'১৪,' ১৮ ও' ২৪ এর নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে যে কারণে মামলা করবে বিএনপি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ০৮:৫৪:৫০
'১৪,' ১৮ ও' ২৪ এর নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে যে কারণে মামলা করবে বিএনপি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমধর্মী ও নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। বিগত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার ও কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

রোববার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলার আবেদন করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, সঙ্গে থাকবেন দলের আরও তিন নেতা।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শনিবার সাংবাদিকদের জানান, “মামলার আগে সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে একটি প্রতিলিপি জমা দেওয়া হবে। এরপরই থানায় অভিযোগপত্র জমা দেবে বিএনপি।”

বিএনপির দাবি, এই তিনটি নির্বাচন ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ।

দলের অভিযোগ, “ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের আঁধারে ব্যালট ভর্তি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার, ইভিএম কারচুপি, এবং নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মতো গুরুতর অনিয়মে সরাসরি যুক্ত ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।”

এ ঘটনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে সদ্য গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিশন) সাম্প্রতিক বৈঠক।

গত ১৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, “তিনটি জাতীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় কার কী ভূমিকা ছিল, তার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। এ জন্য অবিলম্বে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”

এই বক্তব্যের ভিত্তিতেই বিএনপি মামলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিএনপির জন্য কেবল একটি প্রতীকী প্রতিবাদ নয় বরং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হওয়া আইনি লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মঞ্জুর রহমান খান বলেন, “এ ধরনের মামলা নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে যদি তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। তবে একে রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমেও ব্যবহার করা হতে পারে এটা নির্ভর করবে পরবর্তী আইনি ও কূটনৈতিক কৌশলের ওপর।”

বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিএনপির এ ধরনের আইনি পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিতর্ককেও সামনে আনছে নির্বাচনের ব্যর্থতার দায় কার? এবং সেই দায় কি শুধুই রাজনৈতিক, নাকি আইনি জবাবদিহিও থাকা উচিত?

বিএনপির এই মামলা শুধু একটি রাজনীতিক দলীয় উদ্যোগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রশ্নে একটি বড় প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ