২০১ কেজি ভায়াগ্রা জব্দ বেনাপোলে , চোরাচালান ব্যর্থ

যশোরের বেনাপোল সীমান্তে আবারও সক্রিয় চোরাচালান চক্রের বড় একটি চালান আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুক্রবার (১৬ মে) রাতে বেনাপোল বাজার এলাকার রহমান চেম্বারের সামনে বিশেষ অভিযানে বিজিবি সদস্যরা ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ২০১ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ভায়াগ্রা পাউডার (সিলডেনাফিল সাইট্রেট) জব্দ করেছে। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

অভিযানের বিবরণ

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, পাচারকারীরা এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে একটি বড় চালান পাঠাতে যাচ্ছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিজিবির একটি দল বেনাপোল বাজারের রহমান চেম্বার সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেয়। কিছু সময়ের মধ্যেই একটি ভ্যানে করে বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে কয়েকজন লোক আসে। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত বস্তাগুলো ফেলে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে টহলদল বস্তাগুলো খুলে দেখতে পায়, তাতে থাকা প্যাকেটগুলোতে ভায়াগ্রা পাউডার বা সিলডেনাফিল সাইট্রেট রয়েছে। মোট ওজন ২০১ কেজি ৫০০ গ্রাম এবং অনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

চোরাচালান চক্রের কৌশল

সিলডেনাফিল সাইট্রেট একটি ঔষধি উপাদান হলেও, এটি অবৈধভাবে আমদানি-রপ্তানি করে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এই ধরনের পাউডার সাধারণত ভুয়া ওষুধ প্রস্তুত, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বানানো এবং অবৈধ ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে এসব সামগ্রী পাচারের বহু চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে।

চোরাকারবারিরা এ ধরনের পাউডার সাধারণত সাধারণ মালামালের ভেতর লুকিয়ে পার্সেল, বাস বা ট্রাকযোগে অথবা এসএ পরিবহনের মতো কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পাঠানোর চেষ্টা করে।

আইনগত ব্যবস্থা

এ ঘটনায় কোনো পাচারকারীকে আটক করা সম্ভব না হলেও, বিজিবি জানিয়েছে, জব্দকৃত পণ্য কাস্টমস ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং পাচারকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ বলেন, “সীমান্তে চোরাচালান দমন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বিজিবি নিয়মিত নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ দমনে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি’র টহল জোরদার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রেক্ষাপটবেনাপোল সীমান্ত এলাকা চোরাচালানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই একটি হটস্পট হিসেবে পরিচিত। এখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন চোরাচালান রুট, যেগুলো ব্যবহার করে মাদক, ওষুধ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কাপড় ও অন্যান্য পণ্য অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাঠানো হয়ে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত নতুন পদ্ধতি ও রুট ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।

এই অভিযান বিজিবির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন।