রাষ্ট্রবিরোধী নাকি অন্য কিছু? ইরানে আরও ২৩ জন অভিযুক্ত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ২০:৫৬:১৬
রাষ্ট্রবিরোধী নাকি অন্য কিছু? ইরানে আরও ২৩ জন অভিযুক্ত

ইরানজুড়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ‘গুপ্তচর নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করতে গিয়ে ৭০০-এরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনী। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স ও নিরাপত্তাবিষয়ক সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সামরিক সংঘাত চলাকালে সন্দেহভাজন এসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ইতোমধ্যেই পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মিযান জানায়, ফাঁসিকৃতরা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং একটি উচ্চপদস্থ ইরানি সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চোরাচালান করছিলেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ইরানের বিচারিক ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ঘাটতি আছে। অতীতেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে দেশটি, যেগুলোর মধ্যে অনেকে ছিল বিতর্কিত।

এছাড়াও, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খুজেস্তানের সীমান্তবর্তী শহর আহভাজে আরও ২৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, শত্রুপক্ষের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি এবং তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তেহরানপন্থী বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, এই মামলার আওতায় অভিযুক্তদের ইরানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও এসব অভিযোগ এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইরান ও ইসরায়েল বহু বছর ধরেই ‘ছায়াযুদ্ধ’-এ লিপ্ত। পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাসহ বিভিন্ন গোপন মিশনের অভিযোগে ইরান মোসাদ সংশ্লিষ্টতায় বারবার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক অভিযানে ইরান সরকারের কৌশলগত কঠোরতা আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।


নোবেল দৌড়ে ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’—জলবায়ু সংকটের যুগে বৈজ্ঞানিক আশার আলো

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১২:১৯:৪৪
নোবেল দৌড়ে ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’—জলবায়ু সংকটের যুগে বৈজ্ঞানিক আশার আলো
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক মহলে জল্পনা চলছে—এবারের নোবেল রসায়ন পুরস্কার কারা পাচ্ছেন? নতুন যৌগ উদ্ভাবন, শক্তি সংরক্ষণের অভিনব প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গবেষকেরাই এ বছর শিরোপার দৌড়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস বুধবার স্টকহোমে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময় সকাল ১১:৪৫) ২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে।

এর আগে মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ব্রিটেনের জন ক্লার্ক, ফ্রান্সের মিশেল দেভোরে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন মার্টিনিস—যারা কোয়ান্টাম মেকানিকসকে ব্যবহারিক প্রযুক্তির জগতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন।

সুইডেনের পাবলিক ব্রডকাস্টার সভারিয়েস রেডিও–এর বিজ্ঞান সম্পাদক লার্স ব্রোস্ট্রম এএফপিকে বলেন, “আমার মনে হয় এবারের রসায়ন পুরস্কার এমন কোনো আবিষ্কারে যাবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ এই সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জরুরি বৈজ্ঞানিক প্রয়োজন সেটাই।”

বহু বছর ধরে আলোচনায় আছেন মার্কিন-জর্ডানিয়ান রসায়নবিদ ওমর ইয়াগি। ব্রোস্ট্রম মনে করেন, ইয়াগির কাজ জলবায়ু ও পরিবেশ দুয়ের ক্ষেত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “ওই ধরনের রসায়ন নানা ধরনের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে অনুঘটকের ভূমিকা রাখতে পারে।”

ওমর ইয়াগি মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক (MOF) নামের এক ধরনের ছিদ্রযুক্ত যৌগিক পদার্থ তৈরি করেন, যা বর্তমানে নানা বাণিজ্যিক পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে—টক্সিন শোষণ ও পরিশোধন, ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করা এমনকি মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই ক্ষেত্রের আরও দুই পথপ্রদর্শক—জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া ও মাকোতো ফুজিতা—এর আগেও ইয়াগির সঙ্গে একযোগে নোবেল আলোচনায় এসেছিলেন। পশ্চিম তীরে জন্ম নেওয়া মার্কিন অধ্যাপক ওমর কে. ফারহাও এমওএফ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।

গবেষণা বিশ্লেষণ সংস্থা ক্ল্যারিভেট–এর প্রধান বিশ্লেষক ডেভিড পেন্ডলবুরি মনে করেন, “সবুজ রসায়ন” বা গ্রিন কেমিস্ট্রি–তে অবদানের জন্য এ বছর ফ্রান্সের বিজ্ঞানী জ্যঁ-মারি তারাসকন-ও সম্ভাব্য বিজয়ী হতে পারেন। তিনি ব্যাটারি প্রযুক্তি ও শক্তি সঞ্চয় ও রূপান্তরে মৌলিক অবদান রেখেছেন।

কেমিস্ট্রি ভিউজ–এর প্রতিবেদনে সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন তাইওয়ানিজ-মার্কিন জীবরসায়নবিদ চি-হুয়ে ওং, যিনি জটিল কার্বোহাইড্রেট ও গ্লাইকোপ্রোটিনের সংশ্লেষণে অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এর ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসব উপাদানের প্রয়োগ সহজ হয়েছে।

তালিকায় আরও রয়েছেন মার্কিন রাসায়নিক প্রকৌশলী রবার্ট ল্যাঙ্গার, যিনি ওষুধ সরবরাহব্যবস্থা, বায়োমেটেরিয়াল ও টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। একইভাবে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও স্নায়ুবিজ্ঞানী কার্ল ডেইসেরথ–এর নামও এক দশক ধরে আলোচনায় রয়েছে। তিনি আলো ব্যবহার করে কোষ নিয়ন্ত্রণের কৌশল অপ্টোজেনেটিক্স উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত।

জার্মান বিজ্ঞানী হারবার্ট ডব্লিউ. রোস্কি, যিনি অজৈব রসায়ন ও নতুন যৌগ সংশ্লেষণে পথিকৃৎ, তাকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ব্রোস্ট্রম আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসছে মার্কিন রাসায়নিক প্রকৌশলী হ্যারি বি. গ্রে–এর নাম। তিনি জীবন্ত কোষে ইলেকট্রনের গতি নিয়ে কাজ করেছেন, যা আলোকসংশ্লেষণ ও কোষের শক্তি ব্যবহারের মৌলিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। “এই ধরনের মৌলিক গবেষণাই সাধারণত নোবেল পুরস্কারের যোগ্য,” বলেন তিনি।

গত বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড বেকার ও জন জাম্পার এবং যুক্তরাজ্যের ডেমিস হাসাবিস। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটিং প্রযুক্তির সাহায্যে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়ে যুগান্তকারী কাজ করেন—যা জীববিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

এর আগে সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‍্যামসডেল এবং জাপানের শিমন সাকাগুচি। তাঁরা মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার “নিরাপত্তা প্রহরী” শনাক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্য বিষয়ে নোবেল পুরস্কার, শুক্রবার শান্তিতে এবং ১৩ অক্টোবর অর্থনীতিতে এ বছরের নোবেল মৌসুমের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

প্রতি নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে থাকে একটি স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা এবং ১২ লাখ মার্কিন ডলারের পুরস্কার অর্থ, যা একাধিক বিজয়ী হলে ভাগাভাগি করা হয়।

বিজয়ীরা তাঁদের পুরস্কার গ্রহণ করবেন ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফের হাত থেকে। এ দিনটি নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি ১৮৯৬ সালে মৃত্যুর আগে নিজের উইলেই এই বিশ্বখ্যাত পুরস্কারের ভিত্তি স্থাপন করেন।

-আশিক রহমান


ট্রাম্পের সফর ঘিরে মালয়েশিয়ায় উত্তেজনা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১০:৫৬:০৫
ট্রাম্পের সফর ঘিরে মালয়েশিয়ায় উত্তেজনা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন মালয়েশিয়া সফর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। তারা ‘অপজ ট্রাম্প সেক্রেটারিয়েট’ নামের প্রো–প্যালেস্টাইন ছাত্রজোটের ব্যানারে একত্রিত হয়।

স্লোগান ও স্মারকলিপি

বিক্ষোভকারীরা ড্রাম বাজিয়ে এবং স্লোগান দিতে দিতে ট্রাম্প ও ইসরায়েলবিরোধী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘ডাম্প ট্রাম্প’, ‘নো ওয়েলকাম ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।

পরে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে। স্মারকলিপিতে তারা ট্রাম্পের আমন্ত্রণ বাতিল, ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করার আহ্বান জানান।

বিক্ষোভের আয়োজকরা জানান, তারা আগামী দিনগুলোতে আরও কর্মসূচি পালন করবেন। ২৬ অক্টোবর আমপাং পার্ক এলাকায় ‘ডাম্প ট্রাম্প’ নামে এক বৃহৎ সমাবেশ আয়োজন করার কথা রয়েছে, যেদিন ট্রাম্পের মালয়েশিয়া সফরের কথা।

ধর্মীয় ও বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের সফর বাতিলের দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জোরালো হচ্ছে। সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে আসিয়ানের সংলাপ অংশীদার হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি দিলেও, বিষয়টি নিয়ে ধর্মীয় ও বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ফেডারেল টেরিটোরিজের মুফতি আহমাদ ফাউয়াজ ফাদজিল ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলনকে ‘অতি আবেগপ্রবণ ও উগ্র মনোভাবের প্রকাশ’ বলে মন্তব্য করলে মুসলিম সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইসলামিক রেনেসাঁ ফ্রন্টের (আইআরএফ) পরিচালক ড. আহমাদ ফারুক মুসা ওই মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি গণহত্যার মূল পৃষ্ঠপোষককে স্বাগত জানানো প্যালেস্টাইন ইস্যুর প্রতি সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।

বুদ্ধিজীবী চন্দ্র মুজাফফরও প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভদ্র ও মর্যাদাপূর্ণ ভাষায় ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান গণহত্যায় ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এই কারণে এমন এক ব্যক্তিকে স্বাগত জানানো মালয়েশিয়ার জনগণের কাছে ঘৃণার কারণ হবে।

মালায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউএম) একটি প্রো–প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফর ঘিরে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন ও জনমনে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।


যুদ্ধ সমাপ্তি ও সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চাইল হামাস, আলোচনা চলছে মিসরে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১০:২৪:৫৮
যুদ্ধ সমাপ্তি ও সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চাইল হামাস, আলোচনা চলছে মিসরে
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা এবং এর ওপর আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি চেয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) মিসরের শারম আল শেখ শহরে দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় বসে হামাস।

জিম্মি মুক্তি ও হামাসের শর্ত

জিম্মি মুক্তি: হামাস কর্মকর্তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের দাবি, জিম্মি মুক্তির শেষ ধাপের মধ্যেই উপত্যকা থেকে চূড়ান্তভাবে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

আস্থার অভাব: মিসরের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত আল-কাহেরা নিউজের মতে, হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হায়া বলেছেন, হামাস ‘এক সেকেন্ডের জন্যও দখলদারিত্বের ওপর আস্থা রাখে না’।

স্থায়ী গ্যারান্টি: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আগের দুটি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে এবং পুনরায় শুরু হবে না—হামাস এর ‘প্রকৃত গ্যারান্টি’ চায়।

এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের প্রতিনিধিরা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের আলোচনায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীরও অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

নেতানিয়াহুর ‘অস্তিত্বের যুদ্ধ’ এবং ট্রাম্পের আশ্বাসমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জিম্মি মুক্তির পর ‘ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা করবে না’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথায় কোনো নিশ্চয়তার আভাস মেলেনি। হামাসের নেতৃত্বাধীন আক্রমণের বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি এই সংঘাতকে ‘ইসরাইলের অস্তিত্ব এবং ভবিষ্যতের জন্য যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন। যুদ্ধবিরতি আলোচনার দিকে সরাসরি ইঙ্গিত না করেই নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ‘সিদ্ধান্তের এক দুর্ভাগ্যজনক দিনে’ প্রবেশ করছে।

নেতানিয়াহুর ভাষায়, ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে—যার মধ্যে রয়েছে সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং গাজা যাতে আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা।

সূত্র: আল জাজিরা।


বাংলাদেশ কিনছে চীনের জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৯:০৮:০৮
বাংলাদেশ কিনছে চীনের জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান
জে-১০ সি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) আধুনিকীকরণ এবং জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার—যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা।

সরকারি নথি অনুযায়ী, যুদ্ধবিমানগুলো কেনা, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এই প্রকল্প ২০২৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হবে ১০ বছরের কিস্তিতে, যা ২০৩৫-৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত চলবে।

জে-১০ সিই: চীনা বিমানবাহিনীর রপ্তানি সংস্করণ

জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান মূলত চীনের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত জে-১০সি-এর রপ্তানি সংস্করণ। এটি একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট, যা আকাশে থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে স্থল—দুই ধরনের যুদ্ধেই সমান পারদর্শী।

আন্তর্জাতিক আলোচনা: গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাত চলাকালে পাকিস্তান দাবি করেছিল, তাদের জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান ভারতের রাফায়েল জেট ভূপাতিত করেছে। এরপর থেকেই জে-১০ সিই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

বিশ্লেষকদের মতে, জে-১০ সিই সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নতুন প্রযুক্তি, উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

চুক্তি ও কাঠামো

এই ক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে জিটুজি (গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে। এর জন্য ১১ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিমানবাহিনীর প্রধান।

ব্যয়ের হিসাব:

২০টি জেটের মূল্য: প্রায় ১২০ কোটি ডলার (১৪,৬০০ কোটি টাকা)। প্রতিটি জেটের আনুমানিক মূল্য ৬ কোটি ডলার।

অন্যান্য ব্যয়: প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, ফ্রেইট কস্ট ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ আরও ৮২ কোটি ডলার।

মোট ব্যয়: বিমা, ভ্যাট, কমিশনসহ সব মিলিয়ে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ডলার।

এই কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র যাচাইবাছাই, ক্রয়পদ্ধতির উপযোগিতা নির্ধারণ এবং মূল্য নির্ধারণের শর্ত চূড়ান্ত করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গত মার্চের চীন সফরের পর এই ক্রয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছিল।

সূত্র : দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড


পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৬:২৫:১৬
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী
ছবি: সংগৃহীত

এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ ডেভোর এবং জন এম মার্টিনেস। “মাইক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিকাল টানেলিং অ্যান্ড এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন ইন আন ইলেকট্রিক সার্কিট”—এ অবদান রাখার জন্য তাদের এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেলে সুইডেনের স্কটহোমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।

আবিষ্কারের তাৎপর্য

নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিপের ওপর পরিচালিত এই তিন বিজ্ঞানীর পরীক্ষাগুলো কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের কার্যক্রমকে প্রদর্শন করেছে। পদার্থবিজ্ঞানের একটি বড় প্রশ্ন হলো—কোনো সিস্টেম ঠিক কতটা বড় হলে তা কোয়ান্টাম যান্ত্রিক প্রভাব প্রদর্শন করতে পারে? নোবেল বিজয়ীরা একটি ইলেকট্রিকাল সার্কিট নিয়ে পরীক্ষা করে কোয়ান্টাম মেকানিকাল টানেলিং এবং কোয়ান্টাইজড এনার্জি লেবেল প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন।

নোবেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আবিষ্কার কোয়ান্টাম প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্মের বিকাশের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে আছে:

কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি

কোয়ান্টাম কম্পিউটারস

কোয়ান্টাম সেন্সর

উল্লেখ্য, গত বছর মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন হোপফিল্ড ও ব্রিটিশ ক্যানাডিয়ান বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন।


চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং-এর পিয়ংইয়ং সফর: নতুন ঘনিষ্ঠতার বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১১:৪৯:৪৫
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং-এর পিয়ংইয়ং সফর: নতুন ঘনিষ্ঠতার বার্তা
ছবিঃ সংগৃহীত

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং এই সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন বলে বেইজিং মঙ্গলবার জানিয়েছে। দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতেই তাঁর এ সফর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লি চিয়াং ৯ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া সফর করবেন। তিনি একটি দল ও সরকার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ং যাবেন এবং সেখানে শাসক ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে অংশ নেবেন।

চীনের শি জিনপিংয়ের পর লি চিয়াং দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। তাঁর এই সফরকে কেবল সৌজন্য সফর নয়, বরং দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এমন এক সময়ের সফর যখন উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক একঘরে অবস্থার মধ্যেও চীনের সমর্থনের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ইয়নহাপ নিউজ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া এ উপলক্ষে একটি বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের প্রতিনিধিদল এই আনুষ্ঠানিক আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আবারও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত মাসে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই পিয়ংইয়ং সফর করেন এবং দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার আহ্বান জানান। এর আগে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বেইজিং সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন করেন।

চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও খাদ্যঘাটতির সময়েও বেইজিং দেশটির পাশে থেকেছে। অন্যদিকে, পিয়ংইয়ং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে “হুমকি”র কথা বলে নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে চীনের সমর্থন উত্তর কোরিয়ার জন্য রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকদের মতে, লি চিয়াংয়ের এই সফর শুধু দুই দেশের বন্ধুত্বকেই তুলে ধরছে না, বরং এটি একটি ভূরাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে চীন এই সফরের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে যে, উত্তর-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে তার উপস্থিতি এখনো গুরুত্বপূর্ণ।

চীন ও উত্তর কোরিয়া উভয়ই নিজেদের সম্পর্ককে “পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের” ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে চায়। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লি চিয়াংয়ের সফর শুধু সৌজন্য নয়—এটি আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক নতুন ঘনিষ্ঠতার সূচনা হতে পারে।

-হাসানুজ্জামান


দুই বছর রক্তপাতের পর শান্তির চেষ্টা: কায়রোতে নতুন আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১০:২০:১৯
দুই বছর রক্তপাতের পর শান্তির চেষ্টা: কায়রোতে নতুন আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েল
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মিসরে শুরু হয়েছে হামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ শান্তি আলোচনা। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে মিসর ও কাতার, আর আলোচনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে “হামাস আপসের পথে এসেছে” এবং “একটি বাস্তবসম্মত শান্তি চুক্তি” সম্ভব হতে পারে।

মিসরের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানিয়েছে, সোমবার অনুষ্ঠিত প্রথম দফা বৈঠক “ইতিবাচক পরিবেশে” শেষ হয়েছে এবং আলোচনা মঙ্গলবারও চলবে। কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে কায়রোতে এই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষের মধ্যে বার্তা আদান–প্রদান করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, কয়েক সপ্তাহ আগেই ইসরায়েল কাতারে হামাসের আলোচক দলের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছিল, যেখান থেকে বেঁচে যান হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া।

বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতি

প্রথম ধাপের আলোচনায় বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের বিনিময়, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার পথ খোঁজা হচ্ছে। আল-কাহেরা নিউজ জানায়, “উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কার্যকর কাঠামো তৈরি করতে” মিসর ও কাতার একসঙ্গে কাজ করছে।

একই সময়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি প্রায় নিশ্চিত, আমরা একটি চুক্তির কাছাকাছি আছি। হামাস এমন কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” আলোচনার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার, যারা শিগগিরই কায়রো পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।

শান্তির পথে কঠিন বাস্তবতা

হামাস ও ইসরায়েল উভয়েই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রতি প্রাথমিক ইতিবাচক সাড়া দিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে বহু জটিলতা। প্রস্তাবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত, যা দলটি এখনো মানতে রাজি নয়। অন্যদিকে, পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনা ধীরে ধীরে গাজা থেকে প্রত্যাহারের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল “গাজার গভীরে সেনা মোতায়েন” রাখবে।

একজন হামাস ঘনিষ্ঠ ফিলিস্তিনি সূত্র জানান, প্রথম ধাপের বন্দি বিনিময় বাস্তবায়নে “মাঠপরিস্থিতি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও বিমান হামলা স্থগিতের” ওপর নির্ভর করে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় আটক ৪৭ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, এর বিনিময়ে ইসরায়েল মুক্তি দেবে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে, যাঁদের অনেকেই আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।

গাজার মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও সোমবার গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, সর্বশেষ বিমান হামলায় অন্তত সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এএফপি-র প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, গাজার আকাশে ধোঁয়ার মেঘ ও বিস্ফোরণের দৃশ্য, যা যুদ্ধবিরতির আশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

জাতিসংঘ গাজাকে “দুর্ভিক্ষাপন্ন এলাকা” ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জানিয়েছে, তারা বন্দি বিনিময় ও ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। এক গাজাবাসী মোহাম্মদ আবু সুলতান বলেন, “যুদ্ধ আমার জীবনের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দুই বছর ধরে আমরা শুধু মৃত্যুর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”

রাজনৈতিক রূপরেখা ও প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত রূপরেখায় বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের পর গাজার প্রশাসন পরিচালনা করবে একটি ‘টেকনোক্র্যাট ট্রানজিশনাল অথরিটি’, যার তত্ত্বাবধানে থাকবেন ট্রাম্প নিজে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস বা অন্য কোনো সামরিক সংগঠন প্রশাসনে ভূমিকা রাখবে না। তবে হামাস বলেছে, “গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্তে আমাদের অংশগ্রহণ থাকা অপরিহার্য।”

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের একাংশের আশা, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেবে। আল-মাওয়াসি এলাকার বাসিন্দা আহমদ বারবাখ বলেন, “আমরা চাই বন্দি বিনিময়ের চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন হোক, যাতে ইসরায়েল যুদ্ধ চালানোর অজুহাত না পায়।”

দুই বছর পরও রক্তক্ষয়ী অধ্যায়

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ১,২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলের টানা বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার তথ্য হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, এবং যা জাতিসংঘ ‘বিশ্বাসযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কায়রো আলোচনাকে অনেকে এক “শেষ আশার জানালা” হিসেবে দেখছেন। যদিও যুদ্ধবিরতির পথ জটিল ও অনিশ্চিত, তবু কূটনৈতিক মহলে বিশ্বাস—মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবার হয়তো গাজায় শান্তির সূচনা ঘটতে পারে।

-আলমগীর হোসেন


ভারতীয় ভিসা নিয়ে সুখবর, বিক্রম মিশ্রির কণ্ঠে স্বস্তির বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৬ ২১:৪৭:৩২
ভারতীয় ভিসা নিয়ে সুখবর, বিক্রম মিশ্রির কণ্ঠে স্বস্তির বার্তা
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে আগের চেয়ে ভারতীয় ভিসা ইস্যু বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। সোমবার (৬ অক্টোবর) নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ—ডিকাব’-এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই তথ্য জানান।

ভিসা কার্যক্রমে নতুন গতি

বাংলাদেশের ভারতীয় ভিসা ইস্যু নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের একটি খুব বড় ভিসা কার্যক্রম রয়েছে। এটি গত বছরের জুলাই এবং আগস্টের ঘটনার আগে যে স্তরে ছিল, এখন সেই স্তরে নেই।” তবে তিনি যোগ করেন, আজও বাংলাদেশে যে ভিসা ইস্যুর সংখ্যা রয়েছে, তা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় আমাদের বৃহত্তম ভিসা কার্যক্রমগুলোর মধ্যে একটি।

তিনি বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সামনের দিকে তাকানো, পেছনে তাকানো নয়।” বিক্রম মিশ্রি উল্লেখ করেন যে, ৫ আগস্টের ঘটনা ঘিরে তখন সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রভাবিত হয়েছিল, যার ফলে ভিসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য তাদের লোকসংখ্যা পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, “এখন আমাদের ভিসা কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। আগামী দিনেও এই কার্যক্রম বাড়বে।”

সীমান্ত ও পানি চুক্তি

গঙ্গার পানি চুক্তি ও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “এ দুটি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যৌথ কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চার হাজার কিলোমিটারের মতো সীমান্ত রয়েছে। নিরাপত্তা, মাদক চোরাচালান, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ভারতীয় সীমানায় এমন ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী নিজের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।

বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ (Push-in) বেড়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, পুশ-ইন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন।


পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের নতুন পথ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৬ ২০:৪৮:৪৮
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের নতুন পথ
ছবি: সংগৃহীত

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ঘোষণা দিয়েছেন, জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা এখন আর তেহরানের কাছে ‘প্রাসঙ্গিক নয়’।

রোববার (৫ অক্টোবর) তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আরাগচি বলেন, “কায়রোতে আইএইএ-র সঙ্গে আমাদের যে সহযোগিতা চুক্তি হয়েছিল, তা আর কোনো বাস্তব অর্থ বহন করে না।” তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিল—পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর দেশটি এখন নতুন পথে হাঁটছে।

ইউরোপের সমালোচনা ও সম্পর্কের অবনতি

গত মাসে মিসরের রাজধানী কায়রোতে ইরান ও আইএইএ-র মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন ও নজরদারির একটি নতুন কাঠামো নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তেহরান সেই সহযোগিতা স্থগিত করে দেয়।

ইউরোপীয় দেশগুলোর আচরণকে তীব্র সমালোচনা করে আরাগচি বলেন, “তারা ভেবেছিল নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করবে। এখন তারা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে এবং ফলাফলও দেখেছে—নিজেদের গুরুত্ব নিজেরাই কমিয়ে ফেলেছে।” তার মতে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির ভূমিকা আগের তুলনায় অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।

আইএইএ-এর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ

ইরান আইএইএ-র বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে। তেহরানের মতে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি, যা তার নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে ইরান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এর আগে স্পষ্ট করেছেন, ইরান এখনই এনপিটি চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছে না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার এই ঘোষণা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ট্যাগ: ইরান আইএইএ

পাঠকের মতামত: