বিদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে আউটসোর্সিং: গোপন তথ্য ঝুঁকিতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চরম অস্থিরতা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১০:২০:৩০
বিদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমে আউটসোর্সিং: গোপন তথ্য ঝুঁকিতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চরম অস্থিরতা
ছবিঃ ডেইলি সান

বাংলাদেশের বিদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা পরিচালনার জন্য বেসরকারি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এর বিপক্ষে কঠোর আপত্তি তুলেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ সমিতি। তাঁদের অভিযোগ, কোনো ধরনের উন্মুক্ত দরপত্র বা সঠিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, যা দেশের গোপন ও সংবেদনশীল তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার সামিল। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী) খোদা বখশ চৌধুরী এবং সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির কাছে ১৩ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এতে আউটসোর্সিং না করে মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্ট ও ভিসা উইং-এর মাধ্যমে বিদেশি মিশনের কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কল্যাণ সমিতির কয়েকজন নেতা বলেন, সামরিক শাসনের আমলে যেসব আউটসোর্সিং কোম্পানি বিতর্কিতভাবে সুযোগ পেয়েছিল, তাদেরকেই আবারও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কয়েক কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “সার্ভিস কোয়ালিটি বাড়াতে জনবল বাড়ানো যায়, অথচ কেন বিদেশি কোম্পানিকে পাসপোর্টের মত সংবেদনশীল তথ্য হস্তান্তরে এত আগ্রহ? নির্বাচনের আগে বড় ব্যবসা করতে চায় কেউ কেউ।”

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশন বিভাগ) মো. শামীম খান বলেন, “আমাদের কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাজ করেন, বাকি সময় ঘোরাঘুরি করেন। সে কারণে আমরা আউটসোর্সিং ভাবছি—সেবার মান নিশ্চিত করতেই। এর বাইরে আর কিছু নয়।” তবে খোদা বখশ চৌধুরী ও নাসিমুল গনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

স্মারকলিপির মূল অভিযোগসমূহ:১. গোপন তথ্য ঝুঁকিতে: আউটসোর্সিংয়ের ফলে পাসপোর্ট সংক্রান্ত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

২. নির্ভরযোগ্যতা সংকট: নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মার নাম সংশোধন কিংবা এনআইডি সমস্যা সমাধানে এই কোম্পানিগুলোর কোনো আইনগত ক্ষমতা থাকবে না—প্রবাসীরা ভোগান্তিতে পড়বেন।

৩. নিয়োগে স্বজনপ্রীতি: আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো দক্ষ জনবল নিয়োগ না করে আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেয়, ফলে সেবার মান ও জবাবদিহিতা কমে।

৪. দুর্নীতির পুরনো নজির: অতীতে আউটসোর্সিং করা আইরিশ কোম্পানি সৌদি আরবে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে পড়েছিল।

৫. রাজস্ব গরমিল: সরকারি রাজস্ব ঠিকমতো জমা না দেওয়া এবং অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

৬. দমনযোগ্য দূতাবাস: এসব কোম্পানির সিন্ডিকেট শক্তির কারণে দূতাবাস কার্যত অসহায় হয়ে পড়ে।

৭. সরকারি তদারকি সংকট: আউটসোর্সিং কোম্পানির অধীনে গোপন তথ্যের নিরাপত্তা ও প্রবাসীদের সেবা তদারকির সুযোগ হারাবে সরকার।

৮. যন্ত্রপাতি ও সার্ভারের নিরাপত্তা ঝুঁকি: ব্যয়বহুল যন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত সার্ভার কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যার ফলে চুরি বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।

৯. অননুমোদিত ব্যক্তিকে পাসপোর্ট: এসব কোম্পানি রোহিঙ্গা বা ভিনদেশি নাগরিকদের তথ্য এনরোল করে পাসপোর্ট দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

১০. চুক্তি শেষে সেবাবন্ধ: মালয়েশিয়ার উদাহরণ টেনে বলা হয়, চুক্তি শেষ হলেও কোম্পানিগুলো মামলা ঠুকে কার্যক্রম জারি রাখে—ফলে সেবাদান বন্ধ হয়ে যায়।

পাসপোর্ট ও ভিসা উইং বহু বছর ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে প্রবাসীদের পাসপোর্ট-ভিসা সেবা দিয়ে আসছে। অথচ এই সেবা খাতকে আবারও বিতর্কিত কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সুত্রঃ ডেইলি সান

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ