জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ গণ অধিকার পরিষদের

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৪:২৬:৩৭
জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ গণ অধিকার পরিষদের
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ঘোষণাপত্রে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাত্র ও গণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে বর্জনের হুমকি দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির দাবি, ঘোষণাপত্রে গণ-অভ্যুত্থানের মূল ভিত্তি হিসেবে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি, বরং বিকৃত করা হয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি। এতে বক্তব্য রাখেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ অন্যান্য নেতারা।

লিখিত বক্তব্যে মো. রাশেদ খান বলেন, “ঘোষণাপত্রের ১৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে—ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ও দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য হয়েছিল। বাস্তবে এটি ছিল কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ছাত্র সমাজের আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, যা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, এই বিকৃত ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে ভুল বার্তা দেবে। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতা মাত্র। যদি ইতিহাস বিকৃত করতেই হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর এই সরকারের ইতিহাসে পার্থক্য কোথায়?”

ঘোষণাপত্রের ১৭ নম্বর দফায় শহীদ সংখ্যা সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলে গণ অধিকার পরিষদ। রাশেদ খান বলেন, “ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে এক হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছে, কিন্তু জাতিসংঘ বলছে ১৪০০ জনের বেশি এবং সরকারি গেজেটে শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন। তাহলে কি এবারও শহীদের সংখ্যা নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক হবে?”

তিনি বলেন, “যে বাহিনীগুলো আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বিচার হয়নি। এখনো তাদের গ্রেপ্তার বা সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেই। ঘোষণাপত্রে এসব প্রশ্নের উত্তর অনুপস্থিত।”

সংগঠনের দাবি, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং পদত্যাগের প্রসঙ্গ ঘোষণাপত্রে থাকলেও তা কতটা সত্য, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নুরুল হক নুর বলেন, “হাসিনাকে তো সেসময়ই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। যিনি অসংখ্য প্রাণহানির নির্দেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে বিচার কেবল একটি রায়ে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।”

রাশেদ খান বলেন, “নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, বিডিআর বিদ্রোহে সেনা অফিসারদের মৃত্যু, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা ঘোষণাপত্রে নেই। অথচ এসব ঘটনা তারুণ্যের চেতনায় বিপ্লবের বীজ বপন করেছে।”

তবে দলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এতে ১/১১ পরিস্থিতির মতো অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।

একই দিনে ঢাকার মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে, এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আমরা আগেই বলেছিলাম রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। প্রধান উপদেষ্টাও সেই লক্ষ্যে সময় ঘোষণা করেছেন।”

তবে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখছে জামায়াত। তারা বলছে, সংবিধানে এই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে ‘পিআর পদ্ধতি’কে সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, “৫৪ বছরের পুরোনো ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন পদ্ধতি এই দেশের জন্য আর উপযোগী নয়। ভোটকেন্দ্র দখলের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ