যে কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা মেডিকেল কলেজে

ক্যাম্পাস ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৬:০৭:১৩
যে কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঢাকা মেডিকেল কলেজে

ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলমান অচলাবস্থার জেরে একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে রোববার (২২ জুন) দুপুর ১২টার মধ্যে সব ছাত্রছাত্রীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২১ জুন) কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ঢাকা মেডিকেল কলেজের চলমান একাডেমিক ও আবাসিক অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে এমবিবিএস কোর্সের সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সেইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের আগামীকাল (রোববার) দুপুর ১২টার মধ্যে নিজ নিজ আবাসিক হল ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনের জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে তীব্র আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।

বহু পুরনো ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়া, দেয়ালে ফাটল, নোংরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা, অপ্রতুল বসবাসযোগ্যতা ইত্যাদি সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তাদের দাবি ছিল নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামোতে স্থানান্তর, আবাসিক সুবিধার মানোন্নয়ন এবং জরুরি সংস্কার কাজ।

শুক্রবার (২০ জুন) শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং কলেজ ক্যাম্পাসের মিলন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই কলেজ প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয় এবং একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা, নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। একাধিক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকের দাবি, প্রশাসন বরং সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনেই বেশি মনোযোগী হয়েছে।

এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকছি বলে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম, অথচ এর জবাবে আমাদের বের করে দেওয়া হলো। এটি আমাদের দাবি নয়, বরং আমাদের নিরাপত্তার জন্যই ছিল।"

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের আওতার বাইরে থাকবেন। অর্থাৎ, তাদের ক্ষেত্রে একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং হল ত্যাগের বাধ্যবাধকতাও নেই।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অচলাবস্থা দেশের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষার পরিবেশে আস্থাহীনতা তৈরি হলে ভবিষ্যতের চিকিৎসা খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে বড় সংকট তৈরি হতে পারে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, "সমস্যা থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল বাস্তবভিত্তিক এবং যৌক্তিক। একে কঠোরভাবে দমন না করে প্রশাসনের উচিত ছিল সমাধানমুখী পদক্ষেপ নেওয়া।"

ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন প্রশাসনের সংলাপভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দ্রুত বাস্তবায়ন।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত