কুমিল্লা সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে বিএসএফের পুশইন

সত্য নিউজ: কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার গোলাবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক নারী ও শিশুসহ ১৩ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২১ মে) দিবাগত রাত ৪টার দিকে সীমান্তের ১৯৬৬ নম্বর পিলারসংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মীর আলী এজাজ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভোররাতে ভারত থেকে অবৈধভাবে পুশইনকৃতদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ৭ জন শিশু রয়েছে।

বিজিবির সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা ভারতে কাজ করতে গিয়েছিলেন এবং কিছুদিন আগে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করে। পরে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া বা আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর ছাড়াই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ রাতের অন্ধকারে তাদের বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে এসে পুশইন করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও তারা একথা স্বীকার করেছেন।

সীমান্তে এ ধরনের পুশইন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যথাযথ কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অননুমোদিত পুশইন প্রক্রিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে।

৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের একটি টহলদল তাদের আটক করে নিজ হেফাজতে নেয়। বিজিবি জানিয়েছে, আটককৃতদের পরিচয় নিশ্চিত করে এবং প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক যোগাযোগও করা হতে পারে বলে বিজিবি সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা কেবল সীমান্ত নিরাপত্তা নয়, বরং সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারকে এই বিষয়ে যথাযথ কূটনৈতিক প্রতিবাদ ও চুক্তিভিত্তিক সমাধানমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।