ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ

ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল ক্রমেই দুর্বল ও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এখন ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
গাজায় আগ্রাসনকে অনেক দেশ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করছে এবং এর নিন্দা জানাচ্ছে। একসময় ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসা অনেক দেশ এখন দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্রান্স, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
লুক্সেমবার্গের কঠোর অবস্থান ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা
এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল পার্লামেন্টারি কমিশনকে এই তথ্য জানিয়েছেন। চলতি সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি বিল প্রস্তাব করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেল আরও জানান, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন না থামালে দেশটির বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রতি বছর ইসরায়েলের সঙ্গে লুক্সেমবার্গের ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। যদিও বাণিজ্যের পরিমাণ কম, লুক্সেমবার্গ ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে লুক্সেমবার্গের এই কঠোর অবস্থান ইসরায়েল-লুক্সেমবার্গ সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে, যা ইসরায়েলের জন্য ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ আরও কঠিন করে তুলবে।
মিত্রদের সমর্থন হারানো এবং আন্তর্জাতিক চাপ
আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক মিত্র দেশ এখন ভিন্ন পথে হাঁটছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়েও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থামাতে না পারার হতাশা থেকেই ফ্রান্স এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, বেলজিয়াম এবং যুক্তরাজ্যের মতো মিত্র দেশগুলোর সমর্থনও হারাচ্ছে ইসরায়েল। এসব দেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৪৭টি সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলকে কঠিন চাপের মুখে ফেলেছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশের প্রথম চালান ভারতে
পূজার আগে অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছেছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ১০টি ট্রাকে করে মোট ৫০ টন ইলিশের এই চালানটি ভারতে প্রবেশ করে।
চলতি বছর বাংলাদেশ সরকার মোট ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১,২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সেই অনুমতির অংশ হিসেবে প্রথম চালানটি ভারতে পাঠানো হয়েছে।
পেট্রাপোলে বাংলাদেশের ট্রাক থেকে মাছগুলো পশ্চিমবঙ্গের ট্রাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর এই ইলিশ সরাসরি কলকাতার বৃহত্তম পাইকারি মাছের বাজার হাওড়ার ফিশ মার্কেটে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খুচরা বাজারে এই ইলিশ পাওয়া যাবে। এর ফলে, দুর্গাপূজার আগে ভোজনরসিক বাঙালিরা বাংলাদেশের পদ্মার সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন।
গাজায় মানবিক সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ও অপুষ্টিতে মৃত্যু বাড়ছে
গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার অবরুদ্ধ উপত্যকায় আরও ৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
আনাদোলু সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার হাসপাতালগুলোতে ৯৮ জনের মরদেহ এবং ৩৮৫ জন আহতকে আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, নিহত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধার করার মতো যথেষ্ট সরঞ্জাম ও লোকবল নেই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবারের পর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬২ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৯ জুন দুই মাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হয়েছিল। তবে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে ১২ হাজার ৫১১ জন নিহত এবং ৫৩ হাজার ৬৫৬ জন আহত হয়েছেন।
গত মে মাসের শেষ দিক থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত বুধবার খাদ্য ও ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৭ জন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে ত্রাণ সংগ্রহকালে নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ২ হাজার ৫০৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৪৮ জনে পৌঁছেছে।
২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যার কারণে সেখানে খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বুধবার খাদ্য ও অপুষ্টিজনিত কারণে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় দুই বছরে গাজায় ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪৬ জনই শিশু।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
নেতানিয়াহুকে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিল কাতার
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দোহায় বিমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন এবং এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে—এমন কঠোর মন্তব্য করেছে কাতার।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, দোহায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলা বৃথা যায়নি; বরং এর মাধ্যমে কাতারকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দোহায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তার বেপরোয়া নীতির কারণে প্রতিটি ব্যর্থতার পর সেটিকে ঢাকার চেষ্টা করেন। আজ তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তার জবাবে আমরা বলতে চাই— দোহায় হামলার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন করেছেন। এজন্য কোনোভাবেই তিনি শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতারে বসবাস করছেন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের শীর্ষ নেতারা। গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে মধ্যস্থতা করা তিন দেশের একটি হলো কাতার, বাকি দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।
এর আগে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। পরে ১৬ অক্টোবর গাজায় নিহত হন তার উত্তরসূরী ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এরপর খলিল আল হায়া হামাসের নতুন শীর্ষ নেতার দায়িত্ব নেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী দোহায় একটি ভবনে বোমা বর্ষণ করে হামাস নেতাদের হত্যা করার চেষ্টা চালায়। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়া ওই হামলায় ছয়জন নিহত হলেও খলিল আল হায়া ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী প্রায় সব দেশ ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মাজেদ আল আনসারি জানান, “বর্তমানে আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বিশ্বাসঘাতক ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেন এমন হামলা আর না ঘটে, সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে। পাশাপাশি আমরা দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক বিবেচনা এখন আমাদের কাছে গৌণ।”
“গাজা সিটিতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান: জাতিসংঘের অভিযোগ ‘গণহত্যা’”
গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। মঙ্গলবার রাতভর ব্যাপক বোমাবর্ষণের পর ইসরায়েলি বাহিনী শহরের ভেতরে আরও গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির এক বিবৃতিতে বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর গাজা সিটিতে অভিযান উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা স্থলসেনা, নির্ভুল হামলা ও গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে অভিযান চালাচ্ছি, যতক্ষণ না হামাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা যায়।”
জাতিসংঘের কড়া ভাষা: ‘গণহত্যা চলছে’
জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান কমিশন (COI) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে এবং তা চলমান। কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই জানান, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট গাজায় গণহত্যার উসকানি দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড ও সরকারি বিবৃতিগুলো প্রমাণ করে যে এই সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েল এই অভিযোগকে “বিকৃত ও মিথ্যা” আখ্যা দিয়ে কমিশনটি বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজা সিটির পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ” আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভয়াবহ মানবিক সংকট
গাজা সিটির বহু এলাকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর সামনে নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষকে রাত কাটাতে দেখা গেছে। শরণার্থী ইউসুফ শানাআ জানান, “মানুষের কাছে দক্ষিণে যাওয়ার কিংবা শহরের ভেতরে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়ার অর্থও নেই।”
হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবারই অন্তত ৪৪ জন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকারে সীমাবদ্ধতার কারণে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অভিযানের সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটি গাজার ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। ব্রিটেন সতর্ক করেছে, এই অভিযান কেবল আরও রক্তপাত ও বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি বাড়াবে এবং জিম্মিদের জীবন আরও বিপন্ন করবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি ইসরায়েল সফরে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অভিযানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “কূটনৈতিক সমাধানই আমাদের পছন্দ, তবে কখনও কখনও হামাসের মতো গোষ্ঠীর সঙ্গে তা সম্ভব হয় না।”
এদিকে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন এবং পরবর্তীতে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রক্তক্ষয়ী সংঘাতের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৪,৯৬৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
-সুত্রঃ এ এফ পি
ভয়াবহ হামলায় গাজা সিটি ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াল হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজারো বাসিন্দা। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন চলমান এই যুদ্ধকে ইতোমধ্যেই “গণহত্যা” হিসেবে অভিহিত করেছে, আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় আরও তীব্রতর হচ্ছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই বছরের মধ্যে গাজা সিটির ওপর ইসরায়েলি সেনাদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে। বোমা ও গোলার আঘাতে বহু মানুষ শহর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে পালাচ্ছেন। তাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হয়তো আর কখনো নিজ ঘরে ফিরে যেতে পারবেন না। জাতিসংঘ মহাসচিব এই হামলাকে “ভয়ঙ্কর” আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “গাজা জ্বলছে”। শহর ছেড়ে পালাতে থাকা মানুষের ভিড়ে চোখে পড়েছে আসবাবপত্র বোঝাই ভ্যান, গাধার গাড়ি আর হাতে সামান্য মালপত্র নিয়ে ধ্বংসস্তূপ ও কালো ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে দক্ষিণমুখী মানুষের অন্তহীন মিছিল। উপকূলীয় আল-রাশিদ সড়ক এখন হয়ে উঠেছে এক মানবস্রোতের করিডর।
প্রথম দিকে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার মুখেও শহর না ছাড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু অতি ভয়াবহ বোমাবর্ষণে বহুতল ভবন, আবাসিক এলাকা ও অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সামর্থ্যবান পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে দক্ষিণে সরে যাচ্ছেন। তবে সেখানেও কোনো নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই।
শুধু মঙ্গলবারের হামলাতেই অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় সড়ক ধরে দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও বেসামরিক মানুষের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। একই দিনে কমপক্ষে ১৭টি আবাসিক ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকার ঐতিহাসিক আইবাকি মসজিদও বিমান হামলার টার্গেট হয়েছে।
এ ছাড়া উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে ইসরায়েলি সেনারা বিস্ফোরক বোঝাই রোবট ব্যবহার করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসের শুরুতে অন্তত ১৫টি বিস্ফোরক রোবট মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি রোবট দিয়ে প্রায় ২০টি করে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
যুদ্ধের প্রথম ধাপ শেষে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরে এসেছিলেন। তবে এখন কতজন এখনও শহরে আছেন, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের এক কর্মকর্তার দাবি, প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই শহর ছেড়েছেন। অন্যদিকে গাজার সরকারি গণমাধ্যম বলছে, সমানসংখ্যক মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশে আশ্রয় নিয়েছেন, আর ১ লাখ ৯০ হাজার পুরোপুরি শহর ছেড়েছেন।
পালিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য দক্ষিণেও কোনো শান্তি নেই। রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত জনগণের কারণে দক্ষিণের অতিরিক্ত ভিড়ভাট্টার আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে ইসরায়েল আবারও বোমা বর্ষণ করেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটিতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
এই সময় ইসরায়েলি সেনারা আকাশ থেকে তোলা ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে গাজা সিটির ভেতরে প্রবেশ করতে থাকা বিপুলসংখ্যক ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানবাহনের দৃশ্য দেখা গেছে। সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে তাদের “কয়েক মাস সময়” লেগে যাবে।
-শরিফুল
মোদি–ট্রাম্পের ফোনালাপ, বাণিজ্য আলোচনায় আশার ইঙ্গিত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুভেচ্ছা ও প্রশংসা পেয়েছেন। ফোনালাপে ট্রাম্প মোদির রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ভারতের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। মোদির সঙ্গে দুর্দান্ত কথা হয়েছে, তিনি অসাধারণ কাজ করছেন।” মোদি এক্স-এ প্রতিক্রিয়ায় জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এবং শান্তি উদ্যোগে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।
তবে শুভেচ্ছা বার্তার মধ্যেও দুই দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা রয়ে গেছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছে। হোয়াইট হাউস অভিযোগ করেছে, ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনে বিক্রি করে মস্কোর যুদ্ধ তহবিল বাড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য মার্কিন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেনডন লিঞ্চ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনা ছিল “ইতিবাচক ও ভবিষ্যতপন্থী” এবং দ্রুত একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য প্রচেষ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারতের রপ্তানিকারকরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক অর্ডার বাতিল হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে বড় ধরনের অগ্রগতি সম্ভব নয়।
-আকাশ
আফগান সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের অভিযান: নিহত ৩১ তালেবান
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় দুইটি পৃথক অভিযানে তারা ৩১ জন স্থানীয় তালেবান সদস্যকে হত্যা করেছে। ওই অঞ্চলে তালেবানদের উপস্থিতি সম্প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সোমবার রাতের দিকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানায়, শেষ সপ্তাহান্তে ৩১ জন “খোয়ারিজ” নিহত হয়েছেন। এটি সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবহৃত একটি পদ, যা পাকিস্তানি তালেবান (TTP) সদস্যদের বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর আগের শনিবার, প্রতিবেশী জেলায় একটি ওঁঠানো হামলায় ১২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন। সেই হামলার দায় স্বীকার করেছে TTP।
সেনাবাহিনী তার বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে যে ভারত—যার সঙ্গে পাকিস্তানের মে মাসে চার দিনের সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছিল—এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশ দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যবহার করে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করে আসছে। “এলাকায় ভারত-সমর্থিত অন্যান্য সশস্ত্রদের নির্মূল করার জন্য স্যানিটাইজেশন অভিযান চলছে,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
২০২১ সালে কাবুলে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে গেছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে TTP সদস্যদের উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও আফগান তালেবান ও TTP আলাদা সংগঠন, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ইসলামাবাদ আফগান সরকারের উপর অভিযোগ করেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই বছরের মধ্যে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ৪৬০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশে। গত বছর ছিল পাকিস্তানের প্রায় এক দশক ধরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর, যেখানে ১,৬০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, ইসলামাবাদ ভিত্তিক ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’-এর তথ্য অনুযায়ী।
-সুত্রঃ এ এফ পি
গাজায় ইসরায়েলি তীব্র হামলা, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের ঘোষণা
গাজা সিটি আবারও ভয়াবহ বিমান হামলার মুখে। মঙ্গলবার দিনভর অব্যাহত ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বহু ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং অসংখ্য মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ২৫ বছর বয়সী বাসিন্দা আহমেদ গাজাল বলেন, “আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি।”
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ইসরায়েল সফর ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বেড়েছে। সোমবার জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুবিও ঘোষণা দেন, গাজায় নতুন সামরিক অভিযানে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ‘অটল সমর্থন’ পাবে। তিনি বলেন, “হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গাজার মানুষের জন্য কোনো ভালো ভবিষ্যৎ শুরু হতে পারে না।”
এই সফরের আগে মাত্র এক সপ্তাহ আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছিলেন, মার্কিন মিত্র কাতারে হামাস নেতাদের ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখতে। কিন্তু রুবিও কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে গুরুত্ব না দিয়ে হামাসকে আখ্যা দেন “বর্বর প্রাণী” হিসেবে। আজ মঙ্গলবার তিনি কাতার সফরে যাচ্ছেন, যাতে দোহাকে আশ্বস্ত করা যায়—যে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটির স্বাগতিক।
মানবিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক চাপ
গাজা সিটির পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানিয়েছেন, গত সোমবারের হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন এবং মঙ্গলবারও নির্বিচারে বোমাবর্ষণ চলছে। জাতিসংঘ গত মাসেই সতর্ক করেছিল—গাজায় এক মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে, যদিও ইসরায়েল এই দাবি অস্বীকার করে।
এদিকে, ফ্রান্স আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের নেতৃত্ব দেবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ইউরোপীয় মিত্র দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। রুবিও এই স্বীকৃতিকে “প্রতীকী পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তের পর ইসরায়েল একতরফা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। তার মন্ত্রিসভার চরম ডানপন্থী সদস্যরা এরই মধ্যে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার দাবি তুলেছেন, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কিছু আরব দেশের প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছে।
মানবাধিকার বনাম কৌশলগত সমীকরণ
রুবিওর সফর শুধু কূটনৈতিক নয়, ছিল উচ্চমাত্রার প্রতীকীও। তিনি পূর্ব জেরুজালেমে বিতর্কিত সিলওয়ান এলাকায় ধর্মীয় পর্যটনের জন্য নির্মিত একটি সুড়ঙ্গ উদ্বোধনে অংশ নেন। স্থানীয় ফিলিস্তিনি মুখপাত্র ফাখরি আবু দিয়াব বলেন, “আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ মার্কিন নেতৃত্ব চরমপন্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে।”
হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। পাল্টা ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ইতিমধ্যে ৬৪ হাজার ৯০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার বড় অংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলছে।
রুবিও সফরের সময় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ২৫১ জন ইসরায়েলির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে এখনো ৪৭ জন গাজায় বন্দি, যাদের ২৫ জন ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে।
রুবিওর এই সফর মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে। একদিকে ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন, অন্যদিকে কাতারকে আশ্বস্ত করা—সব মিলিয়ে ওয়াশিংটন দেখাতে চাইছে, তারা একযোগে মিত্রদের আস্থা ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা দুটোই ধরে রাখতে চায়।
-এ এফ এপ
নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকেরা। তারা অভিযোগ করেছেন, গাজায় চলমান স্থল অভিযানের কারণে তাদের প্রিয়জনদের জীবনের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। এ খবর প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বর্তমানে নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে অবস্থান করছেন বন্দি মাতান জানগাউকার, মাতান আংরিয়েস্ট এবং রম ব্রাসলাভস্কির পরিবার। তাদের সংগঠন হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বড় ধরনের সামরিক অভিযানের খবর তারা গভীর দুশ্চিন্তার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।
পরিবারগুলোর দাবি, গাজা সিটিতে এখনো জীবিত বহু বন্দি অবস্থান করছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে চাইছেন। তারা অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বাস্তব মূল্যায়ন নেতানিয়াহু সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করছেন।
এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস যেখানেই থাকবে, ইসরায়েল সেখানেই আঘাত হানবে।” তার ভাষায়, এ লড়াইয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
রুবিওর সঙ্গে বৈঠকটি দুই ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়েছিল। এতে তিনি কাতারে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রুবিও স্পষ্ট করে জানান, ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে চিন্তিত।
তবে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু ভিন্ন সুরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একসঙ্গে কাজ করবে এবং একে অপরকে সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করবে। তিনি আরও জানান, রুবিওর সফর একটি শক্ত বার্তা বহন করছে—সন্ত্রাসের মুখে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলের পাশে রয়েছে।
সমালোচকদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে যারা, তাদের অনেকের মধ্যেই দ্বিচারিতা রয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, নিন্দা আসুক বা সমালোচনা উঠুক, হামাস যেখানে অবস্থান করবে, সেখানেই ইসরায়েলের আক্রমণ চলবে।
-রাফসান
পাঠকের মতামত:
- ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ
- ধর্ষণ মামলায় জামিনের পর নীরবতা ভাঙলেন অভিনেতা
- রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর কমলো স্বর্ণের দাম, নতুন দর ঘোষণা করলো বাজুস
- পদ্মার রুপালি ইলিশের প্রথম চালান ভারতে
- গ্রেফতার বিএনপি নেতা হাজতে সিগারেট–ফোনে ব্যস্ত, ফাঁস হলো ছবি
- শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ
- “অপরাধী যে বাহিনীরই হোক, বিচারের আওতায় আনতে হবে”
- গাজায় মানবিক সংকট চরমে, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ও অপুষ্টিতে মৃত্যু বাড়ছে
- জামায়াতের পাঁচ দফা দাবিতে আজ ঢাকায় বড় সমাবেশ
- এনবিআরের সিআইসি নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনার দুটি লকার, শুরু হয়েছে আয়কর তদন্ত
- ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচন: ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা
- শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- একনেক বৈঠকে ১৩ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৮,৩৩৩ কোটি টাকা
- রাশিয়া নেতৃত্বাধীন “Zapad-2025” সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
- আদালত চত্বরে ব্যারিস্টার সুমনের বারবার উচ্চারণ: ‘ভালো থাকুক বাংলাদেশ’
- বলিউডের গ্ল্যামার থেকে ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প: জিনাত আমানের জীবন ও ভালোবাসা
- ডিএসই ঋণপত্র বোর্ডে সীমিত লেনদেন, শীর্ষে যে শেয়ার
- ব্লক মার্কেটে শীর্ষ তিন শেয়ারে ৭০% লেনদেনের দখল
- ১৭ সেপ্টেম্বরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
- মোদির ৭৫তম জন্মদিনে বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার তারকাদের শুভেচ্ছা
- ১৭ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে ১০টি শেয়ারে বড় দরপতন
- ১৭ সেপ্টেম্বর লেনদেনে উত্থান যে ১০ টি শেয়ারে
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত ঐকমত্য চান ড. আলী রীয়াজ
- চীনের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ
- অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস: উত্থান, পতন ও সভ্যতা–বিজ্ঞানে অবদান
- ঘুষ প্রস্তাবে বরখাস্ত ডিএনসিসি কর্মকর্তা
- ২১ ক্যারেট বনাম ২২ ক্যারেট: কোন সোনার গয়না বেশি টেকসই
- লেনদেনে চাঙ্গা বাজার, শীর্ষে যেসব কোম্পানি
- সাত দফা দাবিতে সাতরাস্তা অবরোধ
- সংবাদে বিভ্রান্তি, ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিল ইউনিয়ন ব্যাংক
- নেতানিয়াহুকে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিল কাতার
- বাংলা সিনেমায় প্রথম সারভাইভাল স্টোরি ‘দম’
- “গাজা সিটিতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান: জাতিসংঘের অভিযোগ ‘গণহত্যা’”
- কেন জামাই শাহিনের উপর অসন্তুষ্ট শ্বশুর শহীদ আফ্রিদি
- ভয়াবহ হামলায় গাজা সিটি ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি
- মোদি–ট্রাম্পের ফোনালাপ, বাণিজ্য আলোচনায় আশার ইঙ্গিত
- দুর্গাপূজায় মিলছে দীর্ঘ ছুটি!
- দুর্গোৎসব ঘিরে প্রথম চালানে ৩৭ টনের বেশি ইলিশ গেল ভারতে
- বরিশালে ১৭ বিয়ে কাণ্ড: বন কর্মকর্তা কবির হোসেন বরখাস্ত
- বাংলাদেশের সুপার ফোরের সম্ভাবনা: আফগানিস্তান–শ্রীলঙ্কা ম্যাচে কোন ফল দরকার?
- ডিএসই ব্লক মার্কেট বিশ্লেষণ
- ১৬ সেপ্টেম্বরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ প্রতিবেদন
- ১৬ সেপ্টেম্বর দর হারাল শীর্ষ দশ কোম্পানি
- ১৬ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারে শীর্ষ দশ গেইনার
- দেবো কে দেব মহাদেবের পার্বতী সোনারিকা ভাদোরিয়া মা হতে চলেছেন
- আফগান সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের অভিযান: নিহত ৩১ তালেবান
- চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের জামায়াতে ইসলামী আমীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ
- বিপিএল এর নাম বদলে যে নাম রাখা হচ্ছে
- যত টাকায় সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এলএনজি আসছে
- নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শ্রমিক সংঘর্ষ
- এফটির তথ্যচিত্র: শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন ডলারের গল্প
- উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতি: জাপান–বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সমীকরণ
- অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস: উত্থান, পতন ও সভ্যতা–বিজ্ঞানে অবদান
- নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার, নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার জরুরি: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
- ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন সামনে: জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জোর দিলেন ড. ইউনূস
- লিটনের ব্যাটে স্মার্ট জয়: হংকংকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
- বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা: আইনি প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কৌশল
- জাকসু নির্বাচনী দায়িত্বে শিক্ষকের মৃত্যু
- উটাহে চার্লি কার্ক হত্যা: রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন ধাক্কায় আমেরিকার গণতন্ত্র ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- বরিশালে ১৭ বিয়ে কাণ্ড: বন কর্মকর্তা কবির হোসেন বরখাস্ত
- ১৩তম জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসি’র নতুন সীমানা, ভোটারদের উদ্বেগ বহাল
- ডাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে যত কৌশল
- নেপালের গণঅভ্যুত্থান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা: বৈধতার সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আগামীর চ্যালেঞ্জ
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ঝড়ের উত্থান: ২৮২ শেয়ার দাম বাড়ল, লেনদেনে রেকর্ড ৭৭৮ কোটি টাকা!