ঢাকায় পরিবেশবান্ধব ৪০০ নতুন ইলেকট্রিক বাস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১২:২৩:৩৩
ঢাকায় পরিবেশবান্ধব ৪০০ নতুন ইলেকট্রিক বাস

বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বায়ু দূষণ কমাতে দুইটি নতুন প্রকল্পে মোট ৬৪০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন করেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা সমমূল্য। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রথম প্রকল্পটি ‘জ্বালানি খাত নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্প’, যার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থা পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। বিশ্বব্যাংক আইডিএ গ্যারান্টি ব্যবহার করে আগামী সাত বছরে নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেসরকারি মূলধন সংগ্রহে সহায়তা করবে, যা পেট্রোবাংলার ঋণ যোগ্যতা বাড়াবে এবং গ্যাস আমদানির স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে। বর্তমানে দেশে গ্যাস ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ এলএনজি থেকে আসে, যার প্রায় ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তবে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ও বৈশ্বিক বাজারের উপর নির্ভরশীলতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি চুক্তি এবং অর্থ প্রদানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গ্যাস আমদানির ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও টাস্ক টিম লিডার ওলাঙ্কা বিসিরিয়ু ইডেবিরি জানান, প্রকল্পটি শিল্প ও গার্হস্থ্য খাতে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

দ্বিতীয় প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প’ এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৯০ মিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্প মারাত্মক বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ঢাকা শহর বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটি, যেখানে বার্ষিক ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটারের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার থেকে প্রায় ১৮ গুণ বেশি। পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিল্পাঞ্চল থেকে দূষণের রিয়েল টাইম মনিটরিং এবং নির্গমন নিয়ন্ত্রণে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ৪০০টি পুরনো ও দূষণকারী ডিজেল বাসের পরিবর্তে শূন্য-নির্গমন বৈদ্যুতিক বাস চালু করা হবে। এই বাসগুলো ‘প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে একক অপারেটর’ মডেলে পরিচালিত হবে এবং তাদের চার্জিং, পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট ডিপো নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নতুন ৫টি যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ ও ২টি পুরাতন কেন্দ্র আধুনিকায়ন করা হবে। মোবাইল যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র এবং নির্গমন পরীক্ষা ইউনিট মোতায়েনের মাধ্যমে যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ আরও কার্যকর করা হবে। এই উদ্যোগ বার্ষিক প্রায় ২,৭৩৪ টন প্রাথমিক পিএম২.৫ নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আনা লুইসা গোমস লিমা বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি নতুন ধাপ, যা আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং তথ্য বিনিময়কে উৎসাহিত করবে। তিনি আরও বলেন, বায়ু দূষণ একটি আঞ্চলিক সমস্যা হওয়ায় একক দেশ একা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে না; তাই আঞ্চলিক সমন্বয় অপরিহার্য।

এই দুটি প্রকল্প বাংলাদেশকে পরিবেশগত ও জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত