কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী

মানবজীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা হলো চিরস্থায়ী মুক্তি ও জান্নাত লাভ করা। তবে জান্নাতের পথ সহজ নয়; সেখানে পৌঁছানোর জন্য হিসাব-নিকাশ, প্রশ্নোত্তর এবং আল্লাহর বিচারের কঠোরতা অতিক্রম করতে হয়। তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেছেন। কারণ এই উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ থাকবেন, যাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যাবে বিনা হিসাবেই।
হজরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—
" وَعَدَنِي رَبِّي أَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعِينَ أَلْفًا لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلاَ عَذَابَ مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ ""
অর্থাৎ, ‘আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের তিনমুঠি পরিমাণ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩৭)
হাদিসের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা
এই হাদিসটিতে আল্লাহর রহমত ও উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি বিশেষ মর্যাদার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মুহাদ্দিসগণ হাদিসের ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোর প্রতীকি ও আক্ষরিক উভয় অর্থেই ব্যাপকতা তুলে ধরেছেন
আরবিতে "সত্তর হাজার" (سبعين ألفا) সংখ্যাটি কেবল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়, বরং প্রাচুর্য বা অসংখ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সীমাহীন দয়ার প্রকাশ ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষকে বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
হাদিসে যখন বলা হয়েছে "مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا"—অর্থাৎ "প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার", তখন এর অর্থ দাঁড়ায় এক গণনাযোগ্য বিশাল সংখ্যা।
এর পরেও বলা হয়েছে "وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ"—অর্থাৎ "আর আমার প্রভুর তিন মুঠো পরিমাণ"—এই অংশ দ্বারা এমন অসংখ্য অতিরিক্ত লোককে বোঝানো হয়েছে, যাদের সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এই ‘মুঠি’ হচ্ছে রহমতের রূপক প্রকাশ।
ইবনে হাজার (রহ.) তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন, এই হাদিসে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা ও নবী ﷺ-এর উম্মতের বিশেষ মর্যাদা প্রতিফলিত হয়েছে।
বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের গুণাবলী
এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা কারা, তা অন্য একটি সহিহ হাদিসে (বুখারি ও মুসলিমে) স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। এরা এমন লোক—
"لاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَكْتَوُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ"
অর্থাৎ, “যারা রুকইয়া করাতে বলে না, দগ্ধ চিকিৎসা নেয় না, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে না এবং সর্বাংশে তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৭২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২০) এই গুণাবলী প্রমাণ করে যে, তারা সম্পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)-এর এক উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাদের অন্তর দুনিয়াবি ভরসা থেকে মুক্ত এবং তারা নিজেদের সর্বদা আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয়।
ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, এই হাদিসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি এমন একটি সম্মান, যা অন্য কোনো উম্মত পায়নি।
এই হাদিসটি মুমিনদের মাঝে আশার আলো জাগায় এবং আল্লাহর সীমাহীন দয়ার দলিল হিসেবে কাজ করে। এই হাদিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো হলো
বিনা হিসাবের জান্নাত পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল), একান্ত ঈমান ও অবিচল আস্থা অর্জন করা জরুরি।
মানুষকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার শিক্ষা দেয়—অর্থাৎ চিকিৎসা, রুকইয়া বা ভাগ্যনির্ভর কুসংস্কারের উপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।
আমাদের উচিত—আমল ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে সেই সৌভাগ্য অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা করা এবং নবী ﷺ-এর শিক্ষা অনুসারে জীবন গঠন করা।
আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে নামাজ মুসলমান জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ibadah। নামাজ কেবল আল্লাহর সঙ্গে নৈকট্য স্থাপনের মাধ্যম নয়, এটি মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা, মনসংযম এবং সময়নিষ্ঠার প্রতীকও বটে। বিশেষ করে যারা নির্ধারিত সময়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করেন, তাদের জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, সময়মতো নামাজ আদায় কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রতিদান অর্জনের এক মাধ্যম।
হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের জন্য অপেক্ষা করে, সে যেন নামাজের মধ্যে অবস্থান করে। এবং যতক্ষণ সে মসজিদে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন।’ অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দোয়া অব্যাহত থাকে।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩০) এই হাদিস মুসলমানদের সময়মতো নামাজের গুরুত্ব এবং মসজিদে উপস্থিত থাকার মর্যাদা তুলে ধরে।
আজ মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ:
জোহর: ১১টা ৪৫ মিনিট
আসর: ৩টা ৪২ মিনিট
মাগরিব: ৫টা ২১ মিনিট
এশা: ৬টা ৩৬ মিনিট
আগামীকাল ফজর: ৪টা ৫৩ মিনিট
ঢাকায় সূর্যাস্ত আজ ৫টা ১৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ৬টা ০৬ মিনিটে।
অন্যান্য অঞ্চলের জন্য নামাজের সময় সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। চট্টগ্রামে ৫ মিনিট বিয়োগ করতে হবে, সিলেটে ৬ মিনিট বিয়োগ। খুলনায় ৩ মিনিট, রাজশাহীতে ৭ মিনিট, রংপুরে ৮ মিনিট এবং বরিশালে ১ মিনিট সময় যোগ করতে হবে।
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী
০৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (AM), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (AM), আসর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (PM), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (PM), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (PM)।
(সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর), এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।)
অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০৪ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৩টা ৫৯ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৯ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৪ মিনিটে।
খুলনা: খুলনায় ফজর ০৪টা ৫১ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৪ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫২ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৫ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৬ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০০ মিনিটে।
রাজশাহী: রাজশাহীতে ফজর ০৪টা ৫০ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫৩ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৬ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৭ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০২ মিনিটে।
সিলেট: সিলেটে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৭ মিনিটে, আসর ০৪টা ০২ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৪ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫০ মিনিটে।
রংপুর: রংপুরে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০২ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫১ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪২ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৯ মিনিটে।
বরিশাল: বরিশালে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪০ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৬ মিনিটে।
বোনের কোরআন পাঠে হার মানল দম্ভ; হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণের বিস্তারিত ঘটনা
ইসলামের মহান চার খলিফার অন্যতম দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণকে ইসলামের ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ তাঁর ইসলাম গ্রহণের পরই মুসলমানেরা প্রকাশ্যে তাদের ধর্ম প্রচারের সুযোগ পান। হজরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম অসামান্য সাহসী এবং বাগ্মী নেতা। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও দাপটের কারণে কাফেররা তাঁর মুখোমুখি হতে বা মোকাবিলা করতে ভয় পেত।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একটি হাদিসে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, যদি তাঁর পরে কাউকে নবী করা হতো, তবে তিনি হতেন হজরত ওমর (রা.)।
আল্লাহর কাছে রসুল (সা.)-এর বিশেষ দোয়া
রসুল (সা.)-এর কাছে ইসলামের প্রথম দিকে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তাদের ওপর নেমে আসে মক্কার প্রভাবশালী নেতাদের ভয়াবহ ও অমানবিক নির্যাতন। সেই কঠিন সময়েও দুর্বল সাহাবিরা ইমানের ওপর ছিলেন অটল। মক্কার প্রভাবশালীদের উৎপীড়নে ব্যথিত হয়ে রসুল (সা.) একপর্যায়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করলেন, "হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব এবং আবু জেহেলের মধ্যে তোমার কাছে যে বেশি পছন্দনীয়, তাকে ইসলাম গ্রহণের সুযোগ দাও এবং তার দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করো।" মহান আল্লাহ্র কাছে রসুল (সা.)-এর এই বিশেষ দোয়াটি অচিরেই কবুল হয় এবং আল্লাহ্ হজরত ওমর (রা.)-এর অন্তরকে ইসলামের জন্য পরিবর্তন করে দেন।
ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
হজরত ওমর (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের গুটিকয় শিক্ষিত লোকের অন্যতম। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন কুস্তিগির, মল্লযোদ্ধা ও একজন সুপরিচিত বক্তা। একসময় তিনি রসুল (সা.)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে মক্কার পথে রওনা হয়েছিলেন।
পথিমধ্যে তিনি সাহাবি নাইম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নাইম হজরত ওমর (রা.)-এর উদ্দেশ্য আঁচ করতে পেরে তাকে জানান, রসুলকে হত্যার আগে নিজের বোন ফাতিমা এবং ভগ্নিপতি সাইদের খোঁজ নেওয়া উচিত, কারণ তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ কথা শুনে ক্রোধে ফেটে পড়ে ওমর (রা.) ছুটে চললেন বোনের বাড়ির দিকে।
ঘরে ঢোকার আগেই তিনি শুনতে পান যে তার বোন ফাতিমা রসুল (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া কোরআন পাঠ করছেন। পায়ের শব্দ কানে আসা মাত্রই ফাতিমা চুপ হয়ে যান এবং কোরআনের পাতা লুকিয়ে ফেলেন। ঘরে ঢুকেই ক্ষুব্ধ ওমর (রা.) জানতে চান, তারা কী পড়ছিলেন। এরপর তিনি তাদের ধর্মত্যাগী হওয়ার জন্য দোষারোপ করে ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বামীকে রক্ষা করতে বোন এগিয়ে এলে ওমর (রা.) তাকেও আঘাত করেন, ফলে ফাতিমা এবং তার স্বামী দু'জনেই রক্তাক্ত হন।
রক্তাক্ত অবস্থায়ও ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে বোন ফাতিমা দৃঢ়কণ্ঠে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, "ভাই, তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো। আমরা সব সহ্য করব। শুধু জেনে রাখো, আমরা ইসলাম ত্যাগ করব না।"
বোনের এমন তেজোদীপ্ত কথা শুনে দম্ভ ও ক্রোধে থাকা ওমর (রা.) থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর কঠিন হৃদয় মোমের মতো গলে গেল। তিনি শান্ত হয়ে বললেন, "আচ্ছা! তোমরা যা পাঠ করছিলে, আমাকে একটু পড়তে দাও দেখি, তাতে এমন কী আকর্ষণ আছে, যা তোমাদের এমন দৃঢ়চেতা করে তুলেছে।"
কিন্তু তাঁর বোন ফাতিমা বললেন, "তুমি এখন নাপাক। এ কিতাব শুধু পাক-পবিত্র লোকই স্পর্শ করতে পারে।" তখন হজরত ওমর (রা.) গোসল করে পবিত্র হলেন। তারপর কোরআন পাঠ করে তিনি গভীরভাবে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কুরাইশদের অন্যতম এই প্রভাবশালী নেতা মুহূর্তেই পাল্টে যান।
প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা
হজরত ওমর (রা.) সেই তলোয়ার হাতেই রসুল (সা.)-এর দরবারে ছুটে চললেন। তাঁর পায়ের শব্দ শুনে সাহাবিরা কিছুটা শঙ্কিত হলেও, আরবের অন্যতম সেরা বীর হজরত হামজা (রা.) সাহসের সঙ্গে বললেন, "ওমর এসেছে তো কী হয়েছে, দরজা খুলে দাও। যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এসে থাকে, তবে তার তলোয়ার দিয়েই আমরা তাকে শেষ করে দেব।"
এই ঘটনার সময় রসুল (সা.) দরবারের ভিতরের দিকে ছিলেন এবং সে সময় তাঁর ওপর ওহি নাজিল হচ্ছিল। ওহি নাজিল হওয়ার পর রসুল (সা.) হজরত ওমরের কাছে এলেন এবং তাঁর পরিধানের পোশাক ও তলোয়ারের একাংশ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, "হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাবের দ্বারা দীনের শক্তি ও সম্মান দান করো।"
এ কথা শুনে হজরত ওমর (রা.) রসুল (সা.)-এর হাত ধরে বললেন, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রসুল।" হজরত ওমরের কলমা পাঠ শোনামাত্র ভিতরে উপস্থিত সকল সাহাবিরা উচ্চস্বরে 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি দিয়ে উঠলেন।
হজরত ওমর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। তিনি বাদে অন্য সবাই প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন গোপনে। কিন্তু ওমরের ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলমান হিসেবে তৎপরতা ছিল সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে। তাঁর ইমানদারির মধ্যে ছিল কুরাইশদের বিরুদ্ধে এক প্রকার বিদ্রোহের সুর।
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের আগে তিনি প্রথমে কাবা তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরাইশদের মজলিসে গিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, "আমি মদিনায় হিজরত করব। যদি কেউ তার মাকে পুত্রশোক দিতে চায়, সে যেন এ উপত্যকার অন্য প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়।" এমন একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি মদিনার পথে রওনা দেন। কিন্তু তাঁর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
তওবার সঠিক প্রক্রিয়া: আল্লাহর কাছে ফিরে আসার ৫টি শর্ত
তওবা শব্দের মূল অর্থ হলো ‘ফিরে আসা’। ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য হলো গুনাহ থেকে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।
কোরআন ও সুন্নাহর ভাষায় তওবা বোঝায় পূর্ববর্তী গুনাহের জন্য আন্তরিক অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে সেই গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
বিশুদ্ধ তওবার শর্তসমূহ:,
প্রথম শর্ত হলো, তওবা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যে গুনাহ থেকে তওবা করা হচ্ছে তা যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে হবে।
তৃতীয় শর্ত হলো, সেই গুনাহটি করার জন্য অন্তরের মধ্যে অনুতপ্তি এবং লজ্জা অনুভব করা।
চতুর্থত, ভবিষ্যতে সেই গুনাহ আর পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।
পঞ্চম শর্ত, যদি গুনাহটি অন্য কোনো বান্দার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে তার সঙ্গে মিটমাট বা সমঝোতা করতে হবে এবং যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
তওবার সুফল ও আল্লাহর কবুলযোগ্যতা:
যদি কোনো ব্যক্তির তওবা খাঁটি ও আন্তরিক হয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তা গ্রহণ করবেন এবং সেই ব্যক্তির আমলনামা থেকে পূর্বের সমস্ত গুনাহ মুছে যাবে।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবী এবং তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে প্রবাহিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।” (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮)
এই আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে খাঁটি ও আন্তরিক তওবার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর দয়া, ক্ষমা এবং জান্নাত অর্জন করতে পারে।
ঢাকা আজকের নামাজের সময়সূচি প্রকাশ
আজ সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫ (১৮ কার্তিক ১৪৩২, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭) ঢাকার নামাজের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এ তথ্য অনুযায়ী তাদের দৈনন্দিন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করতে পারবেন।
ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় জোহরের নামাজ শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে। এরপর আসরের নামাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে। সূর্যাস্তের সঙ্গে মিলিয়ে মাগরিব নামাজ পড়া যাবে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে। এশার নামাজ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে।
আগামীকাল ফজরের নামাজের সময় নির্ধারিত হয়েছে ভোর ৪টা ৫৩ মিনিটে। সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময়ও জানানো হয়েছে; আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ঘটবে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে, আর আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৬টা ০৬ মিনিটে।
এই সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা। ধর্মপ্রাণরা এই সময় অনুযায়ী নামাজ, সওয়াবের আমল ও অন্যান্য ইবাদতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি তারিখের জন্য ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান বিভাগের দৈনিক নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো। (এই সময়সূচি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ক্যালেন্ডার থেকে সংগৃহীত। স্থানীয় তারতম্যের জন্য ২/১ মিনিট ভিন্ন হতে পারে)।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সময়সূচি
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে (ভোর), সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে (AM) (আনুমানিক), জোহর ১১টা ৪৫ মিনিটে (দুপুর), আছর ০৩টা ৪৩ মিনিটে (বিকেল), মাগরিব ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা), এবং ইশা ০৬টা ৩৮ মিনিটে (রাত)।
নফল রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাহরির শেষ সময় থাকবে ০৪টা ৪৩ মিনিটে (ভোর)।
এবং ইফতারের সময় হবে ০৫টা ২৩ মিনিটে (সন্ধ্যা)।
অন্যান্য প্রধান বিভাগীয় শহরের আনুমানিক সময়সূচি
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোর সময়সূচিতে সামান্য পার্থক্য আসে। ০৩ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের জন্য প্রধান বিভাগগুলোর নামাজের আনুমানিক সময়সূচি নিম্নরূপ:
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৩টা ৫৯ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৯ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৪ মিনিটে।
খুলনা: খুলনায় ফজর ০৪টা ৫১ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৪ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫২ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৫ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৬ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০০ মিনিটে।
রাজশাহী: রাজশাহীতে ফজর ০৪টা ৫০ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫৩ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৬ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪৭ মিনিটে এবং ইশা ০৭টা ০২ মিনিটে।
সিলেট: সিলেটে ফজর ০৪টা ৪৪ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৫টা ৫৬ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৭ মিনিটে, আসর ০৪টা ০২ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৩৪ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫০ মিনিটে।
রংপুর: রংপুরে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০২ মিনিটে, জোহর ১১টা ৫১ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪২ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৯ মিনিটে।
বরিশাল: বরিশালে ফজর ০৪টা ৪৯ মিনিটে, সূর্যোদয় ০৬টা ০৩ মিনিটে, জোহর ১১টা ৪৯ মিনিটে, আসর ০৪টা ০৩ মিনিটে, মাগরিব ০৫টা ৪০ মিনিটে এবং ইশা ০৬টা ৫৬ মিনিটে।
জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধৈর্য নবীজি (সাঃ) এর হাদিস ও কোরআনের আলোকে গুরুত্ব
আমাদের দৈনন্দিন পথচলায় যেসব গুণ ও সামর্থ্য একান্ত প্রয়োজন, ধৈর্য বা সবর সেগুলোর অন্যতম। ইসলামে ধৈর্যকে জীবনের একটি বড় সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে; নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত চমৎকারভাবে বলে গিয়েছেন, "ধৈর্য্যের চেয়ে উত্তম ও বড় কোনো সম্পদ কাউকে দেওয়া হয়নি।" (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ধৈর্যের গুণ অর্জন করে ফেলে, সে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্জন করে।
জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি মুহূর্তে এই সম্পদের প্রয়োজন হয়; জীবনের পরতে পরতে ঘটে যাওয়া উত্থান-পতন, পরীক্ষা, দুশ্চিন্তা মোকাবেলা করা, পারিবারিক জীবনে মতপার্থক্য, অসংখ্য আবদার রক্ষা করা এবং মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে মানিয়ে চলার মতো সব ক্ষেত্রেই ধৈর্য অমূল্য সম্পদ।
ধৈর্য জীবনের আলো ও আল্লাহর ভালোবাসা
ধৈর্য এমন একটি বিনিয়োগ, যার ফলাফল সবসময় লাভজনক হয় এবং জীবনকে আলোকিত করে। নবীজি(সাঃ) বলেন, "ধৈর্য হলো আলো।" (সহিহ মুসলিম) আলো যেমন চারপাশের অন্ধকার দূর করে সঠিক পথের দিশা দেয়; তেমনি জীবনে যে যত বেশি ধৈর্যের সম্পদ বিনিয়োগ করবে, সে তত বেশি সফল ও আলোকিত হবে।
ইসলামে ধৈর্যের অতুলনীয় মূল্যায়ন করা হয়েছে; স্বয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াতে ধৈর্যশীলদের জন্য তাঁর ভালোবাসা ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন" এবং "আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের ভালোবাসেন"; এছাড়াও তিনি "ধৈর্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দাও" বলে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রকৃত বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী কে
আমাদের সমাজে যারা ধৈর্য ধরে, নীরবে সহ্য করে নেয়, অন্যের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ছাড় দেয়; আমরা তাদের বোকা বা দুর্বল ভাবি। অথচ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী। নবীজি(সাঃ) বলেন, "সে শক্তিশালী নয় যে রাগের মাথায় হুট করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে; বরং প্রকৃত শক্তিশালী ওই ব্যক্তি যে রাগের সময়ও ধৈর্য্য ধরতে পারে।" (সহিহ বুখারি: ৬১১৪) এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, পেশিশক্তি আসল শক্তি নয়; বরং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিই হলো আসল শক্তি।
ধৈর্য কীভাবে নিরাপত্তা দেয়
মানুষ যত বেশি ধৈর্যশীল হবে, সমাজ তত বেশি নিরাপদ হবে এবং ক্ষতি থেকে বাঁচবে। কোরআনের সুরা আসরে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে পরস্পরকে উদ্বুদ্ধ করে।" (সুরা আসর: ১-৩)
যেহেতু আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন; তাই চলা, ফেরা, ওঠা, বসা—সর্বক্ষেত্রে তারা আল্লাহর সাহায্য পায় এবং সব ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়, নিরাপদ থাকে।
লেখক: খতিব, মকিম বাজার জামে মসজিদ, বংশাল, ঢাকা
‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে রেখেছি’: আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত প্রথম খলিফার গল্প
ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ও সম্মানিত নাম। তিনি কেবল ইসলামের প্রথম খলিফাই নন; জীবিত অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত 'আশারাতুল মুবাশশারা'-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্বশুর এবং তাঁর একজন একনিষ্ঠ সহচর।
জন্ম ও পরিচয়
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাল্যনাম ছিল আবদুল্লাহ; তবে তিনি আবু বকর ডাকনামেই পরিচিত। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সিদ্দিক বা 'সত্যবাদী' এবং আতিক বা 'দানশীল' খেতাব লাভ করেন। তাঁর বাবার নাম ওসমান; যিনি ইতিহাসে আবু কুহাফা নামে সুপরিচিত; এবং মায়ের নাম উম্মুল খায়ের সালমা।
ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য শেষে ফেরার পর তিনি মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের সংবাদ পান এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ প্রথমে বাবা, স্ত্রী এমনকি ছেলের বিরোধিতার মুখে পড়েছিল; তবে তাঁর মা প্রথম দিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বাবা হিজরির অষ্টম বছরে ইসলামে দীক্ষিত হন। আবু বকরের স্ত্রী কুতাইলা বিনতে আবদুল উজ্জা ইসলাম গ্রহণ না করায় তিনি তাকে তালাক দেন।
বাণিজ্য ও ইসলামের সেবা
তরুণ বয়সে আবু বকর (রা.) একজন বণিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন; তিনি প্রতিবেশী সিরিয়া, ইয়েমেন ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবসার সুবাদে ভ্রমণ করে সম্পদশালী ও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন তাঁর গোত্রের একজন শীর্ষ নেতা।
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ জোগান। হজরত আবু বকর (রা.) ইসলামের সেবায় তাঁর অর্জিত অর্থ অকাতরে ব্যয় করেন। মহানবী (সা.) একবার তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, "তুমি তোমার পরিবারবর্গের ভরণপোষণের জন্য কী রেখেছ?" তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে।" মদিনার মসজিদ নির্মাণ, মহানবীর বাসগৃহ নির্মাণ, তাবুক অভিযানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি একাই ব্যয়ের বৃহত্তর অংশ বহন করেন।
মহানবী (সা.) নিজেই তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, "আবু বকরের ধনসম্পদ ছাড়া অন্য কারও সম্পদ আমার এত উপকারে আসেনি।" বিলালসহ যেসব গোলাম ইসলাম কবুল করে মনিবদের নির্যাতন ভোগ করছিলেন; আবু বকর (রা.) তাদের অনেককে খরিদ করে মুক্ত করেন।
খিলাফত লাভ ও মৃত্যু
রসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়; মুহাজির ও আনসাররা নিজেদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। আনসাররা সাকিফা নামক স্থানে একত্রিত হয়ে আলোচনা শুরু করলে; আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সেখানে যান। সভার আলোচনায় একপর্যায়ে হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন; এরপর বাকিরাও আবু বকরকে (রা.) নেতা হিসেবে মেনে নেন।
হজরত আবু বকর (রা.) মাত্র দুই বছরের কিছু বেশি সময় খলিফা থাকাকালে একাধিক ভণ্ড নবীর সমর্থকদের সফলভাবে দমন করেন এবং ইসলামি খেলাফতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে নিয়োগ দেন। ৬৩৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পাশে দাফন করা হয়।
হাশরের ময়দান: যে অপরাধের জন্য পশু-পাখিরও বিচার হবে
পৃথিবী মানবজাতির ‘পরীক্ষার হল’। এই পরীক্ষারও একটি ফলাফল থাকবে। দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন করলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত এবং না করলে শাস্তি হিসেবে জাহান্নাম দেবেন আল্লাহ। সেই পুরস্কার এবং শাস্তি নির্ধারণের জন্য একটি আদালত কায়েম করা হবে—যা ‘হাশরের ময়দান’ নামে পরিচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আর আমি (আল্লাহ) জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।” (সুরা কাহফ : ৮)
এ প্রসঙ্গে অনেকে জানতে চান, “মানুষের মতো পশু-পাখিরও কি এই ময়দানে জমায়েত করা হবে? তাদেরও কি বিচার হবে?”
পশু-পাখির বিচার ও পরিণতি
সিলেটের চিকনাগুল (আজিজিয়া) মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা কয়েছ আহমদ গোয়াইনঘাটি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানান, মানুষের মতো পশু-পাখিদেরও কিয়ামতের দিন একত্রিত করা হবে এবং শেষ বিচারের পর তারা মাটিতে পরিণত হবে।
কেন বিচার? মাওলানা কয়েছ জানান, মানুষ যেমন চূড়ান্ত বিচারে পুরস্কার বা শাস্তি পাবে, তেমনি প্রাণীরাও তাদের হক পাবে। পশু-পাখিদের মধ্যে যারা একে অন্যের প্রতি জুলুম করেছে, তাদের বিচার করা হবে কঠিনভাবে। এই অপরাধ (জুলুম) করে থাকলে আল্লাহ কোনো প্রাণীকে ছাড় দেবেন না।
যেভাবে বিচার: হাদিসের বরাত দিয়ে মাওলানা কয়েছ বলেন, দুনিয়াতে যে মোরগ অন্য মোরগকে আঘাত করেছে, যে ছাগল অন্য ছাগলকে আহত করেছে, সহজ কথায় যেসব পশু অন্য পশুদের আঘাত করেছে, জুলুম করেছে, হাশরের ময়দানে আল্লাহ ওই মজলুম পশুকে শক্তি দিয়ে জুলুমকারী পশুর ওপর পাল্টা আঘাতের সুযোগ দেবেন।
চূড়ান্ত পরিণতি: এরকম সবার দেনা-পাওনা পরিশোধ করার পর আল্লাহ তাদের বলবেন, “তোমরা মাটি হয়ে যাও।” অতঃপর তারা মাটি হয়ে যাবে এবং তাদের কোনো জান্নাত-জাহান্নাম থাকবে না। (মুসলিম : ২৫৮২)
পাঠকের মতামত:
- কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী
- শততম টেস্টের হাতছানি মুশফিকের: আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণা করল বিসিবি
- ক্ষমতায় গেলে জনগণ বুঝবে কত ধানে কত চাল, বিএনপিকে হুঁশিয়ারি ফয়জুল করীমের
- জুলাইয়ে হামলায় জড়িত ৪০৩ ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ নোটিশ দিল ঢাবি
- রপ্তানি আয়ে বড় ধস; যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে চাপে পোশাক শিল্প
- 'জয় বাংলা' বলে মনোনয়ন হারালেন বিএনপি প্রার্থী কামাল জামান
- খুলনার ৫টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা
- বিরাট কোহলির রেকর্ড ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে নজির গড়লেন যিনি
- আপনার সুরক্ষা এখন ক্রোমের হাতে: অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢুকতে দেবে না নতুন ফিচার
- বাজারে স্বর্ণের পুনরায় উত্থান, দাম ছুঁতে পারে ৪,০০০ ডলার
- চেঙ্গিস খানের অজানা গল্প: এক গরীব বালক যেভাবে পৃথিবীর ৪০% মানুষের যমদূত হয়ে উঠেছিল!
- ৩০০ আসন থেকে সরে এলো এনসিপি; সম্মান জানাল খালেদা জিয়ার আসনকে
- কালাত জেলায় অভিযান: পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত 'ভারতীয় প্রক্সি বাহিনীর' ৪ সদস্য
- সুস্থ ও সতেজ থাকতে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: ঘরে বসেই করুন এই ৫টি সহজ ব্যায়াম
- 'শাপলা কলি' প্রতীকে নিবন্ধন: নির্বাচন কমিশনের তালিকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি
- আইনজীবীর দাবি: অহেতুক হয়রানি করতেই কোমলমতি বর্ষাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
- উপকূলীয় জেলায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
- জাতীয় নির্বাচনে চূড়ান্ত নিবন্ধন পেল ৩ দল
- আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আবার পেছাল
- ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ০৪ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- বুক জ্বালা কমাতে ওষুধ নয়, ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক পানীয়ে; জেনে নিন ৪টি কার্যকর উপায়
- নির্বাচনে মনোনয়নের পর মির্জা ফখরুল দিলেন 'শেষ নির্বাচনের' বার্তা
- নির্বাচনে 'না ভোট' বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি
- ১৫ বছরের সরকারি বন্ড কুপন পেমেন্টের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারিত
- ৫ ও ৬ নভেম্বর বন্ধ থাকবে ২ বছরের সরকারি ট্রেজারি বন্ড
- রেকর্ড ডেট ঘিরে দুই দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে
- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এর ক্রেডিট রেটিং প্রকাশ
- নির্বাচনে পুলিশি পক্ষপাতিত্ব বরদাস্ত নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি
- ফ্যাসিস্ট খুনি' শেখ হাসিনার বিচারের রায় আসছে: তথ্য উপদেষ্টার ঘোষণা
- বাংলাদেশকে আল্টিমেটাম: ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকি আদানি পাওয়ারের
- পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা: ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধের কারণ
- বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আকাশচুম্বী ভবনের খেতাব মালয়েশিয়ায় যে টাওয়ারের
- ডিএসই-সিএসইতে সকালের লেনদেনের মধ্যে সূচক বৃদ্ধি
- আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য
- বিএনপির ৬৩ খালি আসনে যারা পেতে পারেন প্রাধান্য
- নির্বাচনি অনিয়মের ক্ষেত্রে ইসিকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ডেব্ট মার্কেটের বর্তমান অবস্থা প্রকাশ
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বন্ডের নতুন কুপন সময়সীমা ঘোষণা
- মনোনয়ন ‘অন হোল্ড’; তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে মুখ খুললেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা
- ভোটার প্রতি নির্বাচন খরচ যত টাকায় সীমাবদ্ধ
- প্রতীক বদল বন্ধ: বিএনপি-র দাবির বিপক্ষে সরকারের অধ্যাদেশ
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করল সানলাইফ ইনস্যুরেন্স
- খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে দিলেন কড়া শর্তাবলী
- রিয়াল বনাম লিভারপুল: চ্যাম্পিয়নস লিগে হাইভোল্টেজ লড়াই আজ যখন
- আজ মঙ্গলবার ঢাকার কোথায় দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ থাকবে
- "সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের স্থান হবে না বিএনপিতে"
- সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- নির্বাচিত সরকারের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত
- ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সংলাপ: জ্ঞানচর্চায় উপনিবেশের ছায়া কাটাতে আহ্বান বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীর
- রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে
- ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাশক্তি: চীনের পুনর্জন্মের বিস্ময়গাঁথা
- চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আবারও পর্দায় পূজা চেরি
- IFIC ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- পূবালী ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- ইতিহাসের পাতায় আজ: ৩০ অক্টোবর - বিজয়, বিপ্লব আর বেদনার দিন
- ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- শেয়ারবাজারে শীর্ষ বিশ শেয়ারের তালিকা প্রকাশ
- ২৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- GSP ফাইন্যান্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- ১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা
- ০৩ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- গ্রিন সিগন্যাল কী পেল মান্না, নুর, পার্থসহ ১২ জোটনেতা








