কারাবন্দি সংগীতশিল্পী নোবেলের সঙ্গে বাদীর বিয়ে: বিতর্ক সৃষ্টি

ধর্ষণের মামলায় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বাদী কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন আলোচিত সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দুপক্ষের সম্মতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। দেনমোহর হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে ১০ লাখ টাকা। তবে এই বিয়ে সামাজিক ও আইনি দিক থেকে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং নেটমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে।
বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উভয়পক্ষের ঘনিষ্ঠজনরা, যার মধ্যে notable names হিসেবে ছিলেন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান ও সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া। নোবেলের আইনজীবী জসীম উদ্দিন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইলা মণি জানিয়ে দিয়েছেন, বিয়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ দুপক্ষের সম্মতিক্রমে হয়েছে।
এর আগে, বাদী কলেজ ছাত্রী ২০২৫ সালের মে মাসে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, নোবেল সাত মাস ধরে ওই শিক্ষার্থীকে একটি বাসায় আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন। নোবেল গ্রেপ্তার হন ২০ মে এবং বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার ১৯ জুন এক আদেশে বাদী ও আসামির বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন কারাগারে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বিয়ের খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেন এবং বিশেষ করে নারীবাদী ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন পূর্ণি ফেসবুকে এই বিয়েকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতার নগ্ন উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তিনি লেখেন, “ধর্ষণের শিকার নারীকে তার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করা কখনোই ন্যায়বিচার হতে পারে না। এটি নৈতিকতা ও আইনের সম্পূর্ণ ভগ্নদশার প্রতিচ্ছবি।” তিনি আরও বলেন, “একজন বেঁচে থাকা নারীর সুস্থতা ও পুনরুদ্ধার কখনোই তার নির্যাতকের সঙ্গে তথাকথিত ‘পারস্পরিক সম্মতি’র মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে না। এই রায় বিচারব্যবস্থার পিতৃতান্ত্রিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত দিক উন্মোচন করে।”
পারশা যুক্তি দেন, “এই রায় শুধুমাত্র একজন নারীকে নয়, সমগ্র ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকারদের জন্য এক ভয়ঙ্কর বার্তা বহন করে যেখানে তাদের ট্রমা দরকষাকষির বস্তুতে পরিণত হয়।”
আইনি ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। একজন বিচারকীয় বিশেষজ্ঞের মতে, “বিবাহের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি কোনো আইনগত পন্থা নয়। এটি ন্যায়বিচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে এবং বিচারের স্বাধিকার হরণের দৃষ্টান্ত গড়ে তোলে।”
অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও আদেশে নারীর অধিকারের ক্ষতি হয় এবং এমন পরিস্থিতিতে নির্যাতিতাকে আরেকবার শোষণের শিকার হতে হয়।”
দেশীয় সমাজে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার নারীদের ‘বিয়ের মাধ্যমে সমাধান’ দেওয়া বহু বিতর্কিত ও সমালোচিত বিষয়। সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার আলোকে এই ঘটনা বিশেষ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এটি নারী সুরক্ষা ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
নোবেল-বাদী শিক্ষার্থী বিয়ের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত বা আইনি নয়, এটি দেশের বিচার ব্যবস্থা, নারী অধিকার এবং সামাজিক নীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি দেশের আইনি কাঠামো এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, যা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার জন্য ভাববার জায়গা রেখে যাচ্ছে।
-অনন্যা, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- আকাশে বিস্ফোরণ, মাটিতে মৃত্যু: ক্লাস্টার বোমায় জর্জরিত ইসরায়েল
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল
- প্রতিদিন ভোরে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)
- শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- কারাবন্দি সংগীতশিল্পী নোবেলের সঙ্গে বাদীর বিয়ে: বিতর্ক সৃষ্টি