সুনামগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে ১০৬ নদ-নদী: জলাবদ্ধতা, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে হুমকি

সত্য নিউজ: নদী ও হাওরের জনপদ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জেলার ছোট-বড় ১০৬টি নদ-নদী। একসময় যে নদীগুলো ছিল প্রাণবন্ত ও খরস্রোতা, সেগুলো আজ প্রায় নিঃশেষ। পলি জমে, প্রবাহ ব্যাহত হয়ে এবং দখল-দূষণের কারণে সেগুলো পরিণত হয়েছে শুকনো ভূমিতে, কোথাও কোথাও চলছে চাষাবাদ।

এই করুণ বাস্তবতা যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে ‘মরা সুরমা’ নদীর চিত্রে। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদী একসময় ছিল লঞ্চ চলাচলের উপযুক্ত। এখন শুকনো মৌসুমে এর বুক চিরে চাষাবাদ করেন কৃষকরা, আর লোকজন পায়ে হেঁটেই পার হন নদী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রায় ১০৬টি নদী ও কয়েক শত খাল। কিন্তু প্রতিটি নদীই ভুগছে প্রবাহ সংকটে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি নদীর তলদেশে পলি জমে সম্পূর্ণভাবে ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছরই পরিবর্তিত হচ্ছে নদীর আকৃতি ও প্রকৃতি।

পরিবেশবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদী দখল, দূষণ ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবেই এই সংকট ঘনীভূত হয়েছে। এর ফলে:

শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকট, কৃষিতে ব্যাঘাত

মৎস্য প্রজনন বাধাগ্রস্ত, হাওরবাসীর জীবন-জীবিকায় বিপর্যয়

নাব্যতা হারিয়ে নৌ চলাচল ব্যাহত

সুপেয় পানির সংকট ও বন্যার আশঙ্কা বৃদ্ধি

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক দুলাল মিয়া বলেন, “সুনামগঞ্জের নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা হাওরবাসীর জন্য অশণি সংকেত। এখনই যদি বৃহৎ পরিকল্পনায় নদী খনন ও সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “সুরমা নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত পরিকল্পিত ড্রেজিং এবং পলির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া নদী পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। পাশাপাশি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং নদী রক্ষায় যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা পাউবো ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের ভরাট হওয়া ১৯টি নদী খননের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার একটি মহাপরিকল্পনা পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “নদী খননের জন্য বড় একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পের পরিমাণ বড়, তাই এটি যাচাই-বাছাই চলছে। আশা করছি দুই মাসের মধ্যেই এটি অনুমোদিত হবে।”