ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে আবার ভয়াবহ হামলা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৪ ০৮:৪৪:০৯
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে আবার ভয়াবহ হামলা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ইমাম আলী সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরাকভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল সুমারিয়া টেলিভিশন, যেটি মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে একটি প্রতিবেদন ও ঘাঁটির রাডার সিস্টেমে ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ করে।

ইমাম আলী সামরিক ঘাঁটিটি ইরাকের ধীকার গভর্নরেটের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত, নাসিরিয়া শহরের সন্নিকটে। এই ঘাঁটি ইরাকে মার্কিন প্রভাব এবং আঞ্চলিক কৌশলগত ভারসাম্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। অতীতে ইরান-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে এ অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিতে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।

এবারের হামলাটি এমন এক সময়ে সংঘটিত হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন ইরান ও ইসরায়েল ১২ ঘণ্টার জন্য একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যার বাস্তবায়ন শুরু হবে আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে। এ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য ছিল উত্তেজনার প্রশমন এবং পরবর্তী শান্তি আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন।

হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি। মার্কিন সামরিক বা ইরাকি সরকারও কোনো পক্ষকে সরাসরি দায়ী করেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হামলা হয়তো যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের কৌশল হতে পারে যারা চায় না যে ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব প্রশমিত হোক।

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরই ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত দাবিকে ‘প্রতারণামূলক’ আখ্যা দেন। তার ভাষায়, “এটি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করার একটি রাজনৈতিক চাল।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা কারোর একতরফা ঘোষণায় বিশ্বাস করি না। ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা আরও তীব্র করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, তেহরান এখনও ওয়াশিংটনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না এবং নিজেদের প্রতিরক্ষামূলক কৌশলেই অটল রয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে তারা আগ্রাসনের শিকার, এবং তাদের প্রতিক্রিয়া বৈধ আত্মরক্ষার অংশ।:

অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইরান ও ইসরায়েল একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং পরবর্তী ১২ ঘণ্টা তারা শান্তিপূর্ণ আচরণ করবে। এই বিরতি যুদ্ধের অবসানের একটি সম্ভাব্য সূচনা হতে পারে।” ট্রাম্প শান্তির বার্তা দিলেও, ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে দুই পক্ষের বক্তব্যে গভীর অসামঞ্জস্য ধরা পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইরানের প্রতিক্রিয়া থামাতে চাইলেও, তেহরান সেটিকে একটি কৌশলগত চাপের অংশ হিসেবে দেখছে যেখানে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের পরস্পরবিরোধী ভাষ্য একটি রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

ইরাকের ইমাম আলী ঘাঁটিতে এ ধরনের হামলা কেবল শান্তিচেষ্টা নস্যাৎ করেই থেমে যায়নি, বরং আঞ্চলিক সংঘাতকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে পারে। এই হামলা প্রমাণ করে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য শুধু ঘোষণাই যথেষ্ট নয়, বরং একটি গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য কৌশল ও তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ইরাক নতুন করে সংঘাতের ময়দান হয়ে উঠতে পারে, যেখানে ইরানপন্থী গোষ্ঠী, মার্কিন ঘাঁটি ও ইসরায়েলঘনিষ্ঠ প্রভাব বলয় সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। ফলে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা পার হওয়ার আগেই নতুন সংঘাতের আশঙ্কা এখন অনেকটাই বাস্তব হয়ে উঠেছে।

যেখানে একদিকে শান্তির বার্তা দিয়ে যুদ্ধবিরতির আশা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বাস্তবতার মাটিতে বোমা পড়ছে। ইরাকের ঘাঁটিতে হামলা কেবল একটি সামরিক ঘটনা নয় এটি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে প্রতিটি ঘোষণা, প্রতিটি হামলা, একেকটি সম্ভাব্য যুদ্ধ কিংবা শান্তির সূচনা হয়ে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয় এই যুদ্ধবিরতির পর্দার আড়াল কতটা দৃঢ়, নাকি এটি কেবল আরও বড় সংঘর্ষের পূর্বাভাস?

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত