গুলিতে চোখ হারালেও স্বপ্ন টিকে আছে: হিমেলের গল্প

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৫ ১৬:৪৪:৩৭
গুলিতে চোখ হারালেও স্বপ্ন টিকে আছে: হিমেলের গল্প
ছবি: প্রথম আলো

গুলিতে চোখ হারানো হিমেলের প্রত্যয়: ‘আমি স্বাধীন বাংলাদেশকে আবারও দেখতে চাই’গত বছরের ৪ আগস্ট, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে চোখের দৃষ্টি হারান হিমেল ইসলাম। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এই দুর্ঘটনা তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়। চিকিৎসকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—হিমেল আর কোনোদিন চোখে দেখতে পারবে না। তবু, হার মানেনি সে। এখনো তার মনে স্বপ্ন—আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, দেখবে একটি স্বাধীন ও সুন্দর বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে হিমেলের নিজ গ্রাম লালবাড়ী থেকে দেখা যায়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাকে প্রস্তুত করছেন মা নাছিমা বেগম ও বড় ভাই জনি মিয়া। হিমেলকে নিয়ে সেদিন সকালে তারা রওনা দেন টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্দেশে।

হিমেল জানায়, “আমি আন্দোলনে গিয়েছিলাম দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সেদিন গুলিতে দুই চোখ হারাইছি, মুখেও এখনো বুলেটের চিহ্ন আছে। এখন আমার স্বপ্ন—আবার নতুন করে বাঁচতে চাই, আবার স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চাই।”

মা নাছিমা বেগম বললেন, “আমার স্বামী অনেক আগেই আমাদের ফেলে চলে গেছেন। তারপর থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থেকেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের মানুষ করেছি। এখন বয়স হয়েছে, আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। হিমেলের চোখ হারানোর পর সবকিছু যেন থেমে গেছে।”

বড় ছেলে জনি মিয়া ঢাকার উত্তরা স্পিনিং মিলে কাজ করেন, মাসে বেতন ১০ হাজার টাকা। সেই টাকায় মা, স্ত্রী, সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবার চলে কোনোভাবে। “আমার ভাই যদি এখনো চোখে দেখতে পারত, হয়তো নিজের কাজ করে সংসারের বোঝা কমাতে পারত,” বলেন জনি।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হিমেলকে প্রথমে নেওয়া হয় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর তাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর ছুটি দেওয়া হয়। এরপর চোখের ক্ষত না শুকানোয় হিমেলকে চিকিৎসা নিতে হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। এখনও নিয়মিত সেখানেই ফলোআপ চলছে।

হিমেলের চিকিৎসায় সরকার ও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। তবে নাছিমা বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, সব অর্থই চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে। এখন নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার সকালে হিমেল যখন বাড়ি ছাড়ে, তার মা হাতে ধরে তাকে রওনা করিয়ে দেন। পা থেকে ধুলো মুছে দিয়ে জুতা পরিয়ে দেন বড় ভাই জনি। গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় জানান তারা।

হিমেল এখন শুধু চোখে দেখতে না পেলেও, তার ভবিষ্যৎ দেখার ইচ্ছা এখনো অটুট। সে জানে, একদিন ঠিকই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে—নিজেকে গড়বে, দেশকেও গড়তে চায় সে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ