ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে ইসরায়েলের কাছে? তথ্য জানলে চমকে যাবেন!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১২:১৮:১৬
কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে ইসরায়েলের কাছে? তথ্য জানলে চমকে যাবেন!

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই ধারণা করা হয় যে, ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যদিও বিষয়টি কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি দেশটি, আবার সরাসরি অস্বীকারও করেনি। এই দ্ব্যর্থক অবস্থানকেই তারা বলে ‘আমিমুত’, যার অর্থ—ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতা। আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মতে, এই কৌশলই ইসরায়েলের সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যসূচক নিরাপত্তা নীতি।

ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-র সদস্য হলেও এখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT)-তে স্বাক্ষর করেনি। ফলে তাদের স্থাপনাগুলোতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের প্রয়োজন পড়ে না। এই সুযোগেই দেশটি গোপনে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে প্রথম বড় ধরনের তথ্য ফাঁস করেন দেশটিরই সাবেক পারমাণবিক প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনু। তিনি ১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র The Sunday Times-এ সাক্ষাৎকার দিয়ে জানান, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর ডিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্রে কাজ করেছেন এবং গোপনে সেই কেন্দ্রের ছবিও তুলেছেন। ওই ছবিতে প্লুটোনিয়াম নিষ্কাশনের যন্ত্র, ওয়ারহেড প্রস্তুতের সুবিধা ও বিস্ফোরক উপাদান সংরক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

ভানুনুর এই তথ্য ফাঁসের পর তাকে অপহরণ করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে তিনি মুক্তি পান। এরপর তার উপর বিদেশি যোগাযোগ ও দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবু ভানুনু বলেন, তিনি অনুতপ্ত নন, বরং গর্বিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ইসরায়েলের হাতে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। যদিও ভানুনুর দাবি ছিল, ১৯৮৬ সালেই সংখ্যাটি ছিল ১০০ থেকে ২০০-এর মধ্যে। এসব অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম ডিমোনার নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টারেই তৈরি হয় বলে ধারণা করা হয়। ইসরায়েল দাবি করে, ওই চুল্লির উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ মেগাওয়াট, তবে অনেক গবেষকের মতে, প্রকৃত ক্ষমতা আরও অনেক বেশি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বহুবার ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের দাবি উঠেছে। ২০১২ সালে এমন একটি প্রস্তাব পাসও হয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো মিত্রদের বিরোধিতায় তা কার্যকর হয়নি। এর ফলে, আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের বাইরে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনার সুযোগ পায় ইসরায়েল।

অন্যদিকে, ইরান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নিয়মিত তাদের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেয় আইএইএ-কে। কিন্তু ইসরায়েলের গোপনতা ও অস্পষ্ট অবস্থান বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বিশেষজ্ঞ জেভিয়ার বোহিগাস বলেন, “এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত ও আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করে যাচ্ছে, এবং কোনো দেশই তাদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।” মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার উদ্যোগও বারবার ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে, বরং একে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—যখন ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য চাপের মুখে ফেলা হয়, তখন ইসরায়েলের গোপন কর্মসূচিকে কেন ছাড় দেওয়া হচ্ছে? ভবিষ্যতে এই বৈষম্য বিশ্ব নিরাপত্তার ভারসাম্যকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ