বয়স কেবল সংখ্যা—থিয়াগো সিলভা, সের্হিও রামোস ও ফাবিও প্রমাণ করলেন ক্লাব বিশ্বকাপে

খেলা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১২:৪২:৩৫
বয়স কেবল সংখ্যা—থিয়াগো সিলভা, সের্হিও রামোস ও ফাবিও প্রমাণ করলেন ক্লাব বিশ্বকাপে

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে। খেলাধুলার জগতে তো পরিবর্তনের ছোঁয়া আরও বেশি চোখে পড়ে—পুরোনোরা সরে যান, নতুনরা জায়গা নেন। তবে কিছু কিছু দৃশ্য, কিছু কিছু নাম ঠিকই সময়ের কাছে হার মানে না। ক্লাব বিশ্বকাপে গতকাল রাতের ম্যাচগুলো সে কথাই আবারও মনে করিয়ে দিল। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত বলেই যাঁদের ‘বুড়ো’ বলে সম্বোধন করা হয়, সেই থিয়াগো সিলভা, সের্হিও রামোস ও ফাবিও যেন নতুন প্রজন্মকে শেখাতে নেমেছেন—দৃঢ়তা, দায়িত্বশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের পাঠ।

ফ্লুমিনেন্স বনাম বরুসিয়া ডর্টমুন্ড: সিলভা ও ফাবিওর মহাকাব্যব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স এবং জার্মান জায়ান্ট বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল বেশ প্রতীক্ষিত। ডর্টমুন্ডকে ফেবারিট মনে করা হলেও মাঠের পারফরম্যান্সে ফ্লুমিনেন্সই ছড়িয়েছে দাপট। বল দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণাত্মক খেলা, সুযোগ সৃষ্টি এবং রক্ষণে অতুলনীয় দৃঢ়তায় নজর কেড়েছে ব্রাজিলিয়ানরা। এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দুই বর্ষীয়ান—গোলরক্ষক ফাবিও এবং সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা।

৪৪ বছর বয়সেও যে কেউ ম্যাচের নায়ক হয়ে উঠতে পারেন, সেটা আবারও প্রমাণ করলেন ফাবিও। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ—যার মধ্যে দুটি ছিল ডাইভিং সেভ, বল পুনরুদ্ধার করেছেন ৮ বার, এবং বলের স্পর্শ ছিল ৩২ বার। এমন পারফরম্যান্সই দেখায়, বয়স কেবল শরীর নয়, মানসিক দৃঢ়তারও পরীক্ষা।

অন্যদিকে থিয়াগো সিলভা যেন বয়সকে থামিয়ে রেখেছেন সেন্টারব্যাকের নির্ভরতার মূর্ত প্রতীক হয়ে। ৯ বার ডুয়েল জয়, ৭ বার বল ক্লিয়ার, ৮ বার এরিয়াল ডুয়েল জয়—অভিজ্ঞতায় মোড়া পারফরম্যান্স যেন ডর্টমুন্ড আক্রমণভাগের জন্য এক দুর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিপক্ষ একাধিকবার তাঁকে পার হওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ প্রহরীর ভূমিকায় ফাবিও দাঁড়িয়েছিলেন সেই শেষ বাধা হয়ে।

মন্তেরেই বনাম ইন্টার মিলান: রামোসের পুনর্জাগরণঅন্য ম্যাচে মেক্সিকান ক্লাব মন্তেরেই মুখোমুখি হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালিস্ট ইন্টার মিলানের। আর এই ম্যাচেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এক সময়ের রিয়াল মাদ্রিদের সেনাপতি সের্হিও রামোস। বয়স ৩৯ হলেও এখনো তাঁর শরীরে প্রতিটি স্নায়ু যেন প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।

ম্যাচের ২৫ মিনিটেই কর্নার থেকে হেডে গোল করে মন্তেরেইকে এগিয়ে দেন রামোস। তাঁর এই গোলেই চাপের মুখে পড়ে যায় ইন্টার। যদিও লাওতারো মার্তিনেজের গোলে পরে সমতা ফেরায় ইতালিয়ান ক্লাবটি, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচে নিজের প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন রামোস।

রক্ষণে নিজের সুনাম বজায় রেখেই খেলেছেন এই স্প্যানিশ কিংবদন্তি। ৩৪টি পাসের মধ্যে ৩১টি ছিল নিখুঁত, ১১টি বল ক্লিয়ার, ২ বার ব্লক এবং ৪টি ডুয়েল জয় করে বুঝিয়ে দিয়েছেন—নিজের দিনে তিনি এখনো প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে নাকানি-চুবানি খাওয়াতে পারেন।

‘বুড়ো’ বলবেন না!থিয়াগো সিলভা, সের্হিও রামোস ও ফাবিও—এই তিনজনের সম্মিলিত বয়স ১২৩ বছর। তবুও তাঁদের কৌশল, অভিজ্ঞতা ও শারীরিক সক্ষমতা মাঠে এমনভাবে ধরা পড়ছে যে নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, বয়স যতই হোক না কেন, যদি আত্মবিশ্বাস ও নিষ্ঠা অটুট থাকে, তবে বিশ্বমঞ্চেও হয়ে ওঠা যায় পারফরম্যান্সের দৃষ্টান্ত।

ক্লাব বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতেও এই ‘বুড়ো’ সিংহদের কাছ থেকে সমর্থকেরা এমনই কিছু রূপকথার প্রত্যাশা করতেই পারেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত