বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৬ ১২:২৯:০১
বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্য

বাংলাদেশের ভূখণ্ডগত নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এক্স (সাবেক টুইটার)–এ প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি বাংলাদেশের দুটি তথাকথিত ‘চিকেন নেক’ করিডোরকে সম্ভাব্য দুর্বলতা হিসেবে উপস্থাপন করেন, যা ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।

রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি মানচিত্র প্রকাশ করে হিমন্ত শর্মা লেখেন “যারা ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে বারবার হুমকি দেন, তারা যেন মনে রাখেন বাংলাদেশেরও রয়েছে এমন দুটি করিডোর, যেগুলো ভারতের তুলনায় আরও বেশি স্পর্শকাতর ও ভঙ্গুর।”

এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের মানচিত্রে দুটি করিডোর চিহ্নিত করেন একটি রংপুর বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, অন্যটি ঢাকা-চট্টগ্রাম সংযোগকারী করিডোর। শর্মার দাবি, নিরাপত্তাজনিত কারণে এই দুটি করিডোর যে কোনো সময় বিচ্ছিন্ন হতে পারে, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংযোগ ও অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

উত্তর বাংলাদেশ করিডোর: ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর সীমান্তের ঠিক নিচে অবস্থিত, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। শর্মার ভাষায়, এই করিডোর যদি কোনভাবে ব্যাহত হয়, তাহলে রংপুর বিভাগ দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।

চট্টগ্রাম করিডোর: ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই করিডোরের দৈর্ঘ্য মাত্র ২৮ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবাহের প্রধান শিরা। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই করিডোর বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

শর্মার বক্তব্য ভারতের নিজস্ব শিলিগুড়ি করিডোর যা "চিকেন নেক" নামেই পরিচিত তাকে ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এই করিডোরের মাধ্যমেই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। এটিকে বিচ্ছিন্ন করা হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল কার্যত ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

এ প্রেক্ষাপটে, শর্মার মন্তব্য দুই দেশের ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একপ্রকার "কৌশলগত বার্তা" যা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি কঠোর মনোভাবও প্রকাশ করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিমন্ত শর্মার এমন মন্তব্য কেবল একজন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নয়, বরং এটি ভারতের বৃহৎ ভূকৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ভৌগোলিক দুর্বলতাও আলোচনায় আনা হয়।

তবে বাংলাদেশের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও বহুমাত্রিক। জল, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও অভিবাসন সব ইস্যুতে দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অত্যন্ত স্পষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে, এমন স্পর্শকাতর ভৌগোলিক ইস্যু নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য কূটনৈতিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও কৌশলগত সংযম প্রয়োজন বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ