কি আপনাকে এড়িয়ে চলছেন? এই ৬টি লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন
- ১৩ গ্রামের ফোন! বিশ্ব কাঁপানো Zanco Tiny T1
- আফগানিস্তান-বাংলাদেশ ওয়ানডে: টিভিতে ছাড়াও মোবাইলে দেখবেন যেভাবে
- যানজটে আটকা পড়ে গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে উপদেষ্টা
- ৮ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ
- ৮ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ৮ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- নিবন্ধন ছাড়াই ৫ কোটি শিশুকে টিকা দেবে সরকার
- সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুলের আহ্বান: ‘আর বিলম্ব নয়’
- পাকিস্তানে আফগান সীমান্তের কাছে সামরিক কনভয়ে বোমা ও বন্দুক হামলা
- জোরপূর্বক গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র
- আর্সেনালের মাঠে লিয়ঁর প্রতিশোধ, বার্সার ঝড়ে উড়ে গেল বায়ার্ন
- চট্টগ্রামে উত্তেজনা: সড়ক দুর্ঘটনায় নেতার মৃত্যু ঘিরে হেফাজতের অবরোধ
- সিরিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ নারী দল
- নোবেল দৌড়ে ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’—জলবায়ু সংকটের যুগে বৈজ্ঞানিক আশার আলো
- রেকর্ড ছুঁয়েছে সোনার দাম: বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় সোনা
- ‘আমাকে অপহরণ করা হয়েছে’—ফেসবুক ভিডিওতে শাহিদুল আলমের দাবি
- নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সেফ এক্সিট’ বিতর্ক
- ট্রাম্পের সফর ঘিরে মালয়েশিয়ায় উত্তেজনা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
- অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে: শেখ হাসিনার আইনজীবী
- নুরুল হক নুরের বিস্ফোরক মন্তব্য এনসিপি নেতাদের টিভি মালিকানা নিয়ে
- হাটহাজারীতে হেফাজতের অবরোধ: চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
- যুদ্ধ সমাপ্তি ও সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চাইল হামাস, আলোচনা চলছে মিসরে
- আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- আমি বাংলাদেশের মেসি নই: তকমা গায়ে মাখতে নারাজ হামজা চৌধুরী
- চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী সাফল্য: অন্ধদের চোখে ফের আলো!
- কোরআনের ভুল খুঁজতে গিয়েই ইসলাম কবুল: যে গল্প পাল্টে দিল এক প্রফেসরের জীবন
- শিক্ষক মহাসমাবেশে তারেক রহমান দিলেন শিক্ষা সংস্কারের রূপরেখা
- কূটনৈতিক জয়: ৩০-২৭ ভোটে জাপানকে হারিয়ে ইউনেস্কোর সভাপতি বাংলাদেশ
- মেদ কমাতে হিমশিম খাচ্ছেন? খাবারের পর ২ মিনিটের অভ্যাসেই মিলবে সমাধান
- পোষা প্রাণী কি অ্যালার্জি কমায়? গবেষণা যা বলছে
- নখকুনির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি: ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়
- বিসিবি নির্বাচন নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ: ‘উপদেষ্টা কাউন্সিলরদের হুমকি দিয়েছেন’
- বাংলাদেশ কিনছে চীনের জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান
- ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে অনড় এনসিপি, ইসি’র তালিকায় নেই কেন?
- বিপ্লব থেকে স্বৈরশাসন? ‘অ্যানিমেল ফার্ম’-এর রাজনৈতিক বার্তা
- উপদেষ্টাদের ‘এক্সিট’ মানসিকতা: তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া সেফ এক্সিট নেই—এনসিপি নেতা
- আজ রাতে দেখা যাবে বছরের প্রথম সুপারমুন ‘হার্ভেস্ট মুন’
- অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: বিশ্বব্যাংক দিল বাংলাদেশকে সুখবর
- আইসিসি র্যাঙ্কিং: সুখবর পেলেন একাধিক বাংলাদেশি ক্রিকেটার
- বিপদের এলাকা’য় প্রবেশ করতে আর দেরি নেই, জানালেন শহিদুল আলম
- পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী
- ভাগ্যের চাকা ঘুরলো হারুন সর্দারের: দুবাইয়ে এক দিনেই কোটিপতি বাংলাদেশী ড্রাইভার!
- পৃথিবীর ধ্বংসের সময় ২০৬০ সাল? নিউটনের রহস্যময় ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়!
- মেথি কি সত্যিই ‘সুপারফুড’? বিজ্ঞান, উপকার, ঝুঁকি ও খাওয়ার সেরা সময়
- সর্ব রোগের ঔষধ কালিজিরা’র আদ্যপ্রান্ত: ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ব্যবহার ও সতর্কতা
- ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- স্মার্টফোন থেকে ডিলিট হওয়া ছবি ফিরে পাওয়ার ৩টি সহজ উপায়
- শ্বাসরুদ্ধকর জয়: শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ
- ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা: কাঁটাযুক্ত পাতার ভেতর লুকানো আরোগ্যের জেল
- “বিবেকের গর্জন”—গাজা ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমকে প্রশংসা করলেন তারেক রহমান
- ল্যাপটপে পানি পড়লে কী করবেন? যে ৭টি কাজ ভুলেও করা উচিত নয়
- কোরআন অবমাননা: নর্থ সাউথ থেকে শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
- আফ্রিকার হৃদয়ে পাথরের রাজ্য: জিম্বাবুয়ের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আত্মার গল্প
- আন্দেসের হৃদয়ে এক বিপ্লবী দেশ: বলিভিয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রস্তুতির সার্বিক চিত্র ও টাইমলাইন
- সালাহউদ্দিন আহমদ: প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে, শিগগিরই মাঠে নামবে একক প্রার্থী
- ইসরায়েলে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযাত্রীদের অনশন
- গাজা যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় রাজি হামাস, ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ