ফের যতদিনের রিমান্ডে শাজাহান খান, সালমান, আনিসুল হক

২০২৫ জুন ২৩ ১৩:০১:৩০
ফের যতদিনের রিমান্ডে শাজাহান খান, সালমান, আনিসুল হক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত বহুল আলোচিত সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বর্তমান নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

এছাড়া একইদিন যাত্রাবাড়ীতে সংঘটিত আরেকটি হত্যা মামলায় (রিটন উদ্দিন হত্যা) ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ীর রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপি আয়োজিত মহাসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) সোহাইলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে সাজেদুর রহমান ওমর। আন্দোলনের একপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ওমর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। এরপর ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি সৈয়দ তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ৮১ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই উপ-পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম মীর শুনানিতে তিন বিশিষ্ট রাজনীতিকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন, আদালত অনুমোদন দেন দুই দিন করে।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ উদ্যোগে একটি বৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রতিবাদ। সেই সমাবেশে অংশ নেওয়া বদরুল ইসলাম সায়মন গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগে বলা হয়, হামলাকারীরা পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়ে সায়মনকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি নিজে পল্টন মডেল থানায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) সোহাইল অন্যতম অভিযুক্ত। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিমান তরফদার তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলেও আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানা এলাকাকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে রিটন উদ্দিন ও রাসেল নামে দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর দু’জনই মারা যান। এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। রিটন হত্যা মামলায় সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তবে রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন আদালত।

এদিন মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। পাশাপাশি, পল্টন থানার রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, হত্যা এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় রিমান্ড ও গ্রেপ্তারের আদেশ নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং চলমান আন্দোলন-সংঘর্ষ কেন্দ্রিক মামলার তদন্ত ত্বরান্বিত করা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানকেই প্রতিফলিত করছে। তবে এসব মামলা ও রিমান্ডের রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও রয়েছে, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত