ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে তেলবাজারে আগুন! নেপথ্যে যা থাকছে

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার জেরে গত কয়েক মাসের মধ্যে এক দিনে সবচেয়ে বড় উত্থানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬.১৯ ডলার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫.৫৫ ডলারে, যা আগের দিনের তুলনায় ৮.৯ শতাংশ বেশি। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এটি উঠে গিয়েছিল ৭৮.৫০ ডলারে যা ছিল ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দামও একই দিনে ব্যারেলপ্রতি ৬.২২ ডলার (৯.১%) বেড়ে ৭৪.২৬ ডলারে পৌঁছায়। এ দর কিছু সময়ের জন্য ৭৭.৬২ ডলার ছুঁয়ে যায়, যা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং শীর্ষ সামরিক নেতাদের লক্ষ্য করে ‘লং-টার্ম অপারেশনের’ অংশ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে তেহরান বলেছে, তারা এর ‘কঠোর জবাব’ দেবে। এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা সরাসরি জ্বালানি ও পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বড় উদ্বেগের জায়গা হলো হরমুজ প্রণালী যা মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ পথ। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮-১৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক তেল ব্যবহারের এক-পঞ্চমাংশ। যদি এই প্রণালীতে সরবরাহ বিঘ্ন ঘটে, তাহলে তেলের দামে আরও ভয়াবহ উল্লম্ফন ঘটতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকেছেন বিশেষ করে সোনা ও সুইস ফ্রাঙ্কে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে তারা।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ‘রিস্ট্যাড এনার্জি’র জানিভ শাহ জানান, “মূল প্রশ্ন এখন হলো, এই দাম কতদিন স্থায়ী হবে? সাময়িক উত্তেজনা, নাকি দীর্ঘমেয়াদী বাজার অস্থিরতা?” তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইরানের তেল রপ্তানির বড় অংশই চীনে, ফলে ঝুঁকির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বেইজিং।
অন্যদিকে জেপি মরগান সতর্ক করেছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে যা বর্তমান বাজার অনুমানের প্রায় দ্বিগুণ।
এসইবির বিশ্লেষক ওলে ভ্যালবাই মনে করেন, এখনো পর্যন্ত হরমুজ প্রণালী অক্ষত রয়েছে, যা বড় ধাক্কা এড়াতে সাহায্য করছে। তাছাড়া ওপেক প্লাসের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা থাকায় তারা চাইলে বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় তাদের কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলে জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণ করবে বিশ্ব তেলবাজারের পরবর্তী দিকচিহ্ন।
-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- কবে থামবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভেদের রাজনীতি?
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- ২০২৬ সালের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা
- নির্বাচনের ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া: বিএনপি অসন্তুষ্ট, জামায়াত সন্তুষ্ট, এনসিপি শর্তসাপেক্ষে সমর্থন
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- রোজা, পরীক্ষা ও বাজেটের মাঝে নির্বাচন অযৌক্তিক: বিএনপি
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- দ্বিতীয় দিনেও চলছে কোরবানি, কসাই না পাওয়ায় আজ জবাই অনেকের
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক-ইউনূস বৈঠক: উত্তপ্ত রাজনীতিতে সম্ভাব্য টার্নিং পয়েন্ট?
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষোভ কি ভারতের কেন্দ্রীয় কূটনীতি পাল্টাবে?
- সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?