ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ: নেতানিয়াহুকে ‘ছাড়’ দেওয়ার আহ্বান!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ৩০ ১৪:৫০:৪৮
ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ: নেতানিয়াহুকে ‘ছাড়’ দেওয়ার আহ্বান!

ইসরায়েলি রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি মামলাগুলোর ‘রাজনৈতিক ব্যবহার’ সংক্রান্ত অভিযোগ। দেশটির আইনসভা নেসেটের একাধিক সদস্য দাবি করছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধকে ব্যক্তিগতভাবে মামলার নিষ্পত্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন নেতানিয়াহু। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বে চলমান যুদ্ধকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন অনেকে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির সংসদ সদস্য নামা লাজিমি টাইমস অব ইসরায়েলে এক বিবৃতিতে বলেন, “নেতানিয়াহু আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎকে নিজের মামলার শর্তে বন্দি করে ফেলেছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবসান ও রাজনৈতিক সমঝোতার বিনিময়ে নিজের পদে টিকে থাকার পথ খুঁজছেন।

এই সমালোচনার মাঝে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সম্প্রতি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর সমাপ্তি দাবি করে বলেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) ইসরায়েলকে বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য করি। এই পরিস্থিতি সহ্য করা যায় না—নেতানিয়াহুকে ছেড়ে দিন।” এ বক্তব্যে ইসরায়েলি রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।

গিলাদ কারিভ, আরেকজন ডেমোক্র্যাট সদস্য, মন্তব্য করেন, “ট্রাম্পের এই আহ্বান আসলে নেতানিয়াহু ও তাঁর দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের ইন্ধনে এসেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে থাকা আইনি ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় নিরাপত্তা ও গাজা যুদ্ধকে রাজনৈতিক চাল হিসেবে ব্যবহার করছেন।

হামাস ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির বিনিময়ে তারা জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর দাবি।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলাগুলোর মধ্যে কেস ১০০০, ২০০০ ও ৪০০০ সবচেয়ে আলোচিত। এই মামলাগুলোর আওতায় তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা এবং আস্থাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদি এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। তিনি ২০২০ সালের ২৪ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারের সম্মুখীন হন, যা তাঁকে ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অপরাধী আসামির আসনে বসায়।

ইয়েশ আতিদ পার্টির সংসদ সদস্য কারিন এলহারার সতর্ক করে বলেন, “নেতানিয়াহু নিজের আইনগত ভাগ্যকে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করছেন।” বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বলেন, “ইসরায়েল একটি স্বাধীন দেশ। তার আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত।”

নেসেটের সংবিধান, আইন ও বিচার কমিটির চেয়ারম্যান সিমচা রথম্যানও ট্রাম্পের হস্তক্ষেপকে 'অপ্রাসঙ্গিক ও অনুপযুক্ত' বলে অভিহিত করেছেন।

অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ২০২৪ সালের নভেম্বরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা, এবং মানবিক সহায়তা রুদ্ধ করার মতো অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু যুদ্ধ অব্যাহত রেখে যে কৌশল নিচ্ছেন তা কেবল গাজাবাসীর জন্য নয়, বরং ইসরায়েলের ভবিষ্যতের জন্যও অন্ধকার ডেকে আনছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি সমালোচনা ও বিচারের চাপ ক্রমেই বাড়ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত