রবার্ট ওপেনহাইমার: যে বিজ্ঞানীর হাতে তৈরি হয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোমা!

জে. রবার্ট ওপেনহাইমার – বিংশ শতাব্দীর এক বিতর্কিত এবং অসাধারণ প্রতিভার নাম, যিনি মানব ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের মাধ্যমে। তাকে প্রায়শই "পারমাণবিক বোমার জনক" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই মানুষটির জীবন কেবল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নয়, বরং নৈতিক সংঘাত, রাজনৈতিক চাপ এবং এক গভীর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার গল্প।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষাজীবন:
১৯০৪ সালে নিউইয়র্কের এক ধনী ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমার ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। গটিংজেনে তিনি ম্যাক্স বর্নের অধীনে কোয়ান্টাম ফিজিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ওপেনহাইমার দ্রুতই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং ১৯৩০-এর দশকে বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার লেকচার এবং গবেষণার গভীরতা তাকে অনেক ছাত্রের কাছে প্রিয় করে তোলে।
ম্যানহাটন প্রজেক্ট এবং পারমাণবিক বোমার জন্ম:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, নাৎসি জার্মানির পারমাণবিক বোমা তৈরির আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "ম্যানহাটন প্রজেক্ট" নামে এক গোপন প্রকল্প শুরু করে। ১৯৪২ সালে, মাত্র ৩৮ বছর বয়সে, ওপেনহাইমারকে এই বিশাল প্রকল্পের নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামোস ল্যাবরেটরির পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার কাজ ছিল বিশ্বের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিদ এবং প্রকৌশলীদের একত্রিত করে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা।
মাত্র তিন বছরের মধ্যে, তার নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলেন। ১৯৪৫ সালের ১৬ই জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্ডোর কাছে "ট্রিনিটি টেস্ট"-এ মানব ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমা সফলভাবে বিস্ফোরিত হয়। এই মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে ওপেনহাইমার ভগবদ গীতার একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন: "আমিই মৃত্যু, আমিই বিশ্ব ধ্বংসকারী।" এই বিস্ফোরণের ভয়াবহতা তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
নৈতিক দ্বিধা এবং রাজনৈতিক পরিণতি:
বোমা তৈরির পর, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং ৯ই আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। কিন্তু এর ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ওপেনহাইমারকে নৈতিকভাবে বিচলিত করে তোলে। তিনি পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের জন্য জোর চেষ্টা চালান এবং হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরোধিতা করেন।
তার এই অবস্থান মার্কিন সরকারের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। ১৯৫০-এর দশকের শীতল যুদ্ধের সময়ে, মার্কিন সেনেটর জোসেফ ম্যাকার্থির নেতৃত্বে 'কমিউনিস্ট বিরোধী অভিযান' চরমে পৌঁছায়। ওপেনহাইমারের অতীত বামপন্থী সংযোগ এবং হাইড্রোজেন বোমা তৈরির বিরোধিতা তাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলে দেয়। ১৯৫৪ সালে, একটি বিতর্কিত শুনানিতে তার নিরাপত্তা অনুমোদন (security clearance) বাতিল করা হয়, যা তার কর্মজীবনের জন্য এক বিরাট আঘাত ছিল। তাকে সরকারী পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেষ জীবন এবং পুনর্বাসন:
অপমানিত হলেও, ওপেনহাইমার প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির পরিচালক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যান এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার প্রতি জনসমর্থন বাড়তে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ১৯৬৩ সালে, প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির নির্দেশে তাকে 'এনরিকো ফার্মি অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করা হয়, যা ছিল এক প্রকার প্রতীকী পুনর্বাসন।
১৯৬৭ সালে ওপেনহাইমার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কয়েক দশক পর, ২০২২ সালে মার্কিন জ্বালানি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ওপেনহাইমারের ১৯৫৪ সালের নিরাপত্তা অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্তকে "ত্রুটিপূর্ণ" বলে ঘোষণা করে এবং তার সম্মান পুনরুদ্ধার করে।
রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবন মানব ইতিহাসে বিজ্ঞান, ক্ষমতা এবং নৈতিকতার জটিল interplay-এর এক শক্তিশালী উদাহরণ। তার আবিষ্কার যেমন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল, তেমনই মানবতাকে এক নতুন এবং ভয়াবহ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল, যার ভার তাকে আমৃত্যু বহন করতে হয়েছে।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – এক কিংবদন্তি যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের পথ এঁকে রেখেছিলেন!
আর্ট গ্যালারির নিস্তব্ধতা ভেঙে যখন মোনালিসার সেই রহস্যময় হাসি চোখে পড়ে, তখন কি কেউ ভাবে এই হাসির স্রষ্টা ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি ৫০০ বছর আগেও হেঁটেছিলেন ভবিষ্যতের পথে? তিনি ছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – শুধু একজন শিল্পী নন, একাধারে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শারীরতত্ত্ববিদ, সঙ্গীতজ্ঞ এবং উদ্ভাবক। তার জীবন ছিল কৌতূহল, অদম্য অনুসন্ধিৎসা আর সীমাহীন সৃজনশীলতার এক মহাকাব্য।
এক 'বাস্টার্ড' সন্তানের শৈশব ও প্রকৃতির শিক্ষাগুরু:
১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল ইতালির ভিঞ্চি শহরের কাছে অ্যানচিয়ানো গ্রামে এক অখ্যাত কৃষক নারীর গর্ভে জন্ম নেন লিওনার্দো। তার বাবা ছিলেন পিয়েরো ফ্রান্সেস্কো দা ভিঞ্চি নামের একজন ধনী নোটারি, এবং মা ছিলেন ক্যাটারিনা নামের এক সাধারণ কৃষক নারী। যেহেতু তার বাবা-মা বিবাহিত ছিলেন না, তাই লিওনার্দোকে 'বাস্টার্ড' (অবৈধ সন্তান) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, তার ঠাকুরমাও জন্মের পরপরই মারা যান, ফলে লিওনার্দোকে শৈশবে অনেক একাকীত্ব নিয়ে বড় হতে হয়। স্কুলের গতানুগতিক শিক্ষা তার জীবনে তেমন প্রভাব ফেলেনি, কারণ তার শিক্ষক ছিলেন প্রকৃতি নিজেই। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি পাহাড়, নদী, গাছপালা, পাথর আর পাখির ওড়াওড়ি পর্যবেক্ষণ করতেন। এই গভীর পর্যবেক্ষণই তার শিল্প ও বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
ভেরোচ্চিওর কর্মশালায় শিল্পের হাতেখড়ি:
মাত্র ১৪ বছর বয়সে লিওনার্দোকে ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত শিল্পী আন্দ্রেয়া দেল ভেরোচ্চিওর কর্মশালায় পাঠানো হয়। এখানে তিনি শুধু চিত্রাঙ্কন নয়, ভাস্কর্য, মেটালওয়ার্ক, ইঞ্জিনিয়ারিং, রসায়ন এবং অন্যান্য কলাকৌশলও শেখেন। ভেরোচ্চিও ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং তার ছাত্র লিওনার্দোও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। খুব দ্রুতই লিওনার্দো তার গুরুর চেয়েও দক্ষ হয়ে ওঠেন। কথিত আছে, ভেরোচ্চিওর আঁকা 'ব্যাপটিজম অফ ক্রাইস্ট' ছবিতে লিওনার্দো একটি দেবদূত এঁকেছিলেন যা এতটাই নিখুঁত ছিল যে ভেরোচ্চিও নিজেই লিওনার্দোর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের হাতে আর কখনো রঙ-তুলি তোলেননি।
শিল্প ও বিজ্ঞানের সেতুবন্ধন:
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কাছে শিল্প ও বিজ্ঞান ছিল একই মুদ্রার দুটি পিঠ। তিনি জানতেন, সৌন্দর্যকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে হলে তার ভেতরের গঠনকেও বুঝতে হবে। মানবদেহ, পাখিদের উড্ডয়ন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি - সবকিছুর পেছনের বিজ্ঞানকে তিনি তার শিল্পকর্মে নিয়ে আসতেন। তার বিখ্যাত 'দ্য লাস্ট সাপার' এবং 'মোনালিসা' ছবিতে তিনি মানুষের আবেগ ও মনস্তত্ত্বকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা আজও বিস্ময়কর। তার আঁকা 'ভিট্রুভিয়ান ম্যান' মানবদেহের নিখুঁত অনুপাত এবং মহাবিশ্বের সাথে মানুষের সম্পর্ককে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে।
ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ও উদ্ভাবক:
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি শুধু তার সময়ের শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদর্শী উদ্ভাবক, যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি কল্পনা করেছিলেন। তার নোটবুকগুলোতে পাওয়া যায় হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন, প্যারাসুট এবং উড়ন্ত জাহাজের অসংখ্য বিস্তারিত নকশা। তিনি হাইড্রোলিক পাম্পের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি শহরের জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবিদ্যুৎ ব্যবহার করে শহর আলোকিত করার ধারণাও দিয়েছিলেন। এই সবকিছুই প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে।
জীবনের শেষ অধ্যায় ও অমর কীর্তি:
জীবনের শেষ তিন বছর লিওনার্দো ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের আমন্ত্রণে ফ্রান্সে কাটান। সেখানেই ১৫১৯ সালের ২ মে, ৬৭ বছর বয়সে এই মহান শিল্পী ও বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজা ফ্রান্সিস তাকে 'আমার পিতা' বলে সম্বোধন করতেন এবং বলেছিলেন, "লিওনার্দো ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরকে শিল্প ও প্রকৃতির গভীরে খুঁজে পেয়েছিলেন।" লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ছিলেন একজন সত্যিকারের রেনেসাঁস মানব, যিনি তার প্রতিভা এবং অদম্য কৌতূহল দিয়ে মানবজাতির জ্ঞান ও সৃজনশীলতার সীমা প্রসারিত করেছিলেন। তার কাজ আজও বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং প্রমাণ করে যে একটি অসীম কৌতূহলী মন কতটা কিছু অর্জন করতে পারে।
ওসামা বিন লাদেন: সৌদি ধনকুবেরের ছেলে যেভাবে হয়ে উঠলো আমেরিকার আতঙ্ক!
সৌদি আরবের এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে হয়েও ওসামা বিন লাদেন বেছে নিয়েছিলেন এক ভিন্ন পথ, যা তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত করে। ১৯৫৭ সালে রিয়াদে জন্ম নেওয়া লাদেন বিলাসবহুল জীবনযাপনের পরিবর্তে অল্প বয়স থেকেই ধর্মীয় আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন।
তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়। তিনি আফগানিস্তানে গিয়ে নিজের পারিবারিক অর্থ ও প্রভাব ব্যবহার করে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে লড়াইরত মুজাহিদীনদের সহায়তা করতে শুরু করেন। সেখানে শুধু অর্থ দিয়েই নয়, নিজে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি মুজাহিদীনদের মধ্যে নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
যুদ্ধ শেষে ১৯৮৮ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘আল-কায়দা’ নামক সংগঠন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বিশ্ব থেকে পশ্চিমা, বিশেষ করে মার্কিন সামরিক প্রভাব দূর করা। ধীরে ধীরে এই সংগঠনটি একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে পরিণত হয় এবং ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা এবং ২০০০ সালে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কোলে হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায়।
তবে বিশ্বকে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেয় ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ভয়াবহ বিমান হামলা। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে লাদেনের নাম উঠে আসার পর আমেরিকা তাকে বিশ্বের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ‘ওয়ার অন টেরর’ বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
এরপর শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল manhunt। প্রায় এক দশক ধরে সিআইএ এবং এফবিআই-এর মতো সংস্থাগুলো তাকে খুঁজে বেড়ায়। অবশেষে, তার এক বিশ্বস্ত বার্তাবাহকের সূত্র ধরে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরের একটি সুরক্ষিত কম্পাউন্ডে তার সন্ধান মেলে।
২০১১ সালের ১লা মে, মার্কিন নেভি সিলের একটি বিশেষ দল ‘অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার’ নামক এক গোপন অভিযানে সেই বাড়িতে হানা দেয় এবং ৪০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমেরিকার দীর্ঘ ১০ বছরের অনুসন্ধানের অবসান ঘটে।
দাজ্জালের আগমন এবং ইহুদিদের তৃতীয় মন্দির প্রতিষ্ঠা: নেপথ্যে সেই ‘লাল গরু’র রহস্য
পবিত্র জেরুজালেম শহরের আল-আকসা মসজিদ, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি - এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই এক পবিত্র স্থান। কিন্তু এই মসজিদকে ঘিরেই চলছে এক চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত পরিকল্পনা। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, আল-আকসা মসজিদ ভেঙে তারা তাদের তৃতীয় ইহুদি মন্দির প্রতিষ্ঠা করবে, যা তাদের কাছে 'টেম্পল মাউন্ট' নামে পরিচিত। আর এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা এবং কথিত 'মসীহ'-এর আগমনের জন্য তাদের প্রয়োজন এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের 'লাল গরু' কুরবানি। এই লাল গরুই কীভাবে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটাতে পারে, সেই বিষয়েই এই প্রতিবেদন।
ইহুদিদের তৃতীয় মন্দিরের স্বপ্ন ও আল-আকসার বিপদ:
ইহুদিরা বিশ্বাস করে, তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইহুদি মন্দির ঠিক এই টেম্পল মাউন্টের উপরই নির্মিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের সকল ইহুদি বিশ্বাসী মনে করে, তাদের তৃতীয় মন্দিরও ঠিক এই জায়গাতেই নির্মিত হবে। এই মন্দির নির্মাণের মাধ্যমেই তাদের কাছে 'মসীহ'-এর আগমন ঘটবে, যাকে তারা দাজ্জাল বলে মনে করে।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনুযায়ী, আল-আকসা মসজিদে শুধু মুসলিমদেরই প্রার্থনার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসরাইল সরকার আল-আকসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মুসলিমদের নামাজ আদায়ে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং ইহুদিদেরকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রথম লক্ষ্য হলো আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করা।
সেই দুর্লভ লাল গরুর অনুসন্ধান:
ইহুদি ধর্মমতে, তাদের পবিত্র হওয়ার জন্য এমন একটি নিখুঁত লাল গরু উৎসর্গ করতে হবে যা খুবই দুর্লভ। এই গরুর কোনো সাদা বা কালো পশম থাকতে পারবে না এবং এটি সম্পূর্ণ লাল বকনা বাছুর হতে হবে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতেও বনি ইসরাইলদের এই গরু সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এমন দুর্লভ গরু খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তবে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি খামারে এই ধরনের পাঁচটি বাছুরের সন্ধান পাওয়া যায়। ইসরাইলের 'টেম্পল ইনস্টিটিউট' প্রায় ৫ লক্ষ ডলার খরচ করে এই বাছুরগুলোকে ইসরাইলে নিয়ে যায়। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, বাছুরের বয়স তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত কুরবানি করা যাবে না।
কুরবানি ও মন্দিরের পথ:
ইহুদি ধর্মমতে, এই লাল গরু কুরবানির জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। সাধারণ কোনো ধর্মযাজক এটি কুরবানি করতে পারবে না, বরং হারুন (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত একজন পুরোহিতই এর জন্য উপযুক্ত হবেন। টেম্পল ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই এমন নয়জন পুরোহিতকে বাছাই করে রেখেছে। গরু কুরবানি করার স্থানও নির্দিষ্ট করা আছে – টেম্পল মাউন্টের পূর্ব দিকে 'মাউন্ট অলিভ'-এর এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে পুরোহিত কুরবানি করার সময় আল-আকসা মসজিদ খালি চোখে সরাসরি দেখতে পারে।
লাল গরুটি কুরবানির পর একে পুড়িয়ে ছাই বানানো হবে। সেই ছাই পানির সাথে মিশিয়ে ইহুদিদের পবিত্র করার কাজে ব্যবহার করা হবে। এই পবিত্রকরণের কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরই ইসরাইলের ইহুদিরা ঈশ্বরের কাছ থেকে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের অনুমতি পাবে।
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা:
পশ্চিমা ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানরাও চায় আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির তৈরি হোক। কারণ তারা বিশ্বাস করে, যীশু খ্রিস্টের (ঈসা আঃ) পুনারায় আবির্ভাবের একটি পূর্বশর্ত হলো জেরুজালেমে ইহুদি মন্দির প্রতিষ্ঠা। 'ক্রাই ফর জায়ন' এবং 'টেম্পল মাউন্ট ইনস্টিটিউট' এর মতো সংগঠনগুলো এই লক্ষ্যে একসাথে কাজ করছে। যদিও ইহুদি ও খ্রিস্টানদের 'মসীহ' সম্পর্কে ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন (ইহুদিরা যাকে 'দাজ্জাল' বলে মনে করে, খ্রিস্টানরা তাকেই 'ঈসা আঃ' হিসেবে বোঝে), তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা ধ্বংস করা। এই কারণেই তারা একে অপরকে সাহায্য করছে।
আল-আকসা মসজিদের নিচের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ, যা মসজিদের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে, এবং এই লাল গরুর আগমন - সবই এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। এই ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব হবে, তা নিয়ে চলছে বিশ্বজুড়ে জল্পনা।
পিরামিডের আসল রহস্য কি টেসলা জানতেন? এক হারানো প্রযুক্তির বিস্ময়কর কাহিনী

মোঃ আশিকুজ্জামান
প্রাচীন মিশরের পিরামিড, যা সহস্রাব্দ ধরে মানবজাতির কাছে এক বিস্ময়। এটি কি কেবলই ফারাওদের সমাধি? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো বৈজ্ঞানিক রহস্য, যা যুগ যুগ ধরে অমীমাংসিত? প্রখ্যাত উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা বিশ্বাস করতেন, গিজার সুবিশাল পিরামিডগুলো আসলে ছিল এক বিশাল 'ওয়্যারলেস পাওয়ার প্ল্যান্ট' বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তার এই যুগান্তকারী ধারণা এবং এর পেছনের যুক্তি নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।
পিরামিড: শুধু সমাধি নয়, এক প্রযুক্তিগত বিস্ময়?
পিরামিডগুলোকে সাধারণত ফারাওদের সমাধিস্থল হিসেবে দেখা হলেও, আজ পর্যন্ত কোনো পিরামিডের ভেতর থেকে মমি পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টিই প্রশ্ন তোলে যে, এত বিশাল স্থাপনা নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল। মিশরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গিজার গ্রেট পিরামিডের ভেতর থেকে ৩০ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট চওড়া একটি সিল গালা করা 'সিক্রেট করিডোর' আবিষ্কার করে, যা এর রহস্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেও ২০১৭ সালে ৯৮ ফুট দীর্ঘ আরেকটি রহস্যময় করিডোর আবিষ্কৃত হয়েছিল।
নিকোলা টেসলার চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব: পিরামিড একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট!
ইতিহাসের অন্যতম দূরদর্শী উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা তার জীবনের একটি বড় অংশ ওয়্যারলেস বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ১৯০৫ সালে তিনি "The Art of Transmitting Electrical Energy Through the Natural Medium" নামে একটি পেটেন্ট ফাইল করেন। এই পেটেন্টের ধারণার উপর ভিত্তি করেই তিনি ওয়ারডেনক্লিফ টাওয়ার (Wardenclyffe Tower) প্রকল্প শুরু করেন, যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর কম্পন ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে তা বিনামূল্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া।
টেসলার মতে, পিরামিডগুলো একই ধারণায় নির্মিত হয়েছিল। তার প্রমাণের স্বপক্ষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো:
গ্রানাইট ও কোয়ার্টজের ব্যবহার: পিরামিডের ইন্টারনাল চেম্বারগুলো, বিশেষ করে কিংস চেম্বার এবং কুইনস চেম্বার, মূলত 'রোজ গ্রানাইট' দিয়ে তৈরি। এই গ্রানাইটের ৮৫% শতাংশই কোয়ার্টজ (Quartz)।
পাইজোইলেকট্রিসিটি (Piezoelectricity): কোয়ার্টজ যখন সংকুচিত বা চালিত হয়, তখন তা এক ধরনের চার্জ তৈরি করে যাকে 'পাইজোইলেকট্রিসিটি' বলে। আধুনিক টিভি, ঘড়ি, জিপিএস সহ বহু যন্ত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়া ও হাইড্রোজেন গ্যাস:পিরামিডের কুইনস চেম্বার একটি রাসায়নিক চুল্লি হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে হাইড্রোজেনের মতো গ্যাস তৈরি হতো। উত্তর খাত থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং দক্ষিণ খাত থেকে হাইড্রেটেড জিঙ্ক ক্লোরাইড একত্রিত হয়ে হাইড্রোজেন তৈরি করত। এই হাইড্রোজেন গ্যাস গ্রানাইটের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করত।
টেসলার স্বপ্ন ও মর্গানের হস্তক্ষেপ:
টেসলার ওয়ারডেনক্লিফ টাওয়ার প্রকল্প ছিল একটি বিশাল ব্যয়বহুল উদ্যোগ। বন্ধু জে.পি. মর্গান শুরুতে অর্থায়ন করলেও, টেসলার আসল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ বিনামূল্যে ওয়্যারলেস বিদ্যুৎ বিতরণের পরিকল্পনা জানার পর তিনি অর্থায়ন বন্ধ করে দেন। মর্গান, যিনি জেনারেল ইলেকট্রিক এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ-সংশ্লিষ্ট ব্যবসার মালিক ছিলেন, বুঝতে পারছিলেন যে টেসলার এই আবিষ্কার তার সব ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। এর ফলে টেসলার প্রকল্প অসমাপ্ত থেকে যায় এবং তিনি একরকম একঘরে হয়ে পড়েন।
অমীমাংসিত প্রশ্নাবলী:
১৯৪৩ সালে টেসলার মৃত্যুর সাথে সাথে তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সব তথ্য কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। পিরামিডের গায়ে দেখা যাওয়া বিস্ফোরণ এবং রাসায়নিক উপাদানের দাগ, পাথরের ফাটল এবং ভিতরের চেম্বারগুলোর অদ্ভুত নির্মাণশৈলী আজও বহু প্রশ্ন সৃষ্টি করে:
পিরামিডগুলো কি সত্যিই প্রাচীনকালে শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো?
যদি হতো, তাহলে কে বা কারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চেয়েছিল এবং কেন?
কেন হুট করে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেল?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও অজানা, কিন্তু পিরামিড এবং নিকোলা টেসলার এই সংযোগ মানব সভ্যতার প্রাচীন জ্ঞান ও প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
কেন ফেরাউনরা নিজেদের শরীর মমি করে রাখত? এক ঐশ্বরিক ক্ষমতার লড়াইয়ের ইতিহাস
প্রাচীন মিশর, পৃথিবীর প্রথম দিকের এক মহাপ্রতাপশালী সভ্যতা, যা প্রায় ৫,০০০ বছর ধরে বিশ্বকে শাসন করেছে। এই সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফেরাউনরা, যারা নিজেদেরকে কেবল শাসক নয়, বরং দেবতাতুল্য মনে করত। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার ওফাতের পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে মুসলমানরা একদিন মিশর জয় করবে। এই প্রতিবেদনটি ফেরাউনদের ক্ষমতার উৎস, তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-এর মাধ্যমে মিশরের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঐশ্বরিক পরিবর্তনের এক বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরছে।
নীল নদের আশীর্বাদ ও ফেরাউনদের উত্থান:
প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ছিল পানি। যার কাছে যত বেশি পানি ছিল, সে তত বেশি ক্ষমতাশালী ছিল। আর বিশ্বের বৃহত্তম নদী নীল নদ মিশরের বুকে প্রবাহিত হওয়ায়, এটি হয়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী ও শক্তিশালী অঞ্চল। কিং নরমাল নামক একজন শাসক পুরো মিশরকে একত্রিত করে পৃথিবীর প্রথম শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী ১,০০০ বছর ধরে মিশরই ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি।
দেবত্বের দাবি ও মমি তৈরির রহস্য:
১,০০০ বছর ধরে রাজত্ব করার পর ফেরাউনরা নিজেদেরকে এতটাই ক্ষমতাশালী ভাবতে শুরু করে যে, তারা নিজেদেরকে 'খোদা' বা দেবতা হিসেবে দাবি করে। তারা এমন একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে যেখানে প্রজাদের একমাত্র কাজ ছিল ফেরাউনের দাসত্ব করা, কারণ একমাত্র তাহলেই তারা জান্নাতে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করানো হতো।
পরে এই ধারণায় পরিবর্তন আসে—সব ফেরাউন নয়, বরং যাদের দেহ মৃত্যুর পরেও অক্ষত থাকবে, তারাই খোদা। এই বিশ্বাস থেকেই 'মমি' তৈরির ধারণা আসে। ফেরাউনদের মৃত্যুর পর তাদের রক্ত বের করে, মস্তিষ্ক টেনে বের করে এবং শরীরের সব অঙ্গ (শুধু হার্ট ছাড়া) অপসারণ করে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমিতে পরিণত করা হতো। ৪০ দিন ধরে লবণ মেশানো পানিতে রাখার পর তাদের দেহ তেল ও মধু দিয়ে পটি বেঁধে একটি মূল্যবান কফিনে রেখে দাফন করা হতো। কফিনে তাদের দেহ, খাবার, সোনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের হার্ট রাখা হতো।
পিরামিডের বিস্ময় ও অর্থনৈতিক পতন:
মমি তৈরির পর ফেরাউনরা নিজেদের মমিগুলোর উপর বিশাল বিশাল পিরামিড তৈরি করা শুরু করে। প্রতিটি ফেরাউন চাইত তার পিরামিড পূর্বসূরীদের চেয়ে বড় হোক। ফেরাউন খুফুর তৈরি 'গ্রেট পিরামিড' ৩৫০০ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা ছিল। এটি এতটাই বিশাল যে, ১২টি বুর্জ খলিফাও এর ওজনের সমান হবে না এবং এর ভেতরে ২,০০০ ট্রাক পার্ক করা সম্ভব। তবে এই পিরামিামিডগুলো তৈরি করতে বিপুল অর্থ খরচ হওয়ায় মিশরের অর্থনীতি দুর্বল হতে শুরু করে।
হযরত ইউসুফ (আঃ) ও ইসরাঈলীদের আগমন:
মিশরের অর্থনীতি যখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই হযরত ইউসুফ (আঃ) একজন দাস হিসেবে মিশরের বাজারে বিক্রি হন। তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রীর পদে উন্নীত হন। হযরত ইউসুফ (আঃ) বাদশাহর সাথে মিলে মিশরের অর্থনীতিকে পুনরায় শক্তিশালী করেন। তার মৃত্যুর পর, তার বংশধর 'বনি ইসরাঈল'রা মিশরেই বসবাস করতে থাকে এবং একসময় তারা মিশরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী গোত্রে পরিণত হয়।
হযরত মূসা (আঃ) ও ফেরাউনদের চূড়ান্ত ধ্বংস:
মিশরে এক নতুন ফেরাউনের আগমন ঘটে, যিনি বনি ইসরাঈলদের উপর কঠোর অত্যাচার শুরু করেন। এই সময় হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। ফেরাউন ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিল যে বনি ইসরাঈলের এক শিশু তার রাজত্ব শেষ করবে, তাই সে সব পুত্রশিশুকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ঐশ্বরিক কৌশলে হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের ঘরেই বড় হন।
নবী হওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের কাছে বনি ইসরাঈলদের মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফেরাউন তাদের যেতে দিলেও, পরে সে তার সিদ্ধান্ত ভেঙে বনি ইসরাঈলদের ধাওয়া করে। আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা (আঃ) ও বনি ইসরাঈলদের রক্ষা করেন এবং ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনা মিশরের ৩,০০০ বছরের ফেরাউনদের শাসনের অবসান ঘটায় এবং তাদের দেবত্বের অহংকার চূর্ণ করে। এরপর মিশর তার পরাশক্তির মর্যাদা হারায় এবং বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে।
অর্ধেক মানবী, অর্ধেক জিন? কুরআনে বর্ণিত রাণী বিলকিসের রহস্য
ইতিহাসের পাতায় এমন কিছু চরিত্র আছে যাদের গল্প যুগে যুগে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। এমনই একজন রহস্যময়ী রমনী হলেন রাণী বিলকিস, যিনি এক বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই উপাখ্যানটি রাণী বিলকিসের ক্ষমতা, নবী সুলাইমানের (আঃ) জ্ঞান ও অলৌকিক শক্তির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এই কাহিনী একটি ছোট্ট পাখির মাধ্যমে শুরু হয়ে মানবজাতির বিশ্বাস ও ক্ষমতার ধারণাকে নতুন মাত্রা দেয়।
হুদহুদ পাখির দুঃসাহসিক সংবাদ এবং রাণী বিলকিসের রাজত্ব:
নবী সুলাইমানের সেনাবাহিনী ছিল অনন্য, যেখানে মানুষ, জিন, পাখি এমনকি বাতাসও তার ইশারায় কাজ করত। হুদহুদ নামক একটি ছোট্ট পাখি ছিল এই সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। একদিন হুদহুদ সাবা রাজ্য থেকে এক চাঞ্চল্যকর খবর নিয়ে আসে। সে জানায়, সে এমন এক রাণীকে দেখেছে যিনি এক বিশাল সিংহাসনে বসে আছেন এবং তার প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের উপাসনা করে।
নবী সুলাইমানের চিঠি ও রাণীর কৌশল:
নবী সুলাইমান হুদহুদের মাধ্যমে রাণী বিলকিসের কাছে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে তাকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে এবং আত্মসমর্পণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চিঠিটি অলৌকিকভাবে রাণীর বিছানায় আবির্ভূত হলে রাণী বিস্মিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি তার উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে সুলাইমানের শক্তি যাচাই করতে এবং তার মনোভাব বোঝার জন্য মূল্যবান উপহারসহ একটি দূতদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
অলৌকিক ক্ষমতার প্রদর্শন ও সিংহাসনের রহস্য:
নবী সুলাইমান দূতেরা আসার আগেই হুদহুদের মাধ্যমে রানীর পরিকল্পনা জেনে যান। তিনি দূতদের স্বাগত জানানোর জন্য তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন এবং তাদের দেখানোর চেষ্টা করেন যে তার শক্তি কতটা অপ্রতিরোধ্য । সুলাইমান দূতদের উপহার প্রত্যাখ্যান করে জানান, তিনি কেবল রাণীর আত্মসমর্পণ চান।
এরপর, নবী সুলাইমান তার পরিষদবর্গকে জিজ্ঞাসা করেন, কে রাণীর সিংহাসন তার এখানে নিয়ে আসতে পারবে। একজন আলেম, যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ছিলেন, তিনি চোখের পলক ফেলার আগেই বিলকিসের বিশাল সিংহাসনটি সুলাইমানের সামনে এনে হাজির করেন। সিংহাসনটি দেখে রাণী হতবাক হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন এটি অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব নয়।
স্বচ্ছ কাঁচের প্রাসাদ ও রাণীর আসল পরিচয়:
নবী সুলাইমান রাণী বিলকিসের জন্য এক বিশেষ কাঁচের প্রাসাদ নির্মাণ করান, যা পানির উপর ভাসমান বলে মনে হতো এবং যার প্রবেশপথের মেঝে ছিল স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি। এই কাঁচের মেঝে ছিল রাণী বিলকিসের আসল পরিচয় যাচাই করার একটি পরীক্ষা। কারণ, গুঞ্জন ছিল যে রাণী বিলকিস অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক জিন, আর অধিকাংশ জিনের পায়ে লোম থাকে। যখন রাণী বিলকিস সেই কাঁচের মেঝের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে তার পোশাক তুলে ধরেন, তখন তার পা দৃশ্যমান হয় এবং সুলাইমান নিশ্চিত হন যে তিনি একজন সাধারণ মানুষ।
রাণী বিলকিসের ইসলাম গ্রহণ:
রাণী বিলকিস নবী সুলাইমানের অলৌকিক ক্ষমতা ও যুক্তিবাদী কথায় প্রভাবিত হন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, সূর্য পূজা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তার জাতির বিশ্বাস কতটা দুর্বল ছিল । পরিশেষে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার প্রজারাও তাকে অনুসরণ করে । এভাবেই হুদহুদ পাখির একটি ছোট সংবাদের মাধ্যমে শুরু হওয়া এক অভিযান মানবজাতির জন্য জ্ঞান ও বিশ্বাসের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে ইউরোপার রহস্য: ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে নাসা
মানবতার মহাকাশ অনুসন্ধানের দিগন্ত এখন প্রসারিত হয়েছে পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্র পর্যন্ত। নাসা, যারা মানুষকে চাঁদে পাঠিয়েছে এবং মঙ্গল গ্রহে রোভার নামিয়েছে, তারাই এখন পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে এক গোপন মিশনে নেমেছে। এর উদ্দেশ্য একটাই – আমাদের সৌরজগতেই ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান করা।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: পৃথিবীর অভ্যন্তরে মহাকাশের প্রতিচ্ছবি
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর সমুদ্রের গভীরতম স্থান, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি থাকে এবং জলের চাপ এতটাই বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখানে কয়েক মিলিসেকেন্ডও বেঁচে থাকা অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা একসময় মনে করতেন, এমন চরম পরিবেশে কোনো জীবের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। তবে ১৯৬০-এর দশকে ডন ওয়ালস এবং জ্যাক স্পিকার্ড যখন ট্রিয়েস্ট নামক সাবমেরিনে করে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পৌঁছান, তখন সেখানে হ্যাডালসনেল ফিশ, অ্যাম্পিফরস-সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর সন্ধান মেলে। এই আবিষ্কার জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণাই বদলে দেয়। নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সমুদ্রের এই চরম পরিবেশ মহাকাশের পরিবেশের সাথে অনেক দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ ।
নাসার 'নিমো' (NEMO: NASA's Extreme Environmental Mission Operations) মিশনের অধীনে অ্যাকোয়ারিস রিফবেস-এ (সমুদ্রের ১৯ মিটার গভীরে অবস্থিত একমাত্র আন্ডারওয়াটার ল্যাবরেটরি) বিজ্ঞানীরা স্পেসওয়াক অনুশীলন করেন। এটি তাদের শেখায় কিভাবে মহাকাশের কম গ্রাভিটিতে কাজ করতে হয় এবং প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে হয়। বর্তমানে নাসা অরফিয়াস নামক একটি শক্তিশালী রোবটকে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পাঠিয়েছে, যা মঙ্গল গ্রহের রোবটের চেয়েও বেশি সক্ষম।
ইউরোপা: বৃহস্পতির চাঁদে জীবনের সম্ভাবনা
বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা। ১৯৯৭ সালে নাসার গ্যালিলিও মহাকাশযান ইউরোপার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার বরফের চাদর থেকে বিপুল পরিমাণ জল মহাকাশে ছিটকে আসতে দেখে। পরবর্তী গবেষণায় জানা যায়, ইউরোপার ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পুরু বরফের নিচে প্রায় ১০০ কিলোমিটার গভীর একটি নোনা জলের সমুদ্র রয়েছে, যেখানে পৃথিবীর সমুদ্রের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জল আছে।
বৃহস্পতির শক্তিশালী অভিকর্ষ টানের কারণে ইউরোপার অভ্যন্তরে তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, যার ফলে এর সমুদ্র তরল অবস্থায় থাকে। এই তাপশক্তি এবং খনিজ পদার্থের উপস্থিতি (যা পৃথিবীর গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথারমাল ভেন্ট-এর মতো) ইউরোপায় জীবন সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে । জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ইউরোপার পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সন্ধান পেয়েছে। এছাড়াও জুনো স্পেস প্রোব ইউরোপার পৃষ্ঠে অক্সিজেন খুঁজে পেয়েছে, যা প্রতিদিন ১০ লক্ষ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। ইউরোপার ২০ কিলোমিটার পুরু বরফের চাদর ক্ষতিকর মহাজাগতিক রেডিয়েশন থেকে ভেতরের জীবনকে রক্ষা করছে।
ভবিষ্যতের ক্রায়োবটস এবং মানবজাতির সবচেয়ে বড় আবিষ্কার:
নাসা বর্তমানে 'ইউরোপা ক্লিপার' নামক একটি মহাকাশযান ইউরোপার দিকে পাঠিয়েছে, যা ২০৩০ সালে বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করবে এবং ইউরোপাকে পর্যবেক্ষণ করবে। এই মিশনের সাফল্যের পর নাসা ক্রায়োবটস (Cryobots) নামক পারমাণবিক শক্তিতে চালিত রোবট ইউরোপায় পাঠাবে, যা বরফের পুরু চাদর গলিয়ে সরাসরি সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করবে এবং প্রাণের সন্ধান করবে।
পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রের প্রাণীদের মতো, ইউরোপার চরম পরিবেশেও জীবন টিকে থাকতে পারে। এই অনুসন্ধান যদি সফল হয়, তবে তা মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হবে – এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা একা নই, আরও জীবন রয়েছে!
পৃথিবীর বাইরেও কি প্রাণ আছে? কুরআন, হাদিস ও বিজ্ঞান কী বলছে?
মানব মনকে বহু শতাব্দী ধরে আলোড়িত করা একটি প্রশ্ন – আমাদের এই পৃথিবী কি মহাবিশ্বে প্রাণের একমাত্র ঠিকানা? নাকি বিশাল এই ব্রহ্মাণ্ডে আরও কোথাও জীবনের স্পন্দন রয়েছে? প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র কোরআনে এমন কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছিল, যা সেই সময়ে সাধারণ মানুষ বা এমনকি কোরআনের ব্যাখ্যাকারকদেরও বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান আজ সেসব ধারণাকেই নতুন করে বিশ্লেষণ করছে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব ও প্রাণের অনুসন্ধান:
বিজ্ঞানীরা মহাকাশে ১০০ বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি এবং অসংখ্য এক্সোপ্লানেটের (Exoplanet) সন্ধান পেয়েছেন। এসব এক্সোপ্লানেটের অনেকগুলোই পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু গ্রহে পানির উপস্থিতি নিয়েও তারা আশাবাদী। ইউএপি (UAP) বা ইউএফও (UFO) - এর মতো অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর উপস্থিতি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করতে বাধ্য করেছে। মাল্টিভার্স থিওরি অনুযায়ী, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরেও অসংখ্য মহাবিশ্ব থাকতে পারে, যেখানে পৃথিবীর মতো আরও অনেক বাসযোগ্য গ্রহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা কেপলার ৬৯সি, কেপলার ৪৫২বি, কেপলার ৬২এফ-সহ আরও অনেক এক্সোপ্লানেটের নাম উল্লেখ করেছেন, যেখানে জীবন বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, পৃথিবী থেকে ১৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মঙ্গল গ্রহেও প্রাচীন জলাধারের প্রমাণ এবং কিছু অণুজীবীয় জীবনের সম্ভাবনার আলামত পাওয়া গেছে।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে ভিনগ্রহে প্রাণের ধারণা:
পবিত্র কোরআন ও হাদিসেও পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে:
সাত আসমান ও অনুরূপ পৃথিবী (সূরা তালাক, আয়াত ১২): এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা "সাত আসমান এবং এগুলোর অনুরূপ পৃথিবী" সৃষ্টির কথা বলেছেন। প্রাচীন অনেক তাফসীরকারক এই 'সাত পৃথিবী' বলতে পৃথিবীর সাতটি স্তর বা মহাদেশকে বুঝিয়েছেন। তবে বিস্ময়করভাবে, পূর্বসূরি তাফসীরকারকদের কেউ কেউ এটি পৃথিবীর মতো আরও অনেক পৃথিবীর অস্তিত্ব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের মতে, এখানে 'সাত' সংখ্যাটি সুনির্দিষ্ট নয়, বরং বহুত্ব জ্ঞাপক, অর্থাৎ বহু বাসযোগ্য গ্রহের দিকে ইঙ্গিত করে।
প্রাণী ছড়িয়ে দেওয়ার কথা (সূরা আশ-শূরা, আয়াত ২৯): এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে যেসব জীবজন্তু (দাব্বাহ) ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেগুলির কথা উল্লেখ করেছেন। 'দাব্বাহ' বলতে শরীরী, চতুষ্পদ বা দ্বিপদী চলন্ত জীবকে বোঝানো হয়েছে। মহাকাশে এসব প্রাণী ছড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হলো, আকাশমন্ডলীতে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রহে আল্লাহ তাআলা এসব প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। এটি ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট আয়াত।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যা: বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূরা তালাকের ১২ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, সাতটি পৃথিবী আছে এবং "প্রতিটিতে তোমাদের মত নবী আছেন, তাদেরও নূহ আছেন যেমন তোমাদের ছিল, তাদেরও ঈসা ও ইব্রাহিম আছেন"। যদিও অনেকে এই হাদিসটিকে দুর্বল মনে করেন, কিন্তু কোরআনের আয়াতের অর্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় বেশিরভাগ মুহাদ্দিসগণ এটি গ্রহণ করেছেন। এই ব্যাখ্যা নূহ, ইব্রাহিম ও ঈসা (আ.)-এর উল্লেখকে রূপকভাবে তুলে ধরে, যার অর্থ হলো ভিনগ্রহের বাসিন্দাদেরও আদিপিতা, বংশ পরম্পরা এবং বিশিষ্টজন থাকবেন, যেমনটা পৃথিবীতে আছে।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে এই প্রাচীন ব্যাখ্যাগুলো এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সরাসরি প্রমাণ এখনও না পাওয়া গেলেও, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন ভিনগ্রহে প্রাণের স্পন্দনের খবর নিয়ে তারা বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হবেন। এই অনুসন্ধান প্রাচীন জ্ঞান এবং আধুনিক বিজ্ঞানের এক চমৎকার সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
চীনের প্রথম সম্রাটের সমাধি: রহস্য ঘেরা যে কবর খুলতে আজও ভয়ে কাঁপে বিজ্ঞানীরা!

মোঃ আশিকুজ্জামান
২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনের প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াং-এর সমাধি আজও এক অমীমাংসিত রহস্যের আড়ালে ঢাকা। বিশাল এক মাটির ঢিবির নিচে, বিখ্যাত টেরাকোটা আর্মির ঠিক পাশেই লুকিয়ে আছে এই সুবিশাল ভূগর্ভস্থ সাম্রাজ্য। প্রচলিত আছে, এর ভেতরে এমন সব ভয়ঙ্কর রহস্য লুকিয়ে আছে, যা মানবজাতির জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে এসেও বিজ্ঞানীরা এর দরজা খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। ঠিক কী কারণে এই প্রাচীন সমাধির অন্ধকার এত ভয়ংকর, তা নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
এক অদম্য সম্রাট এবং তার অমরত্বের ভয়:
খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৯ সালে জন্ম নেওয়া ইয়েং ঝেং, যিনি পরে ছিন শি হুয়াং নামে পরিচিত হন, মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। প্রায় ১০ বছরের সামরিক অভিযানে তিনি চীনের ছয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যকে পরাজিত করে খ্রিষ্টপূর্ব ২২৬ সালে সমগ্র চীনকে এক পতাকার নিচে নিয়ে আসেন। তিনিই ছিলেন চীনের প্রথম সম্রাট, যিনি একক লিপি, একক মুদ্রা এবং একক পরিমাপের প্রবর্তন করেন। তার সময়েই চীনের মহাপ্রাচীরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
কিন্তু এই পরাক্রমশালী সম্রাটের ভেতরে লুকিয়েছিল মৃত্যুর এক গভীর ভয়। অমরত্বের নেশায় তিনি ঋষি, চিকিৎসক এবং রসায়নবিদদের দূরদূরান্তে পাঠাতেন অমৃতের সন্ধানে। এমনকি চিরজীবী হওয়ার আশায় পারদের মতো বিষাক্ত পদার্থও তিনি পান করতেন। মৃত্যুকে পরাজিত করতে না পেরে, তিনি মৃত্যুর পরেও যেন রাজত্ব করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে শুরু করেন এক বিশাল ভূগর্ভস্থ সাম্রাজ্য নির্মাণের পরিকল্পনা।
ভূগর্ভস্থ সাম্রাজ্যের নির্মাণ ও তার প্রতিরক্ষা:
সম্রাট ছিন শি হুয়াং শুধু একটি সাধারণ কবর চাননি, তিনি চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও তার নিজস্ব একটি সাম্রাজ্য থাকবে। প্রায় ৭ লাখ শ্রমিক, সৈন্য, কারিগর এবং বন্দীদের নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে চলেছিল এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। লি পর্বতের কাছে এই সমাধির স্থান বেছে নেওয়া হয়েছিল শুভ প্রতীক এবং মূল্যবান ধাতু পাওয়ার আশায়।
রাজধানী শিয়াং ইয়াং শহরের আদলে তৈরি এই ভূগর্ভস্থ শহরে ছিল প্রাসাদ, শহরের দেওয়াল, টাওয়ার, কোর্টইয়ার্ড, বাগান, প্রশাসনিক ভবন এবং রাজকীয় ঘোড়ার আস্তাবল। মনে করা হতো, সম্রাট মৃত্যুর পরেও এখান থেকেই শাসনকার্য চালাবেন। মূল সমাধির পূর্ব দিকে স্থাপন করা হয়েছিল তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কারণ পূর্ব দিকেই ছিল তার পরাজিত ছয়টি শত্রু রাজ্য।
টেরাকোটা আর্মি: মাটির সৈনিকদের বিস্ময়কর বাহিনী:
১৯৭৪ সালে চীনের শিয়ান শহরের কাছে কিছু কৃষক কুয়ো খুঁড়তে গিয়ে ঘটনাক্রমে মাটির নিচে কিছু ভাঙা মূর্তি খুঁজে পান। এরপর শুরু হওয়া খনন কাজে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে হাজার হাজার মাটির তৈরি সৈনিক, যারা আজ 'টেরাকোটা আর্মি' নামে পরিচিত। এখনো পর্যন্ত ৮,০০০-এর বেশি যোদ্ধা আবিষ্কৃত হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোনো দুটি সৈনিকের চেহারা একরকম নয়; প্রতিটি মূর্তির মুখের অভিব্যক্তি, গোঁফ, চুল এবং পোশাক আলাদা। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এগুলো আসল সৈন্যদের আদলেই তৈরি করা হয়েছিল। শুধু সৈনিক নয়, ব্রোঞ্জের রথ, ঘোড়া, জেনারেল, অশ্বারোহী, ধনুকধারী, নর্তক, অ্যাক্রোব্যাট, সঙ্গীতশিল্পী, রাজকীয় কর্মচারীদের প্রতিরূপও এখানে পাওয়া গেছে, যেন সম্রাট মৃত্যুর পরেও তার রাজকীয় জীবন উপভোগ করতে পারেন।
কেন মূল সমাধি আজও খোলা হয়নি?
টেরাকোটা আর্মি আবিষ্কৃত হলেও, মূল পিরামিড আকৃতির সমাধি কক্ষটি আজও অক্ষত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা, প্রত্নতত্ত্ববিদরা বা সরকার কেউই সেই মূল সমাধি খুলতে সাহস করেননি। এর প্রধান দুটি কারণ হলো:
১. পারদের ভয়াবহ উপস্থিতি: বিখ্যাত চীনা ঐতিহাসিক সিমা কিয়ান, যিনি সম্রাটের মৃত্যুর ১০০ বছর পর জন্মেছিলেন, তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে সমাধির ভেতরে নদী ও সমুদ্রের মতো তরল পারদ দিয়ে পূর্ণ ছিল। ২০০৯ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা সমাধির চারপাশের মাটির রাসায়নিক পরীক্ষা করে স্বাভাবিকের চেয়ে শত গুণ বেশি পারদের উপস্থিতি খুঁজে পান, যা মারাত্মক বিষাক্ত। যদি এই পারদের বাষ্প আজও ভেতরে আটকে থাকে, তবে সমাধি খুললেই তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। সামান্য পরিমাণ পারদবাষ্পও প্রাণঘাতী হতে পারে।
২. প্রাচীন ফাঁদের ভয়: সিমা কিয়ানের লেখায় আরও উল্লেখ আছে, সমাধিটি ভয়াবহ সব ফাঁদ দিয়ে সুরক্ষিত, যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তীর ছোঁড়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যা অনুপ্রবেশকারীর জন্য নিশ্চিত মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ২০০০ বছর পরেও এই ফাঁদগুলো সক্রিয় থাকতে পারে এবং ভুল করে যদি কেউ তা সক্রিয় করে ফেলে, তবে তার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।
ভবিষ্যতের ভাবনা:
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা রাডার স্ক্যান, রোবট প্রোবের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাইরে থেকেই সমাধির ভেতরের মানচিত্র তৈরি করছেন। এটি শুধুমাত্র ধনসম্পদের বিষয় নয়, এখানে লুকিয়ে আছে চীনের ইতিহাস, বিশ্বাস এবং সম্রাটের অমরত্বের স্বপ্ন। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, হয়তো ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে একদিন এটি খোলা সম্ভব হবে। আবার অনেকে মনে করেন, ভেতরের জিনিসগুলো অত্যন্ত নাজুক (যেমন, টেরাকোটা আর্মির গায়ের রঙ বাতাসের সংস্পর্শে আসতেই ধূসর হয়ে গিয়েছিল)। তাই এটিকে অক্ষত রাখাই হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ।
এই বিস্ময়কর সমাধি মানবজাতির জন্য এক বিরাট রহস্য হয়েই রয়ে গেছে, যা হয়তো আরও বহু বছর ধরে আমাদের কৌতুহল জাগিয়ে রাখবে।
পাঠকের মতামত:
- রবার্ট ওপেনহাইমার: যে বিজ্ঞানীর হাতে তৈরি হয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোমা!
- ব্রণ চেপে ফাটানো: হতে পারে যে ভয়াবহ রোগ, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা
- ‘পশুর মতো আচরণ’: ইসরায়েলে গ্রেটা থুনবার্গসহ কর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ
- আগামী ২৪ ঘণ্টায় ৩ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির শঙ্কা
- মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে উত্তাল তেল আবিব: জিম্মি মুক্তির দাবিতে হাজারো ইসরায়েলি, পাশে ট্রাম্প
- কোরআন অবমাননা: নর্থ সাউথ থেকে শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
- আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য, আজ রাতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
- বিটকয়েন ইতিহাসে: মূল্য বাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ল ক্রিপ্টোকারেন্সি
- সপ্তাহের প্রথম দিনে বাজারে প্রাণ ফিরছে ডিএসইতে
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ‘জীবন্ত’ কম্পিউটার তৈরির পথে বিজ্ঞানীরা, ডেটা সেন্টারে আসছে নতুন বিপ্লব
- ত্বককে বিষমুক্ত রাখতে চান? জেনে নিন ৫টি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি
- একটানা চিয়া সিড খাচ্ছেন?অতিরিক্ত খেলে যে ৪টি স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে
- লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – এক কিংবদন্তি যিনি ৫০০ বছর আগেই ভবিষ্যতের পথ এঁকে রেখেছিলেন!
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: নতুন বেতন কাঠামোয় বেতন বাড়ছে দ্বিগুণ
- ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে: পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তীব্র হুমকি
- কোথায় আটকানো হবে, বলা কঠিন—শহিদুল আলম
- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা: ‘ফ্যাসিবাদী চক্রের সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হয়েছে’
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য না হলে বিকল্প প্রস্তাব দেবে কমিশন
- ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য আগামীকালের ইবাদতের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
- ভবিষ্যতে তাদের গলায় গামছা দেব: দেশে ফিরেই নুরের হুঁশিয়ারি
- ওসামা বিন লাদেন: সৌদি ধনকুবেরের ছেলে যেভাবে হয়ে উঠলো আমেরিকার আতঙ্ক!
- ব্যাংকিং খাতে দক্ষ এমডি পাওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ: গভর্নর আহসান এইচ মনসুর
- ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এখন শিশু-কিশোরদেরও ঝুঁকি, নীরব ঘাতক থেকে বাঁচার উপায়
- ট্রফি বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা মহসিন নকভি পাচ্ছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
- কুমিরকে সর্দির ভয় দেখাবেন না: বাঞ্ছারামপুরে পীর সাহেব চরমোনাই
- ইলিশ আহরণ বন্ধে ৯ জেলায় মোতায়েন নৌবাহিনীর ১৭ যুদ্ধজাহাজ
- প্রেমিকা নাকি ষড়যন্ত্র? আদনানের 'অন্ধকার জগৎ' নিয়ে স্ত্রীর পোস্টের পর নাটকীয় ইউ-টার্ন!
- ১৯৭৪ সালের ১ টাকা এখনকার কত টাকার সমান?
- দাজ্জালের আগমন এবং ইহুদিদের তৃতীয় মন্দির প্রতিষ্ঠা: নেপথ্যে সেই ‘লাল গরু’র রহস্য
- প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি
- মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: ‘আমি মুক্তি পাব এই কঠিন দায়িত্ব থেকে’
- ‘বোমাবর্ষণ বন্ধের’ ট্রাম্পের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা
- আফ্রিকার হৃদয়ে পাথরের রাজ্য: জিম্বাবুয়ের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আত্মার গল্প
- দেশের ১৭ অঞ্চলে রাত ১টা পর্যন্ত ঝড়-বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
- চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ড. ইউনূসের বার্তা
- পিরামিডের আসল রহস্য কি টেসলা জানতেন? এক হারানো প্রযুক্তির বিস্ময়কর কাহিনী
- ঘর পরিষ্কারে বেকিং সোডার ম্যাজিক! জেনে নিন ৩টি অসাধারণ ব্যবহার
- আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডেই পিআরের বাতাস বইছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
- ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে একযোগে এগিয়ে যাচ্ছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা
- বন্ধ নাক খুলতে নেজাল ড্রপ নয়, কাজে লাগান এই ৭ ঘরোয়া উপায়
- হাঙ্গেরি: ইউরোপের হৃদয়ে উচ্চশিক্ষার নতুন দুয়ার
- ইসলামী ব্যাংকের কর্মীদের অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট
- সিঁড়ি ভাঙতে গেলেই বুক ধড়ফড়? কখন বুঝবেন এটি হৃদরোগের সংকেত?
- রমজান কবে? জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার পূর্বাভাসে মিলল সেই ইঙ্গিত
- শীতের আগে থেকেই যে ৫টি অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি
- ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা: কাঁটাযুক্ত পাতার ভেতর লুকানো আরোগ্যের জেল
- ওমরাহ পালনে ১০টি নতুন নিয়ম: যা না মানলেই জরিমানা
- জাতিসংঘ মহাসচিবের উৎসাহ: হামাসের সেই ঘোষণায় কী আছে, যা শান্তি ফেরাতে পারে?
- বার্লিন সম্মেলন ১৮৮৪–৮৫: আফ্রিকা বিভাজনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও উত্তরাধিকার
- রসুনের গোপন শক্তি: এক কোয়া কি সত্যিই শরীরকে বদলে দিতে পারে?
- সর্ব রোগের ঔষধ কালিজিরা’র আদ্যপ্রান্ত: ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, ব্যবহার ও সতর্কতা
- ম্যালেরিয়া: কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
- স্মার্টফোন থেকে ডিলিট হওয়া ছবি ফিরে পাওয়ার ৩টি সহজ উপায়
- খাগড়াছড়ি-গুইমারায় সহিংসতা: সেনাবাহিনীর বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- মেথি কি সত্যিই ‘সুপারফুড’? বিজ্ঞান, উপকার, ঝুঁকি ও খাওয়ার সেরা সময়
- ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- শ্বাসরুদ্ধকর জয়: শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে রবিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে সোমবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- বিয়ে করতে গিয়ে বিপত্তি: ‘প্রথম স্ত্রীর’ হাতে আটক ছাত্রলীগ নেতা
- বলিউডের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর: নারী অধিকার ও পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার তারকারা