জাতিসংঘে আবারও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান, কূটনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধ তুঙ্গে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১১:২১:৪৮
জাতিসংঘে আবারও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান, কূটনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধ তুঙ্গে
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। ছবি : সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা এবার গড়াল জাতিসংঘের কূটনৈতিক অঙ্গনেও। জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে আবারও মুখোমুখি হলো এই দুই প্রতিবেশী দেশ। একে অন্যের ওপর দোষ চাপানো, অভিযোগ এবং বিজয় দাবির মধ্য দিয়ে এই কূটনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধ তুঙ্গে উঠেছে।

পাকিস্তানের বিজয় দাবি ও আলোচনার আহ্বান

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দাবি করেন, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরে’ পাকিস্তান বিজয়ী হয়েছে। তার ভাষায়, “ভারত দম্ভভরে হামলা চালালেও ইসলামাবাদ তাদের লজ্জিত করে ফিরিয়ে দিয়েছে।”

তবে একই সঙ্গে তিনি আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব অমীমাংসিত বিষয়ে যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সংলাপে প্রস্তুত। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ যুদ্ধ এড়াতে মধ্যস্থতা করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেহবাজ বলেন, “যদি ট্রাম্প সময়মতো দৃঢ়ভাবে হস্তক্ষেপ না করতেন, তবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পরিণতি হতো ভয়াবহ।”

ভারতের পাল্টা জবাব ও অভিযোগ

শেহবাজের বক্তব্যের পরপরই অধিবেশনে উপস্থিত ভারতীয় কূটনীতিবিদ পেতাল গাহলট পাল্টা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “বিমানঘাঁটির পোড়া হ্যাঙ্গার আর ধ্বংস হওয়া রানওয়ে যদি পাকিস্তানের চোখে ‘বিজয়’ হয়, তবে সেই জয় তাদেরই ভোগ করতে দেওয়া হোক।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, পাকিস্তান সন্ত্রাস মোকাবিলার বদলে জাতিসংঘে সন্ত্রাসীদের রক্ষায় ভেটো দিয়েছে।

শনিবার অধিবেশনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরাসরি পাকিস্তানকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দু’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানান। পেহেলগামের হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মোদি সরকার সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। জয়শঙ্কর আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে ভারত এই হুমকির মুখে আছে, কারণ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র একটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসের আস্তানা।” একই সঙ্গে তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যপদ বিস্তারের দাবি তোলেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এবার কার্যত ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কূটনৈতিক মঞ্চে রূপ নিয়েছে। দুই দেশের প্রকাশ্য মুখোমুখি অবস্থান বৈশ্বিক পরিসরেও নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।


গাজার নিয়ে ট্রাম্পের গোপন ফন্দি: ইসরায়েলকে বাদ দিয়েই গাজায় নামছে ওয়াশিংটন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ২০:৫২:৩৩
গাজার নিয়ে ট্রাম্পের গোপন ফন্দি: ইসরায়েলকে বাদ দিয়েই গাজায় নামছে ওয়াশিংটন
ছবিঃ সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে একটি সামরিক ঘাঁটি বানানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সি এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি জানিয়েছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ ও সেনা মোতায়েন

এই ঘাঁটি নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ কোটি ডলার (৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করতে পারে বলে জানা গেছে।

এছাড়া ঘাঁটিটিতে ১০ হাজারেরও বেশি সেনা ও ভারী অস্ত্র রাখতে চায় ওয়াশিংটন।

এই ঘাঁটি পরিচালনায় ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা রাখতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমেরিকার একটি প্রতিনিধিদল সম্ভাব্য স্থান নিয়ে আলোচনাও করেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ এটিকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রথম বৃহৎ আকারের মার্কিন সামরিক স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তবে পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই ঘাঁটি নির্মাণের কথা স্বীকার করলেও জোর দিয়ে বলেছেন যে, কোনো মার্কিন সেনা গাজার ভেতরে মোতায়েন করা হবে না। তারা বলছেন, এই স্থাপনাটি মূলত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী বা জয়েন্ট টাস্ক ফোর্সের জন্য তৈরি হচ্ছে, যেখানে মিশর, কাতার ও তুরস্কের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।

ট্রাম্পের পুরোনো পরিকল্পনা ও যুদ্ধবিরতি

এর আগে সেপ্টেম্বরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী এবং ইসরায়েল ওই প্রস্তাব মেনে নিলে গত ৯ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।

তবে এই যুদ্ধবিরতির আগে এপ্রিলে ট্রাম্প এক গোপন পরিকল্পনা এঁটেছিলেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে সেখানে স্বপ্নের আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই পরিকল্পনার জন্য ট্রাম্প আরব ও মুসলিম বিশ্বের ব্যাপক রোষানলে পড়েন।

নতুন ফন্দি ও বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল গাজায় যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেশটির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এমন সামরিক পরিকল্পনার খবর প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েল সাময়িকভাবে আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে তার মিত্রদের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়িঘর তৈরির পরিকল্পনাও করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব বাড়িঘরে যারা থাকার সুযোগ পাবেন, তাদের ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীবিরোধী হতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে।


ওয়াশিংটনে সিরীয় প্রেসিডেন্ট: পশ্চিমা দিগন্তে দামেস্কের নতুন অধ্যায়

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ১১:৩৩:৫৮
ওয়াশিংটনে সিরীয় প্রেসিডেন্ট: পশ্চিমা দিগন্তে দামেস্কের নতুন অধ্যায়
ছবিঃ সংগৃহীত

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি যুদ্ধ ও অবরোধের পর সিরিয়া যেন নতুন এক কূটনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। মঙ্গলবার দামেস্কের রাস্তায় সাধারণ মানুষ তাদের নতুন নেতার ওয়াশিংটন সফরকে দেখেছেন পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এক ইতিবাচক মোড় হিসেবে—যা হয়তো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পথ খুলে দিতে পারে।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা-কে—স্বাধীনতার পর (১৯৪৬) এই প্রথম কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের মার্কিন সফর এটি। এক সময় যাকে ওয়াশিংটন সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তারের জন্য ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তিনিই এখন কূটনৈতিক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন।

দামেস্কের আইন বিভাগের ছাত্রী বুশরা আবদেল বারি বলেন, “আল্লাহর কৃপায় এই সফর হবে সিরিয়ার জন্য এক নতুন সূচনা, বিচ্ছিন্নতার বছরগুলো শেষে বিশ্বের সঙ্গে পুনঃসংযোগের এক সুযোগ।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, “এই সফর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় সিরিয়ার পুনর্গঠনের পথ সুগম করবে।”

শরার এই ঐতিহাসিক সফরের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ঘোষণা করে ‘সিজার অ্যাক্ট’–এর আওতায় সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে—যা পরবর্তীতে কংগ্রেস স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। এই আইনটি মূলত বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, আসাদ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে সিরিয়াকে বৈশ্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে ঠেলে দিয়েছিল।

ঐতিহাসিকভাবে সিরিয়া বরাবরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ-এর ১৩ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনামলে রাশিয়াই ছিল প্রধান রক্ষাকবচ। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা পশ্চিমা দেশ ও উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন, যদিও তিনি এখনো মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন পুরোপুরি ছিন্ন করেননি।

দামেস্কের তরুণ আইন শিক্ষার্থী বারির ভাষায়, “রাশিয়া আমাদের কিছুই দেয়নি, শুধু ধ্বংস আর মৃত্যু।” অন্যদিকে ৩৬ বছর বয়সী মুদ্রণকর্মী ওমর নাসার বলেন, “সিরিয়া অতীতে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে যোগদানের মূল্য চুকিয়েছে। সেই ভুলের পরিণতি ছিল দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা। এখন পশ্চিমমুখী নীতি হয়তো আমাদের জন্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পুনর্জাগরণের বার্তা আনবে।”

একই সুরে কফিকিওস্ক মালিক সাদ্দাম হাজ্জার বলেন, “ধীরে ধীরে সবকিছু ভালো দিকে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, নতুন মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হতে পারব। এত ত্যাগের পর সিরিয়ার মানুষ নিশ্চয়ই একটি ভালো জীবনের প্রাপ্য।”

আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ১৩ বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ—যা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে এক শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের দমন-পীড়ন থেকে। এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ, এবং কোটিাধিক সিরীয় ঘরবাড়ি হারিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, অবকাঠামো বিধ্বস্ত, সামাজিক কাঠামো বিপর্যস্ত।

২৫ বছর বয়সী এনজিওকর্মী লায়াল কাদ্দুর এই সফরকে দেখছেন “সাহসী রাজনৈতিক পদক্ষেপ” হিসেবে। তাঁর মতে, “এই সফর সিরিয়ার বিচ্ছিন্নতা ভাঙার প্রতীক। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে।” তবে তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেন—“যদি আন্তর্জাতিক সহায়তার বিনিময়ে সিরিয়া আবার বিদেশি চাপের অধীনে চলে যায়? বিশেষত ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মতো রাজনৈতিক চাপের মুখে?”

সব মিলিয়ে ওয়াশিংটনে সিরীয় প্রেসিডেন্টের এই সফর শুধু কূটনৈতিক অগ্রগতি নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে সম্ভাব্য নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত বহন করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশ যখন পুনর্গঠন ও পুনঃসংযোগের স্বপ্ন দেখে, তখন এই সফর হয়তো সেই পরিবর্তনের সূচনাবিন্দু হয়ে থাকবে ইতিহাসে।

-নাজমুল হাসান


গাজায় মার্কিন ঘাঁটি, নতুন দখলদারিত্বের আশঙ্কা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ১০:৫১:১১
গাজায় মার্কিন ঘাঁটি, নতুন দখলদারিত্বের আশঙ্কা
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার সীমানায় একটি বড় ধরনের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘শরিম’ জানিয়েছে, এই ঘাঁটি নির্মাণে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হতে পারে। এতে হাজারেরও বেশি সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির বরাতে ইরানি গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলকে সরাসরি সহায়তা করার পাশাপাশি এটি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আগ্রাসনের ইঙ্গিত হতে পারে।

শরিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার এই ঘাঁটি নির্মাণের ফলে ওয়াশিংটন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সরাসরি সমন্বয় ছাড়াই গাজা অঞ্চলে স্বাধীনভাবে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব কৌশল অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা পাবে। গত সপ্তাহে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মার্কিন একটি প্রতিনিধি দল সম্ভাব্য স্থানের বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও গণহত্যার কারণে যখন বিশ্বব্যাপী ইসরাইলবিরোধী ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে, তখন এই সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের খবর প্রকাশ ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল হয়তো আন্তর্জাতিক চাপ এড়িয়ে তার লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে। তারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ কার্যত ইসরাইলি দখলদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে আরও দুর্বল করবে।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এটি এক দখলদারিত্বকে আরেক দখলদারিত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা মাত্র। ইসরাইলি সেনাদের পরিবর্তে এখন মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করবে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক আল জাজিরাকে বলেছেন, “আমরা এমন কোনো বাহিনীকে মেনে নিতে পারি না, যা গাজায় দখলদার সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।”

উল্লেখ্য, নভেম্বরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দেয়, যেখানে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (ISF)’ নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা ছিল। এই বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, কাতার ও মিশরের নেতৃত্বে অন্তত দুই বছর গাজায় অবস্থান করবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়। এর ঘোষিত উদ্দেশ্য হলো গাজার পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তবে সমালোচকদের মতে, প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো গাজাকে অস্ত্রশূন্য করা এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের কাঠামো ধ্বংস করা।

মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার পাশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ কেবল নিরাপত্তার অংশ নয়; এটি আসলে মার্কিন-ইসরাইলি প্রভাববলয়কে স্থায়ী করার কৌশল। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ইরান, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মার্কিন-ইরান সংঘাতের মঞ্চ তৈরি করবে।

তারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ মূল সমস্যাগুলো যেমন ইসরাইলি দখলদারিত্ব, যুদ্ধাপরাধের দায়বদ্ধতা এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পুরোপুরি উপেক্ষা করছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, গাজায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত নতুন ধরনের দখলদারিত্বের সূচনা করতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

-রাফসান


ইসলামাবাদে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১৮:২৩:৫৬
ইসলামাবাদে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে
ছবিঃ সংগৃহীত

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের একটি আদালতের বাইরে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর চালানো এই হামলায় অন্তত এক ডজন লোক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সরাসরি ভারত সমর্থিত চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছেন।

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই হামলার তথ্য জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ ও নিন্দা

ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি তাঁর দপ্তরের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, এই হামলার সঙ্গে ভারত সমর্থিত চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন

"ভারতের সন্ত্রাসী প্রক্সিগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তানের নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা নিন্দনীয় ঘটনা। ভারতকে এ অঞ্চলে প্রক্সির মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়ানোর জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।"

তবে, পাকিস্তানের এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার করেছেন।

হতাহতের সংখ্যা ও ঘটনার স্থান

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি জানিয়েছেন, হামলাটি ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালতের বাইরে হয়েছে।

এই আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৭ জন।

আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত

এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সরাসরি ভারতের পাশাপাশি আফগানিস্তানের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, কাবুলের শাসকরা পাকিস্তানে সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারে। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ইসলামাবাদে এই যুদ্ধের জবাব পাকিস্তান পুরোপুরি দিতে সক্ষম।


চীন–যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতার ভেতরে লুকানো নতুন ভারসাম্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১১:১৫:৪৯
চীন–যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতার ভেতরে লুকানো নতুন ভারসাম্য
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব অর্থনীতি আজ যেন এক অদৃশ্য দাবার ছকে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিটি চালের পেছনে লুকিয়ে আছে ক্ষমতা, কৌশল, এবং প্রযুক্তিনির্ভর রাজনীতি। একদা মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতিতে গঠিত এই বৈশ্বিক বাজার এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া মার্কিন–চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এখন আর কেবল শুল্ক বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ নেই; এটি রূপ নিয়েছে প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ও প্রভাব বিস্তারের জটিল প্রতিযোগিতায়।

ওয়াশিংটন এখন মরিয়া চীনের প্রযুক্তি আধিপত্য সীমিত করতে বিশেষত সেমিকন্ডাক্টর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে। অন্যদিকে বেইজিং পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রেয়ার আর্থ মেটাল বা বিরল খনিজের রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে যা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, স্মার্টফোন, ইলেকট্রনিক চিপ এমনকি যুদ্ধবিমানও কার্যত অচল। ফলে এই প্রতিযোগিতা আর শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত শক্তির নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে।

এই দ্বন্দ্বের প্রভাব সবচেয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে। বহুদিন ধরে “বিশ্বের কারখানা” হিসেবে চীন বৈশ্বিক উৎপাদনের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো গ্রহণ করছে “চায়না প্লাস ওয়ান” কৌশল অর্থাৎ তারা উৎপাদন ঘাঁটি স্থাপন করছে চীনের পাশাপাশি অন্য দেশে, যাতে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পায়। এই পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক শিল্প মানচিত্রে উঠে আসছে ভারত, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো উদীয়মান শক্তিগুলো।

বাংলাদেশের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে পোশাকশিল্পে সাফল্য অর্জন করে দেশটি বিশ্ববাজারে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। এখন সময় এসেছে উৎপাদনের নতুন খাতে বৈচিত্র্য আনার-ইলেকট্রনিক্স, হালকা প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রবেশের। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে দেখছেন স্থিতিশীল শ্রমবাজার, প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন ব্যয় ও কৌশলগত অবস্থানের দেশ হিসেবে। এজন্য প্রয়োজন সুদূরদর্শী শিল্পনীতি, নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো।

অর্থনীতিবিদদের মতে, চীন–যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতা কেবল দুটি দেশের সংঘাত নয়; এটি নতুন অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্ম। বিশ্বায়ন এখন আর একমুখী নয়, বরং হয়ে উঠছে অঞ্চলভিত্তিক ও বহুস্তরীয়। উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বাড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তন বৈশ্বিক অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করবে এবং একক রাষ্ট্রনির্ভরতা হ্রাস করবে।

তথ্যসূত্র: দি ইকোনমিস্ট, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, রয়টার্স, IMF


দুই পারমাণবিক কেন্দ্রে রুশ ড্রোন হামলা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১১:০৩:২২
দুই পারমাণবিক কেন্দ্রে রুশ ড্রোন হামলা
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের দুটি প্রধান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে কেন্দ্রগুলোর বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পারমাণবিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে সতর্ক করেছে কিয়েভ। দেশটি বলছে, রাশিয়ার এই হামলা পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত, যা গোটা ইউরোপকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে ফেলেছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, হামলাটি হয়েছে খমেলনিটস্কি ও রিভনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। হামলার পর কিছু সময়ের জন্য উভয় কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, “এটি ইউরোপজুড়ে পারমাণবিক নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করেছে। এখন সময় এসেছে চীন ও ভারতসহ যেসব দেশ পারমাণবিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়, তারা যেন রাশিয়ার এমন বেপরোয়া হামলার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেয়।” তিনি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-কে দ্রুত জরুরি বৈঠক ডাকতে আহ্বান জানান।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি খাতের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তিনি বলেন, “রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করে শীতের আগেই মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়।”

-রফিক


যুদ্ধবিরতির এক মাস পরও গাজায় ত্রাণে ইসরাইলের বাধা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১০:৩৯:৩৮
যুদ্ধবিরতির এক মাস পরও গাজায় ত্রাণে ইসরাইলের বাধা
ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পার হলেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ইসরাইল এখনও নানা বাধা সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মতে, সীমিত প্রবেশপথ, প্রশাসনিক জটিলতা, নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে ত্রাণ কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ)-এর তথ্য উদ্ধৃত করে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যুদ্ধবিরতির এক মাস পেরিয়ে গেলেও গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নানা জটিল প্রক্রিয়া ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। সীমিত প্রবেশপথ ও অনিরাপদ পরিস্থিতি আমাদের কাজকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।”

তিনি জানান, এখনো অনেক এলাকায় জাতিসংঘের কর্মীদের প্রতিবার চলাচলের আগে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। গত সপ্তাহে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর আটটি প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র দুটি পুরোপুরি অনুমোদন পায়। বাকি চারটি প্রচেষ্টা মাঝপথে বাধাগ্রস্ত হয়— এক ক্ষেত্রে দলটিকে অনুমতি পেতে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র আরও বলেন, “চলমান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমরা ও আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি যাতে যতটুকু সম্ভব সহায়তা পৌঁছানো যায়। তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বেশি সংখ্যক সীমান্তপথ খুলে দেওয়ার বিষয়ে ইসরাইলের অনীহা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারহান হক বলেন, “সমস্যাটা ইসরাইলি পক্ষেই। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো তারা নতুন কোনো প্রবেশপথ খোলেনি। ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ক্রমেই ধীর হয়ে যাচ্ছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজার অধিকাংশ এলাকা এখনও ধ্বংসস্তূপে পরিণত, হাসপাতাল ও স্কুলগুলো অচল, আর খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে দিন কাটাচ্ছে লাখো বেসামরিক মানুষ।

-রাফসান


বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১১ ১০:৩৩:০৭
বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লার অদূরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারতের রাজধানী ও সীমান্ত এলাকাজুড়ে চরম নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি হুন্দাই আই২০ গাড়িতে সংঘটিত এই বিস্ফোরণে নয়জন নিহত ও আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে কয়েকশ মিটার জুড়ে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে পড়ে, আশপাশের একাধিক গাড়ি পুড়ে যায়, এবং রাস্তাজুড়ে দগ্ধদেহের বীভৎস দৃশ্য তৈরি হয়। ঘটনার পরপরই পুরো দিল্লি শহরসহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়।

সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পাঞ্জাব ও রাজস্থানের ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ–নেপাল সীমান্ত এবং পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত এলাকাতেও অতিরিক্ত নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। নতুন করে চেকপোস্ট বসানো, সেনা টহল জোরদার করা এবং সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW) সীমান্তবর্তী অঞ্চলের যেকোনো সন্দেহজনক নড়াচড়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

দিল্লির উপ-প্রধান অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তা একে মালিক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। “আমরা সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। ৭টা ২৯ মিনিটের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়,” বলেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, লাল কেল্লার পাশের রাস্তায় ছিন্নভিন্ন মরদেহ, ভস্মীভূত যানবাহন ও চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পর্যটকদের ভিড় একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লি থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার ফরিদাবাদে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আরও সজাগ হয়ে ওঠে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, লাল কেল্লা বিস্ফোরণ এবং ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। এদিকে, বিহারের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের ঠিক আগে এমন ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ও বিস্ফোরক উদ্ধার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্তভার দিয়েছে আধাসামরিক বাহিনী ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর হাতে। এনএসজি এবং দিল্লি পুলিশের বোম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজাল স্কোয়াড ঘটনাস্থল থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাড়ির ধাতব অংশ, রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ এবং বোমার সম্ভাব্য উপাদান সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে স্থানীয় পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গাড়িটি কে বা কারা পার্ক করেছিল তা শনাক্তের চেষ্টা করছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি “ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (IED)” দ্বারা ঘটানো হতে পারে। তবে এখনো কোনো গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা হতে পারে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আগে গাড়িটি প্রায় ২০ মিনিট ধরে একই স্থানে পার্ক করা ছিল। আশপাশের দোকানপাটে তখন সন্ধ্যার ব্যস্ততা চলছিল, হঠাৎ একটি বিকট শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। রাস্তায় আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু হয়, অনেকে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। দিল্লির হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হয়েছে।

এদিকে সীমান্তে বাড়তি সতর্কতার কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালমুখী বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকেও কড়া তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে। পেট্রাপোল, রণাঘাট, সোনামসজিদসহ একাধিক সীমান্তপথে কাস্টমস ও বিএসএফ যৌথভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে কোনো বিস্ফোরক বা অবৈধ উপকরণ প্রবেশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

-রাফসান


ট্রাম্পের ঘোষণার পরই সরে দাঁড়াল স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ২১:৫১:৫২
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই সরে দাঁড়াল স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
ছবিঃ সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই গাজা উপত্যকার জন্য প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগদানের কোনো পরিকল্পনা করছে না। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তারা বাহিনীর কোনো স্পষ্ট কাঠামো বা কার্যপ্রণালী না থাকার কথা জানিয়েছে।

আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার বক্তব্য

আবুধাবি কৌশলগত বিতর্ক ফোরামে আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন:

"সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনো স্থিতিশীলতা বাহিনীতে একটি স্পষ্ট কাঠামো দেখতে পাচ্ছে না এবং এই পরিস্থিতিতে সম্ভবত এই বাহিনীতে অংশগ্রহণ করবে না।"

এই বক্তব্যটি ইউএই-এর নীতিগত অবস্থানের প্রতিফলন, যা মূলত কোনো সামরিক মিশনে অংশগ্রহণের আগে এর উদ্দেশ্য, নিয়মাবলী এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায়।

আন্তর্জাতিক বাহিনীর পরিকল্পনা

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয় করা এই আন্তর্জাতিক বাহিনীতে মিশর, কাতার ও তুরস্কের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা ছিল। এই বাহিনীর লক্ষ্য হলো গাজায় সংঘাত-পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে এই বাহিনী খুব শিগগিরই গাজায় উপস্থিত হবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরই ইউএই তাদের অবস্থানের কথা জানাল।

ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ঐতিহাসিক আব্রাহাম চুক্তি সই হওয়ার পর ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে তেলসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, গাজা ইস্যুতে ইউএই-এর এই সতর্ক সামরিক অবস্থান আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত

যেভাবে ইউরোপের ধ্বংসস্তূপে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে উঠলো আমেরিকা!

যেভাবে ইউরোপের ধ্বংসস্তূপে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে উঠলো আমেরিকা!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ইতিহাসের এক এমন প্রলয়ঙ্করী অধ্যায় যা কেবল লক্ষ লক্ষ প্রাণই কেড়ে নেয়নি, বদলে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীর মানচিত্র ও... বিস্তারিত