নতুন সরকারের অধীনে বড় নির্বাচন সংস্কার: পিআর কি বাস্তবায়নযোগ্য?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৮:৩৬:২৭
নতুন সরকারের অধীনে বড় নির্বাচন সংস্কার: পিআর কি বাস্তবায়নযোগ্য?

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত একাধিক কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা (Proportional Representation – PR)।

জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং কমিউনিস্ট পার্টির মতো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিএনপি স্পষ্টভাবেই এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত একক আসনভিত্তিক সংসদীয় ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, পিআর পদ্ধতি চালু হলে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটারদের মতামতের যথাযথ প্রতিফলন ঘটবে। এতে প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকবে এবং সংসদ হবে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বমূলক।

আনুপাতিক পদ্ধতি কী এবং কেন প্রাসঙ্গিক?

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় সংসদের আসন বণ্টন হয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে। যেমন, কোনো দল যদি মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তাহলে তাদের সংসদে ১০ শতাংশ আসন—অর্থাৎ ৩০টি আসন পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিন ধরনের পিআর পদ্ধতি বিদ্যমান: মুক্ত, গোপন এবং মিশ্র। এদের প্রত্যেকটিরই মূল ভিত্তি—প্রত্যেক ভোটার কণ্ঠস্বর যেন নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত হয়।

নির্বাচন বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনো দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তত শতাংশ আসন পাবে সংসদে। এতে সুশাসনের পথ সুগম হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “বর্তমানে অনেক দল গড়ে ১০-১৫ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকে না। পিআর পদ্ধতিতে সব দলের জন্যই একটি ভিত্তিগত অবস্থান নিশ্চিত হবে।”

বর্তমান ও প্রস্তাবিত ব্যবস্থার পার্থক্য

বর্তমানে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন হয় একক আসনভিত্তিক (first-past-the-post) পদ্ধতিতে। এখানে যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনিই নির্বাচিত হন—ভোটের পার্থক্য যতই সামান্য হোক না কেন।

ধরা যাক, কোনো আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের ফলাফল এমন—প্রথম তিনজন ২০ শতাংশ করে এবং চতুর্থ ব্যক্তি ২৫ শতাংশ ভোট পেলেন। এ অবস্থায় মাত্র একচতুর্থাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন, অথচ বাকি ৬০ শতাংশ ভোটের কোনো প্রভাব পড়বে না সংসদের গঠনে।

এই বাস্তবতায় অনেকসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে একটি দল একচ্ছত্র শাসনক্ষমতা লাভ করে, অথচ ৭৫ শতাংশ ভোট বিভক্ত হয়ে থাকে সংসদের বাইরে।

প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে প্রার্থী তালিকা দেবে। ভোটের পর মোট প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী প্রতিটি দল সংসদে আসন পাবে। এতে কোনো ভোট নষ্ট হবে না এবং সব দলের মতামত সংসদে প্রতিফলিত হবে।

বিএনপির আপত্তি ও বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ

যদিও অনেক দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, বিএনপির বিরোধিতার কারণে এই সংস্কার বাস্তবায়ন কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।

তবে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা গেলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত