রাজনৈতিক এজেন্ডায় দুর্নীতি: জয়-পুতুলসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের গুরুতর মামলা

রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুদক প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। কমিশনের সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁরা হলেন
১. সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়
২. ভাইস চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ
৩. ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক
৪. নসরুল হামিদ বিপু
৫. এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামস
৬. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আপিল সদস্য রওশন আরা আক্তার
৭. অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া
৮. সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, এঁরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছেন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে জনকল্যাণের নামে গঠিত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের অনুকূলে প্রাপ্ত অর্থের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁরা আয়কর মওকুফসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নিজেদের বা অপরকে অন্যায়ভাবে আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন।
দুদক অভিযোগ করেছে, জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যবহার না করা সত্ত্বেও এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও এসআরও জারি করে অবৈধভাবে কর সুবিধা গ্রহণ ও প্রদান করা হয়েছে, যা অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গের শামিল।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত সিআরআই মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে। এর মধ্যে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়। অ্যাকাউন্টে মোট ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমার পরিমাণ পাওয়া যায়। অবৈধ আয়-ব্যয় হিসাব থেকেও আসামিরা ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তাছাড়া, সিআরআইয়ের নামে থাকা ২৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিধি লঙ্ঘন করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করার ফলে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, এই মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭- এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঋণের নামে লুটপাট: এস আলমের সাম্রাজ্যে দুদকের হানা
জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের চট্টগ্রাম-১ কার্যালয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
মামলা দুটিতে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদসহ মোট ৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩২ জনকে এবং অপরটিতে ৩৬ জনকে। ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এই আইনি ব্যবস্থা নিল দুদক।
দুদকের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন, প্রথম মামলাটি করা হয়েছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ২ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৯১৮ টাকা ৪০ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগে।
এই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সাইফুল আলম মাসুদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার সঙ্গে আসামি হয়েছেন পরিচালক আব্দুল্লাহ হাসান, সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল আলমসহ এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দ।
এছাড়া ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তার অভিযোগে জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও এই মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত কোভিড প্রণোদনা এবং এলটিআর লোনসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঋণ নিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে ১ হাজার ১৫২ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ১০৭ টাকা ৫২ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসকাত আহমেদ এবং জনতা ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তাসহ মোট ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে এই অনিয়ম চলেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
উভয় মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারা অনুযায়ী অর্থ পাচারের অভিযোগও যুক্ত করা হয়েছে।
আমি হালুয়া-রুটি খাওয়া সাংবাদিক নই: রিমান্ড শুনানিতে আনিসের হুঙ্কার
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত তবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে কোনো রাজনৈতিক বাধার মুখে তিনি নতি স্বীকার করবেন না এবং ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকবেন না। সোমবার বিকেলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এই কলমযোদ্ধা তার বক্তব্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে তিনি গত দুই যুগ ধরে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সরকারকে যেমন প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেছেন ঠিক তেমনি বর্তমান ইউনূস সরকার বা ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পিছপা হবেন না। নিজেকে হালুয়া রুটি খাওয়া সুবিধাবাদী সাংবাদিকের কাতারে ফেলতে নারাজ আনিস আলমগীর বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন যে তালেবানদের হাতে আটক হওয়ার সময়েই তার মন থেকে মৃত্যুভয় চিরতরে দূর হয়ে গেছে এবং সত্য বলার ক্ষেত্রে তিনি আপসহীন।
শুনানির এক পর্যায়ে তিনি অভিযোগের সুরে বলেন যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চাইলে গোটা দেশকে কারাগার বা দোজখে পরিণত করতে পারেন কিন্তু প্যারিস ও নিউইয়র্কে বসে থাকা দুইজন ব্যক্তি নির্বাচন বানচালের যে নীল নকশা আঁকছে তার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে আজ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন যে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে অন্যায্য সুবিধা পাইয়ে দিতেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে এবং তাকে ফেসবুকে লেখালেখি ও টেলিভিশন টকশোতে কথা বলা থেকে বিরত রাখার গভীর চক্রান্ত চলছে। নিজের পেশাগত সততার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে কারো কাছে নতজানু হওয়া তার কাজ নয় এবং যারা তাকে নির্দিষ্ট কোনো দলের গোলাম বানাতে চায় তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং এর আগে রোববার সন্ধ্যায় তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেন ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম।
বিদায়ী অভিভাষণে নিজের ও বিচার বিভাগের ভুল স্বীকার করলেন প্রধান বিচারপতি
বিচারকদের অনেক অভিমতই রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণে অসামান্য ভূমিকা রাখে। তবে অতীতের ভুল স্বীকার করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন বিচারকদের নৈতিক বিচ্যুতিই জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার অন্যতম অনুঘটক।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর গ্রহণের আগে রোববার ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে দেওয়া বিদায়ী অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
বিচার বিভাগের আত্মসমালোচনা বিদায়ী অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি অকপটে স্বীকার করেন যে বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্বে বিচার বিভাগ অসাংবিধানিক ক্ষমতা অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবেও পরিগণিত হয়েছে। তিনি বলেন দুঃশাসনের বলয়কে আবরণ দিয়েছেন অনেক বিচারক। অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এই সত্য অস্বীকার করা যায় না।
রাজনীতি ও বিচারক বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন কেবল ক্ষমতাবান শাসক শ্রেণির পক্ষে প্রয়োজনীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নিলে বিচার বিভাগের আলাদা কোনো অস্তিত্বেরই প্রয়োজন নেই। সে কাজের জন্য নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই যথেষ্ট। তিনি বিচারকদের সতর্ক করে বলেন পছন্দসই পদায়নের জন্য রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
জ্ঞান অর্জনের তাগিদ বিচারকদের কেবল প্রথাগত আইনের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে এসে সমাজ সংস্কৃতি নৃতত্ত্ব ইতিহাস অর্থনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তার জগতে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে। সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিবেশ বিজ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তার মতো আধুনিক বিষয়েও বিচারকদের বিচরণ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় ও স্বাধীনতা ঐতিহাসিক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন পৃথক সচিবালয় এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে এদেশের আপামর জনসাধারণের সাংবিধানিক সব অধিকার সুরক্ষিত করার প্রধান নিয়ন্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সৃষ্ট যাবতীয় অন্যায়ের জন্য এখন থেকে অন্যের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ বন্ধ করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং বার কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
গণহত্যার আড়ালে ইন্টারনেট বন্ধের পরিকল্পনায় জয়ের ভূমিকা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণহত্যার তথ্য আড়াল করতে ইন্টারনেট বন্ধের পরিকল্পনার মূল নকশা প্রণয়ন করেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তাই বাংলাদেশি আইনের আওতায় জয়ের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশের আদালতেই হওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেও বিচার থেকে তিনি অব্যাহতি পাবেন না। তার ভাষায়, জয় কখনো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কহীন ছিলেন না। তিনি সরকারি বিশেষ উপদেষ্টা, প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক্ত কর্মী এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অংশ ছিলেন। বিশেষ করে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চিফ প্রসিকিউটর অভিযোগ করেন, আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যার ঘটনা গোপন করার চেষ্টা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন জয়। দেশজুড়ে নৃশংসতার খবর যাতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে না পৌঁছায়, সেই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ডিজিটাল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, পলক দেশে বসে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। আর পরিকল্পনার “নির্দেশদাতা” হিসাবে জয়ের ভূমিকা পরিষ্কার। তাই আইন অনুযায়ী তার বিচার বাংলাদেশের আদালতেই হওয়া আবশ্যক।
ঘটনার সময় জয় দেশে ছিলেন না এই প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। দেশের বাইরে থেকেও ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া বা হত্যার হুমকি প্রদান করা যেতে পারে।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, ঘটনাসংক্রান্ত সবপ্রকার প্রমাণ, নথিপত্র ও সাক্ষ্য আদালতে ইতিমধ্যেই জমা রয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় এসব প্রমাণ একে একে উপস্থাপিত হলে পুরো বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
এদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
-রফিক
১২ কোটি টাকার অভিযোগ, এনামুরের কর ফাইল জব্দ
দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের আয়কর সংক্রান্ত সব নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মুহাম্মদ কামরুল হাসান খান দুদকের আবেদনের পর শুনানি শেষে এ আদেশ প্রদান করেন।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় ডা. এনামুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী তার নামে অনিয়মিতভাবে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৫ টাকা।
এছাড়া তার পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিশ্লেষণে দুদক আরও উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছে। এসব হিসাবে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৮ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন জমা হয়েছে এবং ৬ কোটি ২৬ লাখ ৮ হাজার ৪৮৭ টাকা উত্তোলনের অসঙ্গতিরও প্রমাণ মিলেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকার মানিলন্ডারিং–সংক্রান্ত অভিযোগ দুদক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার মতো তথ্য পেয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
দুদক জানায়, এই মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করতে ডা. এনামুর রহমানের প্রথম করবর্ষ থেকে ২০২৪–২৫ করবর্ষ পর্যন্ত সব আয়কর নথি পর্যালোচনা জরুরি। সংশ্লিষ্ট নথি ঢাকার কর অঞ্চল–১০-এ সংরক্ষিত থাকায় সেগুলো জব্দে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আদালত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নথিগুলো জব্দের অনুমোদন দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা পাপন কুমার সরকার প্রয়োজনীয় নথি জব্দের আবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন, যা আদালত গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করেছেন।
দুদকের মতে, এসব নথি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর অভিযোগ আরও সুস্পষ্ট হবে এবং তদন্ত দ্রুত অগ্রসর করা সম্ভব হবে।
প্রিজনভ্যানে উঠে জাতীয় সংগীত গাইলেন পলক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই আগস্টে গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে আদালতের কার্যক্রম শেষে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় এক নজিরবিহীন দৃশ্য দেখা গেছে। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রিজনভ্যানে উঠেই জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন। এমনকি তাঁর সঙ্গে প্রিজনভ্যানে থাকা অন্য আসামিদেরও সুর মেলাতে শোনা গেছে যা উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সোমবার ৮ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁদের প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে এই ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।
আদালতে আসামিদের তালিকায় ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এছাড়া সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকেও হাজির করা হয়। তবে অসুস্থ থাকায় সাবেক এমপি ফারুক খানকে আনা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালে এ মামলার অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি মামলার তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাস সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল ১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওবায়দুল কাদেরের মামলায় ৪৫ জনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হওয়ায় অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে এবং বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানা গেছে সালমান আনিসুল ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা ফরমাল চার্জ দিয়েছে প্রসিকিউশন। ইনুর মামলায় ইতিমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল ১। একই সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের ফরমাল চার্জে কারফিউ জারি করে ছাত্র জনতাকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।
কে হচ্ছেন দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি? জল্পনা চূড়ায়
দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। তার অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় বিচারাঙ্গনে জল্পনা তৈরি হয়েছে কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় শীর্ষে থাকা বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। রীতি অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে, যদিও সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে এই বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া আছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারও আপিল বিভাগ থেকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থির সময়ে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে ছাত্র-জনতার দাবির মুখে হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি এক অনন্য নজির, কারণ অতীতে সব প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগ থেকে নিয়োগ পেয়েছেন।
সংবিধানের ৯৫ ও ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন এবং প্রয়োজনে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও সংবিধানে জ্যেষ্ঠতা বাধ্যতামূলক বলা হয়নি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করার সুপারিশ করেছিল। কমিশন আরও বলেছে, জ্যেষ্ঠ বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বর্তমান সংবিধানে জ্যেষ্ঠতার বাধ্যবাধকতা নেই; রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করতে পারেন। এখন সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির হাতে তিনি কাকে দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বেছে নেবেন।
আসন্ন নিয়োগকে সামনে রেখে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির প্রোফাইল নিয়েও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নুরুল ইসলাম ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি জাহানারা আরজুর সন্তান। ১৯৮৩ সালে আইন পেশায় প্রবেশ করে তিনি ২০০৩ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০২২ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ধাপে ধাপে উন্নীত হয়ে ২০২৪ সালে আপিল বিভাগে যোগ দেন। তিনিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পরিবারের সন্তান।
বিচারপতি মো. রেজাউল হক ১৯৮৪ সালে জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং ২০০৪ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২৪ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন। বিচারপতি এস.এম. ইমদাদুল হক ১৯৯০ সালে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। ২০০৪ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০২৪ সালে আপিল বিভাগে উন্নীত হন।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান দীর্ঘ আইনি অভিজ্ঞতার পর ২০০৩ সালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ২০২৫ সালে আপিল বিভাগে ওঠেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আইনজীবী পরিবারের সন্তান হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর ২০২৫ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগকে ঘিরে এখন আদালতপাড়া সরগরম। আইনজীবী মহলে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের যোগ্যতা, সিনিয়রিটি ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা। সবশেষ সিদ্ধান্ত এখন রাষ্ট্রপতির হাতে, যিনি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতির নাম ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
-রফিক
জুলাই–আগস্ট হত্যামামলায় সাবেক ১৭ মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ট্রাইব্যুনালে
জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র–জনতার গণআন্দোলন দমনকালে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা সরকারের সময়কার সাবেক মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় তাদের প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে আনা হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা একে একে তাদের হাজতখানায় নিয়ে যায়।
এদিন ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলার অগ্রগতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, আসামিদের বিরুদ্ধে গঠনমূলক অভিযোগ উত্থাপনসহ বেশ কয়েকটি মামলার প্রমাণ উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
হাজির করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম, সাবেক এমপি ফারুক খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
প্রসিকিউশন ইতোমধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করেছে। ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। আরও একটি মামলায় জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে গণহত্যায় প্রত্যক্ষ ভূমিকার অভিযোগ এনে সজীব ওয়াজেদ জয় ও পলকের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।
কারফিউ জারি ও বলপ্রয়োগ করে ছাত্র–জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের বিরুদ্ধেও পৃথক শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
এছাড়া গত ১৫ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল–১ সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে দাখিলযোগ্য তদন্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে প্রসিকিউশনের সময় চাওয়ার পরও তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল অতিরিক্ত সময় দিয়েছে।
সকালে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আদালত চত্বরে প্রবেশকারী প্রায় সকলকেই তল্লাশি করে ভিতরে ঢুকতে দেন। পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সতর্কতামূলক।
-শরিফুল
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে সব আইনি প্রশ্নের অবসান ঘটাল আপিল বিভাগ
অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠনকে বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ডক্টর সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর মাধ্যমে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত পরিসমাপ্তি ঘটল।
আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে আপিলকারী ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন। অন্যদিকে এই মামলায় ইন্টারভেনার বা পক্ষ হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ডক্টর শরীফ ভূঁইয়া। এছাড়া এই মামলায় ইন্টারভেনার হয়ে শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
মামলার প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেন এবং মতামত অনুযায়ী কাজ করেছেন। তাই এটি আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত এবং বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত।
হাইকোর্টের সেই আদেশের বিরুদ্ধে পরে লিভ টু আপিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। বুধবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার বিষয়টিকেই পুনর্ব্যক্ত করলেন। উল্লেখ্য গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৮ আগস্ট এই সরকার গঠিত হয়েছিল।
পাঠকের মতামত:
- নির্বাচন নিয়ে বড় বৈঠক: তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বসছে ইসি
- কোলের শিশু কেন ফর্সা? ভিক্ষুক নারীকে ঘিরে তুলকালাম
- অনিদ্রা ও ক্লান্তি দূর হবে: রাতে ঘুমানোর আগে সেরা ৫টি খাবারের তালিকা
- ভাষার দেয়াল ভাঙল গুগল: হেডফোনে সরাসরি শোনা যাবে ৭০ ভাষা
- আধুনিক জীবনযাত্রায় বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব: বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
- বড় সাজা পেলেন ইমরান-বুশরা: পাকিস্তান রাজনীতিতে নতুন মোড়
- আপনি জিতে গেছেন হাদি: তারকাদের আবেগঘন বার্তা
- সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে, গুড়ের চা পানের অবিশ্বাস্য ৪ উপকারিতা
- দিল্লী না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা: হাদি হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল শাহবাগ
- জাতীয় নির্বাচনের সংশোধিত তফসিল ঘোষণা
- এমিরেটস ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন সুদান সীমান্তে শহীদ ৬ বীর সেনা
- মার্কা যাই হোক আমি নির্বাচন করবই: রুমিন ফারহানা
- ইনকিলাব মঞ্চের ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত আলটিমেটাম
- বীর উত্তম এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোকবার্তা
- নজরুল মাজার প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় ওসমান হাদি
- বিএনপি গণতন্ত্রের রক্ষক, ভক্ষক নয়: মির্জা আব্বাস
- প্রবাসীদের জন্য আজকের রিংগিত রেট ও পরামর্শ
- ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে সেরা ৫ ইনডোর প্ল্যান্ট
- জানাজার নামাজে কী পড়বেন, কী করবেন না
- হাদি হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত চাইল জাতিসংঘ: জেনেভা থেকে কড়া বার্তা
- যেখানে হাদির কবর খনন করা হয়েছে
- সংসদ ভবনে মানুষের ঢল: শহীদ হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ভিড়
- সৌদি আরবে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুখবর
- হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই: সংসদ ভবনে শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি
- অ্যাভাটারের নতুন ট্রেলারে ক্রিস ইভান্স: উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া
- মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় জানাজার দোয়া ও এর তাৎপর্য
- ২০৩৫ সালে চাঁদে ফুটবল ম্যাচ? বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য দাবি
- গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি: ইসরাইলি গোলার আঘাতে ঝরল প্রাণ
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন আকাশছোঁয়া দাম
- শরিফ ওসমান হাদি: একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিপ্লবের অমর উপাখ্যান
- নির্বাচন পেছানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
- ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে হাদির মরদেহ: কড়া পাহারায় সেনাবাহিনী
- বয়স বাড়লেও টেস্টোস্টেরন থাকবে অটুট: জানুন কার্যকরী উপায়
- শনিবার দুপুরে ঢাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
- আজকের খেলার সূচি: টিভিতে সরাসরি দেখবেন যেসব ম্যাচ
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়: ২০ ডিসেম্বর
- আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- রাজধানীতে আজ কোথায় কী? বের হওয়ার আগে জানুন আজকের সূচি
- বিজিবি এখন সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও পেশাদার: প্রধান উপদেষ্টা
- আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি: মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সাধারণ মানুষ
- ঢাকা ছাড়ছেন ডা. জুবাইদা রহমান: কাতার বিমানে যাত্রা
- হাদি হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল দেশ: দিকে দিকে বিক্ষোভ
- বেরিয়ে এলো ওসমান হাদি হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা
- জরুরি বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, সভাপতিত্বে তারেক রহমান
- এবার মুখোমুখি ভারত ও পাকিস্তান
- হাদির আসনে নির্বাচনে নামছেন যিনি
- হাদির জানাজা উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা
- মরুভূমির দেশে সাদা চাদর, তুষারে ঢাকল সৌদি পাহাড়
- শনিবারের যে পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা
- ওসমান হাদির জানাজা শনিবার জানাজা কোথায় ও কখন
- বুধবার টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন আকাশছোঁয়া দাম
- রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন যেসব এলাকা
- বাজুসের নতুন ঘোষণা: আজ থেকে কার্যকর স্বর্ণের বর্ধিত দাম
- ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা
- দেশের বাজারে স্বর্ণের দামের নতুন রেকর্ড
- সিঙ্গাপুরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওসমান হাদি
- ১৬ অক্টোবর ২০২৫: জেনে নিন আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা জাহাঙ্গীর আলম শান্ত
- আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার আগাম বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস
- ডলারসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার আজকের বিনিময় হার
- আইপিএল নিলামে তোলপাড়: রেকর্ড দামে বিক্রি ফিজ
- হাদির প্রথম জানাজা কোথায় ও কখন? জানাল ইনকিলাব মঞ্চ
- মাত্র ৫টি অভ্যাসে জব্দ হবে ডায়াবেটিস
- আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়








